মায়ের জন্য
রোকেয়া ইসলাম
**************
আমার মা কখনো আমার কপালে
পড়াননি নজর ফেরানো টিপ
বাহুতে বাঁধে নি কাইতান
কোমড়ে তাগা
বিশ্বাস ছিল না এতে , আমার মনে হতো আদর নেই আমার প্রতি
সমবয়সীদের দিকে ঈর্ষায় তাকিয়েছি
ওদের বাহুল্য আদর দেখে
লিকলিকে শরীরের কালো মুখের বড় চোখে
বড় সংসারের ডেগচির চাপে আড্ডা গন্ডা ছানাদের
ভিড়ে আমিও বাড়ছিলাম প্রকৃতি আলোখেলায়
মা আমার বিদুষী নন তিনি বিশ্ব পাঠশালার নিত্য শিক্ষার্থী
বাংলা লেখায় কিছুটা পারদর্শী নিজেকে ঘষে
পড়ায় সলতেয় উসকে দিতো
নিত্য জ্ঞানের শিখা
দরিদ্র ঘরের দায়বতী কন্যা স্বামীর গৃহে ছিল অতি ধৈর্যশীলা নারী।
দেবর ননদ শশুর শাশুড়ীর সাথে ভ্রাতা ভগ্নী
সাথে ছিল অসমর্থ মানুষজন।
দানের অপার আনন্দ আপ্লুত হতেন
স্বামীর রোজগারের উত্থানে যেমন মাটিতে রেখেছেন স্থির পদযুগল পতনেও অবিচল আত্মবিশ্বাসী
সামান্য তাঁতের শাড়ি পাতলা গয়নাই ছিল তার প্রিয়
গাল ভরা পান নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে গাল-গল্পতে ছিল না অফুরন্ত সময়
সংসার থেকে কাঁচিয়ে আনা সময়টুকু প্রিয় লেখকের উপন্যাসে মগ্ন প্রহর
ইত্তেফাক আজাদ বেগম থেকে বিচিত্রা
এই তার বিলাসী আয়োজন।
স্বামীর ঘরে ফেরার অপেক্ষায় গ্রন্থ সহচরী স্বভাবটা প্রিয় তার নিজেরও
উছলে আদর নয় বাহুল্য চাহিদাও মেটান নি কখনও
কড়া শাসনের বেড়াজালে আঁটকে রাখতেন
নিয়মের কারাগারে
মিথ্যে বলার আগেই সতর্ক বার্তা ছিল তার
শুনলে মিথ্যে ঠোঁটজোড়া গাঁথবেন কাঁথা সেলাই সূঁচে।
খাবার নিয়ে আবদারের জায়গা ছিল না, দুপুরে সারিবদ্ধ লাইনে যার পাতে যা মাছ মাংসের টুকরো
বিনা বাক্যব্যায়ে উদরপূর্তি।
রাতে দুধকলায়ও শোনা হয়নি আপত্তি
৫৭০ সাবানে চুল ধুয়ে দিতেন নিজ হাতে
কিশোরী আমি চোখ এড়াতাম রাখতে উলু উলু খোলা চুল
বাঘিনী দৃষ্টিতে ধরে এনে নারকেল তেল জবজবে চুলে রঙিন ফিতায় বাঁধতেন কলাবেনী
পূবের জানালা খুলে রাতের স্মৃতি সরিয়ে ভোর বিছিয়ে দিতাম প্রতি প্রত্যুষে
মুঠো মুঠো রোদ স্বর্গীয় স্বাস্থ্য – আদর মায়ের স্নেহ হাতে বুলাতো সারা শরীর জুড়ে।
পাঠ্যবইয়ের বাইরে লুকিয়ে তার প্রিয় গ্রন্থ পড়াকে
প্রশ্রয়ই দিয়েছেন আপত্য স্নেহে
নিয়ম ভাঙার আনন্দে লুফে নিয়েছি তার পরম পাওয়া ভালবাসা।
আমার কপালে নজর ফেরানো টিপ ছিল না কখনও
ছিল না কাইতান তাগা রুপালি তাবিজ
চোখে ছিলনা মায়া কাজল নিত্য পুতে দিতেন স্বপ্নবীজ