কবিতাগুচ্ছ
তৈমুর খান
************
১
সাধনা
🌳
তবুও একটা গাছ হয়ে দাঁড়াই
চেতনাগুলি পাতা
আত্মবিশ্বাস ফুল ও ফল;
যতই কুড়ুল শান দিক
কেটে ফেলতে পারে না আত্মবোধ—
বাতাসের কাছে পাই বোধিবৃক্ষের বারতা।
২
সাপ
🌳
ভিতরে ভিতরে সবাই সাপ পোষে
সুযোগ পেলে নাচায়
বাইরে শুধু সাপুড়েকেই দ্যাখে
আমারও অনেক সাপ আছে
মাঝে মাঝে তারাও গর্জন করে
সাবধানে থাকি
কত যে রঙিন ওরা
দ্বি-ফলা জিভ বের করে
মনের ভিতরে অনেক গর্ত
গর্তে গর্তে ওরা বাস করে
বাইরে শুধু ঢেউখেলা চুল
টেরি কাটা, রঙিন পোশাক
সুগন্ধ ছড়ায়, হাসে
কোনও কোনও দিন
আত্মদংশনের ক্ষত সারাই করি নিজে
কোনও কোনও দিন ঝলসে যাই
আত্মদংশনের বিষে।
৩
রাত্রিজীবী
🌳
গানের সুরে ধমক দিলে
যাব আমি কেমন করে?
ফুল তুলতে পারলাম না।
বৃষ্টি এল পথে
বৃষ্টির সাথে দেখা হল
আবেগ ছিল সাথে।
এ-শহর তো একটি খাঁচা
সব পথেই তার গোলকধাঁধা
বৃষ্টির হাতে বজ্র ছিল
বজ্রে আমি ভয় পাইনি
আবেগ শুধু কাঁপিয়ে দিল।
আজও আমি বিশ্রাম চাই
বিশ্রামের দুয়ার খুঁজি
কোথায় হিয়া?
ধমক শুধু, ধমকই ক্রিয়া!
আমার কোনো জমক নেই
বাক্যজল, জলবাক্যেই নদী
পার হতে গিয়ে রাত হল তাই
এখন রাত্রিজীবী।
৪
পুরস্কার
🌳
কারা সব পুরস্কার কিনে নিয়ে যায়!
কারা সব পুরস্কার ভাগ করে নিজেরাই!
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি
অনেক বেলা হয়ে গেল আমাদের…
এখন চোখেও সব ঘোলাটে লাগে
এখন কানেও শুনতে পাই কম;
জীবন আর পায়রা হতে চায় না
যদিও জীবনের অনেক বকম বকম;
চারিদিকে ফাঁদ পাতা
ছড়ানো রয়েছে ছলনার শস্যদানা।
দোকানে দোকানে জমেছে ভিড়
সবাই মুকুট কিনতে চাইছে বিমূঢ় খ্যাতির!
এখনও শিল্পী চিনি না আমি—
শুধু বল গড়ে যায় মাঠে অদ্ভুত স্বৈরাচারীর!
আজ কিছু বিকল্প চেতনা আসুক
আমাদের মৃত্যুর পাশে সর্বহারারা হাসুক;
চাটুকারের দরজায় গিয়ে দাঁড়াবো না আর
এখন সবাই যশের মুকুট পায়ের কাছে নামাক।
৫
রোজ ঘর তুলি
🌳
রোজ ঘর তুলি , দেওয়ালে দেওয়ালে
আর নিকোনো উঠোনে বসাই শ্রীমুখ
লক্ষ্মীর হাসিতে যেন উপচে ওঠে সুখ
অদৃশ্য আলোকে স্বপ্ন ওড়ে ডানা মেলে।
রাতের আকাশ নামে আপন খেয়ালে
নক্ষত্রের বাঁশি শুনে নিশি ভোলে দুখ
আমিও নিশির কাছে খুলে দিই বুক
তারপর ছায়া দেখি জ্যোৎস্নার জলে।
দেওয়ালে দেওয়ালে লতা কত ফুল ফোটে
দুর্যোগ ধ্বংসের দেশে চিরন্তন বাসা
সুরের অমলতাস সেই পথেই হাঁটে
অসুখ সারিয়ে দেয় দৈব ভালোবাসা ।
ঢেউ আছড়ায় বিমূঢ় নদী তটে তটে
জলও মেটায় না কারও প্রকৃত পিপাসা ।
৬
পড়ানোর চাকরি
🌳
রোজ অন্ধকার সরিয়ে
বসন্তের বাগান সাজাই
কেউ কেউ ফুটে ওঠে
কেউ কেউ নিষ্প্রভ মলিন
যে ঘরের দরজা খুঁজি রোজ
আসলে তা ঘর কিনা
নিজেরই সন্দেহ হয়
যে পৃথিবীতে সূর্য আনি রোজ
আসলে তা সূর্য কিনা
নিজেই জানি না
তোমরা শুধু জানালা দিয়ে আকাশ দ্যাখো
আর আকাশের নিচে খাটো ধুতি পরা
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব
সেখানেই জেগে আছে কিশোর বিবেকানন্দ
বিস্ময় বালক!