Spread the love

প্যারাসিটামল:- বিপাক এবং বিষক্রিয়া

প্যারাসিটামল একটি সুলভ ঔষধ যা সচরাচর জ্বর ও ব্যথা উপশমে সেবন করা হয়। এটি যুগপৎ ‘অ্যানালজেসিক (ব্যথা নাশক)’ এবং ‘অ্যান্টিপাইরেটিক (জ্বর নাশক)’ শ্রেণির ঔষধ; পানিতে সহজে দ্রবণীয়। এর অন্য নাম অ্যাসিটামিনোফেন (acetaminophen )। প্যারাসিটামল আবিষ্কার হয় ১৮৭৭ সালে মতান্তরে ১৮৫২ সালে। প্যারাসিটামল একটি জেনেরিক নাম এবং বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নিজেদের নির্বাচিত নানা নামে প্যারাসিটামল উৎপাদন ও বাজারজাত করে, এই নাম গুলোকে ‘ব্রান্ড নেম’ বলে। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ হার প্রতি বারে ১০০০ মিলিগ্রাম (১ গ্রাম)। প্যারাসিটামল একটি ‘ওভার দি কাউন্টার মেডিসিন’ অর্থাৎ ডাক্তারের চিকিৎসাপত্র ব্যতিরেকেই এটি কিনতে পাওয়া যায়। তাই অনেকে যখন-তখন অর্থাৎ সামান্য উপসর্গে প্যারাসিটামল গ্রহণ করে। সাধারণভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হলেও অধিক ব্যবহার যকৃতের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি লিভার সিরোসিসও হতে পারে। অ্যাসিটামিনোফেনে যাদের অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা আছে তাদের এই ঔষধ গ্রহণ করা ঠিক নয়। কিডনি সমস্যা থাকলে বা মাদকাসক্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল সেবন করা নিষেধ। দীর্ঘ মেয়াদে প্যারাসিটামল সেবন করলে হৃৎপেশীর রক্তাভাবজনিত মৃত্যু ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এটি ট্যাবলেট, সিরাপ, সাসপেনশন ও সাপোজিটর ফর্মে পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলের সঙ্গে ক্যাফেইন মিশিয়ে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট প্রস্তুত করা হয়। এতে ব্যথানাশক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ ব্যথা নিরাময়ে দ্রুততর কাজ করে।

প্যারাসিটামল [অ্যাসিটামিনোফেন] এর বিপাকে যকৃতের ভুমিকা

আমাদের শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পৌষ্টিকগ্ৰন্থী যকৃত আমাদের যেমন পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে ঠিক তেমনি ক্ষতিকর বিপাকীয় বর্জপদার্থ সমুহ কে আমাদের শরীরের থেকে দূরীভূত করে। যকৃত আমাদের জেনোবায়োটিক মেটাবোলিজম এর গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে জেনোবায়োটিক মেটাবোলিজম এর Phase 1 এবং Phase 2 বিক্রিয়া সমুহ সংঘটিত হয়। এই বিক্রিয়া সমুহ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জলে অদ্রবনীয় উপাদান সমূহ জলে দ্রবনীয় উপাদানে রূপান্তরিত হয় এবং আমাদের শরীরের থেকে দূরীভূত হয়। যখন আমরা পরিমিত পরিমাণে প্যারাসিটামল গ্ৰহন করি যখন আমাদের জ্বর বা গা হাত পা ব্যাথা থাকে তখন এই প্যারাসিটামলটি জেনোবায়োটিক মেটাবলিজমের Phase 2 বিক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লুকোরোনিক অ্যসিডের সাথে এবং 3′- Phosphoadenosine – 5′- Phosphosulfate [PAPS] এর সঙ্গে যুক্ত হয় এবং যথাক্রমে প্যারাসিটামল গ্লুকোরোনাইড এবং প্যারাসিটামল সালফেট উৎপন্ন হয়। খুব কম মাত্রায় প্যারাসিটামল Cytochrome P450 এনজাইম সিস্টেম দ্বারা বিপাকিত হয়। এই প্যারাসিটামল সালফেট এবং প্যারাসিটামল গ্লুকোরোনাইড মল ও মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে নিঃসৃত হয়।

প্যারাসিটামলের বিষক্রিয়া

আমরা পূর্বেই বলেছি খুব কম মাত্রায় প্যারাসিটামল Cytochrome P450 এনজাইম সিস্টেম দ্বারা বিপাকিত হয়। এই Cytochrome P450 এনজাইম সিস্টেম এ উপস্থিত CYP2E1 এবং CYP3A4 শতকরা প্রায় 5% প্যারাসিটামলকে পরিবর্তিত করে একটি অতিসক্রিয় রাসায়নিক উপাদান N- Acetyl- Para Benzoquinone Imine [NAPQI] উৎপন্ন করে এবং এই উপাদান টি গ্লুটাথায়োন এর সঙ্গে যুক্ত হয় এবং প্যারাসিটামল সিস্টিন এবং মারক্যপচুরিক অ্যসিড উৎপন্ন করে শরীর থেকে বহিঃস্কৃত হয়। কিন্তু যদি আমরা অতিরিক্ত মাত্রায় প্যারাসিটামল গ্ৰহন করি তাহলে প্যারাসিটামল গ্লুকোরোনাইড এবং প্যারাসিটামল সালফেট উৎপন্ন হবে খুব কম মাত্রায় এবং NAPQI এর উৎপাদন হার বৃদ্ধি পাবে এবং এই সময় এই NAPQI আর গ্লুটাথায়োন এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেনা এবং এই মুক্ত NAPQI আমাদের যকৃতের হেপাটোসাইটের মধ্যে জমা হতে শুরু করবে এবং যকৃতের কোষ সমুহকে নষ্ট করতে থাকবে তার ফলে লিভার নষ্ট হবে অর্থাৎ লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার এর সৃষ্টি হবে।

  • নাম-শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়
  • হালিশহর
  • পোস্ট:- নবনগর  
  • জেলা:- উত্তর ২৪ পরগনা 
  • পিন কোড:- ৭৪৩১৩৬ 
  • জন্মসাল:- জানুয়ারি ২০০১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *