KABYAPOT.COMস্মৃতির স্মরণিকা

কাজী নজরুল ইসলাম(১৮৯৯-১৯৭৬) জীবন ,কর্ম ও প্রাসঙ্গিকতা –<< লেখক-অভিজিৎ দত্ত (জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ)

Spread the love

কাজী নজরুল ইসলাম(১৮৯৯-১৯৭৬) জীবন ,কর্ম ও প্রাসঙ্গিকতা

লেখক-অভিজিৎ দত্ত (জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ)

 

২০২৫এর ২৪শে মে কাজী নজরুল ইসলাম এর ১২৭তম জন্মদিন উদযাপিত হবে।কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি,উপন্যাসিক, নাট্যকার ও সঙ্গীতজ্ঞ। কাজী নজরুল ইসলাম বর্তমান বাংলাদেশের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতার নাম জাহেদা খাতুন। পিতা ছিলেন মসজিদের ইমাম , মাতা গৃহবধূ।বাল্যকালে পিতাকে হারানোর পর নজরুলকে জীবনে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়।এইজন্য গ্রামবাসীরা তার নাম দিয়েছিল দুখু মিয়া।যাইহোক অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে প্রথাগত পড়াশোনা সেরকম হয় নি।কিন্ত সাহিত্যের প্রতি গভীর আকর্ষণ থাকার জন্য সময় পেলেই তিনি বিভিন্ন ধরনের বই পড়তেন। কাজের জন্য তিনি বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমায় যান ও মাসিক পাঁচ টাকার বেতনে একটি রুটির দোকানে কাজ নেন। সেখানেই আলাপ হয় দারোগা কাজী রফিকউদ্দিনের সঙ্গে।সে নজরুলের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে নজরুলকে স্কুলে ভর্তি করে দেন ও নানাভাবে সহযোগিতা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯১৯ সালে, বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী, সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২০ সালে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে কবি কোলকাতায় ফিরে আসেন ও যোগ দেন বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতিতে। সেখান থেকেই তার প্রথম কবিতা, বাঁধনহারা , প্রকাশিত হয়।১৯২৩ সালে বিদ্রোহী শিরোনামে কবিতা লেখেন যা বিজলি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।এরপরেই চারিদিকে নজরুলের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৩ সালে রাজনৈতিক কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে,ধূমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।রাজদ্রোহিতার অপরাধে ইংরেজ সরকার তাকে গ্রেফতার করে।কারাবন্দী অবস্হায় নজরুল অনেক কবিতা লিখেছিলেন। তার অগ্নিবীণা কবিতাটি বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করেছিল। পরাধীনতা, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য নজরুলকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়।বিখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী নজরুলকে বিদ্রোহী কবি উপাধি দেন ধূমকেতু পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত বিদ্রোহী কবিতাটি প্রকাশের পরে।১৯২১ সালে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেখা হয়। তাদের এই সম্পর্ক দীর্ঘদিন বজায় ছিল এবং একে,অপরকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। নজরুলের প্রথম বিয়ে বেশীদিন টিকে নি।এরপর প্রমীলাদেবী নামে এক হিন্দু মহিলার সঙ্গে তার আলাপ। আলাপ থেকে প্রেম ও বিয়ে। তাদের চার সন্তান হয়েছিল। নজরুল জীবিত অবস্হায় অনেক সম্মান পেয়েছিলেন।স্বর্ণপদক,পদ্মভূষণ, ডিলিট থেকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মান। রোমান্টিক, বিদ্রোহী, মানবতাবাদী, সবধরনের ধর্মীয় গোঁড়ামী মুক্ত ও মুক্ত চিন্তার অধিকারী এই কবির শেষ জীবন খুব কষ্টেই কেটেছে। তিনি বাকশক্তি রহিত হয়ে যান।তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়।পিকস নামে একটি দুরারোগ্য মানসিক রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন। কবির পুত্রবধূ তাকে যথেষ্ট সেবা করেছিলেন।অবশেষে ১৯৭৬সালের ২৯শে আগষ্ট বাংলাদেশের ঢাকায় তার মহাপ্রয়াণ হয়।কবি জীবনে অনেক আঘাত পেয়েছিলেন। জীবিত অবস্থায় সন্তান শোক, পত্নী বিয়োগের ব্যাথা তাকে সহ্য করতে হয়েছিল। তিনি চিরকাল ছিলেন আপোষহীন এক যোদ্ধা।শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে চিরকালই তার কলম ছিল খড়্গহস্ত। আজ যখন শোষণ,দুর্নীতি,ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষের বাঁশি মানুষকে শেষ করে দিচ্ছে তখন নজরুল ইসলামের মত মহামানবদের কাছ থেকে আমরা কি কিছুই শিখবো না?এই মহামানবের জন্মদিন পালন তখনই সার্থক হবে যখন আমরা নজরুল ইসলামের জীবন ও কর্মের সঙ্গে পরিচিত হব।যারা শুধু দিয়েই গেল, পেল না কিছুই, আমরা সেই মহামানব নজরুল ইসলামের আদর্শকে যেদিন আমরা আমাদের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারবো সেইদিনই হবে তাকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। আসুন সকলে সেই চেষ্টাই করি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *