Spread the love

অবসাদ
তীর্থ মণ্ডল

কি গো কি হোল আজ এত বেলা হয়ে গেল তবুও তুমি মাঠে গেলে না ? তোমার শরীর টরির খারাপ হোল না তো?
আশুতোষ না ,আজ আর মাঠে যেতে মন চাইছে না। সুভদ্রা একটু শান্ত স্বরে কেন ? না কিছু হয়নি তবুও যেতে মন চাইছে না?
সুভদ্রা তার স্বামীর দুঃখ সে জানে কেন সে মাঠে যেতে চাইছে না, এত খড়ার মধ্যেও কত কষ্ট করে গ্রামের মোড়ল মহাশয়ের কাছ থেকে চার হাজার টাকার বিনিময়ে দুই বিঘা জমি গ্রীষ্মের সব্জি লাগানোর জন্য নিয়ে ছিলেন ।
সে প্রতিদিন রোদে পুরে কষ্ট করে জমিতে সুন্দর সুন্দর বিভিন্ন ধরনের সব্জি লাগিয়েছে যেমন ঝিঙা,লাও কুমড়ো প্রভৃতি । চাষের জমি তৈরি থেকে, বীজ রাসায়নিক সার , এবং সেচনের জন্য মোট তার খরচ হয়েছে ৬(ছয়) হাজার টাকা জমিদার কে দিতে হবে ৪(চার) হাজার টাকা তার মোট খরচ ধরলে হাজার দশেক ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল হাটে গিয়ে আশুতোষকে ২থেকে ৩টাকা কেজি দরে ঝিঙা, লাও প্রত্যেক পিস ১-২ টাকা করে বেঁচতে হয় ।এতে তার যা আয় হয় তাতে তার সংসার কি করে চলবে আর সে মোড়ল মহাশয় কে বা কিভাবে জমির টাকা মেটাবে, সেটা ভেবে ভেবে তার রাতের ঘুম চলে গেছে।
আরো বেশি দুঃখ লাগে যদি হাঁটে গিয়ে কোন ক্রেতা ঠকিয়ে চলে যায়, সেইদিন সে সাইকেল চালিয়ে হাটে গিয়েছিল লাও ও ঝিঙে নিয়ে। এক পয়সাওয়ালা ভদ্রলোক দুই টাকায় দুই টা লাও আর এক টাকা পঞ্চাশ পয়সায় এক কেজি ঝিঙে নিয়ে প্রথমে বলল আমার কাছে ৫০০ (পাঁচশ)টাকার নোট আছে, তাই বাড়ি থেকে খুচড়ো এনে দিচ্ছি। ভদ্রলোক কিছু সময় পর এসে আশুতোষ কে জানালো বাড়িতে খুচড়ো নেই ৩টাকা ৫০ পয়সা আর নিতে হবে না ।আশুতোষ বড় শান্ত মানুষ সে করুন দৃষ্টিতে শুধু তার দিকে চেয়ে রইল।
আশুতোশের এই দুঃখ এক মাত্র তার পরিবার ই জানে ।তাছাড়া তার মতো হতভাগা চাষী তারা হয়ত জানবে গরীব ভাগ চাষীর দুঃখ।
একরাশ অবাসাদ নিয়ে আশুতোষ তার গিন্নি কে জানাল এই বাড় থেকে সে আর চাষ করবে নে, সে শহরে গিয়ে দৈনিক শ্রমের কাজ করবে।তাতে তার হয়ত স্বাধীনতা থাকবে না কিন্তু তার মাথার উপর ঋনের বোঝা তো থাকবে না।
আমি ভাবছি এই ভাবে অসহায় চাষীরা তাদের ন্যর্য দাম যদি না পায় তবে তারা কিভাবে তাদের জীবন চালাবে? আর আশুতোষের মত সবাই যদি একে ,একে কৃষিকার্য্য ছেড়ে দেয় তবে সমাজের কি হবে ? আর কত দিন এই আশুতোষের মত চাষীরা অবসাদে ভুগবে ? প্রায় তো টিভি তে বা খবরের কাগজে চোখে পড়ে চাষীর আত্মহত্যার কথা ।
যারা আমাদের অন্ন তুলে দেয় তারাই আজ অবসাদে ভুগছে, কি জানি কবে তাদের সু দিন আসবে ন্যার্য মূল্য পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *