Spread the love

*প্রথম বনাম চতুর্থ* *
                              *মনালি বসু*
এসো এসো চতুর্থ পার্থ,
খুব অবাক হচ্ছ! তাই না?
এতদিনে নিশ্চয়ই জেনে গেছ তুমি চতুর্থ পার্থ।
আর এও জানো নিশ্চয়ই কে প্রথম পার্থ!
হ্যাঁ, তুমিই আমার প্রিয় অনুজ,আমাকে হত্যার দায় যার ওপর!
আমিই হলাম প্রথম  পার্থ, ‘মহাবীর কর্ণ’।

আমাদের দুজনের মাতাই এক এবং অভিন্ন,
তবুও তুমি ক্ষত্রিয় হয়ে রইলে রাজসুখে
আর আমি হলাম সূতপুত্র!
আমাদের দুজনের পিতাই দেবতা,আমার সূর্যদেব তোমার ইন্দ্রদেব,
তবু তোমার পিতা তোমার মৃত্যুভয় আমার কবচ কুন্ডল ভিক্ষা চাইলেন!
আর আমার পিতা?
তিনি শুধু আমায় সাবধান করেন,
কিন্তু তোমার কোনও ক্ষতিসাধন করতে চান নি।
তোমার পিতা শিক্ষা দিয়েছিলেন কপটতার,
আর আমার পিতা দিয়েছিলেন প্রকৃত মানুষ হবার শিক্ষা।

তুমি পেয়েছিলে রাজসুখ, তোমার শিক্ষা, তোমার বিলাসিতা, সব কিছু
তোমার কাছে এসে ধরা দিয়েছিল,
পক্ষান্তরে আমি ছিলাম সর্বহারা,
আপামর ভারতবাসীর প্রকৃত স্বত্বা আমি।
আমার জাত নেই, কুল নেই,মান নেই, সম্ভ্রম নেই,পরিচয় নেই,
নেই শিক্ষার অধিকার, প্রেমের অধিকার, বিবাহের অধিকার।
আমার মেধাকে যখন রুখবার ক্ষমতা নেই কারুর,
তখনই সবাই ব্যস্ত আমার পরিচয় নিয়ে,
তখন তুমি ক্ষত্রিয়।
শিক্ষা তোমার কাছে আপনি এসে ধরা দিয়েছে,
আর আমাকে পরিচয় গোপন রেখে শিক্ষা নিতে হয়েছে।
বদলে পেয়েছি অভিশাপ।
কিন্তু আমার জন্মের জন্য কি আমি দায়ী?
যদি কেউ দায়ী হয় সে আমার পিতামাতা।
তবু তাঁদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার
অক্ষমতার দায় বর্তাল আমার ওপর!

আমরা দুজনে সহোদর
তবু সবেতেই তোমার অগ্রাধিকার,
আর আমি বঞ্চনার শিকার।
শুধু মাতৃস্নেহ থেকেই নয়,আমি বঞ্চিত প্রেম ভালোবাসা থেকেও।
সেখানেও তোমার প্রাপ্তি।
আমার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমি বঞ্চিত সূতপুত্র হবার অজুহাতে।
মনে পড়ে যাজ্ঞসেনীর স্বয়ংবর সভা?
তবুও আমি দুর্যোধনকে বলি ‘আমাকে অপমান করেনি যাজ্ঞসেনী।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


সূতপুত্র তো আমি অবশ্যই,
যতক্ষণ না আমার মাতা আমাকে সমাজের কাছে
আমার আসল পরিচয় উদ্ঘাটন করছেন!’
এ জীবনে তো মাতার দ্বারা সমাজে পরিচিত হতে পারলাম না,
তবুও মৃত্যুর পরে যে পরিচয় পেলাম এই অনেক।
আমরা একই মাতার সন্তান,
তবু যুদ্ধের পূর্বে মাতা আমার কাছে
তোমাদের সকলের প্রাণ ভিক্ষা করেন।
কিন্তু তোমার কাছে তো আমাকে বাঁচানোর কোনও আর্জি যায় নি।
মাতৃস্নেহ থেকে তো বরাবরই বঞ্চিত আমি,
মাতৃ অনুগ্রহ থেকেও বঞ্চিত।

তোমার কি ধারণা তুমি আমার থেকেও বেশি বীর!
সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর তুমি!
বংশীবদনের সহায়তায়!
তাহলে কেন তোমায় কাপুরুষের ন্যায় হত্যা করতে হল আমাকে?
নিরস্ত্র অবস্থায় ভূমিতে বসা রথের চাকা ঠিক করা অবস্থায়!
সামান্য অপেক্ষাও কি করা যেত না?
এত ভয় তোমার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর?
তোমার বীরত্ব বা কাপুরুষতা কোনওটাই আমায় হত্যা করতে পারেনি,
আমাকে দেওয়া অভিশাপও নয়,
আমি নিজেই গ্রহণ করেছি আমার মৃত্যু।
মাতৃদেবী কে কথা দিয়েছিলাম তুমি ছাড়া আর কোনও পান্ডবের ওপর
মারণাস্ত্র প্রয়োগ করব না।
সেকথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

ভাগ্যের কাছে আমি হেরে গেছি হে আমার অনুজ,
তুমি জিতেছ।
একই মায়ের পুত্র হয়েও তুমি জিতেছ মহারণে।
কিন্তু তুমি হেরে গেছ জীবনযুদ্ধে,মানুষ হয়ে ওঠার যুদ্ধে।
চরিত্রগত দিক দিয়ে,
দানবীর মহারথী কর্ণের কাছে তুমি হেরেছ
বীরত্বে,সাহসে,সততায়,ধর্মপালনে,উদারতায়,
যথার্থ পুত্রের দায়িত্ব পালনে,
জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার ত্যাগে, ভালোবাসায়,
তাই মৃত্যুর পরেও অন্তত একবার
সম্মানে,শ্রেষ্ঠত্বে, মেধায়,ত্যাগের লড়াইয়ে
তোমায় আমি পরাজিত করলাম।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *