KABYAPOT.COMবিশেষ সংবাদ

মারমারার নিচে বিপদের বার্তা: ইস্তাম্বুলে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তুরস্ক শ্যামল মণ্ডল | কাব্যপট ডেস্ক | ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Spread the love

মারমারার নিচে বিপদের বার্তা: ইস্তাম্বুলে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তুরস্ক

শ্যামল মণ্ডল | কাব্যপট ডেস্ক | ২৩ এপ্রিল ২০২৫

আজ সকালেই তুরস্কের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক হৃদপিণ্ড ইস্তাম্বুল কেঁপে উঠল এক অদৃশ্য ঝাঁকুনিতে। ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প মুহূর্তেই বদলে দিল শহরের নিত্যদিনের চিত্র। আতঙ্কে মানুষ ছুটে বেরিয়ে এলো ঘরবাড়ি ছেড়ে, থমকে গেল যান চলাচল, স্তব্ধ হয়ে গেল শহরের স্বাভাবিক ছন্দ।

ভূমিকম্পের উৎস ও তীব্রতা

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ইস্তাম্বুল শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মারমারা সাগরের তলদেশে। মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরতায় উৎপন্ন হওয়া এই কম্পন এতটাই তীব্র ছিল যে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কম্পন অনুভূত হয়েছে প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে।

এরপর একে একে আসে ৫.৩ মাত্রার আফটারশকসহ আরও কয়েকটি মৃদু ভূকম্পন, যা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলে।

আতঙ্কের শহর

ইস্তাম্বুলের কুচুকচেকমেসে, সিসলি, ফাতিহ, বেয়োলু সহ একাধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ৭টা ৩২ মিনিটে প্রথম কম্পন অনুভূত হতেই বহু মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, স্কুল ও অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোকজন খালি পায়ে ঘর ছেড়ে রাস্তায় ছুটছে, কোথাও কোথাও ভবনের জানালা ভেঙে পড়ছে, শিশুরা কাঁদছে কোলে, কাঁধে।

ক্ষয়ক্ষতি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ

প্রাথমিকভাবে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে কিছু ভবনে চিড় ধরা, আসবাবপত্রের ক্ষতি এবং ইলেকট্রিক লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর মিলেছে।

তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (AFAD) ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে জরুরি পরিষেবা মোতায়েন করেছে। নাগরিকদের অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়ার, এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি, তবে সমুদ্রের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে।

ভূমিকম্প প্রবণতা ও পূর্বাভাস

তুরস্ক এমনিতেই একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। এটি ইউরেশিয়ান ও আনাতোলিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে মারমারা ফল্ট লাইনে একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা প্রবল।

ভূতত্ত্ববিদ ড. আহমেত এরতুগরুল এক বিবৃতিতে জানান, “এই ভূমিকম্প একটি পূর্বাভাস হতে পারে। মারমারা অঞ্চলের ফল্ট লাইন অনেক বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল, যা এখন আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছে।”

১৯৯৯ সালে ইজমিতে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। সেই ঘটনার অভিজ্ঞতা এখনো তুরস্কের মনে গাঁথা, এবং তাই প্রতিটি নতুন কম্পন নতুন আতঙ্ক বয়ে আনে।

ভবিষ্যতের প্রস্তুতি

বর্তমানে ইস্তাম্বুল শহরজুড়ে ভূমিকম্প প্রতিরোধী নির্মাণের দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে বহু পুরনো ও নাজুক ভবন এখনো রয়েছে, যেখানে বিপদের ঝুঁকি বেশি।

প্রশাসন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার জন্য স্কুল, হাসপাতাল ও আবাসনগুলোকে ভূমিকম্প-সহনীয় করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। সাধারণ নাগরিকদের সচেতন করতে নিয়মিত মহড়ার আয়োজনও করা হবে।

শেষ কথা

প্রকৃতি তার অগাধ শক্তি মাঝে মাঝে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কতটা ভঙ্গুর আমরা। আজকের ইস্তাম্বুল সেই স্মরণীয় মুহূর্তের এক নিদর্শন। প্রাণহানি না হওয়াই আমাদের স্বস্তির কারণ, কিন্তু এটা যেন ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক সংকেতও।


নিচে মানচিত্রের বিবরণ:

মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, যেখানে ইস্তাম্বুল শহর অবস্থিত। শহরের ঠিক দক্ষিণে বিস্তৃত মারমারা সাগর, যার তলদেশেই এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে।

একটি লাল চিহ্নিত বিন্দুতে ভূমিকম্পের উৎস দেখানো হয়েছে — যা ইস্তাম্বুল শহর থেকে আনুমানিক ৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে। কেন্দ্রস্থল থেকে ছড়িয়ে পড়া বৃত্তাকার কম্পন-জোন বা intensity rings মানচিত্রে স্পষ্ট — ভেতরের রিংগুলিতে কম্পন ছিল সবচেয়ে তীব্র, এবং বাইরের দিকে তা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে।

মানচিত্রে ইস্তাম্বুলের প্রধান এলাকা যেমন:

কুচুকচেকমেসে (Küçükçekmece)

ফাতিহ (Fatih)

বেয়োলু (Beyoğlu)

এসব জায়গা বিশেষভাবে চিহ্নিত, যেগুলোতে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে।

মারমারা ফল্ট লাইন মানচিত্রে কালো দাগে চিহ্নিত, যা সাগরের তলদেশ ধরে পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত। এই ফল্ট লাইনের মধ্যেই রয়েছে উচ্চমাত্রার কম্পনের সম্ভাবনা।

ইউরেশিয়ান ও আনাতোলিয়ান টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলও নির্দেশিত, যা এই ভূকম্পনের ভূতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেয়।

——

শেষ কথা

প্রকৃতি তার অগাধ শক্তি মাঝে মাঝে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কতটা ভঙ্গুর আমরা। আজকের ইস্তাম্বুল সেই স্মরণীয় মুহূর্তের এক নিদর্শন। প্রাণহানি না হওয়াই আমাদের স্বস্তির কারণ, কিন্তু এটা যেন ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক সংকেতও।

**************************

আরও পড়ুন

রাজকুমার নতুন ইংরেজী বছরের প্রথমদিনে বই এর পাণ্ডুলিপি তুলে দিলেন দীপলবাবুর হাতে * নিজস্ব সংবাদদাতা ধানবাদ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *