KABYAPOT.COMকবিতা

কবিতা: স্পর্শ-<< তরুণ মিত্র

Spread the love

স্পর্শ

তরুণ মিত্র

 

এই যে ঘাসের শরীরে গিয়ে আমরা বসলাম

এদিকে সন্ধ্যে নেমে আসে ওদিকে ঝাউবন আকাশের নীচে একটার পর একটা আবেগে চুম্বন

 

দূরে, বহুদূরে আবছা আলোয় ভালোবাসা মেলে দিলো কারা?

আমি, আধো আলো ছায়ায় স্পর্শ করে ঘেমে নেয়ে স্নান

শহরের বুকে জ্বলজ্বল করে বাতি, তাকিয়ে থাকে ফুলের বাগান

 

তুমি ছোঁয়া নাওনি আগে, মঞ্চ থেকে পর্দা সরেনি এখনও!

শরীরে আলো খুব, মেলে দিলো ভেসে থাকা বুকে

কম্পন শুরু হ’ল অবিরাম শরীর ও মুখে মুখে

 

আসমানে ভেসে ওঠে চাঁদ, তারাগুলো মিটিমিটি চায়

মা হতে চায়, বাবা হ’য়ে যাবো একদিন! আর

ম্রিয়মাণ হাসিখুশি, সাজানো গোছানো সংসার

——

ঝড়

তরুণ মিত্র

 

ঝড় উঠলেই সারা শরীরজুড়ে কম্পন

অনুভূত হয় আমার

যা ছড়িয়ে যায় দূরের দিকে…

থামলেই আলো হয়ে শুয়ে থাকি

আধো ঘুমো ঘোর,

নষ্ট বিছানায়…

 

দাম্পত্য

তরুণ মিত্র

 

আমাকে, ছেড়ে যাবে বলেছে আমার বউ।

 

আজ থেকেই দাম্পত্য কলহ শুরু হ’ল।

 

আমাকে, ছেড়ে যেতে চাইবে আমার বউ।

 

দাম্পত্য কলহ আরও একধাপ এগোল।

 

আমাকে, ছেড়ে যেতে চাইছে আমার বউ।

 

দাম্পত্য কলহ পূর্ণ স্বাদ এনে দিল।

শুরু করলো ভাঙা গড়া। দুই বিছানা

আলাদা,বালিশ দুটি ওলট পালট।

 

অনবদ্য মাতালের মতো গভীর রাতে বাড়ি ফেরা এ হেন কবির

 

সুন্দরী বৌয়ের আঁচল ছোঁয়া কতটা কঠিন, ঠাওর করা গেল এতগুলি বিবাহবার্ষিকী পার হওয়া, আকণ্ঠ পান করা এ অবাধ্য কবির।

 

আমাকে, ছেড়ে চলে গেছে আমার বৌ একদিন।

 

আমাকে ফেলে রেখে

 

যে পুরুষ তোমাকে নিয়ে এলো এই ঝর্ণাতলায়, তিনি কী স্নান সেরেছেন শরীর ও মনের ?

 

যে মালাবদল দেখেছিল পাঁচশ অতিথি

সে মালাগ্রন্থি হয়ে মিশে যাবে নতুন পুরুষ ?

—————

না কি রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার

লুণ্ঠিত হ’য়ে

ফিরে আসবে আমার চৌকাঠে !

 

জলের সংসার

তরুণ মিত্র

 

আমাদের কর্পোরেশন, আমাদের সেবাইত

দিনে তিনবার জল এনে দেয়।

 

সকালে ঘন্টা দু’য়েক

 

আর মাঝের সময়গুলো ওয়ান-থার্ড।

 

কল বেয়ে নেমে আসা জল আমাদের পরিবার

 

সেই জল হাঁড়িতে ফুটতে থাকলে

চাল, আলুর মধ্যেই ফুটে ওঠে

 

আমাদের মা ও ছেলের প্রাত্যহিক জীবন।

—————-

 

বোকা ভাঁড়

তরুণ মিত্র

 

আমাদের ছেড়ে যাবার আগে

উপহার বলতে বাবা বাস্তুভিটে।আর,

আমরা চার ভাই বোন-পলেস্তঁরা খসা

কয়েকটা ঘরে…মা’র জন্য কাতলা মাছ

আকৃতির মাটির ভাঁড়।

 

রোজকার অফিস ফেরত বাবা,মায়ের হাতে রেজকি ধরিয়ে বলতেন-

মাছের পেট ভরাও, ‘ভবিষ্যতে কাজে আসতে পারে একদিন।’ প্রতিদিন রাতে

বিছানায় যাবার আগে ভাঁড়ের ভার

ঠাওর করতেন,আর বাবাকে কোটকরে

আমাদের উদ্দেশে বলতেন-‘ভবিষ্যতে

কাজে আসতে পারে একদিন।’

 

মায়ের বাহাত্তর চলছে।

 

এই দুদ্দিনে বয়সের ভারেও মা ভাঁড়খানা

হাতছাড়া করেননি এখনও।ছোটবন

নোটের আকাল ভেবে, ভাঁড় ভাঙার ভাষা পারতেই, মা যেন দাবানল।

 

আমাদের আকলে রাখার মতন মা ভাঁড়খানা বুকে আকরে নিয়ে

বাবা ফেরার আশায় দিন গোনে,আর

প্রচলিত বাক্যের প্রতি অনড় থেকে

একবার কুঁচো পয়সা আর একবার বাবার

ছবির দিকে তাকান…মেঘের আড়াল থেকে যেন শুনতে পাচ্ছেন বাবার প্রতিধ্বনি-”ভবিষ্যতে কাজে আসতে পারে একদিন।”

————–

তরুণ মিত্র

সম্পাদক-সূতপুত্র কর্ণ

হাওড়া-৭১১১১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *