Spread the love


  ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব‍্য

★কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন★
কাব‍্যরূপ:–কৃষ্ণপদ ঘোষ।
উপস্থাপন– ২৮
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

★ কর্ণ পর্ব ★
১। কর্ণের সেনাপতিত্বে অভিষেক ।

সন্ধ‍্যাকালে দুর্যোধন বসিয়া শিবিরে।
রথী মহারথ যত রয়েছেন ঘিরে।।
উচাটন দুর্যোধন কহেন রাজাগণে,
“করণীয় কিবা মম কহ এই ক্ষণে”।।
হেন দুর্যোধন-প্রশ্ন করিয়া শ্রবণ,
নানা জনে কহে কথা বিবিধ ধরণ।।
কহিলেন অশ্বত্থামা শেষে দুর্যোধনে,
“কার্য সিদ্ধি চারি বিধে কন জ্ঞানীজনে।।
অনুরাগ উদযোগ নীতি ও দক্ষতা।
কিন্তু সবার উপরে জানিবে দেবতা।।
ছিলেন মোদের রথী মহারথ যত,
সকলে ছিলেন গুণী অনেকেই হত।।
তথাপি হতাশা নয় শোন বন্ধুগণ।
কর্ণে সেনাপতি করি , করি মহারণ।।
উপযুক্ত নীতি দৈবে করে অনুকূল।
নাশিতে পারিব মোরা তাহে শত্রুকুল।।
কর্ণ অতি মহাবলী অতি দক্ষ রণে।
পারদর্শী শত্রুসেনা ইনিই দমনে”।।
প্রীতমন দুর্যোধন কর্ণে তিনি কন,
“মহাবাহু, তুমি বন্ধু অতি প্রিয়জন।।
সেনাভার তুমি মোর করহ গ্রহণ।
তোমা ‘পরে এ দায়িত্ব করিনু অর্পণ।।
তোমা তুল‍্য অন‍্য যোদ্ধা নাহি এই ক্ষণে।
তুমিই হইবে জয়ী শঙ্কা নাই মনে।।
অর্জুনে যুঝিতে পারে নাহি কেহ আর।
তোমায় দিলাম তাই এই গুরুভার”।।
কর্ণ কন দুর্যোধনে দানিয়া আশ্বাস।
“বন্ধু তুমি মম প্রতি রাখিও বিশ্বাস।।
আমি তব সেনাভার করিনু গ্রহণ।
অচিরেই শত্রুগণে করিব নিধন।।
তারপর দুর্যোধন অন‍্য রাজাগণ,
শাস্ত্রবিধ অভিষেক করে সমাপন।।

২। অশ্বত্থামার পরাজয়
( ষোড়শ দিনের যুদ্ধ )

চলিলেন কর্ণ রণে রণবেশে সাজি।
বর্মাবৃত রথে তাঁর নানা অস্ত্ররাজি।।
তূণীর তোমর ধনু গদা শক্তিশূল,
লইলেন করিবারে পাণ্ডবে নির্মূল।।
বায়ুবেগে চলে রথ শ্বেতাশ্ব বাহিত।
রথোপরি শ্বেত ধ্বজ সগর্বে উত্থিত।।
মকরব‍্যূহ রচিয়া চলিলেন রণে।
নারায়ণীসেনা আর কৃতবর্মা সনে।।
কহিলেন যুধিষ্ঠির হেরি আগমন।
“কৌরবের হত যত শ্রেষ্ঠ বীরগণ।
কুরুদলে একমাত্র কর্ণ মহাবীর।
বোধিয়া অর্জুন তুমি কর রণ স্থির”।।
অর্ধচন্দ্র ব‍্যূহ পার্থ করেন রচন।
বামপার্শ্ব ভীমসেন করেন রক্ষণ।।
ডানপার্শ্বে ধৃষ্টদ‍্যুম্ন করে অবস্থান।
মধ‍্যদেশে যুধিষ্ঠির রথ লয়ে যান।।
পশ্চাতে তার অর্জুন করেন গমন।
নকুল ও সহদেব অতি সচেতন।।
বাজিল শঙ্খ পণব তুমুল নিনাদ।
জয়াকাঙ্খী বীরগণ করে ব‍্যাঘ্রনাদ।।
নিনাদিত দিকে দিকে হস্তী-বৃংহণ।
অশ্ব-হ্রেষা আর রথ চক্রের ঘর্ষণ।।
ভীমসেন কুলূতরাজ যুঝিছে ভীষণ।
সসৈন‍্যে একে অপরে করে আক্রমণ।।
গদাঘাতে কুলূতরাজ হলেন নিহত।
তারপর অশ্বত্থামা হন যুদ্ধ রত।।
কৃপাচার্য রণিছেন দুর্যোধন সনে।
সংশপ্তক অর্জুন রণিছেন রণে।।
দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরে চলে মহারণ।
সহদেব করে যুদ্ধ শত্রু দুঃশাসন।।
হেনরূপে চলে যুদ্ধ ভীষণ তুমুল।
হত কত শতশত সেনা বিলকুল।।
অশ্বত্থামা ভীমে চলে যুদ্ধ কিছুক্ষণ।
ক্ষণপরে দোঁহে ভূমে হয়ে অচেতন।।
হেরি তাই বিচলিত সারথি দু’জন।
রথে তুলি দ্রুত তারা করে পলায়ন।।
ক্ষণপরে অশ্বত্থামার রণে আগমন।
অর্জুনে আহ্বান তাঁর করিবারে রণ।।
অশ্বত্থামা পাশে কৃষ্ণ করেন গমন।
আহ্বান সমরে তাঁর করেন গ্রহণ।।
যত আছে অস্ত্র সব কর বরিষণ।
বধিতে নারিবে পার্থে কৃষ্ণ তাঁরে কন।।
বধিলে অর্জুনে তুমি মনে রেখ বোধ,
উপজীবী ভর্তৃপিণ্ড হইবেক শোধ।
ব্রাহ্মণ বাদানুবাদ সদা সূক্ষ্ম হয়।
স্থূল অস্ত্র সাধে সদা ক্ষত্রিয়ের জয়।।
মোহবশে আজ তুমি চাহ সৎকার।
লভিতে তাহা করহ যুদ্ধ পুনর্বার।।
বেশ তবে তাই হোক, হোক কেহ হত।
হেন কহি অশ্বত্থামা হন রণোদ‍্যত।।
কৃষ্ণার্জুনে রত তিনি বাণ বরষণে।
অর্জুন রোধিতে ব‍্যস্ত তা শরক্ষেপনে।।
অঙ্গ কলিঙ্গ নিষাদ বঙ্গ বীরগণ,
একই সাথে অর্জুনে করে আক্রমণ।।
পার্থ-শরজালে তারা পীড়িত তখন।
বীরগণ ছাড়ি রণ করে পলায়ন।।
কৃষ্ণার্জুন রুধিরাক্ত অশ্বত্থামা-বাণে।
হত তারা এই বোধ সকলের মনে।।
কৃষ্ণ হইয়া উদ্বিগ্ন কহেন অর্জুনে।
“শিথিল হয়েছ তুমি কেন এই রণে।।
প্রতিকার কর ব‍্যাধি নচেৎ বিপদ।
অশ্বত্থামায় ত্বরিতে কর তুমি বধ”।।
অর্জুন গাণ্ডীবে শর করেন ক্ষেপন।
করিলেন বিদ্ধ বাহু চর্চিত চন্দন।।
বক্ষ মস্তক তাহার বিদ্ধ পার্থ-শরে।
ছাড়ি রণ অশ্বত্থামা যান চ’লে দূরে।।
রণে মন সে কারণ না থাকে তখন।
কৃষ্ণার্জুন জয়ী আজ হইল ঘোষণ।।

৩। দণ্ডধার– দণ্ড– বধ
রণভূমির ভীষণতা।

মগধরাজ দণ্ডধার অতি দক্ষ রণে।
হস্তি সেও দক্ষ অতি সেনা মরদনে।।
নাশিবারে ব‍্যস্ত তিনি পাণ্ডু সেনাকুল।
হস্তিও হাজারো সেনা করিছে নির্মূল।।
হেরিয়া পার্থসারথি কহেন অর্জুনে।
“দণ্ডধারে বধ কর তুমি এইক্ষণে।।
সর্বাগ্রে নিধন তাঁরে অতি ন‍্যায‍্য কার্য।
নচেৎ পাণ্ডব লয় হেরি অনিবার্য”।।
হেন কহি রথ তাঁর করেন চালন।
দণ্ডধার সেনা যেথা করেন মর্দন।।
অর্জুন গাণ্ডীবে শর করিয়া যোজন।
নাশিবারে দণ্ডধার করেন ক্ষেপন।।
সেই বাণে ছিন্নমুণ্ড হয় দণ্ডধার।
পতিত ভূমে নিষ্প্রাণ দেহটি তাঁহার।।
হেরি ক্ষুব্ধ যুদ্ধে যান তাঁর ভ্রাতা দণ্ড।
অর্ধচন্দ্র বাণে তিনি হন ছিন্নমুণ্ড।।
আইলেন পার্থ সেথা ফিরিয়া আবার।
সংশপ্তক সাথে তিনি যুঝিতে আবার।।
হেরিয়া কেশব তাহা ধনঞ্জয়ে কন।
“নাশিবারে শত্রু তুমি দাও প্রাণ মন।।
বধ কর সংশপ্তক অবশিষ্ট যত।
অতঃপর কর্ণ-বধে হও ত্বরাণ্বিত।।
সংশপ্তকগণে পার্থ করিয়া হনন,
রণভূমে রথ তাঁর করেন চালন।।
হেরি রণভূমি কৃষ্ণ কহেন অর্জুনে,
এতেক নৃপতি ক্ষয় দুর্যোধন কারণে।
চতুর্দিকে দেখ কত অস্ত্র ধনুর্বাণ।
কত শত বীর প’ড়ে হয়ে নিষ্প্রাণ।।
চন্দ্র বদন তাঁদের কুণ্ডল শোভিত।
আজি এই রণাঙ্গন করেছে আবৃত ।।
ছিন্ন মুণ্ড লাশ কত কর্দমে পতিত।
কাতর ধ্বনি করিছে আহত জীবিত।।
প্রিয়জন লাগি কেহ করিছে ক্রন্দন।
কেহবা করিছে সেবা বাঁচাতে জীবন।।
কেহ কেহ বীরগণে দিয়া আচ্ছাদন।
সমরে আবার তারা করিছে গমন।।
এই মহাযুদ্ধে পার্থ করিলে যে কর্ম,
অনুচিত নহে তাহা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম”।।
★★★
( চলবে )

কবি কৃষ্ণপদ ঘোষ রচিত মহাভারত অবলম্বনে “কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন” আজ ২৮তম উপস্থাপন করা হল। প্রতিমাসেই একটি করে উপস্থাপন হয়ে চলেছে কাব্যপটের আঙ্গিনায়। আশাকরি পাঠকের মন জয় হবে। অবশ্যই শেয়ার, লাইক ও মতামত জানিয়ে কবিকে উদ্বুদ্ধ করবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *