Spread the love
            "ঘাটের মড়া"
             (রম্যরচনা)
        অরবিন্দ সরকার
     বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
***†***

বাবা এটা কোন স্টেশন? বুড়িমা ছন্দারানী বহরমপুরে একাই থাকেন। বুড়ো শ্রীমন্তর পেনশনের টাকায় সংসার চালান। একমাত্র ছেলে প্রেম করে বিয়ে করে সোদপুরে পালিয়েছে। অচেনা সোদপুরে তিনি তার সন্ধানে বেড়িয়েছেন।
যাকে উদ্দেশ্য করে ছন্দারানী বললেন তিনি কান দিলেন না। এবার আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বললেন এটা কোন স্টেশন?
সামনের আসনে বসা দিলীপ মণ্ডল বললেন এটা রানাঘাট।
বুড়ি ছন্দারানী বলতে শুরু করলেন- কতো ঘাট যে পেরিয়ে শ্মশান ঘাটে যাবো জানি না।
দিলীপ বাবু- কতো ঘাট পেরোলেন আপনি?
ছন্দারানী- সব ঘাট এখন আঘাট হয়েছে। ফেলো কড়ি মাখো তেল।মরেও শান্তি নেই। ঘাটছাড়া পয়সা, ঘাটের পারানীর পয়সা, ঘাটের শ্রাদ্ধের পয়সা, ঘাটের মড়া পোড়ানোর পয়সা। ঘাটে গ্যাঁটের কড়ি সব যাবে।
এইসময় একজন শীর্ণরোগা হকার কামরায় এসে চিৎকার- মশালা মুড়ি!
বুড়ি ছন্দারানী ডাকলেন- এই যে বাবা ঘাটের মড়া! মুড়ি দাও সব মাখিয়ে।
হকার – বুড়িমা , খাইয়ে দিতে হবে নাকি?
বুড়ি ছন্দারানী- না তোকে খাওয়াতে হবে না।যে খাওয়াবার সে ফেলে চলে গেছে। আর লোক লাগবে না।
হকার – দেখুন এই কামরায় অনেক জ্ঞানী লোকজন আছেন , উনাদের বলুন বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করতে? উনারা ব্যবস্থা করে দেবেন!
বুড়ি- বুড়ো বয়সে ভাতার নিয়ে কি করবো? অসময়ে আমার ভাতার চলে গেলো ! তখন কেউ ছিলো না,এখন বিধবার ভাতার? নিজে কি খাবো তার ঠিক নেই আবার শঙ্করা!! ওসব ধান্ধাবাজি চলবে না। তুমি তো ঘাটের মড়া , তোমাকে নিয়ে গেলে তো কালকেই ঘাটে উঠবে। আবার সেই যাকার তাই অবস্থা! একথা মুখে আনতে নেই! বিধবাদের শখ আহ্লাদ থাকতে নেই। শুধু একাদশী পালন করে যাও। তৃতীয় ব্যক্তি তৃতীয়া তিথিতে এনে আলো দিতে পারবে না? চাঁদের কলঙ্ক ওর থাক্ ‌। আমি আর কলঙ্কের বোঝা বইবো না। কি যে দিনকাল এলো। সবকিছুরই নেতার দায়িত্বে সরকারি ভাতার। ফেরী ঘাটে ফেরী করে বেড়াচ্ছে বৈতরণী পার হওয়ার জন্য সবেতেই ভাতার। টাকা থাকলে ভাতের অভাব হয় নাকি? কতো কাক মিনসে কোলাঘাট থেকে খাগড়াঘাট থেকে, ঘাটশিলা থেকে,শিলাপাথর এনে গুঁজে দিয়ে বলবে আমি শিব!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *