KABYAPOT.COMগল্প

“ভোরের মাঠে ঘুড়ি ও গরু” (স্মৃতির এক পাতা– ছেলেবেলা) -কলমে: শ্যামল মণ্ডল 

Spread the love

“ভোরের মাঠে ঘুড়ি ও গরু”

(স্মৃতির এক পাতা– ছেলেবেলা)

-কলমে: শ্যামল মণ্ডল

ভোর হতে না হতেই উঠেই পড়েছি। চোখে ঘুম আর মুখে হাসি—আজ মাঠে যেতে হবে, তবে শুধু গরু চরাতে নয়… আজ সঙ্গে আছে এক জোড়া গরু, আর বুকের ভিতরে লুকোনো একজোড়া স্বপ্ন।

 

চটের পুরোনো একটা বস্তায় স্কুলের বই গুঁজে রেখেছি—মা বলেছে, “পড়াশোনা যেন ফেল না হয়, গরু চরায় চরাক!” কিন্তু সে সব তোলা থাক; আসল কথা হলো ঘুড়িটা।

 

সেই লাল-নীল কাগজের ঘুড়ি, নিজের হাতে কাটা—কাঠির কঙ্কালটায় মায়ের সুতো দিয়ে বানানো লেজ, আর হাতে পাকানো লম্বা সুতোয় তার প্রাণ।

এক হাতে গরুর দড়ি, আরেক হাতে ঘুড়ির সুতো—এই আমি, ছোট্ট আমি, যেন এক আধা চাষী আধা কবি!

 

মাঠে পৌঁছে গরু দুটোকে ছেড়ে দিয়ে, বইটা রেখে দিই একটা উঁচু ঢিপির পাশে। বাতাস ধরেছে ভালো, আর কী চাই? ঘুড়িটাকে ছুঁড়ে দিলাম আকাশে, আর সে যেন এক লাফে চলে গেল মেঘের দেশে।

 

গরু খায় ঘাস, আমি দেখি আকাশ। সুতো টেনে আনি আর ছাড়ি, টেনে আনি আর ছাড়ি। যেন জীবনটা ঘুড়ির মতো—যতই উড়ুক, সুতোটা রাখতে হবে শক্ত হাতে।

 

ঘুড়িটা তখন বেশ ওপরে, প্রায় মেঘ ছুঁয়ে। সাদা-ছাই রঙা মেঘেরা যেন তার সাথেই খেলায় মেতেছে—একটু চাপ দিচ্ছে, আবার একটু তুলে নিচ্ছে।

আমি নীচে দাঁড়িয়ে, গরুর দড়ি কোমরে জড়িয়ে, ভাবছি—এটাই বুঝি জীবনের আসল রোমাঞ্চ!

 

কিন্তু হঠাৎই বদলে গেল সব। দূরে বাজ পড়ার মতো শব্দ—গর্জন!

মেঘগুলো ভিজে গেলো গম্ভীরতায়, আর সেই মেঘেরা এক ফোঁটা, দুই ফোঁটা করে ছুটে এলো ঘুড়ির দিকে।

 

ঘুড়িটা প্রথমে নাচলো, তারপর ঢলে পড়লো—ভিজে কাকের মতো কুঁচকে গেল তার বুক।

আমি চটের বস্তা বগলে, গরুর দড়ি হাতে, দৌড় লাগালাম।

গরু দুটো বুঝে গেল—বৃষ্টি মানেই ছুটোছুটি। তারা এগোল সামনে, আর আমি পেছনে হাঁপাতে হাঁপাতে—চোখে-মুখে বৃষ্টি, বুকভরা হাসি।

ঘুড়িটা তখনো আমার হাতে, ভেজা আর চুপসে যাওয়া। কিন্তু সেই দিন, সেই দৌড়, আর সেই বৃষ্টির সঙ্গে একসাথে ওড়া ঘুড়িটার স্মৃতি—আজও একেবারে জীবন্ত।

কলম—চলবে তো?

গল্প:—“একান্ত আপন” – কলমে: মেরী খাতুন

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *