ঝড় এলেও ভাঙবে না
-শ্যামল মণ্ডল

কখনো কখনো ঝড় আসে,
সে ঝড় ঈশ্বরের পাঠানো নয়—
তার কাঁপন দিয়ে মনটাকে ভাঙতে চায়,
দিশেহারা করতে চায় পথচলার মাঝেই,
কিন্তু মানুষ তো আলো বুকে নিয়ে হাঁটে—
হার মানে না আত্মার শক্তি কারও কাছেই।
শয়তান যতই তেড়ে আসুক—
তুমি ঘাবড়াবে না, নড়বে না একচুল,
কারণ জানবে—ভয়ের দেয়াল ভাঙে
অটল বিশ্বাসের হাত ছুঁলেই কেবল।
ঝড় যখন কাঁপিয়ে তোলে
তোমার ঘরের চার দেয়াল,
তুমি তখন বুক সোজা করে বলো—
“তুই ভাঙতে পারিস না, আমার মন অবিচল!”
তুমি আত্মসমর্পণ করবে না
অন্ধকারের কোন কলহে,
কারণ আলো তোমার অন্তরে জ্বলে
প্রতিটি প্রার্থনার নীরব দহনে।
তুমি দাঁড়াবে যখন দৃঢ় হয়ে—
শয়তান হাল ছাড়বে, পালাবে দূর,
কারণ সত্য শক্তির সামনে
মিথ্যার থাকে না কোনো সুর।
ঝড় এলেও তাই ভয়ের কিছু নেই,
মনের দরজা খোল—
বিশ্বাসে হও অটল,
জীবনের পথে দৃঢ় হও আরেকটা দিন,
তুমি দাঁড়ালে—
অন্ধকার কোনোদিনই জিতে যাবে না।
********************
আমার আত্মজীবনী
— শ্যামল মণ্ডল**
জীবনের পথচলা কখনো সোজা নয়, কখনো বাঁক নিতে নিতে মানুষ নিজের ভেতরে নতুন আলো খুঁজে পায়। আমিও সেই আলো খোঁজার পথেই চলেছি—একদিকে শিল্প-কারখানার প্রযুক্তিগত কঠোরতা, অন্যদিকে শব্দসৃষ্টির নরম কোমল জগৎ। এ দুইয়ের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে আমার জীবন, আমার পরিচয়।
ছোটবেলা থেকেই হাতে বই থাকতো—কখনো গল্প, কখনো ইতিহাস, কখনো কবিতা। অজানা–অচেনাকে জানার কৌতূহল আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেত। তবে লেখালেখির বীজ অনেক আগেই রোপিত হয়েছিল। স্কুলে যখন প্রথম নিজের লেখা কয়েকটি লাইন শিক্ষক প্রশংসা করলেন, তখনই মনে হলো—শব্দ দিয়ে মানুষকে ছুঁয়ে দেওয়া যায়।
জীবনের বাস্তব পথ আমাকে নিয়ে এল শিল্প–কারখানার জগতে।
গত ৩০ বছরেরও বেশি সময়, আমি কাজ করেছি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনস্ট্রাকশন, মেকানিক্যাল সুপারভিশন, সেফটি সিস্টেম ও ফ্যাব্রিকেশন-ম্যানেজমেন্টে।
অনেক প্রকল্প দেখেছি, অনেক মেশিনের আওয়াজ শুনেছি, অনেক জরুরি পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় কাজ করেছি।
সব ক্ষেত্রেই আমার দক্ষতা গড়ে উঠেছে কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে।
কখনো বিশাল প্ল্যান্টে দাঁড়িয়ে স্ট্রাকচারাল কাজ দেখেছি, কখনো নতুন ছেলেদের হাতে ধরে শিখিয়েছি নিরাপদভাবে কাজ করা কী।
হাজার মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি, বহু শহর–উপশহর ঘুরেছি, এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি যে—পেশাদার জীবনে নিরাপত্তা, সততা আর সময়ানুবর্তিতা সবচেয়ে বড় সম্পদ।
লেখালেখির জগতে আমার প্রবেশ
পেশার বাইরে আমার দ্বিতীয় পরিচয়—লেখক ও কবি।
জীবনের অভিজ্ঞতা, সমাজের রঙ, মানুষের হাসি-কান্না আর নিজের অনুভব—এসবই আমার লেখার মূলধন।
আমি লিখি—ভ্রমণকাহিনী,
সমসাময়িক সমাজ নিয়ে ভাবনা
কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প
ব্যক্তি চরিত্র ও জীবনঘনিষ্ঠ বিবরণ,
ব্লগ ও অনলাইন কনটেন্ট।
আমার লেখাগুলো অনেকেই পড়েন, শেয়ার করেন, প্রশংসাও করেন এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
লেখালেখি আমার কাছে শুধুই শখ নয়; এটা আমার আত্মার ভাষা, নিজের ভেতরের কথাগুলোকে পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার পথ।
ডিজিটাল যুগে আমি নিজের লেখালেখি ও অভিজ্ঞতা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে শুরু করেছি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে।
নিজের লেখা ভ্রমণ কাহিনী ও সামাজিক ভাবনাগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি।
ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারলাম—শুধু শিল্পক্ষেত্রই নয়, ডিজিটাল দুনিয়াতেও আমার চিন্তা ও দক্ষতার স্থান আছে।
জীবনের দর্শনে আমি বিশ্বাস করি,
কাজে সততা থাকলে কোনও কাজই ছোট নয়
জ্ঞান শিখে নিতে হয় সারাজীবন
কথার চেয়ে কাজ মানুষের পরিচয় গড়ে দেয়
লেখা মানুষের মন পরিবর্তন করতে পারে
ঝড় আসবে—কাজে, জীবনে, সম্পর্কেও।
কিন্তু আমি শিখেছি, ঝড় শয়তানের হলেও, শক্তি ঈশ্বরের; তাই ভেঙে পড়া নয়, আরও দৃঢ় হয়ে ওঠাই জীবনের আসল পথ।
বর্তমানে আমি নতুন সুযোগ ও নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধানে আছি।
স্থানান্তর বা বেতন—এসব আমার কাছে বড় বিষয় নয়; কাজ যদি আমার দক্ষতা ও মননকে সম্মান দেয়, আমি সানন্দে গ্রহণ করি।
লেখার জগতে আরও বড় কিছু করার ইচ্ছে আছে—
হয়তো আমার লেখা আরও মানুষের হৃদয়ে পৌঁছবে।
জীবন নামের এই দীর্ঘ নদীতে অনেক স্রোত এসেছে, অনেক ঢেউ আমাকে ভিজিয়েছে।
কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে আছি নিজের বিশ্বাস, সাহস ও পরিশ্রমের ওপর।
আমি শ্যামল মণ্ডল—
একজন কর্মী, একজন পর্যবেক্ষক, একজন শিখে চলা মানুষ
এবং একজন লেখক, যার কলম এখনো থামেনি। সঙ্গে রয়েছে আমার’ই সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা kabyapot.com
“ঝড় এলেও ভাঙবে না”, এই বহু অভিজ্ঞতার গদ্যে কবি, লেখক ও ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল মন্ডল খুব টানটান করে নানা অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন। পড়তে খুবই ভালোলেগেছে।