ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান ও তার প্রাসঙ্গিকতা(জন্ম-০৫/০৯/১৮৮৮-মৃত্য:১৭/০৪/১৯৭৫)
অভিজিৎ দত্ত (বিশিষ্ট শিক্ষক ও লেখক)
জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
শুক্রবার (০৫/০৯/২৫) ড: সর্বেপল্লী রাধাকৃষ্ণান এর জন্মদিন যা সমগ্র ভারতবর্ষে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হয়(৬৪তম)।
ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি, দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি,শিক্ষক, দার্শনিক, রাষ্ট্রদূত ইত্যাদি নানা পরিচয়ে যিনি পরিচিত তিনি হলেন আমাদের পরম প্রিয় মানুষ ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান। রাধাকৃষ্ণান তামিলনাড়ুর তিরুতানিতে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বীরসাম্য ছিলেন সামান্য একজন তহশীলদার ও মাতার নাম শিবাকামোম্মা। পড়াশোনা শুরু তিরুপতির লুথেরান মিশন হাইস্কুলে।তারপর ভেলোর কলেজ ও সবশেষে মাদ্রাজ খ্রীষ্টান কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে দর্শন শাস্ত্রে অর্নাস সহ উত্তীর্ণ হন। দর্শন শাস্ত্রে প্রথম হওয়ার জন্য স্যামুয়েল সাথিয়ানাথন স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্ট কলেজে দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম জর্জ চেয়ারের অধ্যাপক। অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক থাকাকালীন ভারতীয় দর্শন নিয়ে ব্যাপকভাবে চর্চা করেন ও সেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করেন। কেননা ইংরেজ শাসনে পাশ্চাত্য দর্শনের উপর বেশী জোর দেয়া হত।রাধাকৃষ্ণান ভারতীয় দর্শনকে খুব ভালোবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। কেননা ভারতীয় দর্শন নিছক জ্ঞানের সাধনা নয়,অধ্যাত্মজ্ঞান বা মোক্ষলাভের সাধনা।যে নৈতিক জ্ঞানের অভাবে সমাজ আজ দিশেহারা।শিষ্টাচার অবহেলিত। মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত। রাধাকৃষ্ণান এইজন্য ভারতীয় দর্শনের উপর দুটো বিখ্যাত বই লিখেছিলেন যা ইন্ডিয়ান ফিলোজপি নামে পরিচিত। রাধাকৃষ্ণান তার কর্মজীবনে যখন যে পদ ই লাভ করেছিলেন তা নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করেছিলেন। ভারতীয় দর্শনকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছিলেন। সৎ,নিষ্ঠাবান, নিরামিষভোজী ও দেশপ্রেমী মানুষটির মূল লক্ষ্যই ছিল ভারতবর্ষকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ স্হানে নিয়ে যাওয়া।গণতন্ত্রকে তিনি খুব শ্রদ্ধা করতেন। তার মতে গণতন্ত্র হল, ব্যাক্তির সম্যক বিকাশে সহায়তা করা ও ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষা করা।
তার জীবনকে সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বামী বিবেকানন্দের, জীব সেবা ঈশ্বর সেবা, তারও জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।রাধাকৃষ্ণান এর মতে শিক্ষার মূল লক্ষ্য চরিত্র গঠন ও আত্মিক উন্নয়ন। আমরা সেগুলো মানছি?শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বাধীন ভারতবর্ষে যে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল (যা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণান কমিশন নামে পরিচিত ১৯৪৭-১৯৪৯)তিনি ছিলেন তার প্রধান। কথিত আছে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে সে সময় যে দশহাজার টাকা মাইনে পেতেন তার এক-পঞ্চমাংশ নিয়ে বাকী ৮০০০ টাকা জনগণের জন্য দিয়ে দিতেন। তিনি নিজে যেমন একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন তেমনই শিক্ষকদের খুব শ্রদ্ধা করতেন। তাই ১৯৬২ সালে তিনি যখন রাষ্ট্রপতি হলেন তখন ৫ই সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন ঘটা করে পালন করার জন্য প্রাক্তন ছাত্ররা জেদ ধরে।তখন রাধাকৃষ্ণান বলেন তার জন্মদিন শিক্ষক দিবস হিসেবেই পালন করলেই তিনি খুশি হবেন । তারপর থেকেই ভারতবর্ষে ঐ দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবেই পালন করা হচ্ছে। রাধাকৃষ্ণান তার কাজের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তাকে ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করা হয়।১৯৬৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে অবসর নেন। এরপর দেশের বাড়ি ফিরে যান। দীর্ঘদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ ই এপ্রিল এই মহান ব্যক্তির মহাপ্রয়াণ হয়।মানুষকে একদিন পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে কিন্ত তার কাজ থেকে যাবে।রাধাকৃষ্ণানের সহজ -সরল জীবন ও তার উচ্চ চিন্তা এবং দেশপ্রেম তাকে অমর করে রাখবে চিরজীবন।কিন্ত আমরা যদি তার জীবন ও কর্ম থেকে কোন শিক্ষা লাভ না করি তাহলে তাকে প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় কি?
আমার এই কবিতাটি প্রকাশ করার জন্য মাননীয় সম্পাদক মহাশয়, এবং কাব্যপট পত্রিকার সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।
Very very nice.
Very nice
[…] শিশুর চাবি… বিশ্বনাথ সাহা […]
[…] আরও পড়ুন:-ভ্রমণ পিয়াসী : বিশ্বনাথ সাহা […]