KABYAPOT.COMভ্রমণ কাহিনী

ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার হাতি খ্যাদা মন্দির ** [ভ্রমণ] রাজকুমার সরকার

Spread the love

ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার হাতি খ্যাদা মন্দির

********************

                  [ভ্রমণ]

রাজকুমার সরকার

——————–

 

১৪ই মে ২০২২ আমাদের গন্তব্য হাতি খ্যাদা মন্দির। নাম শুনে আসছি অনেকদিন থেকেই। যাব যাব করে যাওয়া আর হয় না। আসলে আমরা কবে কোথায় যাব তা মনে হয় ঈশ্বরই ঠিক করে দেন। আমরা যাব বললেই সব জায়গা যেতে পারি না। নানা রকমের বাধা বা সমস্যা এসে পড়ে।

আমি সপরিবারে ঘর থেকে বের হলাম পুরুলিয়ার পথে …..

আমার বাড়ি মোকো, ধানবাদ থেকে পুরুলিয়া ৭৫ কিলোমিটার।পুরুলিয়া পৌঁছে গেলাম ঠিক সকাল পৌনে নটায়। চা খেয়েই সাড়ে নটার সময় টাটা সুমোতে বসলাম।

আমাদের গাড়ি চলতে শুরু করলো হাতিখ্যাদার পথে। পুরুলিয়া থেকে কাঁসাই নদীর ব্রীজ পেরিয়ে বাঁহাতি চলতে লাগলো গাড়ি। ডানদিকের পিচ রাস্তাটা চান্ডিল হয়ে লৌহশিল্প নগরী জামশেদপুর যাচ্ছে।

আমরা বাঁ হাতি বরাবাজারমুখী পথ ধরে চলেছি। পুরুলিয়া থেকে বরাবাজারের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। বরাবাজার থেকে ১৪/১৫ কিলোমিটার পথ হাতিখ্যাদা।

বরাবাজার থেকে হাতিখ্যাদা যাওয়ার রাস্তাটি অতি মনোরম। রাস্তার দুপাশে সবুজ দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম লাউজোড়া গ্রামের ‘হাতিখ্যাদা’ মন্দির। ঝাড়খন্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার ‘বড়াম’ থানার অন্তর্গত একটি গ্রাম- ‘লাউজোড়া’

এখানেই রয়েছে হাতিখ্যাদা মন্দির।

হাতিখ্যাদা নামকরণ কেন হয়েছে?

তথ্য সংগ্রহ করতে লাগলাম স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে।বিভিন্ন লোক যা বললেন তাতে যা বোঝা গেল তা তুলে ধরছি পাঠক পাঠিকাদের…..

খ্যাদানোর অর্থ তাড়ানো।হাতি তাড়ানো।বিশদে আসি।

দলমা পাহাড় থেকে হাতির দল গ্রামে এসে ফসলের ক্ষতি করতো, ঘর বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিত।গ্রামের সকলে গ্রাম্য দেবতার শরণাপন্ন হন। ঠাকুরের অদ্ভুত মহিমা। হাতির দল আসা বন্ধ হতে থাকে পরবর্তীতে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।ঠাকুর হাতি খেদিয়েছেন বা তাড়িয়েছেন একথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।তখন থেকেই হাতিখ্যাদা।

 

লাউজোড়া গ্রামে এই হাতিখ্যাদা মন্দিরকে কেন্দ্র করে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট, হোটেল ইত্যাদি প্রতিদিন মেলার মত ভিড়। স্থানীয়রা জামশেদপুর থেকে জিনিসপত্র এনে বিক্রি করেন। সবধরণের দোকান আছে। বসেছে চুড়ি কানের হার ফিতের থোকান, তেলেভাজা, কোলড্রিঙ্কস, ফুচকা,চপ মুড়ির দোকান। ভাত রুটির হোটেল। মাছ মাংস এর দোকান। এক প্লেট ভাত পাবেন মাত্র ত্রিশ টাকায়। সব্জি, ডাল, একটি ভাজা।

 

এই মন্দিরের অনেক কিছু নিয়ম আছে। এখানে ঠাকুরের মূল মন্দিরের ফটো কেউ তুলতে পারবেন না। নিষেধ আছে। ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া তাই নিষেধ। সুন্দর মন্দিরের তোরণদ্বার হয়েছে। চলছে আরও অনেক কাজ।

 

নারিকেল, নকুলদানা, ফল দিয়ে পূজো হয়। অনেকেই পুজো করেন। খুব জাগ্রত ঠাকুর। অনেকেই মানসিক করে।

মানসিক ভেঁড়া পাঁঠা। কোন কার্যসিদ্ধি হলে আমি ভেঁড়া পাঁঠা দেব তাই দেন ভক্তরা।সকলের মনের কথা শোনেন এই দেবতা যা সকলের মুখে মুখে শুনলাম। অনেকেই মন্দির সংলগ্ন গাছে সুতো বেঁধে আসে। নারিকেল বেঁধে আসে। কার্যসিদ্ধি হলে ওগুলো খুলে আসে। যেটি গাছে বেঁধেছেন সেটিই খুলতে হবে তা নয় যে কোনো একটি খুলে দেওয়া যায়। হ্যাঁ এটাই নিয়ম। গাছে গাছে নারিকেল বাঁধা সুতো বাঁধা।

 

ভেঁড়া পাঁঠা মানসিক শোধ করার পর সেই প্রসাদ কোনো মহিলারা খেতে পাবেন না বা পারবেন না। খেলেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে, পাগল হয়ে যাবে। এই প্রসাদ বাড়িতে এনে ঢোকাতে পারবেন না ।বাইরেই খেতে হবে।

এখানে ভেঁড়া তিন হাজার, সাড়ে তিন হাজার, চার হাজার, পাঁচ হাজার সব দামের পাওয়া যায়। স্থানীয়রা সবকিছু ব্যবস্থা করে দেন। খুব জাগ্রত ঠাকুর হাতি খ্যাদা। সারি সারি হাতি ছোট বড় রাখা আছে সেখানেই পুজো হয়। পাশেই বলি হয়।

 

এখানে ভেঁড়া বলির পর ভেঁড়া পাঁঠা কাটাকুটি কয়ে দেন স্থানীয়রা। ভেঁড়া পিছু একশত টাকা নেয় বা লাগে। মন্দিরেও তাই লাগে। প্রতি ভেঁড়া বলিতে মন্দির কর্তৃপক্ষ নেয় একশত টাকা।

 

এক আরণ্যক গ্রাম্য পরিবেশ। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের ব্যবহার খুব ভালো। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এই জাগ্রত মন্দিরে। তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলেই এত ভিড় যা সহজেই অনুমেয়।

One thought on “ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার হাতি খ্যাদা মন্দির ** [ভ্রমণ] রাজকুমার সরকার

  • Debdas Mukherjee

    পড়লাম। জীবন্ত বর্ণনা।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *