কাহিনী : যৌতুক
কলমে : বাণীব্রত
ধৃতি আর অদ্রিজা সেই কলেজের সময় থেকে অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। কলেজে ওদের বন্ধুদের মধ্যে কেউ মানিকজোড় কেউ বা লেয়লা মজনু বলে ডাকতো। তাতে ওদের কিছু এসে যেত না। ওরা বেশ মজাই নিতো। কলেজে এক জন উপস্থিত না থাকলে অন্য জনকে নানা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ শুনতে হতো বন্ধুদের থেকে। এভাবে কেটে যায় কলেজের দিন গুলো। কলেজের গন্ডি অতিক্রম করে ধৃতি ডাক্তারি পড়তে বাইরে চলে যায়। আর অদ্রিজা শিক্ষকতা করবে বলে বি এড পড়া শুরু করে।
ওদের মধ্যে যোগাযোগ হতো ফোন আর সোস্যাল মিডিয়া মারফত। এভাবে কেটে যায় অনেক গুলো বছর। এদিকে অদ্রিজার বাড়িতে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। অদ্রিজা এই মুহুর্তে বিয়ে করবে না জানিয়ে দেয়। আসলে ওদের সম্পর্ক দুই বাড়িতে জানতে পারে নি কারন কেউ বাড়িতে ওদের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলে নি। যদি আগে জানতে পারত তাহলে ওদের সম্পর্ক মেনে নিত না কোন বাড়ি থেকেই। অদ্রিজা কায়েস্থের মেয়ে আর ধৃতি গোড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের। তাই দুজন ঠিক করেছে নিজেদের পায়ে দাড়িয়ে তবেই বিয়ে করবে। অদ্রিজা স্কুলে চাকরি পেয়েছে। ওর ব্যবহারে স্কুলে সবাই খুব ভালোবাসে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভাড় নিজের কাঁধে নিয়ে সম্পুর্ণ অনুষ্ঠানকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করে। পরিবেশ রক্ষাতে ওদের স্কুল বিভিন্ন জায়গায় পুরস্কৃত হয়েছে, যার কৃতিত্ব অদ্রিজার। বিভিন্ন কর্মশালা করে অরন্য রোদনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে বহুবার।
এদিকে ধৃতিও ডাক্তার হয়ে ফিরে এসেছে।
এবার চার হাত এক হবার পালা। দুই বাড়িতে এবার জানানো হলো। ঘোর আপত্তি দুই বাড়িতে। নিজের বাড়িতে অনেক কষ্টে রাজি করায় ধৃতি। তবে একটা শর্ত যৌতুক দিতে হবে। অদ্রিজা কে ধৃতি ওর বাড়ির কথা বলে। অদ্রিজা আর ধৃতি মিলে ঠিক করে দুই বাড়ির লোক যৌতুকের কথা যখন বলবে তখন দুজনেই সামনে থাকবে আর সব কথা শোনার পর অদ্রিজা যা বলবে তার সাথে যেন ধৃতিও সায় দেয়। ধৃতি রাজিও হয়ে যায়। এবার দুই বাড়িকে একসাথে বসান হয়। ধৃতির বাড়ির থেকে বলা হয় সেগুন কাঠের আসবাব, গহনা দিতে হবে। আর সাথে আনুসাঙ্গিক দ্রব্যাদি। অদ্রিজার বাবা রাজিও হয়ে যায়। এবার কিন্তু বাদ সাধে অদ্রিজা। সে সবার সামনে বলে ওঠে আসবাব হবে রড আয়রন বা স্টিলের। সেগুন কাঠের হলে যে গাছ কাটা পড়বে তাতে সমাজের ক্ষতি। তাই আমাদের আসবাব হবে
রড আয়রন বা স্টিলের কি ধৃতি তোমার কোন আপত্তি আছে। ধৃতি ও সেই কথায় সম্মতি জানায়। এরপর অদ্রিজা বলে আমাদের বিয়েতে ৫০০০ সেগুন আর মেহগিনী গাছের চারা আনা হবে এবং প্রতিটি নিমন্ত্রিত ব্যাক্তির হাতে সেই গাছ দেওয়া হবে আর বাকি যা গাছ থাকবে সেগুলো দুই বাড়ির পাড়ায় লাগিয়ে দেওয়া হবে। তাতে পরিবেশ রক্ষাও হবে আর সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। সবাই অদ্রিজার প্রস্তাব মেনে নেয় আর সেই ভাবেই ওদের চার হাত এক হয়ে যায়।