যে হেতু এই History Math এর আবিষ্কার প্রথম বেরুলো, তাহলে এটার আবিষ্কার কী করে হল সেটা নিয়ে বললে, গণিত ইতিহাসবিদগণ এর দূরুহতায় ও স্বাদে প্রবেশ করতে সুবিধে হবে।
সেই অনিবার্যতায় বলছি কাহিনী অতি সংক্ষেপে।
( ১ ) সমর্পিতা নামের একটি মেয়ে ছোটবেলা থেকে নবাব সিরাজ নিয়ে কোনো গল্প আলোচনায় খুব রোমাঞ্চ অনুভব করতো। বড় হয়ে সে পড়াশুনায় মিশে গিয়ে বিষয়টা ভুলে গেল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এবং সেই সাথে শিল্পের নানা বিষয়ে পড়াশুনা করে ও দক্ষতা অর্জন করে সিরিয়াল অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ও পেশায় অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। একই সাথে “কলকাতা দূরদর্শন” টিভি চ্যানেলে একজন সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজে যুক্ত হন।
( ২ ) ২০১৬ সাল মুর্শিদাবাদে স্যুটিং করতে এসে নবাব সিরাজের ইতিহাসের মাটিতে এসে তিনি ছোটবেলার রোমাঞ্চের স্মৃতিকে ফিরে পান এবং ভাবতে থাকেন যে ছোটবেলায় এই নবাবের ইতিহাস নিয়ে পড়তে বসার সুখ ও আলোচনার সময় কেমন রোমাঞ্চ হয়েছিল তাঁর। তিনি এরপর নিজের জীবন নিয়ে ভিন্ন মুখি চিন্তাভাবনা করেন। অবশ্যই নিজের সৃষ্টিশীল পেশাকে ধরে রেখে। কারণ, সৃষ্টিশীলতা থেকে সরে আসা মানে জ্ঞানের স্তরের চরম সুখকে দূরে সরিয়ে দেওয়া।
( ৩ ) সমর্পিতা এরপর কলকাতায় ফিরলেন। কিন্তু পরপর মুর্শিদাবাদ নিয়ে ভাবতে থাকেন। কোনো এক অব্যক্ত রোমাঞ্চ ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। এইসব নিয়ে কর্মপেশার বন্ধুদের কাছে নিয়মিত আলোচনা করতে থাকেন। তাঁদের মাঝে থেকে কেউ-কেউ বলেন, “সমর্পিতা, তুমি কোনো মনস্তত্ববীদের কাছে গিয়ে নিজেকে পরীক্ষা করাও।”
সমর্পিতা তখন এক বিখ্যাত মনস্তত্ববীদের কাছে গিয়ে নিজেকে পরীক্ষা করান। তাঁকে অজ্ঞান করিয়ে নবাব সিরাজের বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। তিনি সেই সব প্রশ্নের উত্তর এতটা গভীরে দিয়েছিলেন যে, মনস্তত্ববীদ বলতে বাধ্য হলেন, “সমর্পিতার কোনো মনোরোগ নেই। কিন্তু কিকরে এইসব অসম্ভব উপলব্ধি ও উত্তরগুলি দিচ্ছে সেটা আমার অজানা।”
এরপর সমর্পিতা প্রত্নতত্ত্ব দপ্তরে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁর সামান্য ইচ্ছের কথা জানান। সেই ইচ্ছে হল, ভাগীরথী নদীর পশ্চিমে নবাব সিরাজের কবর স্থান খোসবাগে তিনি নবাবের কবরে স্নান করিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে চান, নিয়মিতভাবে, নিজের সময়ের সম্ভব অনুযায়ী।
সেই অনুমতি পেয়ে তিনি সেটাই করতে থাকেন। নিজের নীরবতাকে সাথে নিয়ে। এবং মুর্শিদাবাদে কয়েকদিন থেকে আবার কলকাতায় আসেন, আবার মুর্শিদাবাদে যান, এইভাবে পেশায় পর্দা অভিনয় ও কলকাতা দূরদর্শনে সংবাদ পাঠ সহ আরো নানা রকম শিল্পের কাজ করে, অনুষ্ঠান করে মুর্শিদাবাদে আসা যাওয়া করতে থাকেন।
এর মধ্যে পরপর শুরু করেন মুক্ত চিন্তায় বহুবিধ শিক্ষার স্কুল। “নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ” নাম দিয়ে এই স্কুল হল। সব বয়সীদের জন্য। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরকে বলা হল “Knights”। মানে চিন্তার সৎ সৈনিক। স্কুল হতে শুরু করে কবরের দাওয়ায়, কখনও মাঠে। স্কুল বাড়ি তৈরির জন্য জায়গা খোঁজাখুঁজি হতে শুরু করল। সব ছাত্রছাত্রীরা এই রকম মুক্ত আবহাওয়ায় পড়তে চায় আর এর সুখ নিতে চায়।
এসব কাজ ও ইচ্ছে চলছিল নিজস্ব নীরবতায়। ২০২০ সালে এইসব কাজের প্রথম প্রকরণ এর সময় “Manas Bangla” ইউটিউব চ্যানেলের থেকে গবেষক সাংবাদিক মানস সিনহা একদিন সমর্পিতাকে নিয়ে সংবাদ করবার দাবী জানান। সমর্পিতা বলেন যে তাঁর এই কাজ একান্ত নির্জনের আনন্দে করা। তাই তথাকথিত নিয়মে প্রচারের আলোয় তিনি আসতে চান না।
এই কথাবার্তার পরে প্রায় এক বছর পরে ২০২১ সালে আবার মানস সিনহা সমর্পিতাকে জানান যে ভালো কাজের প্রচারটা প্রচারের জন্য অবশই নয়, কিন্তু এর প্রচার সামাজিক আলোয় এলে সেটার সফলতা আরও সময় মতো হবে, আপাত সাবলীলতায়। সমাজের কাজে দরকার হবে।
এই ধরণের যুক্তি এড়াতে পারেননি সমর্পিতা। সাক্ষাৎকার দিলেন। দুইজনে মুখোমুখি বসে ঘাসের উপরে। সেখানে আলোচনা হল নবাব সিরাজ সহ সংযুক্ত অনেক কাহিনীর সত্যমিথ্যা ব্যাখ্যা ও আকর্ষণীয় আলোচনা। ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারীতে সেটা বেরোয় মানস সিনহার “Manas Bangla” চ্যানেলে, link : “লুৎফুন্নিসার কি পুনর্জন্ম হয়েছিল / Was Lutfunnisa reborn?”।
History Math আবিষ্কারের পিছনে কাহিনী এইভাবে না বললে, এই আবিষ্কারের কার্যকরণগত বিষয়কে গণিতবিদ ও ঐতিহাসিকগণ খুঁজে পাবেন না। তাই এটাকে কোনো বিজ্ঞাপন না ভেবে সাবলীল আবশ্যিক প্রকাশ বলে জানবেন আশা করি।
আমি ইউটিউব খুললেই সেই ইউটিউব ভিডিও বারবার চলে আসত আমার হাতের কাছে। কিন্তু নবাব সিরাজ নিয়ে আমি অনেক অসন্তোষজনক কাহিনী আগে শুনেছিলাম, তাই সেই ভিডিও এড়িয়ে গেছি বারবার। এই ভিডিওর পোষ্টারে ছবি, একজন নারী ও পুরুষ মুখোমুখি কিছু বলছেন ঘাসের উপরে বসে।
কিন্তু সেই ভিডিও এত বেশিবার আসতে শুরু করলো, আমি বারবার এড়াতে গিয়েও সামলাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে ক্লিক করি। তখন ভাবলাম, আচ্ছা কী বলছে দেখি। দেখতে থাকলাম সেই ভিডিও। রোমাঞ্চকর কাহিনী ও ব্যাখ্যার ধারা দেখে অবাক হলাম। নিজে ভরে গেলাম নবাব সিরাজের ইতিহাসের রোমাঞ্চে। সব চেয়ে বড় কথা, সেই ভিডিও এখন ২০২৫ ফেব্রুয়ারীতে তিন মিলিয়ন, মানে ৩০ লাখ পেরিয়ে গেছে। তখন আমি দেখেছিলাম, ২০২১ সালের মাঝামাঝি, তখন হয়েছিল এক মিলিয়ন, মানে ১০ লাখ ভিউয়ার। তিন বা চার মাসের মধ্যে হয়েছিল সম্ভবত এক মিলিয়ন বা দশ লাখ।
সেই সাক্ষাৎকার এর সেই সফলতা এই ইতিহাসের পুরো পরিকল্পনাকে বদলে দেয়। পরপর অবস্থা সাপেক্ষে সমর্পিতা, মানস সিনহা সহ আরো কয়েকজন চিন্তাশীল শুভানুধ্যায়ী বুঝতে পারেন, এই পথে অনেক দূর পথ চলে দেশ ও দশের উন্নয়ন করা যেতে পারে।
সেই ভিডিওতে সমর্পিতা একটা কথা বলছিলেন, Paid writer দিয়ে বই লিখিয়ে ইতিহাস বানানো হয়েছিল। এই যে “Paid writer”, এই শব্দটা আমার মাথায় অবচেতনে ঘুরতো। এখান থেকে শুরু হয়েছিল ইতিহাসকে সঠিক করে পাবার পথ পন্থার আবিষরের ইচ্ছে। কিন্তু সেটা নিয়ে আর অংকের কথা ভাবা হয়নি তখন। উদ্দেশ্যটা সক্রিয় ছিলনা, কিন্তু অসক্রিয়তার মাঝেও মনের মাঝে হয় তো খুঁজছিল এই সমস্যা থেকে বেরুনোর নতুন পথ।
( ৪ ) এর পরের ধাপের কাহিনীগুলি খুব সহজে সংক্ষেপে বলছি।
“Manas Bangla” ইউটিউব চ্যানেলে ঐ নির্দিষ্ট সাক্ষাৎকর ভিডিও বেরুনোর পরে, সেটার জনপ্রিয়তা দেখে ও নবাব সিরাজ নিয়ে নেটিজেনদের মাঝে ক্রমশ গুরুত্ব দেখে সামগ্রিকভাবে বিবিধ নাগরিকগণ ও সাংবাদিকগণ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকেন। পরপর নানা সময়ে বিবিধ মাধ্যমের সাংবাদিকগণ এসে সমর্পিতার, কখনও মানস সিনহার মতামত ও চিন্তাভাবনার ভাষা নিতে থাকেন। এবং পরে আসা সাংবাদিকগণ নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিজেদের মৌলিকতা দিয়ে তাঁদের কাজকে মানুষের কাছে প্রকাশ করতে থাকেন। পরপর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে নবাব সিরাজের ইতিহাস রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে। এরপর, সকলের প্রচেষ্টায়, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাক্তির সহায়তায় হল ৫ই ডিসেম্বর “হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলন”।
তার আগে বলা দরকার ছিল, হীরাঝিল কী। আমরা আগে জানতাম ভাগীরথীর পূর্বপাড়ে “হাজার দুয়ারি” নাকি নবাব সিরাজের প্রসাদ ছিল। কিন্তু এই ভুল ইতিহাস বছর-বছর দেখিয়ে আসা হয়েছিল। দেশের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসকেও ভুল করে দেখানো ও ব্যাখ্যা করা হয়ে এসেছিল। সে কারণ আমরা বলতে পারবনা। হতে পারে ইতিহাসের দপ্তরের কাছে সঠিক তথ্য ছিলনা বা সময় সাপেক্ষে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এইভাবে হয়ে এসেছিল, যেগুলির জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ হয় তো দায়ী ছিলেন না। কিন্তু, মূল সত্য এটাই যে, সমর্পিতা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন ও বিবিধ সাংবাদিকের নানা মতামত ও আলোচনায় প্রবেশ করে নিজের গবেষণা ও intuition এগিয়ে নিয়ে চলেন। খুঁজে পেলেন আসল ইতিহাস। ভাগীরথীর পূর্বপাড়ে “হাজার দুয়ারী” তৈরি হয়েছিল নবাব সিরাজের মৃত্যুর পরে প্রায় ৭০ বছর বা সাত দশক পরে নবাব মিরাজাফরের বংশধরের দ্বারা। তাহলে সেটা নবাব সিরাজের প্রাসাদ হয় কী করে? তাহলে নবাব সিরাজের প্রাসাদ সত্যিকারে কোথায় ছিল।
( ৫ ) এরপর সেই জায়গার সন্ধান মিলল, সেটা ভাগীরথীর পূর্বপাড়ে নয়, বরং পশ্চিমপাড়ে। সেটার নাম ছিল মন্সুরগঞ্জ। প্রাসাদের নাম ছিল মন্সুরগঞ্জ প্রাসাদ। সেখানে প্রাসাদের কাছে ছিল “হীরাঝিল” নামের এক বিরাট ঝিল। সেটার অস্তিত্ব আজ মিশে গেছে গায়ে ঘেঁসা ভাগীরথীর জলে। জায়গাটা ঘন জঙ্গলে ভর্তি। প্রচুর বাঁশ গাছ আর নানা গাছ ও লতাগুল্ময় ভরা। ভয়ংকর জায়গা বলে কেউ সেখানে প্রবেশ করে না। সেই জায়গায় গিয়ে সমর্পিতা খুঁজে বের করেন এক সরকার পরিবার। তাঁদের এক ভাইয়ের অংশের সাথে কথা বলেন তিনি। সেই পরিবারের কয়েক ছেলের মাঝে এক ছেলে, নাম উজ্জ্বল সরকার, তাঁর সাথে কথা বলেন সমর্পিতা। উজ্জ্বল বাবুর বাবার ভিটে সেটি। পুরো বিরাট জায়গা ছিল অনেক পরিবারের বাসভূমি। জানা গেল, সেই বিরাট জায়গা কী করে এসেছিল এঁদের হাতে। নবাব সিরাজের মৃতুর পরে আতংকে তাঁর সব আত্মীয় ও নিকট পরিচিতরা দিশাহারা হয়ে পালিয়েছিলেন।
এদিকে, সেই প্রাসাদ নানা রকম রাজনৈতিক চক্রে কিংবা অযত্নকৃত কারণে ধ্বংস হতে শুরু করে। শোনা গিয়েছিল, ভিত থেকে মাটি তুলে নেওয়া হয়েছিল অনেক আগে। ভিন্ন চক্রান্তের শিকার হয়েছিল বারবার নবাব সিরাজের ইতিহাস, এমনটা আপাতত জানা গেছে। মোটামুটি এইভাবে প্রাসাদ পরপর ধ্বংস হয়ে নদীর জলে মিশে গেল। কিছু ভাঙ্গাচোরা অংশ ডাঙায় থাকল, সেগুলি ঘিরে হয়ে উঠল বিরাট অরণ্য। প্রবেশ অযোগ্য স্থান ছিল।
তখন সেই জায়গায় এক একটা পরিবার থাকতো, আবার তারা অকেজো অনুন্নত জায়গা বলে ছেড়ে পালিয়ে আসতো। এইভাবে হাত ফেরত দখল বদল হতে-হতে শেষে এল সরকার পরিবারের হাতে। তাঁরা এক একটা এলাকা আয়ত্ব করে বাস করতেন, ও পরে সেই সব জায়গা সরকারি আইন ধরে সরকারি রেকর্ড হয় এই পরিবারগুলির নামে। তাঁদের মাঝে একজন উজ্জ্বল সরকার ও ভাই নিখিল সরকারের বাবা। সমর্পিতা সেই সব খোঁজ নিয়ে উজ্জ্বল বাবুর বাড়িতে এসে অনুরোধ করেছিলেন নবাব সিরাজ নিয়ে একত্রে কিছু করা সম্ভব কিনা।
কিন্তু, উজ্জ্বল বাবুরা সহজে মতামত দিলেন না। কারণ, এইসব ক্ষেত্রে শুধু নয়, জীবনের সব ক্ষেত্রেই সজ্ঞানে অনেক কিছু বুঝে মানুষ মতামত দেয়, সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য তাঁরা ব্যাপারটা পরে ভাববার জন্য স্থগিত রাখলেন। পরে তাঁরা ব্যাপারটার সাথে পরপর সংযুক্ত হয়ে এগিয়ে এলেন ও এই আন্দোলনে পরপর সহায়তা করতে থাকেন। এবং তাঁদের প্রথমিক সম্মতিতে এখানে ৫ই ডিসেম্বর ২০২১ সালে আন্দোলন সহ সভা হয়। পরে এই জায়গার একটি অংশ উজ্জ্বল বাবুরা লিখিতভাবে ব্যাবহারের সম্মতি দিয়ে পরপর সেখানে “নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি সুরক্ষা ট্রাস্ট” স্থাপন করার অনুমতি দিলে সেই মত সরকারি রেজিস্ট্রেশন পায় এই ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টের গঠনের আগের কাহিনী বলছি। সেই হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলন। পরে দলিল করে ট্রাস্টকে দানপত্র করা হয়।
( ৬ ) আগে গঠিত হয় হীরাঝিল বাঁচাও কমিটি। বিবিধ পেশা, সংস্থা ও পদ থেকে চিন্তা সচেতন অনেক মানুষ একত্র হয়ে নিরপেক্ষ মানসিকতায় গড়ে তোলেন এই কমিটি। এঁদের আমন্ত্রণে হয় এই আন্দোলন। হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলন মানে, নবাব সিরাজের প্রাসাদ সহ সব রকম ইতিহাসকে রক্ষা করার আন্দোলন, সামগ্রিকভাবে যে কোনো ইতিহাস সচেতন হবার আন্দোলন, হীরাঝিল এলাকা সহ বিরাট এলাকাকে ভাগীরথীর আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার দাবী সহ আরও অনেক বিষয়। ২০২১ সালে ৫ই ডিসেম্বর বিরাট র্যালি হয় দুই ও তিন চাকার র্যালি, ভাগীরথীর ঘাট থেকে। বিবিধ স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকগণ সেখানে র্যালি করে আসেন সমর্পিতার তৈরি স্লোগান সহ।
“ইতিহাসে গরমিল,
জেগে ওঠো হীরাঝিল।”
তাঁরা একত্রে বাগানপাড়া অটো স্টপেজে এসে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করে সভা করেন। পরপর, উচ্চ শিক্ষিত দাদারা জ্ঞানের প্রতি কর্তব্যের ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসে এখানে জঙ্গল পরিস্কার করেন, সেই দৃশ্য দেখবার মত ছিল। তারপর গাছগুলি লাইমিং হয়। আরেকটি কথা, প্রায় পঞ্চাশটি সংস্থা থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রে পত্র গিয়েছিল, হীরাঝিলের উন্নয়নের জন্য ও অন্য কয়েকটি দাবী সহ।
তারপরে এঁরা বাংলাদেশে থাকা নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের সহায়তায় করেন বাংলায় “হীরাঝিল বাঁচাও” ফেসবুক। সেখানেই সব ধারাবাহিক সংবাদ থাকতো।
( ৭ ) তারপর এখানে পরপর উন্নয়ন শুরু হতে থাকে বিভিন্ন মানুষের সহায়তা ও সমর্পিতার নিজের দেওয়া সম্মিলিত অর্থে। ২০২২ সালে ২৩ শে জুন পলাশীর যুদ্ধ দিবসে এখানে শহীদ বেদী উদ্বোধন করতে আসেন বাংলাদেশ থেকে আসা নবাব সিরাজের নবম বংশধর সৈয়দা মেহমুদা ও মুর্শিদাবাদে প্রাসাদে থাকে আজোবধি ভারত সরকারের আইনে “নবাব” উপাধীতে থাকা “Nawab of Murshidabad” এর পরিবারের ছোটে নবাব রেজা আলী মির্জা।
এখানেই যখন সমর্পিতা গেয়েছিলেন, আমার লেখা তাঁর সুর করা প্রার্থনা সঙ্গীত,
“নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ,
আমাদের তুমি গর্ব, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব।”
মোট ১২ লাইনের এই সঙ্গীত উনি যখন কয়েকজনকে নিয়ে গাইছিলেন, তখন দূর থেকে সেই সঙ্গীতের সার্বিক আবেদন দেখে সেখানে নিজেদের বিনীত আগ্রহে এসে দাঁড়ান সৈয়দা মেহমুদা ও সৈয়দ রেজা আলী মির্জা। প্রসঙ্গত বলছি, এই সম্মানীয় রেজা আলী মির্জা একজন সুদক্ষ গজল গায়ক। নবাবী সময়ের পুরানো বাগানে গিয়ে তিনি গজল গেয়েছিলেন, একটি ইউটুবে দেখেছিলাম, সেই রোমাঞ্চ আমি বুঝাতে পারবো না। যেন সেই পুরানো সময়কে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ঐ প্রার্থণা সঙ্গীতটি তাঁরা সকলের সাথে একত্রে গাইতে থাকেন। এটি ছিল সত্যি একটি ঐতিহাসিক দৃশ্য। আমার কল্পনার বাইরে। সাংবাদিক মানস সিনহা, উচ্ছাসে আপ্লুত হয়ে আমায় ইমেইলে লিখেছিলেন, “ঋদেনদিক বাবু , আপনি একশ বছর বেঁচে গেলেন।” বলেই তিনি ঘটনার ব্যাখ্যা করেছিলেন।
সত্যি, এই রকম কিছু নিরপেক্ষ মনের মানুষ না থাকলে কি আমার মত নিরপেক্ষ চিন্তার মানুষেরা আলাদা দিগন্ত পেতে পারে?
( ৮ ) এখন, এই ইতিহাসের পর্যায় বলতে গিয়ে এই সঙ্গীত নিয়ে আছে অনিবার্য কাহিনী। সেটা না বললে ইতিহাস নিয়ে অংক আবিস্কারের কাহিনীর অভিযান বুঝানো যাবে না। বেশ বিস্তারিত কাহিনী তো, পুরোটা পড়ে, নিজেরা মনের ভিতরে পরে-পরে সাজিয়ে নেবেন।
২০২১ সালে ফেব্রুয়ারীতে Manas Bangla” ইউটিউব চ্যানেলে সমর্পিতার দ্বারা নবাবের কবরে স্নান করিয়ে ফুল দেওয়া ও নবাবের নামে স্কুল গড়ে সেই বিষয়ে তথ্য সহ সামগ্রিক বিষয়ে সাক্ষাৎকার বেরুনোর পরে সেটা তিন মাস মত হবার পরে আমার হাতে আসে ইউটিউবে। আগেও বোধ হয় বলেছি, আমি নবাবের উপরে অনেক বিরক্তিকর কাহিনী আগে শুনেছিলাম। তাই, ইউটিউব খুলতে গেলেও বারবার হাতের কাছে আসা ঐ ইউটিউবকে বিরক্তির সাথে এড়িয়ে গেছি। কিন্তু কী আশ্চর্য, বারবার সেটা আমার হাতেই আসছিল। তখন বাধ্য হয়ে ক্লিক করি। আর অবাক হই। জীবনে কত বড় মুর্খ হয়ে থাকতাম নবাব সিরাজের ইতিহাসকে সঠিক অর্থে না জেনে।
তারপর, সেই মুগ্ধতায় আমি মানস সিনহাকে, উনাকে মানসদা বলি, কিন্তু এখানে বিষয়ের দরকারে তাঁকে সাংবাদিক উল্লেখে বারবার মানস সিনহা বলছি। তাই, এই বিষয়ে আমায় অভদ্র না ভেবে ক্ষমা করবেন।
তাঁকে আমি ইমেইলে লিখেছিলাম, দাদা, আমি নবাব সিরাজ নিয়ে বা সংযুক্ত বিষয় নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন করলে আমি কি উত্তর পেতে পারি।
উনি কয়েকদিন পরে জানালেন যে উনি কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাই আমার সময়ের সাথে মিলিয়ে উত্তর দিতে পারবেন না। এবং তাছাড়া উনি কোনো ব্যক্তির কাজকর্ম না জেনে তাঁর সাথে পরিচয়ের সম্পর্ক রাখেন না।
সঠিক বাস্তববাদী কথা। আমি প্রথমের ইমেইলে তাঁকে আমার পরিচয় দিইনি। কারণ, সেটা আমার মর্যাদায় বেধেছিল। উনার মত মানুষকে আমি আমার কী কৃতিত্বের কথা শোনাতে পারি! কিন্তু তাঁর ঐ কথায় আমি বাধ্য হয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে জানালাম, দাদা, আমি পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষায় কবি-উপন্যাসিক-গীতিকার-সাংবাদিক।
তখন আমি স্প্যানিস শিক্ষায় প্রবেশ করিনি।২০০৯-১০ সাল থেকে স্প্যানিস শেখার জন্য কয়েকটি বই কেনা হয়ে বাক্সে পড়েছিল। কিন্তু নানা জটিল সামাজিক লোকদের দ্বারা তৈরি নানা বাজে অবস্থায় চঞ্চলতায় বছরের পর বছর ভয়ানক অবস্থায় কাটিয়েছি। এই সমাজ পরিবেশ এমন প্রকরণে সাজানো হয়েছে, বা সেজে আছে, এর মাঝে সঠিক চিন্তার মানুষদের কত রকমের কত কিছু সহ্য করতে হয়, সেই সব আমার চেয়ে আর কজন জানে জানিনা। আমার অভিজ্ঞতার বাইরেও অন্য কারোর অভিজ্ঞতা থাকতে পারে, সেগুলি যে যার নিজস্ব। যাইহোক, তখন আমি স্প্যানিস ক্লাসে প্রবেশ করিনি, তাই পেশায় ইংরেজি ও বাংলায় কবি-লেখক হিসেবে পরিচয় দিতাম।
তাই ২০২১ সালে মানসদাকে জানালাম, এই পরিচয়। তারপর উনি আগ্রহ দেখিয়ে জানান যে তাঁর এই ব্যাপারটা ভালোলেগেছে, কারণ আমি পেশায় ইংরেজি ও বাংলায় কবি-উপন্যাসিক-গীতিকার-কলামিষ্ট।
তারপর আমি ইমেইলে বলেছিলাম, দাদা, আমি কয়েক মাস অন্তর হয় তো কোনো-কোনো তথ্য জানতে চাইব। তবে তেমন কিছু নয়। আমি নবাব সিরাজ ও সমর্পিতাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চাই। যদি দরকারে লাগে কোনো তথ্য সহায়তা করবেন। প্রশ্ন পাঠালে আপনার মত সময় করে আপনি যে কোনো দিন উত্তর দেবেন। তাতে কোনো অসুবিধে নেই।
এরপরে আমি মাত্র ২৫ পংক্তির একটা কবিতা এমন লিখতে চাইলাম, এমন কবিতা লিখব এই বিষয়ে, সেটি যেন অমর হয়ে থাকে। কিন্তু, লিখতে বসে লিখলাম কয়েকদিনে পনেরটি কবিতা ও গান, ইংরেজি ও বাংলায়। যোগাযোগ করলাম, কবি ও
kabyapot.com ওয়েবসাইটের
সম্পাদক শ্যামল মন্ডলের সাথে। আবেদন করলাম, এটি ভালোলাগলে গুচ্ছ ছাপতে হবে। কারণ, এই লিংক নবাব সিরাজের ইতিহাস রক্ষার দপ্তরে যাবে।
উনি আমায় জানালেন যে আমার পুরো লেখাগুলি না পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
আমি যদিওবা অনেক আগে থেকেই তাঁর ওয়েবসাইটে লেখা বের করি। এমন কী তাঁর তরফে মুদ্রিত কবিতা সংকলনেও আমার কবিতা বেরিয়েছে। কিন্তু সম্পাদকের দায়িত্বে তাঁর দায়িত্ব প্রতিটি লেখা দেখে নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো। সেই মত আমি তাঁকে লেখা পাঠালাম ১৫টি কবিতা ও গান, নবাব সিরাজ সহ সমর্পিতা ও তখনকার মুহুর্তে এই সম্পর্কিত কাজগুলি নিয়ে।
পাঠানোর দিন রাত্রে বা দুদিন পরে বেরুলো। সেটার লিংক পাঠালাম ইমেইলে মানসদাকে। তারপর এই নিয়ে আমি আর কিছু জানতাম না। তবে মনে হয়েছিল, একটা ইতিহাস নিয়ে ১৫টি কবিতা ও গান বের করলাম, এই নিয়ে আর কী ভাবনা আসবে? একটা কবিতা লিখতে চেয়ে ১৫টি কবিতা, গান লিখলাম, এর বেশি চিন্তা সম্ভব নাকি?
এই চিন্তা এইভাবেই চলছিল।
( ৯ ) মাস খানেক পরে মানসদা আমায় একটা অডিও পাঠালেন, সমর্পিতা আমার একটি লেখা নিয়ে কাজে লাগিয়েছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল “নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ” এর জন্য লেখা —
“নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ,
আমাদের তুমি গর্ব, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব…”
এই ১২ লাইনের প্রার্থণা সঙ্গীতকে সুর দিয়ে গ্রহণ করেছেন। সেটা দেখবার জন্য আমাকে অডিও পাঠিয়েছেন।
আবার বলি, সেটা গ্রহণ করেছেন, কবি – সম্পাদক শ্যামল মন্ডলের “Kabyopot.com”ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সেই গুচ্ছ কবিতা-গান থেকে।
আমি তো অবাক। কত উদার ও মুক্ত মন ও স্বভাবের এঁরা। যদিও একই সাথে তাঁরা দেখেছিলেন সাহিত্যে আমার আরো নানা কাজ ওয়েবসাইট থেকে। কারণ, একজনের রচনার চরিত্র, ধারা ও ব্যাক্তি মানব সত্তার বিভিন্ন দিকের গভীরের সত্য না বুঝে এইসব অবস্থানে কারোর সৃষ্টি নির্বাচিত হয় না। একই সাথে বিষয়ের সাথেও মানানসই হতে হবে।
না, বিষয়টি এমন নয় যে, আমি একমাত্র সেই জায়গায় নির্বাচিত হবার যোগ্য ছিলাম। আসলে আমার মাথায় প্রথম এইসব চিন্তা এসেছিল, ও সামগ্রিক বিচারে আমি নির্ণীত হয়ে ছিলাম, তাই। আমার জায়গায় আগে অন্য কেউ নির্বাচিত হলে আমিও ঐ জায়গা পেতাম না। বিষয়টিকে এইভাবে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। এইগুলি কাকতালীয় যেমন নয়, তেমনি পরিস্থিতিগত কারণে কেউ না কেউ আগে উঠে আসে এইভাবে। বলা উচিত, একটি সামঞ্জস্যতার ঘটনা।
আমি মুগ্ধতার বাইরে বিচরন করতে থাকলাম। বাপি ও মাকে জানালাম। এদিকে, আমার সঙ্গীত রচনা শিক্ষার গুরু, আকাশবানীর কলকাতা বিভাগের গীতিকার দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, ওরফে দুলাল বিশ্বাস, তাঁকে এই আনন্দ সংবাদ দিলাম। এইসব লাইনে, মানে পেশাদারী লাইনে কিংবা যে কোনো সৃষ্টিশীলতায় অনিবার্য কারণেই এই রকম সমাজ ব্যবস্থায় পরিবার থেকে পরিচিত কেউই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কাজের জন্য প্রকাশ ও গোপনীয়তা টুকু কেবল সীমাবদ্ধতায় রাখতে হয়, কিন্তু দুলাল বাবু আমার সঙ্গীত রচনা শিক্ষার গুরু এবং বিশ্বাসী জন। একই সাথে তিনি একজন বিশিষ্ট সুরকার ও এক সময় বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ছিলেন। একজন পরিনত সঙ্গীত শিক্ষক।
তাঁর কাছে পাঠিয়ে ছিলাম হোয়াটসাপে, এই সুখবরের বাস্তবতা দেখাতে। কোনো বিচার করার জন্য নয়। মানে সুর ও গায়কির বিচারের জন্য নয়। তিনি, গানটা অডিওতে শুনে আমায় জানান, “ঋদেনদিক, এই সঙ্গীত লেখার মাঝে কিছু জায়গা আরো নরম ও বিতর্কমুক্ত করা উচিত। লেখনি ভালো হবার জন্যই দপ্তর নিয়েছেন। কিন্তু, যদি, এই ছন্দের অবলম্বন ঠিক রেখে কয়েকটি শব্দ বদল করে আরো fresh করতে পারো সেটা সব সময়ের জন্য ভালো হবে।”
আমি দুলালদাকে জানালাম, “দাদা, এই গুচ্ছ লেখার জন্য এত শ্রম করেছিলাম যে এই নিয়ে আর ভাবতে মাথায় আসছে না।” উনি জানান, “কিন্তু, তোমাকে তো ওটা করতেই হবে। সময় আছে, আরো ভালো করার, তাহলে সেই সুযোগ ছাড়বে কেন?”
আমি বাধ্য হয়ে, তাঁর আদেশ অমান্য করতে না পেরে প্রতি দিন দু তিনটি শব্দ বদলে একই ছন্দ ও মিটারে set করে গানটা পাঠাই। আর উনি জানান, “আরো দেখ। আরো চাই।” এইভাবে তিন বা চার দিন পরপর পরিশ্রম করে গানের ভিতরের কয়েকটি লাইন বদলে, কোথাও শব্দ বদলে, সেই আগের মিটারেই লেখাটাকে বদলাই। একদিন দুলাল বাবু আমাকে জানান, ‘এবার আমার শান্তি হয়েছে। দপ্তরে সব কথা খুলে বলে পাঠিয়ে দাও।” তারপর নিজের লেখা নিজে ভালো করে দেখে ভাবলাম, হ্যাঁ, এই পরিবর্তনে আরো ভালো হয়েছে। তারপর স্বস্থি নিয়ে সেটা মানসদাকে পাঠিয়ে বলি, “মানসদা, সঙ্গীতটা আমি আরো সুন্দর করতে মিটার ঠিক রেখে ভিতরের কিছু অংশ বদলেছি। আপডেট কাজটাও দিলাম। আগেরটা ও পরেরটা, দুটোর মাঝে যেটা ভালো মনে হবে, সেটা ফাইন্যাল করবেন। আমার সঙ্গীত রচনার গুরু, টিউশনি নিয়ে গান লেখা শিখেছিলাম যাঁর কাছে, তাঁকে পাঠিয়েছিলাম খুব সুখবর হিসেবে এই অডিও। উনি নানা যুক্তি দেখিয়ে আমায় বলেছিলেন, আরো fresh করতে। তাই সেটা করে দিলাম। এবার যেটা ইচ্ছে ফাইন্যাল করতে পারেন।”
তারপর বেশ কিছু দিন পরে, উনি আমায় একটা ক্যাজুয়েল ভিডিও পাঠালেন, স্কুলে হচ্ছে আমার লেখা সেই সঙ্গীতের প্রার্থণা। এবং দ্বিতীয় বারের পাঠানোটাই ফাইন্যাল হয়েছে।
তারপর আমি মানসদাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দায়িত্বের হিসেব নিয়ে বলি, “দাদা, আমি কি এই ক্যাজুয়েল ভিডিও ভাইর্যাল করব?” উনি জানালেন, “না, আপনার জন্য আরো আকর্ষনীয় খবর আছে। অপেক্ষা করুন।”
তাঁদের মত তাঁরা ভাববেন। আমি চুপ থাকলাম। কারণ, এইসব কাজ অনেক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এক একটা ধাপ এগোয়। কোনো কিছু হাতে পেয়েও শেয়ার করা চলবে না। প্রচার চলে না। তারপর একদিন উনি পাঠালেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার কবরে সাজিয়ে আমার সঙ্গীত গাইছেন, নিজের স্কুলের অনেককে নিয়ে।” আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তারপর, সেটাও ভাইর্যাল করিনি। আর এটা নিয়েও জিজ্ঞেস করিনি। কারণ, এইসব ক্ষেত্রে নিজের আবেগিয় জিজ্ঞাসা বা কথোপকথন কাউকে যেন অতিষ্ট না করে তোলে। আচরণের হিসেবেই মানুষ সঠিক নিয়মে পরপর সফলতা পায়। আর সেটাতে নাটক থাকবে না। আমি অন্তরের চরিত্রে ও বাহিরের চরিত্রে নিজেকে সেইভাবেই গড়ে তুলেছিলাম।
এরপর একদিন মানসদা একটা আপলোড ভিডিও পাঠালেন। সেটা দেখে অবাক হই। Share করতে থাকি। সেটাতে এই ইতিহাসের সাথে নানা কাহিনীর পরিভ্রমণ একত্র করে একটা ভিডিও। তাতে শেষের দিকে আছে আমার সেই সঙ্গীত, নবাব সিরাজউদ্দৌলার কবরে স্নান করিয়ে ফুল দিয়ে, স্কুলের অনেককে একত্রে সাজিয়ে বসিয়ে ও দাঁড় করিয়ে সঙ্গীতটি গেয়েছেন।
যে নবাব সিরাজ ও তাঁর কাহিনী ভারতীয় ও বৃটিশ ইতিহাসের মূল ইতিহাস, যেখান থেকে ভারতের স্বাধীনতার দাবী বা যুদ্ধ শুরু, যে ইতিহাস শিশু বয়স থেকে বড় বয়েস অবধি পড়তে হয়, মুখেমুখে ফেরে, সেই ইতিহাসের কেন্দ্রে আমার লেখা সঙ্গীত প্রার্থণা সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত, আবার সেটার সুর ও মূল কন্ঠে সেই ইতিহাসের আন্দোলনের Heroine, অভিনেত্রী, কলকাতা দূরদর্শন-এর এক সংবাদ পাঠিকা তথা গবেষিকা, সমর্পিতা।
এইসব কি কল্পনাতেও আসে। কারোর সাথে কারোর মুখোমুখি দেখা বা পরিচয় নেই, কেবল কাজের গুণে ও ছবির মনস্তত্বের উপরে পারস্পরিক আস্থাভাজন হয়ে এই জায়গা পাওয়া। এগুলি কি কল্পনাতেও আনা সম্ভব ছিল।
ছোটবেলা থেকে বড়-বড় স্বপ্ন দেখার বাস্তবতা ও বছরের পর বছর নিজেকে তৈরি করার মেহনতির অনিবার্যতা আরো ভালো করে বুঝলাম।
সেই সঙ্গীতটি, নবাবের নামিত স্কুলে প্রতিদিন প্রার্থণা সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয় তাই নয়, ৫ই ডিসেম্বর ২০২১ সালে হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলনেও সেটি ব্যাবহার হয়েছিল ও আন্দোলনের নানা পরিসরে সেটি গাওয়া হয়। অবস্যই পরিস্থিতির অবস্থান বিচার করেই গাওয়া হয়। এগুলো তো সহজ কারণ ও প্রচারের অবলম্বন নয়। তাই সেইসব বিচার হল কমিটির নিজস্ব বিচার ও আন্দোলন সহায়ক বহু মানুষের পরোক্ষ সমর্থন।
সেই ভিডিও link, “নবাব সিরাজউদ্দৌলার হীরাঝিল প্রাসাদে কে এই লুৎফুন্নিসা / Begum Lutfunnisa at Hirajhil Palace” প্রকাশকাল, অক্টোবর ২০২১ সাল, আজকে এই ২০২৫ সালে মার্চে Viewers পেরিয়ে গেছে ছয় লাখ। এসব কাহিনী এইভাবেই চলতে থাকে। অন্য অনেক চ্যানেল এগুলি বের করেছিল, তাঁদের মত সাজিয়ে। সেগুলিও অনেক ভিউয়ার হতে থাকে। সেগুলিও দেশে বিশ্বে খুব পরিচিত চ্যানেল। তাদেরও বিভিন্ন ভিডিওতে হাজার-হাজার, কোনোটা লাখ-লাখ ভিউয়ার হয়। এবং তাঁরা সকলেই Scholar Journalist. এবং পারস্পরিক কোনো দড়ি টানাটানি খেলার সংর্কীর্ণতায় না গিয়ে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহায়তাদানকারী সাংবাদিক তাঁরা। তাই তো সম্ভব হয়ে উঠেছে এত সুস্থ প্রকরণে এইভাবে গিয়ে যাওয়া।
এই “হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলন”, “খোসবাগ যত্ন আন্দোলন”, নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ সহ এই sector এর পরিবেশে এলে ভুল চিন্তা বদলায়, চরিত্র অহং নরম হয়, স্বপ্ন সতেজ হয়, দেহ উজ্জ্বলতা পায়, জীবনের অনেক ভ্রম কাটে, মনে অফুরন্ত স্বস্থির মুর্ছনা হয়। আর, অবিশ্বাসের সমাজে কিছু তো ভালো মানুষ আছে, এটা বিশ্বাস হয়। শিশুরাও যে কত উচ্চ চিন্তা করতে পারে, ভুল বায়না না করে উন্নত আলোয় জাগতে চায়, সেইসব প্রমাণ এখানে পাওয়া যায়। এই আশাহত সমাজে কত মানুষ উন্নত সামাজিক চিন্তা নিয়ে চুপচাপ বাঁচেন, শিশু, তরুন, যুবক থেকে সুদীর্ঘায়ু মানুষ, সেই সমন্বয় এখানে দেখা যায়। আমি এর দ্বারা বলছি না যে এটাই একমাত্র মুক্ত জ্ঞান ও সুস্থ হবার জায়গা। আমি বলছি দেশে, বিশ্বে অনেক স্বস্থিকর জায়গার মাঝে এটিও একটি।
অন্যদিকে, সমর্পিতার নিজের সৃষ্ট স্কুল থাকলেও, সাধারণ সরকারি ব্যাবস্থায় এই ডাহাপাড়া অঞ্চলে ১৬টি গ্রামে একটিও মাধ্যমিক স্কুল না থাকায়, সেটা নিয়েও আকর্ষণীয় স্লোগান বানিয়ে সমর্পিতার গন আন্দোলন সকলের আস্থা অর্জন করেছে। নদী পেরিয়ে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে যায় বলে সময় নষ্ট হয়। তাই, ডাহাপাড়া অঞ্চলের মাঝে মাধ্যমিক স্কুল তৈরির দাবী। শুধু ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত বিষয় নয়, জীবনের সার্বিক সত্যে বহুবিধ জীবন বোধের তৃপ্তির আয়োজনে এঁদের স্বপ্ন ও কর্মের উপস্থিতির উপস্থিতি।
( ১০ ) এরপর হীরাঝিল হতে ছিল আরো স্বচ্ছ ও চকচকে। অন্যদিকে খোসবাগে উন্নয়নের দাবী করা হয়। সরকারি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাঁদের অবস্থানকে ধরে রেখেও এই আন্দোলনকে সফল করার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করেতে থাকেন। মুর্শিদাবাদে নাগরিকগণ ও ইউটিউবে লাখ-লাখ নেটিজেন, এঁদের সকলের কাছে বিষয়টি চর্চায় চলে আসে।
হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলন তাই শুধু হীরাঝিল রক্ষার আন্দোলন হিসেবে নয়, সামাজিক নানা বদলের জন্য একটি চিন্তনের পদযোগ।
( ১১) এখানে বলে রাখি, পলাসীর যুদ্ধ ও বক্সার যুদ্ধ নিয়ে কিছু কথা। এখানে হয় তো বেমানান লাগতে পারে, কিন্তু এটা জানলে, বিষয়ের জ্ঞানটা অনেক বলিষ্ট হয়। কারণ, হীরঝিল বা নবাব সিরাজের প্রাসাদ স্থান কেন বেনামে বেপাত্তা হয়ে অজানা ছিল সেটা নিয়ে কিছু বলা দরকার। কারণ, একটার সাথে আরেকটা সংযোগ আছে।
নবাব সিরাজের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর নবাব হবার পরে, তারপরে মিরজাফরের জামাই মীরকাশিম নবাব হবার পরে, বক্সার যুদ্ধ হয় ১৭৬৪ সালে, দিল্লীর নিকটে। সেখানে ইংরেজদের তরফে বৃটিশ ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানীর ক্যাপ্টেন মুনরোর ১৮,০০০ সেনার মুখোমুখি হয়েছিল ভারতের ত্রয়ী শক্তি ভারতের সম্রাট ২য় শাহ আলম, অয্যোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও বাংলার নবাব মীরকাশিম। তখন বাংলা প্রদেশের মধ্যে ছিল অখন্ড বাংলা, মানে বাংলাদেশ সহ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা। যাইহোক, এই এই বিরাট বাংলা রাজ্য সহ তিন শক্তির ছিল ৪০,০০০ হাজার সেনা। তবুও এখানেও প্রায় জেতা যুদ্ধটা হারলো বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য। প্রসংগত বলে রাখি, পলাসির যুদ্ধক্ষেত্রে যখন নবাব সিরাজ মুখোমুখি হন ইংরেজের সাথে, তখন, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর প্রধান ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। অর্থাৎ দুটো যুদ্ধ নিয়ে শত্রু ও মিত্র পক্ষের ইতিহাস এটাই। পলাসীর যুদ্ধক্ষেত্রে রবার্ট ক্লাইভ, বক্সার যুদ্ধক্ষেত্রে মুনরো, এই দুজন ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন।
যাইহোক, বক্সার যুদ্ধ হবার পরে ভারতের সরকার ইংরেজদের হাতে পুতুল সরকার হল। যেমনটা নবাব সিরাজকে মেরে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা হয়েছিল হয়েছিল ব্রিটিশ এর অধীন। মিরজাফর নবাব হয়ে হয়েছিলেন পুতুল নবাব।
( ১২ ) এরপর আমার লেখা নবাব সিরাজ কেন্দ্রিক সাহিত্যের দিকে আসছি। যা-যা হল, সেটা বলছি। আমি এই বিষয়ে আরো কাজ করার জন্য মানসিক গতি লাভ করি। এরপর প্রতিনিয়ত এই ইতিহাসের উপরে বিভিন্ন কবিতা, গান, গদ্য, ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে বা সরাসরি কোনো মতামত, সেগুলি মানসদাকে পাঠালে উনি সমর্পিতাকে পাঠাতেন, এবং সমর্পিতা আমার চিন্তা সমৃদ্ধ পত্র, মতামত ও সাহিত্যে পাঠতৃপ্ত হতেন, সেটাও মানসদা আমায় জানালেন।
আমি বুঝলাম, আমার কাজের প্রতি পুরো আন্দোলনের ধারার সহানুভূতি রয়েছে। আর, এই উপলব্ধি আমাকে আরো দায়িত্বে প্রবেশ করালো। অন্যদিকে বুক বেঙ্গল পাবলিশার থেকে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ৩৮৪ পৃষ্ঠার একটি বড় উপন্যাস কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল মানসদাকে ডাকযোগে। প্রকাশক নিজে পাঠিয়েছিলেম। মানসদা সহ আরো অনেকেই আমার বিভিন্ন রচনা পাঠ করেন ও শুনতে থাকেন, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে।
আমি কিন্তু এর বাইরে কোনো বিষয় জানতাম না। মানসদা একদিন অন্য বিষয়ে লেখা আমার কবিতা নিয়ে মতামত দিলেন, “আপনার লেখাগুলি পড়ছি। মহাকবি কৃত্তিবাসের উপরে কবিতাটা এখন পড়ছি, অতুলনীয়।”
এর মাঝে আমার লেখা “Save Heerajhil” ( Save Heerajhil, it’s a good will ) ইংরেজি গান বেরিয়েছিল, সুরকার কুমার চঞ্চল, গায়িকা হল সিনেমার প্লেব্যাক সিঙ্গার শুভলক্ষী দে। সেটি রেকর্ড হয়ে প্রকাশের পরে এই কমিটি গ্রহণ করেন। তাঁদের ভালোলেগেছে বলে তাঁরা এটিকে “হীরাঝিল বাঁচাও” ফেসবুকে দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের মাঝামাঝি ঘটনা এটা। নবাব সিরাজের সাথে ইতিহাসগত কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে, এবং সেটা ইংরেজ জাতীর সাথে, কিন্তু, এই আন্দোলন যে হেতু বাংলার মাটিতে, তাই এর উপলব্ধির সুক্ষ্মতা বাংলাভাষায়। তাই হীরাঝিলের উপরে ইংরেজি গান জনপ্রিয় হলেও, এবং এঁরা গ্রহণ করলেও, অবস্থা ও অবস্থানগত কারণে এখানে অফিসিয়ালি ব্যবহার করা হয় না। এটাই সঙ্গত। আসলে সৃষ্টির গুরুত্বে সৃষ্টি টিকে থাকে, কিন্তু এটা তো আন্দোলনের অবস্থান, তাই এর বিধিবদ্ধ কিছু রীতিনীতি আছে, সেটা মেনে চলতে হয়। আমি আরো অনেক ভাষায় গান লিখলে কি সেগুলি সব ব্যাবহার করা সম্ভব? তাহলে তো গানের জলসা হবে, আন্দোলনের কাজ বাদ দিয়ে। বিষয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে যেটা দরকার সেটাই হয় সেইভাবে। তাতে কোনো ভারসাম্য হারায় না। অন্যদিকে, নানা কবি ও লেখক নবাব সিরাজের ইতিহাসের উপরে অনেক কবিতা, গান, নিবন্ধ লিখছেন, তাঁদের রচনাও জনঅরন্যে সৃষ্টির গুণে ছড়িয়ে পড়ছে। এখানে সবাই নিজস্ব গুণে অভিনন্দিত নানা প্রকরণে। সকলেই চমকপ্রদ তাঁদের নানা গুণ বা সৃষ্টি ও মানুষের আদরণীয়তায়।
যাইহোক, আমি আমার অন্য লেখার পাশাপাশি নবাব কেন্দ্রিক সাহিত্য নিয়ে বহু দিকে মনোনিবেশ করতে থাকি।
এর মাঝে আমার কাছে পত্র আসে, ২০২৩ সালের জন্য আমাকে দেওয়া হবে, আন্তর্জাতিক সবুজ সেনা সম্মান–২০২৩।
এই বিষয়টা নিয়ে আমি জানতাম না, ওয়াকিবহাল ছিলাম না। এই সংবাদ পেয়ে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, কী করে নিজের অজান্তে এত মানুষেকে তৃপ্তি দিতে পেরেছি নিজের সাহিত্য থেকে। কমিটির তরফে আমাকে মানসদা জানিয়েছিলেন, সময় করে তারিখ, সময় ইত্যাদি জানিয়ে দেওয়া হবে।
আমি এই অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম।
( ১৩ ) এদিকে যে তৈরি হয়েছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি সুরক্ষা ট্রাস্ট, হীরাঝিলে জমি লাভ করল এই সংগঠন। সেই উজ্জ্বল সরকারের পরিবারের জমি। শুভার্থীদের সহায়তায় বিকট জঙ্গল পরিস্কার করে, ছায়ার জন্য কিছু গাছ রেখে এলাকাটাকে সাজানো হতে থাকল। গাছে চুন লাগিয়ে সাজানো শুরু হল।
সেখানে ২০২২ সালে ২৩ শে জুন হল শহীদ বেদী উদবোধন। এটা নিয়ে আগেও বলেছি এই নিবন্ধে, তবু আবার বলি, সেখানে, সমর্পিতা যখন কয়েকজনকে নিয়ে আমার লেখা, তাঁর সুরে তাঁর স্কুলের প্রার্থনা সঙ্গীত গাইছিলেন, তখন, বাংলাদেশ থেকে আসা নবাব সিরাজউদ্দৌলার নবম বংশধর সৈয়দা মেহমুদা ও মুর্শিদাবাদে প্রাসাদে বাস করা আজোবধি ভারত সরকার দ্বারা “নবাব”উপাধীতে থাকা “Nawab of Murshidabad” এর পরিবারের ছোটে নবাব সৈয়দ রেজা আলী মির্জা, অদূরে থেকে সঙ্গীতটি শুনতে-শুনতে নিজেদের মুগ্ধতা ও আগ্রহ থেকে সেই স্থানে চলে এসে সকলের সাথে দাঁড়িয়ে সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করেন। এই উদারতা ও নিরহংকারীতা ভুলবার নয়। ঘটনাটি আগে বললেও এখানে আবার বলছি ঘটনার প্রবাহ সাজাতে। তাই এটাকে অতিকথন ভাববেন না।
এর পরে ৩রা জুলাই হয় নবাব সিরাজের মৃত্যু দিবস পালন। এর মাঝে আরেকটি দিবস চালু হয়, হীরাঝিল উৎসব দিবস। এটা বছরের প্রথমের দিকে কোনো এক দিন আন্তর্জাতিক সবুজ সেনা সম্মান দেওয়া হয়। ভারত ও ভারতের বাইরে কোনো দেশের কোনো গুণীদের, একত্র করে মোট কয়েকজনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। সাহিত্য, সমাজ সেবা, সাংবাদিকতা সহ নানা বিষয়ে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তাহলে এঁদের দ্বারা আপাতত নিয়মিত দিবস পালন হয় ৩টি। হীরাঝিল উৎসব, ২৩ শে জুন পলাসীর যুদ্ধ দিবস ও ৩রা জুলাই নবাব সিরাজের মৃত্যু দিবস।
এখানে একটা কথা বলে রাখি, নবাব মিরজাফরের বংশধরদেরকে মীরজাফরের ইতিহাস নিয়ে বিচার করবেন না। কবে কী ঘটে ছিল, কোন পূর্বপুরুষ বা বাড়ির মানুষ কে কী করেন, সেটা সেই ব্যক্তির নিজস্ব বিচার, সময়ের চাপ বা বিবেচনা। সেটার সাথে উত্তরসূরিদের কোনো প্রসংসা বা কলংকের সম্পর্ক নেই। যাইহোক, যেটা বলতে চাই, নবাব মিরজাফরের এই বংশধরদের মানসিকতা ও আচরণ বুঝিয়ে দেয়, সত্যিকারের আচরণ কেমন হওয়া দরকার। অন্যদিকে নবাব সিরাজের বংশধরদের আচরণ আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয়, তাঁদের আচরণ কতটা সুস্থতা দিতে পারে, অভিভূত করাতে পারে। এঁরা সকলেই আমাদের ইতিহাস প্রেমকে আরো আত্মবিশ্বাসী করেছেন। উভয় পক্ষই আমাদের কাছে সমান শ্রদ্ধেয়। বিষয়টা মনস্ত্বাত্বিক।
( ১৪ ) এদিকে আমিও সাহিত্যের নানা দিকে কাজ করতে-করতে পাশাপাশি নবাব সিরাজ নিয়েও পত্রপত্রিকা পড়তে শুরু করি ও নানা চ্যানেলের ভিডিও দেখতে শুরু করি। কিন্তু তখন পরিচয় বলতে মানসদা, সেটাও ইমেইলে, আর পরোক্ষ পরিচয় বলতে সমর্পিতা। মানসদার ইউটিউব চ্যানেলের ধারাবাহিক স্লটগুলি দেখার পাশাপাশি অন্য অনেক সাংবাদিকদের চ্যানেলগুলিও দেখতাম। কারণ, বিভিন্ন গবেষক-সাংবাদিকদের ভাবনার ধারা ও প্রকাশভঙ্গী এক এক রকম। মানসদা আমার এই মুক্ত মন দেখে কোনো সংকীর্ণতা বাদ দিয়ে খুশি হতেন। কারণ, উনি নিজেই সতীর্থ সাংবাদিকদের চ্যানেল নিজেও দেখেন ও তাঁদের নাম বা চ্যানেলকেও প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আলোচনায় আনেন। পরে আমি ২০২৩ সালে ৪ঠা ফেব্রুয়ারী হীরাঝিলে আন্তর্জাতিক সবুজ সেনা সম্মান — ২০২৩ আনতে এসে দেখেছিলাম, এই কাজের সাথে সংযুক্ত সকলেই বন্ধুভাবাপন্ন। জ্ঞানের চর্চায় যেমনটা হওয়া দরকার। নইলে কী সারা দেশ বিশ্বে এভাবে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, এখানে সব পেশার সকলেই পারস্পরিক অনুভুতি প্রবণ। আমি সুস্থতা লাভ করেছি।
( ১৫ ) সব চেয়ে মজার ব্যাপার এটাই যে, এইসব লেখনী ও নবাবের উপরে তথা সংযুক্ত কাহিনীর উপরে সাহিত্য করার সময়ে মুর্শিদাবাদ কোনো দিন দেখিনি। ২০১৯ সালের দিকে একবার কবি ও “নবারুণ” মুদ্রিত পত্রিকার সম্পাদক তথা বিখ্যাত “Potrika Nabarun” হোয়াটাসাপ গ্রুপ পত্রিকার প্রধান আডমিন এবং নিরপেক্ষ চিন্তার সমাজসেবী পন্ডিত মানুষ, শীষ মহাম্মদ এর আমন্ত্রণে পলাশীর স্কুলে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে মুর্শিদাবাদ এলাকায় বর্ডারে ঢুকে এক কবি দাদার বাড়িতে ভাত খেয়ে অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। সেটাই আপাতত, ২০২৩ সাল এর ৩রা ফেব্রুয়ারী অবধি মুর্শিদাবাদের মাটি ছোঁয়া। আর হীরাঝিল নিয়ে যা কিছু রচনা, সেগুলি ইউটিউব দেখে ও পত্রপত্রিকা পড়ে, কল্পনার হাওয়ায় উড়ে।
৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সালে হীরাঝিলে গিয়েছিলাম আন্তর্জাতিক সবুজ সেনা সম্মান — ২০২৩ গ্রহণ করতে। একই সাথে খোসবাগ দর্শন করি। সেই খোসবাগ দর্শন নিয়ে অন্য মজার গল্প অন্য কাহিনীতে বলব। এখানে আর বাড়ানো যাবে না।
এর মাঝে কিছু ঘটনা যেমন, কবি শ্যামল মন্ডলের
kabyapot.com ছাড়াও, অন্য কয়েকটি আলাদা মাধ্যমে নবাব সিরাজ কেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে প্রকাশ করে। সেজন্য আমি Theglobalnewz.in এর কাছে কৃতজ্ঞ। এটি তখন নাম ছিল globalnewz.online, পরে নানা কারণে নামটা হয় Theglobalnewz.in, তাই আগের সব রচনা এই ওয়েবসাইটের নতুন নামে খুঁজলে পাওয়া যাবে। এর সম্পাদক সইদুল ইসলাম। “রূপুর পত্রছন্দ বাংলা কবিতা সংকলন” মুদ্রিত কবিতা সংকলনে নার্গিস খাতুনের সম্পাদিত বইতে এই বিষয়েও কবিতা ছিল। বারুইপুর থেকে প্রকাশিত ২০২১, ১৫ই আগষ্ট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২০২৩ সালে অনেকগুলি সংকলনে এই বিষয়ে কবিতা ও গদ্য বেরিয়েছিল। এই বিষয়ে একক গ্রন্থ বেরুনোর বিষয়টি পরপর এগুতে থাকে। আসলে এই ইতিহাসের উপরে আমি প্রায় দেড় হাজার পৃষ্ঠা লিখেছি। তাই এত লেখা নিয়ে এই বিষয়ে অনেক গ্রন্থ হবে। তাই সেগুলি নিয়ে অনেক প্রকাশক ও তাঁদের সাথে আলোচনার ব্যাপার থাকে। কিন্তু নানা ওয়েবসাইট ও যৌথ সংকলনে অনেক লেখা বেরিয়ে গিয়েছিল। সবই তো প্রকাশ মাধ্যম। আধুনিক সময়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
এই সময় ২০২২ সালে আমি লিখি নবাব সিরাজ সহ সংযুক্ত আধুনিক বিষয় নিয়ে মহাকাব্য। সেটা আট হাজার পংক্তিতে ছিল। পান্ডুলিপি। শ্রদ্ধেয় শিষ মহাম্মদ আমাকে বলেন যে এটা দশ হাজার পংক্তি করে দিতে হবে। আমি তাঁকে বলি যে, এই মহাকাব্য লিখতে আমি প্রথম দশ দিন ও পরে কুড়ি দিন স্নান করিনি। তার আগে ও পরেও প্রায় দেড় মাস খেটেছি। এরপর আর পারবো না। উনি বলেন, আর দু হাজার পংক্তি বাড়িয়ে করতে পারলে এটা দশ হাজার পংক্তির মহাকাব্য হবে। সেটা কানে শুনতে অনেক আকর্ষণীয় হবে।
আমি তাঁর দাবী অস্বীকার করতে পারিনি। কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে আরো দু হাজার পংক্তি বাড়িয়ে করে দিলাম দশ হাজার পংক্তি। সে কী পরিশ্রম! শরীরের রূপ নিশানা বদলে গিয়েছিল। বুঝতে পারছেন কী বলছি।
প্রথম আট হাজার পংক্তি লেখার পরে মহাকাব্য নিয়ে প্রথম সংবাদ করেন “বুলবুলের বৈঠকখানা” পত্রিকায় হামিম হোসেন মন্ডল। মুর্শিদাবাদ থেকে। আমার ছবি দিয়ে বিরাট করে সংবাদ। তার আগে ছয় হাজার পংক্তি লেখার পরে কবি-সম্পাদক শ্যামল মন্ডল করেছিলেন এই সংবাদ।
এবার সেটার পিছনে আর একটু ইতিহাস বলি। ঘটনাকে সবাই ঘটনা হিসেবে নেবেন। এই অনুরোধ করি। এগুলি নিজের বিজ্ঞাপন নয়, ঘটনা প্রবাহ।
অনেক আগে আমার লেখা দেখে বারুইপুরে একজন মেয়ে আমায় বলেছিল, কম্প্যুটার ব্রেন। কিন্তু জীবন যুদ্ধ ও বিচিত্র লোকদের নানা খেলাধুলা সামলাতে গিয়ে সেসব ভুলে গিয়েছিলাম। সেই মেয়েটির দিদি বা বৌদির বাড়িতে সাহিত্য সভা করে আমায় আমন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু বারুইপুর বইমেলায় সেটাই প্রথম দেখা, আজোবধি আর তাদের সাথে দেখা হয়নি। তার অনেক বছর পরে “Potrika Nabarun” হোয়াটসাপ গ্রুপ পত্রিকায় কবি ও সমালোচক বান্ধবী অন্তরাক্ষী লিখেছিল, ঋদেনদিকের হাতি মেধা। মজার ব্যাপার যে এই অন্তরাক্ষীকে আমরা কেউই না দেখেও তার দ্বারা “Potrika Nabarun” উপকৃত হয়েছিল, একটা চঞ্চল স্থিতধীতার আমেজে। অন্তরাক্ষীর কোনো ছবিও DP ছিলনা।
আমাকে ২০২১ সালে সদ্য বলা “হাতি মেধা” কথাটা সাম্প্রতিক মনে জেগেছিল। এবং অনেক আগের সময়ের অনেকের মতামতকেও স্মৃতিতে পুনরুর্জীবিত করেছিল। কিন্তু এসব পারস্পরিক গুণে উপলব্ধ হয়ে অনেকে বলে। এই গ্রুপের ডাক্তার তাপসী ভট্টাচার্য্য এই গ্রুপে লিখেছিলেন, ঋদেনদিক আলাদা মেধা।
সাহিত্যিক তাজউদ্দীন, কী পন্ডিত আর মহান মানুষ, আন্তর্জাতিক স্তরের গবেষক, অনেক গ্রন্থের প্রনেতা, কী ভালোবাসতেন আমাকে। তিনি আজকে নেই।
যদিওবা আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, মানুষ তার স্বপ্নের পথ অনুযায়ী মেধার বিস্তার ও গভীরতা লাভ করে বা বৃদ্ধি করে। সকলের মেধাই উন্নত ও ক্ষমতাশীল। কিন্তু, এখানে কাহিনীর বর্ণনায় আমি ঘটনাগুলি বলছি মাত্র। প্রতিটি মানুষ তার অবস্থা বুঝে কত দুরুহ কঠিন বাধা টপকে কত কী জয় করে বা এই ভয়ানক সমাজে টিকে থাকে, তাঁদের জীবনের কৃতিত্ব কে দেয়!
তাই আমি আমার কাজ করছি মাত্র। অন্য কারোর চেয়ে বেশি কম গৌরবের প্রমাণ হয়ে নয়। বরং অন্যদের থেকে জীবনের মরমিয়া সত্যগুলিকে নিজে নিয়ে নিজেকে আরো উন্নত করি। মানুষের কথা ছেড়েই দিই, আমরা কি কেউ বাবুইপাখির চেয়ে কৃতি হতে পেরেছি। বা পিঁপড়ের যে বুদ্ধি, নিয়মানুবর্তিতা ও ধৈর্য, সেই জায়গায় কি পৌঁছতে পেরেছি? আমরা অভিজাত নামধারী গুণীরা কি পৌঁঁছতে পেরেছি আমাদের বাড়ির কাজকরা লোক বলে বিশেষিত বাড়ির কাজে সহায়ক মানুষদের মতো চাপা জ্ঞানে আর ধৈর্যে এবং দরদী আচরণে? এইসব সত্য ভাবলে নিজের কৃতিত্বগুলিকে ভাবি, নেহাতপক্ষে মানব জন্মে অনিবার্য কোনো কাজ বিশেষ।
যাইহোক, মহাকাব্য আমি কয়েকটা আগে লিখেছিলাম প্রতিটা প্রায় দেড় হাজার পংক্তি। পূর্ণ দৈর্ঘের এটাই শুধু ছিল দশ হাজার পংক্তি। সাড়ে তিন হাজার পংক্তি থেকে মহাকাব্য পারে। যাইহোক এটা খুব বড় মহাকাব্য হল। কিন্তু মহাকাব্য লেখার জন্য এটা শুরু করা হয়নি তখন। হীরাঝিল ও খোসবাগ নিয়ে মিশিয়ে একটা তিরিশ পংক্তির লেখা লিখতে চেয়ে সেটা শুধু বাড়ছিল। পরে সেটার আদল বদলে লিখতে থাকি। পাঁচশ পংক্তি হল, তারপর হাজার, এইভাবে পরপর বাড়তে থাকে। যখন একটা পূর্ণ আকারের মহাকাব্যে রূপ নিচ্ছে তখন বাপি, মানে বাবা আমাকে পাঁচশত টাকা দিয়ে বলেন, “তোর মহাকাব্য লেখার জন্য এটা আমার তরফে পুরস্কার।” উপলব্ধি করলাম, রবি ঠাকুরকে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়েছিলেন পাঁচশত টাকা এই বলে যে, “তোমার লেখা সাহেবগণ বুঝলে পুরস্কার দিত, আমি তাহাদের তরফে তোমায় পুরস্কার দিলাম।”
সেযুগে পাঁচশত টাকা, এই যুগে পাঁচশত টাকার মূল্যে কতখানি এটা বিচার্য নয়, এখানে বিচার্য ঘটনার সমরূপতা। এবং অজান্তে পাঁচশত সংখ্যার সমতা। বিষয়টি রোমহর্ষক বটে।
এদিকে মানসদাকে মহাকাব্যের আপডেট সংবাদ দিতাম, উনি শুধু বলতেন, “অপেক্ষা করছি।” অন্যদিকে Zodiak Muzik কোম্পানির একজন স্টাফ গীতিকার, কবি ও শিক্ষিকা ওয়াহিদা খাতুনের থেকেও উৎসাহ পেতাম, এটা আরো বাড়বে পরপর। ওয়াহিদা একই সাথে ফিল্ম গীতিকার। “ভয়” ফিচার সিনেমায় দুটি গান লিখে সিনেমায় গান লেখায় প্রবেশ। এই সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ২০২৩ সালে।
এইভাবে সকলের সম্মিলিত শুভানুধ্যায়ের আয়োজনে এটা দশ হাজার পংক্তিতে দাঁড়ায়। আরো বাড়িয়েছিলাম, Edit করার সময় কমতে পারে আন্দাজ করে। কমানোর পরেও থাকতে হবে দশ হাজার পংক্তির বেশি। অন্যদিকে অবচেতনে ভাসতো সেই ছবি, ইউটিউবে দেখা সেই ছবি, ভারতের সেরা বিশ্ব মুগ্ধ করা ইতিহাস আন্দোলনে আমার লিখিত গান গৃহীত হয়েছে, নবাবের নামে স্কুলে গাওয়া হয়, নবাবের কবর সাজিয়ে সেটা ঘিরে গাওয়া হয়ে উদ্বোধন হয়েছে, নবাবের ইতিহাস রক্ষার বিপ্লবে গাওয়া হয়েছে, দুই রাজ পরিবারের প্রতিনিধি এই গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন। এইসব অনুভূতি আমাকে সামগ্রিকভাবে এই কাজে জাগ্রত করেছিল। অন্যদিকে আমার প্রতি “Potrika Nabarun” গ্রুপের একজন কবি-সমালোচক অন্তরাক্ষীর থেকে “হাতি মেধা” মতামত, সবটাই মিলে ছিল গভীর উপলব্ধি ও এই কর্মের সহায়ক। যদিওবা অন্তরাক্ষীর কোনো ছবি কেউ আজোবধি দেখিনি, ব্যাক্তিগত পরিচয় তো দূরের কথা। কিন্তু এই গ্রুপ পত্রিকায় তার প্রভাব ২০১৭ সাল থেকে সৃষ্টি এই গ্রুপকে জাগিয়ে রেখেছিল ও রেখেছে। প্রথম ২ বছর ঐ সময় দিনরাত চলত গ্রুপে লেখা আর সমালোচনা। এই গ্রুপ থেকে বেরিয়েছেন অনেক বিশিষ্ট কবি লেখক ও সম্পাদক। আমার তো উপকার হয়েছিল অতুলনীয়। এখান থেকে আমি পেয়েছি অনেক সম্পাদক, সভাসমিতির যোগাযোগ। এবং লেখনির আরো দ্রুতগামীতা। আমি অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত লেখক ছিলাম। কিন্তু এগিয়ে যাবার তো শেষ নেই। একটি দিগন্তের পরে আসে নতুন-নতুন দিগন্ত। এখানে মাত্র কয়েক বছরে আমি পেরিয়েছি হাজার দিগন্ত। পরপর আরো অনেক গুণী এসেছেন এখানে। কিন্তু প্রথমের দিকে, ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ ও ২০১৯ এর আর্ধেক পর্যন্ত আমরা সবাই কেউ রাত জেগে লিখতাম, কেউ পড়তাম।
ড. গদাধর দে, ডাক্তার তাপসী ভট্টাচার্য্য, কবি শ্যমল মন্ডল, কবি হান্নান বিশ্বাস, কবি ঋকতান ওরফে সুব্রত ভট্টাচার্য, কবি গৌতম রাজোয়ার সহ আরো কয়েকজন দুরন্ত লেখা ও তর্কে বিতর্কে জাগিয়ে রাখতাম পুরো গ্রুপের অন্যান্যদেরকে। সকলের নাম মনে নেই, কিন্তু তাঁরা আমার উন্নতির সত্যে লুকিয়ে আছেন উপকারীর ভূমিকায়। এইসব কবিগণ এখানে নিয়ত চর্চার মাঝে আরো বাড়িয়েছিলাম নিজেদের অবস্থান, এবং তাঁরা ২০২০ সাল থেকে এক একজন বিখ্যাত সম্পাদক হয়ে ওঠেন। এবং বহু কবি-লেখকদেরকে তাঁরা সুযোগ করে দিচ্ছেন। নবাব সিরাজের ইতিহাস কেন্দ্রিক সাহিত্য লিখে আমার এই অবস্থান, সেটা তো কবি সম্পাদক শ্যামল মন্ডলের
kabyopot.com থেকে শুরু হয়েছিল। “Potrika Nabarun” হোয়াটসাপ গ্রুপ পত্রিকায় আছেন সিনেমার নায়ক রোহন গামা মীর থেকে দেশ বিশ্বরেকর্ড করা নানা গুণী। তাঁদের সকলের উপস্থিতি এই গ্রুপকে আলোকিত করে এসেছে। “বুলবুলের বৈঠকখানা” পত্রিকার সম্পাদক হামিম হোসেন মন্ডল, এই গ্রুপের। শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বিশ্ব সাহিত্য ও সংস্কৃতি ও গবেষনার ইতিহাসে তাই হোয়াটসাপ গ্রুপ পত্রিকা “Potrika Nabarun” এর প্রধান এডমিন শীষ মোহাম্মদের নাম অমর থাকবে। অমর থাকবে এর সাথে সহযোগী আডমিনগন। কবি -সম্পাদক নির্মলেন্দু কুন্ডু, বাংলা ও ইংরেজি ভাষার কবি তথা একাধিক পত্রিকার সম্পাদক Md. Ejaj Ahamed, এই রকম বহু জনের সাথে যোগাযোগ পেয়েছি এখানে। শীষ মহম্মদ শুধু এই গ্রুপ পত্রিকার আডমিন নন, আগেই বলেছি “নবারুণ” পত্রিকা মুদ্রনে বের করেন। ইনি সৈয়দ আহসান আলী স্মৃতি পুরস্কার কমিটির প্রধান তথা নওদা বইমেলার প্রধান উপদেষ্টা ও ভারত পরিব্রাজক। এই শীষ মোহাম্মদের ধর্ম নিরপেক্ষতার কাজে প্রত্যক্ষ কর্মী হবার জন্য আনন্দবাজার পত্রিকায় তাঁর ছবি সহ তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছিল বিরাট সংবাদ — “চাঁদা আদায় থেকে প্রতিমার বায়না, সব দায়িত্ব শিষ মহাম্মদের”, মুর্শিদাবাদ জেলা পৃষ্ঠা, পৃষ্ঠা -২, শুক্রবার ১২ অক্টোবর ২০১৮, প্রত্যক্ষ সহায়তা পেয়েছি টিভি সাংবাদিক তথা প্রশান্ত ঘোষ স্মৃতি মেমোরিয়ল ফাউন্ডেশন এর বিধান ঘোষের থেকে, অকালে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া সেই পরিশ্রমি নারী বাংলাদেশের কবি ও “ন্যাহ্য কথা” সহ নানা পত্রিকার সম্পাদিকা পারভিন শান্তি, নদীয়ার লেখিকা ও সম্পাদিকা অকাল প্রয়াতা শিখা চক্রবর্তীর থেকে। তাঁরা অকালে চলে গেলেও আমাকে দিয়ে গেছেন অনেক উপকার। আরো অনেকের নাম এখানে উল্লেখিত হতে পারতো। আসলে শিরোনাম ভিত্তিক কার্যকারণ ধরেই তো এটা লিখছি।
আর একটা কথা বলি। হোয়াটাসাপ গ্রুপ পত্রিকা কী, আমরা কজনে বা জানতাম। আমি তো জানতাম না। উচ্চ স্বপ্নধারি মানুষেরা নিজেদের মতো নিভৃত চর্চা ও আদানপ্রদানের প্রথম জায়গা পেয়েছিলাম এখানে ২০১৭ সাল থেকে “Potrika Nabarun” হোয়াটাসাপ গ্রুপ পত্রিকা। এর সমকক্ষ আর কেউ তখন ছিলনা, এমনটা বলিনা। আমি এটাই বলছি, ২০১৭ সালের দিকে হোয়াটসাপ পত্রিকা গ্রুপ কালচার আজকের মতো শুরু হয়নি। তাছাড়া, এখানে সংযক্ত ছিলেন বা আছেন, এমন লেখক -সম্পাদক ও বহুভাষী বহু মুখি গুণীদের সংখ্যা পরিসংখ্যান হিসেবে খুব উজ্জ্বল। কারণ, তাঁদের সকলের খুঁটিনাটি গুণ ও ব্যাপ্তির পরিচয় এখানে দেওয়া হয়নি। কবি-সম্পাদক ও সমালোচক তথা শিক্ষক ইমদাদুল ইসলামের থেকেও জেনেছি অনেক জ্ঞান ও সন্নিবিষ্ট অনুভূতি। কিংবা, ‘উর্বরমন’ পত্রিকার সম্পাদক রেজাউল করিম। ইনি হীরাঝিলের উপরে প্রথম একক সংখ্যা করেন তাঁর পত্রিকায় ২০২৩ সালে ২৩ শে জুন।
অবশই না বললে পাপ হবে, বুক বেঙ্গল পাবলিশার এর কথা। ইনি সোমিব্দ্র কুমার, ছদ্ম নাম সমীহ বসু, উনি উপন্যাসিক ও কবি, রেকর্ডিং গায়ক ও অন্য বহুগুণের অধিকারী, উনার মুক্ত মনের সহায়তা আমাকে বিস্তারের দিগন্তে হাঁটতে সহায়তা করেছিল। একান্তই ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা।
( ১৬ )এত সময়, কর্ম ও মানসিক Journey এর পরে, এবার চলুন হীরাঝিলে। ২০২৩ সালে ৪ঠা ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদ স্টেশনে ভোররাত সাড়ে চারটায় নেমে শীতে কাটাই স্টেশনে। কত বিরল অভিজ্ঞতা। ভোরের আলো ফুটতে তিন চাকায় লালবাগ সদর ঘাট গিয়ে নৌকায় উঠে নম্র নদী পেরিয়ে পশ্চিম ঘাটে উঠলাম। পুরানো ইতিহাসের জায়গা। মাটি, ঝোপ, গর্ত, সব জায়গায় সতর্কতা দরকার। সেখানে উঠে টাকা দিয়ে স্নান ও বাথরুমের জায়গা খুঁজে, সুস্থতা নিয়ে মানসদাকে ফোন করি। মানসদা জানান যে আগে খোসবাগ দেখে আসতে হবে। কারণ, এসব নিয়ে আমি সাহিত্য লিখছি, তাই এগুলি আমার ক্ষেত্রে অনিবার্য। হীরাঝিলে সকাল ১০টার সময় ঢুকলে হবে। এবং সব রকম নির্দেশ দিয়ে ফোনে বুঝিয়ে দিলেন। সেই মতো আমি খোসবাগে গেলাম। খোসবাগে আনন্দ ও খুশি হাসি ও গভীর চিন্তনের গল্প এখানে না বলে বাকিটা বলছি।
খোসবাগ গিয়ে ফেরার সময় মানসদা ফোন করেন, “কোথায়?” আমি বলি, “খোসবাগ দেখে পথে আছি।” উনি বলেন, “বাইক নিয়ে চলছি। আসুন, দাঁড়ান।” নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়াই। উনি এসে আমার কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একবার তাকালেন। জীবনে প্রথম মুখোমুখি দেখা সেটাই। আমায় বাইকে বসিয়ে চললেন হীরাঝিলে। ওনার পিছনে বসেছিল ওনার ছোট্ট মেয়ে। বাবার উন্নত চিন্তা কাজে খুব আগ্রহী।
এখন হীরাঝিলে যেতে হলে লালবাগ সদর ঘাট থেকে খেয়া হয়েছে, মিনিট পাঁচেক সময়। নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি সুরক্ষা ট্রাস্ট এর প্রচেষ্টায় করা হয়েছে। তখন এই খেয়া হয়নি।
যাইহোক, আমি মানসদার সাথে বাগানপাড়া স্টপেজে নামলাম। প্রবেশ করি হীরাঝিলে। অনেক মানুষ। রান্না চলছে। পুরস্কার দেবার অনুষ্ঠানে সামান্য কিছু সবাই মিলে খাবো। ভাত। পেটভরে ভাত। ঘরোয়া তরকারি। কী মজা। বাংলাদেশ থেকে অনেকে এসেছিলেন।
নানা অনুষ্ঠানের পরে খাওয়া হল। তারপর, বিকেলে পুরস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠান। এসব জরুরি জায়গা। তাই, প্রাসঙ্গিক নয় এমন কথা বলা ও উপস্থিতি নিয়ে অকারণ নাড়াচাড়া করা। তাই, পুরস্কার নেবার বাইরে আমার কোনো কিছু দেখানো অনুচিত। আমি বাইক থেকে নেমে বনের আড়ালে ঘুরতে থাকি, খুব সতর্কতার সাথে। পুরানো জায়গা তো। মাটি, গাছ, জল, উঁচু, নিচু, সব জায়গায় খুব সতর্কতা দরকার। এদিকে মানসদা আমায় ফোন করেন, “আপনি কোথায়।” আমি বলি, “আমি আছি কাছাকাছি। বিভিন্ন মিডিয়া সমর্পিতার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশি বিদেশি অতিথিদের সামলাচ্ছেন সবাই, এখন ওনাদের পাশাপাশি আমার উপস্থিতি আমার উচিত হবে না।”
উনি বলেন, “এসব ভাবতে হবে না। আসুন আমাদের কাছে।” এরপর আমি ওনার কাছে চলে আসি, উনি আমাকে নিয়ে কাছাকাছি হালকা জঙ্গলে পেচ্ছাপ করতে গেলেন। তারপর ফিরলাম অনুষ্ঠানের জায়গায়। এবার উনি আমার লম্বা ইন্টার্ভিউ নেবেন জানালেন। আমার চেহারার রূপ নানা কারণে খারাপ হয়ে গিয়েছিল, তাই আমি কারণ দেখিয়ে অরাজি হই। উনি বলেন, “আসুন, সামলে নিচ্ছি। দেখি।”
কয়েকবার নানা আদলে ইন্টারভিউ নিলেন, উনি, মানে মানসদা তাঁর “Manas Bangla” চ্যানেলের জন্য, পাশাপাশি “Curious Wasim” ইউটুব চ্যানেলের সাংবাদিক ওয়াসিম, “Swapno Nil” চ্যানেলের সাংবাদিক Nil, “Bong Vlogger Sovan” চ্যানেলের সাংবাদিক শোভন সরকার। এছাড়া বহু সাংবাদিক ও ব্যাক্তির ক্যামেরা আমার ইন্টারভিউতে Active ছিল। এবার কারা কোন-কোন চ্যানেলে সেই ইন্টার্ভিউগুলি দিয়েছিলেন আমার বক্তব্যের কোন-কোন অংশ, সব তথ্য পাওয়া সম্ভব ছিলনা। তবে উপরের চার জনের ভিডিও পেয়েছিলাম। সেগুলি আমাকে সারা বিশ্বে বক্তা হিসেবে, খুব মর্যাদা দিয়ে আসছে। সেই সব বক্তব্যের যুক্তিগ্রাহ্যতা ওদেরকে মুগ্ধ করেছিল। মুগ্ধ করেছিল উপস্থিত সবাইকে। মুগ্ধ করছে বিশ্বের নেটিজেনদেরকে। আমাকে নিয়ে এঁদের ভিডিওর links এখানে উল্লেখ করলাম না, স্বার্থপরতা হতে পারে বলে। শুধু এক বা দুটি সূত্র দিয়েছি আগে বিষয়ের সত্যতার প্রাথমিক কাহিনী জানাতে। এবং এছাড়াও নানা সাংবাদিকের সব ইউটিউব চ্যানেলগুলি দেখবেন এই কাজের গৌরব ও সমালোচনা নিয়ে। এঁরা পারস্পরিক পরিচ্ছন্ন উদার। আমার ভিডিও নিয়ে এঁদের কাজ নয়। এই ইতিহাস সহ বিশ্বের নানা ইতিহাস সহ অন্য বহু বিষ্যের ভিডিও করেন এঁরা গবেষনা করেন। মানসদাও তা-ই।
যাইহোক, আমাকে নিয়ে এইসব হবে, এসব ভেবে আসিনি। এইসব ভাবনা কল্পনার উর্ধে। যাইহোক, খুব মজা করে, আমি রাতের ট্রেনে কলকাতা ফিরি। এইসব কাজে আসা ও যাওয়ার মাঝে নানা সুবিধে, অসুবিধের মাঝে কত মজা হয়, কত অভিজ্ঞতা হয়, কত জ্ঞান হয়, আহা। সেগুলি হয় জীবনের সঞ্চয়।
এরপরে কয়েকদিন পরে পরপর ঐ চারটি চ্যানেল থেকে আমার ইন্টার্ভিউ সহ মিশ্রিত আরো অনেকের ভাবনা ও কাজ নিয়ে ভিডিও বেরুলো। ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারীতেই। সমর্পিতা তো ছিলেনই। সেই ভিডিওগুলি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে, পাচ্ছে। আমার ভালো লেগেছিল, ওনাদের চিন্তা ও কর্মের জনপ্রিয়তার পাশে আমার উপস্থিতি ওনাদের উপযোগী হয়ে উঠেছিল।
সেখানে দেখেছিলাম, সবাই সবাইকে সহায়তা করে। যাইহোক, সেই ইন্টারভিউতে আমি বলেছিলাম এক জায়গায়, “এতদিন আমরা জেনে এসেছি, মহাকাশ মানে একটা, সেটা মাথার উপরে, সমর্পিতা প্রমান করেন, আরো একটি মহাকাশ আছে, তার নাম ইতিহাস। সেখানেও আছে গ্রহ নক্ষত্র।”
এই রকম অনেক কথাই বলি। সেই সব তথ্য অনেক বড়। কিকরে আমাকে তাঁরা গ্রহণ করেছিলেন, সেই তথ্যও খুব আকর্শনীয়। সেগুলি এখানে দেওয়া হল না। আমি সংক্ষেপে বলছি, সেইসব ভিডিও বেরুনোর পরে আমি মনে-মনে ভাবতাম, ঐ কথাটা তো বলে দিলাম, কিন্তু কেউ যদি বলে, “আচ্ছা, ঋদেনদিক, সমর্পিতা যদি আরেকটা মহাকাশ আবিস্কার করেছেন, সেখানে গ্রহ নক্ষত্র আছে, তাহলে সেখানেও জ্যোতির্বিজ্ঞান এর মতো অংক থাকবে। সেই অংকগুলি দেখান।”
নিজের কথার যুক্তিতে নিজে প্রবেশ করে ভাবতে থাকলাম, এই সমস্যার সমাধান করব কিকরে? কিন্তু, এটা দার্শনিক ভাবনার কথা ছিল, তাই কেউ আক্ষরিক অর্থে এর মানে ধরলে সেটা নিয়ে আর কী করতে পারি। তবুও নিজের ভিতর থেকে কেউ যেন বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে আগ্রহী করল।
অন্যদিকে আমি ইন্টারভিউতে বলেছিলাম যে নবাব সিরাজের ইতিহাস নিয়ে এইসব আন্দোলন ও শিক্ষা ব্যাবস্থা, এগুলি জ্ঞানের আন্দোলন, তাই এগুলি আন্তর্জাতিক, এগুলি অনেক দূর পৌঁছবে।
এখানে বলে রাখা দরকার, এই কাজে বিবিধভাবে সমর্থন করে এসেছেন, অনেক ব্যাক্তি ও সংস্থা, ভারত ও বাংলাদেশের। দুই রাজ পরিবার আছেন সেই সাথে। আরো কত দেশ ও ব্যাক্তি আসবেন এঁদের নিরপেক্ষ চিন্তন ও কর্ম প্রণালীকে ভালোবেসে। পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে শিক্ষার দিকে সহায়তা করছেন Barasat Academy of Culture নামে সংস্থা। এঁরা মূলত শিল্পের বিবিধ বিভাগ নিয়ে আরো বিবিধ প্রসারিত দিক নিয়ে একটি নামী সংস্থা। প্রতি সংস্থা ও ব্যাক্তি সহায়তার যেকোনো হার্দিক অবস্থান হয় আলোকিত, সেটা তো অবস্যই।
এবার পরের ধাপে আসি। দ্রুত বুঝিয়ে বলব বলে অনেকটা বলা হল। আপনারাও অনেকটা পড়লেন সামগ্রিক উপলব্ধির জন্য। আসলে এই বিষয় এর চেয়ে কমিয়ে বলা যাচ্ছিল না। তাই ক্ষমাপ্রার্থী।
(১৭)২০২৩ সালে ৪ঠা ফেব্রুয়ারী হীরাঝিল উৎসব গিয়ে আন্তর্জাতিক সবুজ সেনা সম্মান – ২০২৩ নিয়ে এসে, পরে ২৩শে জুন গিয়েছিলাম পলাসীর যুদ্ধ দিবসে। এই সময় এঁদের উদ্বোধন হয় সিরাজ উদ্যান। ভারত ও বাংলাদেশের অতিথিদের দিয়ে এটা উদ্বোধন করানো হয়। ৩রা জুলাই হয় নবাবের মৃত্যু দিবস পালন। কিন্তু, ২৪ জুন শিয়ালদায় নেমে ভোররাতে পলিথিন পেতে শুয়ে থাকার সময় আমার মোবাইল হারিয়ে গেলে, আমি খুব দুশ্চিন্তা পড়ে গিয়েছিলাম। অনেক কিছু জরুরি জিনিস ছিল মোবাইলে। পরে কয়েক মাস পরে শিয়ালদা GRP অফিস থেকে আমি ফেরত পাই। সে কাহিনীও মজার। কিন্তু এখানে বলার জায়গা নয়। তবে, ৩রা জুলাই আমি নবাবের মৃত্যু দিবসে যেতে পারিনি। এই বিষয়টা এখানেই স্থগিত রেখে কাহিনীর উপসংহারে আসি।
তবে নবাবের উপরে দশ হাজার পংক্তি মহাকাব্যের চার হাজার পংক্তির Proof reading পান্ডুলিপি আমি ২৩ শে জুন মানসদাকে ওখানে দেখিয়েছিলাম। উনি মানসিকভাবে তৃপ্তি পাবেন বলে। বাকি ছয় হাজার পংক্তি পরে proof copy প্রকাশক আমায় দিলে আমি পরে দেখাবো। আসলে প্রকাশক বলেছিলেন, এত বড় ইতিহাস জয়ী ও কালজয়ী কাজ, সময় নিয়ে বারবার নিজে থেকে সম্পাদনা না করে বই বের করলে, খুব ঝুঁকি হবে। তাই, চঞ্চল না হওয়া উচিত।
পাশাপাশি, ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০২৩, হীরাঝিল উৎসব অনুষ্ঠানে আমি পুরস্কার নেবার সময় মানসদা কতৃপক্ষের তরফে ঘোষনা করেছিলেন, “ঋদেনদিক মিত্রো শুধু এই ইতিহাস নিয়ে দশ হাজার পংক্তির মহাকাব্য লিখেছেন তাই নয়, পরে বেরুবে, ইনি এই ইতিহাস নিয়ে একটা উপন্যাস লিখবেন।” কথাটা আমি উনাকে গল্পের ছলে বলেছিলাম কিন্তু উনি এতোটাই আত্মবিশ্বাসী আমাকে নিয়ে যে আমি সেটা লিখবই ও সেটা পাঠ যোগ্য হবেই, এই আত্মবিশ্বাসে এই ঘোষনা করেছিলেন।
মানসদা ও পুরো কমিটি যদি কোনোভাবে হেয় হন আমার উপন্যাস লেখা না হলে, সেই চাপে আমি ২০২৪ সালের মাঝে সেই উপন্যাস লিখে Type Copy পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, সম্পাদনা পরে করে প্রকাশ পাবে, ঠিক আছে, কিন্তু সেই ঘোষিত উপন্যাসের অস্তিত্ব হয়েছে, এটাই তাঁদেরকে সুস্থিরতা দেবে। আপাতত কমিটি বাইরে বলতে পারবেন, ঘোষিত সব গ্রন্থের বাস্তব রূপ কমিটি দেখেছে ও প্রমাণ আছে, বাজারে প্রকাশ হবে বারবার দেখে বুঝে প্রকাশের হিসেব অনুযায়ী। সেটা প্রকাশনার নিজস্ব ধারায়। কিন্তু ঘোষিত গ্রন্থগুলির অস্তিত্ব কমিটির কাছে সত্য।
তা বলে কি অনেক বছর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকবে তা নয়, কিন্তু এসব কাজ লেখা শেষ হবার পরে, দুই বা তিন বা চার বছর সময় নেয় সুস্থভাবে প্রকাশ করার জন্য। সেটা তখন জনগন বুঝবেন, কমিটিও বুঝবেন। আমার লেখা complite করেছি, কমিটিরকে জমা দিয়েছি। এটাই আসল। আমার প্রকাশক সব চেয়ে ভালো কাজ করার জন্য সময় নেবে, সেটা প্রকাশনীর কর্ম প্রণালী। সেটা তখন সবাই সমীহের চোখে দেখবেন। কিন্তু কাজ complite না হলে সেটা তো লজ্জার।
তাই, আমার মানসিক চাপ থেকে আমি মুক্ত হয়েছিলাম, এই কাজে এইভাবে, কাজ দুটি করেছি, সেটার প্রমাণ দেখিয়ে। তবে মানসদার ঐ ঘোষনা ছাড়া নবাব সিরাজ কেন্দ্রিক উপন্যাস আমি সারা জীবনেও হয় তো লিখব-লিখব বলে লিখতাম না অন্যান্য লেখার চাপের জন্য। এবং নবাবের আগের ইতিহাস ও বর্তমান নিয়ে প্রায় দেড় হাজার পৃষ্ঠা কবিতা-গান-ছড়া-সনেট-মহাকাব্য লেখার পরিশ্রমের পরে পরিশ্রান্ত হয়েছিলাম, তাই এই বিষয়ের উপন্যাসে মন দিয়ে লেখার মন আসত না।
আরেকটি বিশেষ সংবাদ, এই সেক্টরে বিবিধ ভাষায় সৃষ্টিকে সম্মান করা হয়, কিন্তু বাংলা থেকে এই আন্দোলন বলে বাংলাভাষায় বাস্তব প্রয়োগ করা হয় বেশি।
২০২৩, ২৩শে জুন সিরাজ উদ্যান উদ্বোধন এর সময়ে এখানে সমর্পিতার লেখা ও সুরে বিখ্যাত গায়ক অনিন্দ্যর কন্ঠে Heerajhil Anthem প্রকাশিত হয়।
“নতুন দিনের সূর্য উঠবে আকাশ ছেয়ে,
পলাসীর কান্না, মুছব গান গেয়ে… “
বেশ কয়েক লাইনের গান। পর্দায় এটি ভিডিও দেখানোর পাশাপাশি মানসদার কন্ঠে সমর্পিতার লেখা ধারাভাষ্য ও সেই সঙ্গীত। এটি উদ্বোধনের সময়ে মনে হয়েছিল যেন জগতের সব স্বপ্ন আর আলোর ঝিলিক হীরাঝিলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেই উপলব্ধি আমার মনে থাকবে চিরদিন। সবটাই রেকর্ডিং করা ছিল।
আমি মনে-মনে চাইতাম, সমর্পিতা এত বড় বহুমুখি প্রতিভা, তাঁর উচিত সঙ্গীতেও সময় দেওয়া, লেখনিতে। তিনি চিত্রনাট্যকার, গল্পকার। ডাইরেক্টর। সব মানি। কিন্তু, তাঁর লেখা গান চাইত আমার অবচেতন। সেটা পেলাম। ঠিক তাঁর বীরাঙ্গনা মুখি সৌন্দর্যের মতো।
এটি প্রথম বেরোয় Manas Bangla চ্যানেলে “জেগে ওঠো হীরাঝিল আবার” শিরোনামে।
এগুলি কারোর বিজ্ঞাপন নয়, এই বিরাট কর্মকান্ডে কত কী হচ্ছে, সেগুলির সামান্য নমুনা মাত্র।
প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে নবাব মিনার বসানোর ব্যাবস্থা করা হচ্ছে হীরাঝিলে। গরম কালে খোসবাগে জলসত্র বসানো হয়, কী সুন্দর সাজিয়ে। সহায়তায় এগিয়ে আসেন কত ছাত্রছাত্রী আর অভিভাবক। বেড়েছে প্রচুর ট্যুরিষ্ট। দুই জায়গায় শুধু নয়, এই ইতিহাসের আন্দোলনের জন্য মুর্শিদাবাদের আরো অন্য স্থানগুলিতে ট্যুরিষ্ট সংখ্যা বেড়েছে।
( ১৮ )এখানে মজার কথা বলি। এটা কাহিনী হিসেবে নেবেন। ছোটবেলা থেকে অনেক স্বপ্নের মাঝে ছিল Knight উপাধী লাভ, এবং রাজকবি হওয়া। কিন্তু রাজা কোথায় যে রাজকবি হবো। সেই প্রার্থনা কী করে ঘুরে ফিরে এলো দেখুন। নবাব মানে রাজ্যের রাজা। আবার নবাব সিরাজের ইতিহাস মানে সেটা রাষ্ট্রিয় সত্যে আন্তর্জাতিক। কারণ, ইংরেজদের দ্বারা পরাধীনতা ও পরে স্বাধীনতা। আবার তাদের দেশ থেকে Knights দেওয়া হয়। আশ্চর্য কথা যে, এই নবাবের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরকে Knights বলা হয়। এবং সেই স্কুলেই আমার লেখা গান প্রার্থনা হিসেবে চলে। পরিস্থিতির বিষয়গুলি বুঝুন।
বিপ্লবের জায়গায় নাম, যশ এর কথা ভাবা পাপ। এখানের সাথে সম্পর্ক যুক্ত কেউ সেটা ভাবেন না। এঁদের পরিবেশ এমন। গ্রীষ্মকালে যেমন পুকুরের কাছে এলে মনে হবে দুনিয়ার সব চিন্তা, ইচ্ছা, লোভের নেশা সরিয়ে আগে ঝাঁপ দিই, এটাই আসল সুখ, তেমনি এঁদের পরিবেশে এলে মনে হবে, জীবনের এত সুখ আছে! এবার আমার কথা শুনে অন্য কেউ যদি বিরক্তিকর কিছু ঘটিয়ে আমার এই সংবাদকে মিথ্যা করতে চায়, সেটা তাদের ব্যাপার। সেখানে আমি, আপনি কে কী করতে পারি! আমি শুধু বলতে পারি এখানে পরিবেশ ও আমাদের সকলের মিলন বৃক্ষছায়ার মত স্বস্থি দেয়।
যেটা বলছিলাম যে, বিপ্লবের ক্ষেত্রে নাম, যশ নিয়ে যেমন কেউ ভাবে না, পাশাপাশি এটাও সত্য যে, সব জায়গায় কর্মকাণ্ডে থাকে অফিস কাজ ও কাগজপত্র ও দপ্তর। সেই নিয়মে আসে মূল উদ্দেশ্যের সাথে সংযুক্ত অনেক বিষয়। সেইসব বিষয় নিয়ে যারা কাজ করেন, তাঁদেরকে সেই কাজের প্রামাণ্য দেওয়া হয়, বিচারের পদ্ধতিতে। এটা একটা নিয়ম। সেই হিসেবে সবাই নেবেন, ঘটনাকে ঘটনার সৌন্দর্যে।
আমার আন্তর্জাতিক সবুজ সেনা সম্মান-২০২৩ পাবার পিছনে যে সব কাহিনী। রাজগুণ সম্পম্ন সাংবাদিক, গবেষক, ইতিহাস প্রেমীগন আমায় নির্বাচন করেছিলেন। অন্যদিকে দুই রাজ পরিবারের প্রত্যক্ষ সমর্থন। রাজ পরিবার এর দুই দিক, নবাব সিরাজ ও নবাব মীরজাফরের বংশধরের সম্মতিতে পাওয়া, তাঁরা আমার গানে তাঁদের মতো সম্ভাব্য আদলে নিজ আগ্রহে নম্র কন্ঠ মিলিয়েছেন। বিশ্বের কোনো রাজকবির এই রকম প্রত্যক্ষ্য রাজ পরিবারের বিনয়ী ভালোবাসা হয়তো ঘটেনি। এর মানে আমি অন্য রাজকবিদের চেয়ে সেরা নয়, আমি বলছি, এই রকম ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। বিরল ঘটনা। আর এইসব কাহিনী তখনি ঘটে, সকলের সাথে সকলের সহজ সরলতার সম্পর্কে।
অন্যদিকে, ভারতের যে ইতিহাস থেকে আধুনিক ইতিহাসের রাজকীয় মর্যাদা ধরা হয়, সেই ইতিহাস থেকে এই সম্মান লাভ, সেই আন্দোলনের কবি হিসেবে। এই সত্য শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, অন্য সকলেই যাঁরা এখানে সম্মানীত হয়ে এসেছেন, হচ্ছেন ও হবেন, সকলেই তাঁরা এই দেশ ও বিশ্ব মুগ্ধ করা ইতিহাসের সম্মানে রোমাঞ্চকরভাবে সম্মানীত। এই সব অনুভূতি তুলনাহীন।
আর একটা কথা, এইসব সঙ্গে মিশলে মনে হবে, সেটাই বিরাট পুরস্কার, কারণ, এখানে আসা বিবিধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক, অধ্যাপক, অফিসার, কেরানী, পিয়ন, সাধারন ব্যাবসায়ী, বড় ব্যাবসায়ী, অন্য নানা পেশার মানুষদের মানসিক গভীরতা এত গভীরে ও চিন্তা ও আচরণ সহ কথাবার্তার মান এত উঁচু যে, আমার মনে হয় এঁদের জন্ম ও উপস্থিতিটাই পৃথিবীর কাছে নির্বিকার আলোর পুরস্কার, আমি এঁদের সাথে কাছাকাছি থেকে নিজেকে তৈরি করি মাত্র। এঁরা কত জন কত জায়গায় কত পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন, পাচ্ছেন ও পাবেন, সেই হিসেব আমার মত মানুষ করতে পারে কি? তাই, এঁরাই আমার কাছে আধুনিক রাজ মর্যাদার আলো, আমি তাঁদের আলোয় আলোকিত। আমি এখানে এসে পুরস্কার নেবার কাহিনী বলছি, কাহিনী হিসেবে, কারোর চেয়ে সেরা হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্য নয়।
( ১৯) এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। চমকে যাবেন। ২০২৩ সালে ২৩শে জুন হীরাঝিলে ২৩শে জুন পলাসীর যুদ্ধ দিবসে মূল অনুষ্ঠান হবার পরে নানা দিকে নানা জন গিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল, অদূরে একটি গাছের ভাঙা ডাল নিয়ে পড়েছিল ৪৫ ডিগ্রি কোন করে। বুঝে গেছেন নিশ্চয়। তার উপরে পাশাপাশি বসে কয়েকজন শিশু বসেছিল। তাদের বয়েস ছয় থেকে নয় বছর মতো। সামাজিক অর্থনৈতিক কারণে তাদের পরিধানে খুব সাধারণ পোশাক, অনেকটা ধুলি মলিন। তারা নিজেরা নিজেদের আবেগে সেই গাছের ডালে বসে ডালকে চাপ দিয়ে উঁচুতে তুলে নিচুতে নামিয়ে, নিচু থেকে উঁচুতে তুলে বারবার এইভাবে করতে-করতে একসাথে সুর করে গাইছে ঃ —
ইতিহাসে গরমিল,
জেগে ওঠো হীরাঝিল।
যে বয়সে শিশুরা পুতুল নিয়ে খেলতে অভ্যস্থ, এবং প্রচলিত শিশু সাহিত্যের ধারায় ছড়া “হা টিমা টিম টিম / তারা মাঠে পাড়ে ডিম” মুখস্তে অভ্যস্থ, কিংবা এই সময়ের কোনো রোমান্টিক সিনেমার গান গাইতে অভ্যস্ত, সেই সময়ের শিশু হয়ে এরা ইতিহাস বোধে ঢুকে ইতিহাসের শ্লোগান গাইছে নিজেরা সুর করে।
এই দৃশ্য দেখে আমরা চমকে গেলাম। সাংবাদিকগন যাঁরা তখোনো অবধি ছিলেন, তাঁরা এসে সেই দৃশ্য ভিডিও করেন।
এই একটি উদাহারণ দেবার পরে আর কোনো উদাহারণ দেবার দরকার নেই আশা করি। বুঝলাম, আমাদের ও আমাদের শিশুদের অস্তিত্ব এখোনো জেগে আছে, জ্ঞানের দিকে, মহত্বের দিকে। নানা রকম সামাজিক ও নানাবিধ বিশৃঙ্খলার কারণে সেগুলি চাপা পড়ে থাকে। কিন্তু সেগুলি হারিয়ে যায়নি। আর, এই রকম শুদ্ধ ও মুক্ত জ্ঞান ও স্বপ্নের যে কোনো স্থানেই সেগুলি জেগে ওঠে। আর সেইদিকে এগিয়ে যাওয়াই আসল দেশপ্রেম ও বিশ্ব প্রেম, সঠিক সামাজিক কাজ। সেটা দেশে ও বিশ্বে যে কোনো স্থানে যে কোনো প্রকরণেই হোক।
সেই দৃশ্যটি আমার জীবনে বিরাট পুরস্কার প্রাপ্তি মনে করি। কারণ, আলোর অনন্যতাকে স্পর্শ করাই তো সেরা পুরস্কার আমাদের জীবনে, এক এক রকম পরিসরে।
( ২০ ) এখানে একটা কথা বলি। নবাব সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাস নিয়ে উনবিংশ শতকে ও বিংশ শতকে মহাকাব্য, নাটক, সিনেমা হয়েছে। নবীন চন্দ্র সেন লিখেছিলেন “পলাসীর যুদ্ধ” মহাকাব্য ১৮৭৫ সালে। আহা, সেই সময়ের মাটি, সমাজ ও জ্ঞাণীগুনীদের হাঁটা চলা আমার চোখে ভাসছে।
এখানে একটা কথা বলে রাখি, ১২ বা ১৩ বছর বয়েস তখন আমার, পাড়ার এক বন্ধু আমাকে নিয়ে গেল তার বাড়িতে। তার বাবা গ্রামাফোন কিনেছেন। সে আমার চেয়ে বড় হলেও পাড়ার বন্ধু বলে একদম বন্ধুই ছিল। আমি তার বাড়িতে যেতে শুনিয়েছিল, সিরাজউদ্দৌলা নাটক। সেটা শুনতে গিয়ে মনে হয়েছিল, আহা আমি যদি এই রকম সিরাজের মত অভিনয় করতাম থিয়েটারে। পরে বাপি, মানে বাবা টেপরেকর্ডার কেনার পরে সেই ক্যাসেট কিনে দেখি ১৯৩৮ সালের থিয়েটার সেটি। শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা নাটক। সেই নাটকের আবহাওয়া আমার ভিতরে কাজ করত। সেই নাটক যখন তখন শুনতাম। আর ভিতরে অনেক অনুভূতি হোতো। দেখুন, সেই অনুভূতির গভীর সংযোগ আজকে তাঁর ইতিহাস রক্ষার আন্দোলনের কবি হিসেবে আমাকে স্থান করে দিল, কী করে কোন পথে কত কাহিনীর মাঝ দিয়ে পরপর।
এসব ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়।
( ২১) আমি একবিংশ শতকে কাজ করেছি মহাকাব্য নিয়ে, সেই একই ইতিহাস নিয়ে, সাথে আধুনিক সময়ের কাহিনী মিশিয়ে। তবে, এই বিষয়ে অনেক কবিতা ছড়া, সংগীত, মহাকাব্য, উপন্যাস, একত্রে এত কাজ আমার করা। ইংরেজি ও বাংলায়। কিন্তু আমি তো এর প্রথম পথপ্রদর্শক নয়। তাছাড়া, এই সময়ে এই বিষয়ে আরো অনেকে কবিতা ও সাহিত্য করছেন, সেগুলি আমাকে মনযোগী করে। ইচ্ছে আছে স্প্যানিসেও সামান্য হলেও এই ইতিহাস নিয়ে কাজ করা। আসলে ভাবনার একঘেয়েমি আনতে চাইনা। পৃথক ভাবনা এলে, কাজ করব, যতটা সম্ভব। তবে এটাও সত্য স্প্যানিস ভাষায় এই ইতিহাস নিয়ে কিছু লিখে সারা স্প্যানিস ভাষার বিশ্বে প্রকাশ না করলে আমিও মন থেকে স্বস্থি পাবো না। তাই সেটা কেমন লিখব, কী করে লিখবো, কোন গভীরতায় ধরতে পারবো, সেটা রয়েছে আমার অবচেতনে। আপনাদের আশির্বাদ পেলে ভালো হয়।
Very good subject and information, but too lengthy to read and digest, otherwise fine. However, thank you for such new idea and innovative work on historical truth or untruth of our Indian history. Best wishes-
Pulak Bera
18.03.25
Yes sir,
As I used to think to become a poet, writer and scientist, I have invented History Math. I am very grateful, you, such one have supported my invention. I am doing more inventions, as I believe your blessings will make me achieve. I am working on atomic reserch varieties also math, including many more interesting subjects. Mainly our social structure are not easy. So, my varieties of creativities waited for. Time waits for the readers or intelectuals like you.
Thank you,
Yes sir,
As I used to think to become a poet, writer and scientist, I have invented History Math. I am very grateful, you, such one have supported my invention. I am doing more inventions, as I believe your blessings will make me achieve. I am working on atomic reserch varieties also math, including many more interesting subjects. Mainly our social structure are not easy. So, my varieties of creativities waited for. Time waits for the readers or intelectuals like you.
Thank you,