Spread the love

ক্যান্সার প্রতিরোধে p53 জিনের ভূমিকা

ক্যান্সার

ক্যান্সার বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। 

বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারনভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। কিন্তু এই কোষবিভাজন তখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে হতে থাকে তখন আমাদের শরীরের স্থানে স্থানে টিউমারের সৃষ্টি হয়। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে।

ক্যান্সারের প্রকার

কারসিনোমা

এটা খুব সাধারণ ধরনের ক্যান্সার। ফুসফুস, মলদ্বার, স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার এর অন্তর্ভুক্ত।

সারকোমা

সাধারণত হাড়ের, কশেরুকা, চর্বি বা মাংসপেশির ক্যান্সারকে সার্কোমা বলে।

লিম্ফোমা

আমাদের শরীর জুড়ে লিম্ফ নোড ছড়ানো রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই লিম্ফ নোডের সাথে জড়িত। লিম্ফ নোডের ক্যান্সারকেই লিম্ফোমা বলে।

লিউকেমিয়া

রক্ত কোষের ক্যান্সারকেই লিউকেমিয়া বলে। এই রক্তকোষগুলো হাড়ের মজ্জা থেকে জন্ম নেয়।

সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে, কারণ এ সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের ওপর। খাবার এবং জীবনযাপনের ধারার সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে গবেষকরা। যেমন, ধূমপান বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং যকৃৎ বা লিভারের ক্যান্সারের যোগাযোগ রয়েছে। তেমনই ভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করে তাদের মধ্যেও ক্যান্সারের প্রবণতাটা বেশি।ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। মানবদেহে যে সকল স্থানে ক্যান্সার ধরা পড়েছে তা হল প্রস্টেট গ্রন্থি, স্তন, জরায়ু, অগ্ন্যাশয়, রক্তের ক্যান্সার, চামড়ায় ক্যান্সার ইত্যাদি।

একেক ক্যান্সারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছে:

  • খুব ক্লান্ত বোধ করা
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া
  • শরীরের যে কোনজায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া
  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙা
  • মলত্যাগে পরিবর্তন আসা (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া)
  • জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
  • অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা
  • অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
  • ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া
  • মানসিক অস্বস্তি

টিউমার অবদমনকারী জিন বা Tumor Suppressor gene

টিউমার অবদমনকারী জিন বা Tumor Suppressor gene হল কতকগুলি বিশেষ জিন এর সমাহার যারা টিউমার সৃষ্টিকারী কতকগুলি জিনের ক্রিয়াকে অবদমিত করে এবং অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়াকে বন্ধ করার মধ্যে দিয়ে টিউমার সৃষ্টিকে অবদমিত করে। উদাহরন হিসেবে আমরা p53 এবং p21 জিন দুটির কথা বলতে পারি।

p53 জিন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ

  • এই p53 জিনটি একটি টিউমার অবদমনকারী জিন এবং এটি বিভিন্ন জীবের মধ্যে বিভিন্ন রূপে উপস্থিত থাকে। যেমন মানুষের মধ্যে এই জিনটি Tp53 এবং ইঁদুরের মধ্যে Trp53 রূপে উপস্থিত থাকে। এই জিনটিকে সমস্ত জিনের অভিভাবক জিন বা Guardian of the Genome  বলা হয় কারণ এই জিনটি আমাদের শরীরের কোষে উপস্থিত জিন সমুহের মিউটেশন ঘটতে বাধা প্রদান করে।
  • স্বাভাবিক অবস্থায় এই জিনটি আমাদের শরীরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে কারণ এই জিনটির সাথে একটি বিশেষ নিয়ন্ত্রক প্রোটিন mdm2 যুক্ত থাকে। কিন্তু বিশেষ অবস্থায় যেমন DNA এর ভাঙ্গন এবং কিছু সেলুলার স্ট্রেসজনিত অবস্থায় এই mdm2 প্রোটিন টি p53 জিনের থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং এর ফলশ্রুতিতে এই p53 জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সক্রিয় জিনটি অনিয়ন্ত্রিত কোষচক্রকে থামিয়ে দেয় এবং ভাঙ্গা বা damage DNA যুক্ত কোষের বিভাজনে বাধা প্রদান করে। এই জিনটি মুলত দুরকমের কাজ করে। প্রথমত, এই জিনটি চেষ্টা করে ভাঙ্গা DNA টিকে সারাই করার। দ্বিতীয়ত, যদি এই জিনটি DNA টিকে সারাতে ব্যর্থ হয় তখন এই জিনটি কিছু বিশেষ ধরনের প্রোটিন এর সহায়তায় সেই ভাঙ্গা DNA যুক্ত কোষের Apoptosis বা বিনাশ ঘটায়। এই সমস্ত বিশেষ ধরনের প্রোটিন সমুহ কে বলা হয় Apoptotic Gene বা Apoptotic proteins। 
  • BAX Gene হল‌ একটি Apoptotic Gene বা প্রোটিন। এরা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কোষের সাইটোপ্লাজম এ উপস্থিত থাকে। এই BAX জিন তখনই সক্রিয় হয় যখন p53 ভাঙ্গা বা damage DNA এর মেরামতিতে ব্যর্থ হয়। এই p53 এর প্রভাবে এই BAX জিনটি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং p53 এর সঙ্গে একসাথে সেই damage DNA যুক্ত কোষের apoptosis ঘটায়। এরফলে আর ওই কোষটির বিভাজন প্রক্রিয়া হবেনা এবং সেখান থেকে কোনো টিউমারের সৃষ্টি হবেনা এবং পরিশেষে ক্যান্সারের সৃষ্টি হবেনা। 

এইভাবে p53 জিনটি ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

  • নাম-শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়
  • ঠিকানা:- হালিশহর নিউ পূর্বাচল,
  • পোস্ট:- নবনগর  
  • জেলা:- উত্তর ২৪ পরগনা 
  • পিন কোড:- ৭৪৩১৩৬ 
  • জন্মসাল:- জানুয়ারি ২০০১
  • বয়স:- ২১ বছ

তথ্যসূত্র

১. http://www.everydayhealth.com/cancer/guide/

২. http://www.researchgate.net/figure/Cancer-classification-based-on-tissue-types-26-and-27_fig1_330809860

৩. http://www.google.com/amp/s/www.thesun.co.uk/fabulous/10449218/every-90-seconds-cancer-signs-need-to-know/amp/

৪. http://m.youtube.com/watch?v=HORqbHYksQo

৫. http://pubs.sciepub.com/jcrt/3/2/2/figure/1

৬. http://www.mdpi.com/2072-6694/3/1/994/htm

৭. Elledge, S.J. Cell cycle checkpoints: Preventing an identity crisis. Science 1996, 274, 1664–1672. 

৮. Prives, C.; Hall, P.A. The p53 pathway. J. Pathol. 1999, 187, 112–126.

৯. Vousden, K.H.; Lu, X. Live of let die: The cell’s response to p53. Nat. Rev. Cancer 2002, 2, 594–604.

১০. Lacroix, M.; Toillon, R.A.; Leclercq, G. p53 and breast cancer, an update. Endocr. Relat. Cancer 2006, 13, 293–325

**************************************

অনলাইন কাব্যপট পত্রিকার জন্য ছবি ও লেখক পরিচিতি সহ লেখা পাঠাবেন নিচের দেওয়া ঠিকানায় :
kabyapot@gmail.com
WP- +918100481677

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *