Spread the love

জন্মদিনে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র

  • অগ্নিমিত্র (ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)

সাহিত্যসম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন । তিনি ১৮৩৮ সালের ২৬শে জুন নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
তাঁর দাদা সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও প্রখ্যাত ভ্রমণকাহিনী লেখক ছিলেন। ‘ পালামৌ ভ্রমণ’ নামক কাহিনী লিখে সঞ্জীবচন্দ্র জনপ্রিয় হন।
বঙ্কিমচন্দ্র ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন । তাঁর প্রথম ছাপা কবিতা ছিল ইংরেজিতে, ‘ Rajmohan’s Wife’। তবে এর পর তিনি বাংলায় উপন্যাস লিখতে শুরু করেন । প্রথম সফল বাঙালি ঔপন্যাসিক ছিলেন তিনি । পড়াশোনা করেছেন প্রেসিডেন্সি কলেজে ।
পাশ্চাত্যের Novel রীতির অনুসরণ করে তিনি লেখেন ‘ দুর্গেশনন্দিনী ‘, ‘ সীতারাম ‘, ‘ রাজসিংহ’ ও ‘আনন্দমঠ’-এর মতো কালজয়ী সব উপন্যাস । লিখলেন ‘ যুগলাঙ্গুরীয়’। বাংলা সাহিত্যে যেন এক আলোড়ন সৃষ্টি হলো।
কর্মসূত্রে চব্বিশ পরগনা ও পরে মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি ম্যাজিসট্রেট ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র । তাই কাজের সূত্রে দেখা ও শোনা বিভিন্ন ঘটনা ও লোককথা তিনি উপন্যাসের মাধ্যমে তুলে এনেছিলেন। তাঁর ভাষা ছিল সুললিত ও একটু সুকঠিন শব্দভাণ্ডারে রঞ্জিত । অনেকে বলেন যে ‘ দেবী চৌধুরানী ‘ ও ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাস দুটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত । দেশদ্রোহমূলক লেখার অভিযোগ এনে ইংরেজ সরকার ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাস সাময়িক ভাবে নিষিদ্ধ করেছিল।
তবে তাঁকে শুধু ঔপন্যাসিক ভাবলে ভুল হবে। অনেক হাসির গল্পও লিখেছেন তিনি, যেমন ‘ কমলাকান্তের দপ্তর ‘ বা ‘ সুবর্ণ গোলক ‘। ‘ বঙ্গদর্শন ‘ নামের সংবাদপত্র সম্পাদনাও করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র । বাঙালি পুরোহিত শ্রেণীর আর্থিক দুরবস্থা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু প্রবন্ধও। আবার গান লিখেছেন। লিখেছেন ‘ বন্দে মাতরম ‘ গানটি, যাতে পরে সুর দেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । গানটি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মনে নতুন উৎসাহ তৈরী করেছিল।
বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা অনেক উপন্যাস চিত্রায়িত হয়েছে, যেমন ‘ বিষবৃক্ষ’, ‘ কপালকুণ্ডলা ‘ও ‘ দেবী চৌধুরানী ‘। ছবি হয়েছে ‘ সুবর্ণ গোলক ‘ থেকেও।
নবীন প্রতিভাকে চিনে নিতে দেরী করতেন না তিনি। এক সাহিত্য সভায় তাঁকে সম্বর্ধনার মালা পরানো হলে তিনি সেই মালা নিজে পরিয়ে দেন সভায় উপস্থিত নবীন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। বলেন যে ‘ ইনি ভবিষ্যতে বিশ্ববিখ্যাত কবি হবেন’।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসবোধও ছিল প্রবল। একবার শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের সাথে তাঁর আলাপ হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ মজা করে বলেন -‘ তুমি এত ব্যাঁকা কেন গা?’ বঙ্কিমচন্দ্র তখন বলেন যে ইংরেজদের সাথে কারবার করতে করতে তিনি বেঁকে গিয়েছেন।
১৮৯৪ সালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে ।
জন্মদিনে এই সুমহান সাহিত্যিকের চরণে অকুন্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন করছি । নতুন প্রজন্ম যেন তাঁকে আরেকটু বেশি করে চেনে ও জানে।।

🌿🍀🌿🍀🌿🍀

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *