KABYAPOT.COMকবিতা

ভারতীয়দের সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা –<< শ্যামল মণ্ডল

Spread the love

ভারতীয়দের সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা

– শ্যামল মণ্ডল

সূচীপত্র

১. ভূমিকা

২. সংবিধানের তাৎপর্য ও তাৎপর্যের কারণ

৩) ভারতীয় নাগরিকদের সংবিধানের প্রতি প্রধান দায়িত্ব

৩.১) সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা

৩.২) আইন মেনে চলা

৩.৩) মৌলিক কর্তব্য পালন করা

৩.৪) গণতন্ত্রকে সুরক্ষা প্রদান

৩.৫) জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখা

৪. সংবিধান ও নাগরিক জীবনের পারস্পরিক সম্পর্ক

৫. নাগরিকদের দায়িত্ব পালনে

 

১. ভূমিকা

সংবিধান হল একটি দেশের আত্মা, পরিচয় এবং ভবিষ্যতের রূপরেখা। ভারতের সংবিধান, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও সবচেয়ে বিস্তৃত সংবিধান হিসেবে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটি শুধু একটি আইনি দলিল নয়, বরং একটি আদর্শের প্রতিফলন, যেখানে ন্যায়, স্বাধীনতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছে। এই সংবিধানের প্রতি ভারতের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা অপরিসীম। কারণ সংবিধানই ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি, এবং নাগরিকরা এই ভিত্তিকে মজবুত বা দুর্বল করার ক্ষমতা রাখে।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, যখন ভারত বহুবিধ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মুখোমুখি, তখন সংবিধানের প্রতি নাগরিকদের দায়বদ্ধতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই প্রবন্ধে আমরা বিশদে আলোচনা করব ভারতীয়দের সংবিধানের প্রতি দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব এবং এর অনুশীলন করতে গিয়ে যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।

———————

. সংবিধানের তাৎপর্য ও তাৎপর্যের কারণ

ভারতের সংবিধান একটি সর্বজনীন নীতি ও মূল্যবোধের সংকলন। এটি জাতির সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। সংবিধান ভারতের বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠীকে একসূত্রে গেঁথেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো — ১. দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বজায় রাখা

. নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা

. সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা

. স্বাধীনতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করা

. প্রত্যেকের জন্য সম্মানের সাথে জীবন যাপনের সুযোগ তৈরি করা

সংবিধান শুধু রাষ্ট্রের নয়, নাগরিকদেরও একটি নৈতিক চুক্তি। প্রতিটি ভারতীয়কে এই নৈতিকতা রক্ষা করতে হবে।

————————

. ভারতীয় নাগরিকদের সংবিধানের প্রতি প্রধান দায়িত্ব

৩.১ সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা

প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। কোনো ব্যক্তিগত, সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংবিধানের মৌলিক আদর্শকে আঘাত করা চলবে না। সংবিধানকে অবমাননা করা মানে নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা।

৩.২ আইন মেনে চলা

আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। সংবিধান অনুযায়ী, আইনের চোখে সবাই সমান। তাই আইন লঙ্ঘন করলে শুধু নিজের ক্ষতি নয়, গোটা সমাজেরও ক্ষতি হয়। নাগরিকদের উচিত নিজেকে আইনজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলা এবং আইনের প্রতি আস্থা রাখা।

৩.৩ মৌলিক কর্তব্য পালন করা

সংবিধানের ৫১-এ অনুচ্ছেদে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত ১১টি মৌলিক কর্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

জাতির সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা করা

জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা

পরিবেশ রক্ষা করা

মানবিক মূল্যবোধ ও বৈজ্ঞানিক মনোভাব বিকাশ করা

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা নারী ও শিশুর মর্যাদা রক্ষা করা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখা

৩.৪ গণতন্ত্রকে সুরক্ষা প্রদান

গণতন্ত্রকে কার্যকর রাখার দায়িত্ব নাগরিকদের উপর। নির্বাচনকালে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সঠিক নেতা নির্বাচন করা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এই দায়বদ্ধতার অঙ্গ।

৩.৫ জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখা

ভারত একটি বহু ভাষাভাষী, বহু জাতিগোষ্ঠীর দেশ। এই বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঐক্য বজায় রাখাই ভারতের অন্যতম সাফল্য। ধর্ম, জাতি, ভাষা ইত্যাদি বিভাজনমূলক চিন্তাকে জয় করে, “বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য” বজায় রাখা প্রতিটি নাগরিকের গুরু দায়িত্ব।

—————–

. সংবিধান ও নাগরিক জীবনের পারস্পরিক সম্পর্ক

সংবিধান এবং নাগরিক জীবনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সংবিধান নাগরিকদের অধিকার দেয়, আবার তাদের দায়িত্বও নির্ধারণ করে। যেমন:

মৌলিক অধিকার যেমন বাকস্বাধীনতা, ধর্মপালনের স্বাধীনতা ইত্যাদি সংরক্ষিত, কিন্তু অন্যের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। সমতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাও দায়িত্ব।উন্নয়নের অধিকার থাকলেও প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্বও রয়েছে।

এই ভারসাম্য রক্ষা করেই গণতন্ত্রের প্রকৃত সাফল্য সম্ভব।

——————–

. নাগরিকদের দায়িত্ব পালনে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ

যদিও ভারতের বেশিরভাগ নাগরিক সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবুও কিছু বাস্তব সমস্যা রয়েছে:

অশিক্ষা এবং সংবিধান সম্পর্কে অজ্ঞতা

রাজনৈতিক মেরুকরণ ও মিথ্যা প্রচার

ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন

আইনের দুর্বল প্রয়োগ

স্বার্থপরতা ও নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীনতা

এসব সমস্যা মোকাবিলার জন্য সংবিধানিক শিক্ষার প্রসার, সঠিক নেতৃত্ব, এবং সচেতন নাগরিক সমাজ গড়ে তোলা অপরিহার্য।

——————

. সংবিধানের রক্ষক হিসেবে নাগরিকদের ভূমিকা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান রক্ষা করে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের রক্ষক হলেন দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক। নাগরিকরা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, সংবিধান কখনো দুর্বল হবে না। অন্যদিকে, যদি নাগরিকরা অসতর্ক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, তবে সংবিধানের আদর্শ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।

———————

. নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর বিশেষ দায়িত্ব বর্তায়:

সংবিধানের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া

মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা করা

সামাজিক ন্যায় ও পরিবেশ সুরক্ষায় অংশ নেওয়া

ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহনশীলতা গড়ে তোলা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংবিধান চর্চা বাধ্যতামূলক করা উচিত যাতে ছোটবেলা থেকেই দায়িত্বের বোধ গড়ে ওঠে।

—————-

৮. উপসংহার

ভারতীয় সংবিধান শুধু একটি আইনি দলিল নয়, বরং একটি জীবন্ত দর্শন — যার মূল ভিত্তি হল মানুষের সম্মান, সমতা ও স্বাধীনতা।

ভারতের নাগরিকদের সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা কেবল আইনগত নয়, নৈতিকও। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা একটি শক্তিশালী, ন্যায়সংগত ও সমৃদ্ধ ভারত গড়তে পারি।

অতএব, আসুন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই — সংবিধানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য পালনে সদা সচেষ্ট থাকবো। কেননা সংবিধানই আমাদের জাতির আত্মা, এবং এই আত্মার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা কখনো ভুলে গেলে চলবে না।

৯. রেফারেন্স:

1. Indian Constitution (Original Text)

2. B.R. Ambedkar: A Critical Biography – Dhananjay Keer

3. Constitution of India – P.M. Bakshi

4. The Constitution of India: A Contextual Analysis – P. M. Bakshi

5. Democracy, Governance and Development: A Comparative Perspective – Suman Gupta




আরও পড়ুন:-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *