Spread the love


কবিতা : ছাত্র আছি আজো   
[ A Bengali poem : Chatra Achi Ajo, i.e. Still I am a Student,  by Ridendick Mitro.]
————————————
ঋদেনদিক মিত্রো 

ছাত্রজীবন কোথায় গেল,
  আছে আমার দেহে মনে, 
ভাবছ নাকি আমি এখন 
  সংসারেতে ঘরের কোনে 
  ঢুকে গিয়ে শেষ করেছি 
  আমার স্বপ্ন,  আমার সৃজন, 
  ছেড়ে এসে ছাত্রজীবন! 

সেই কবে স্কুল, কলেজ ছেড়ে, 
কাজকর্ম,  চাকরি ধরি, 
ঘর সংসার এসব নিয়ে 
  ঝুটঝামেলায় পড়িমরি। 

এইসবেতে থেকে-থেকে 
  শরীরে রূপ গেছে ধসে, 
সকল কিছু হচ্ছে ফিকে 
   কত আশা গেল বসে, 
কত ভাষা হয়েছে চুপ,
  কত গতি গেছে থেমে, 
কেটে গেছে সব যোগাযোগ
  যা ছিল সব আড়াল প্রেমে,  

সে সব আমি ভুলবো কেন, 
  কিসের সমাজ, আতংক, ভয়,   
আমার জীবন — আমার জীবন, 
  এটাই হোলো আসল বিষয়, 
কোন্ সংস্কার কিংবা সমাজ 
  খর্ব করে আমার গতি! 
সেই ভয়েতে কুঁচকে গিয়ে 
  করব কেন আমার ক্ষতি?

আমার জীবন — আমার জীবন, 
  এটাই আমার স্বাধীনতা,  
কোন্ সংস্কার চোখ রাঙানি
  করতে পারে আমায় ভোঁতা, 
আমার জীবন — আমার জীবন 
  এটাই আমার স্বাধীনতা।

আজো আছে ছোটবেলা,
  ইস্কুলেতে  সবে ঢুকে 
কী দুষ্টুমি,  কী দুষ্টুমি,  
   মাস্টা’মশায় রেগে উঠে —
বেত তুলতেন জোরসে হেঁকে, 
  অমনি তখন পড়ে যেতাম 
  বন্ধুরা সব সামনে ঝুঁকে–
   বর্ণপরিচয়-এর পাতা,
বইয়ের ওপর বিদ্যাসাগর, 
  ছোট্ট একটা ছবি ছাপা, 
সেই ছবিটাই বিদ্যাসাগর,
  সেসব স্মৃতি আজকে চাপা। 
মাষ্টা’মশায় হাঁক মারছেন:–  
  বিদ্যাসাগর জানিস কে,  
ভালো করে শুনে নে!
জ্ঞান, গুণ আর সাহসেতে
  যিনি ছিলেন সদাই জাগর,
  তিনি হলেন বিদ্যাসাগর।

অমনি তখন কেউ বলতাম, 
  মাস্টা’মশায় “জাগর” মানে,  
মাস্টা’মশায় বলে দিতেন — 
   যিনি সদাই জেগে থাকেন 
   চরিত্রে আর মনে প্রানে,   
“জাগর” হোলো তার-ই মানে।

এসব নিয়ে কত গল্প
  বলে যেতেন মাস্টা’মশায়, 
কল্পনাতে ভেসে যাওয়া —
  বিদ্যেসাগর কেমন মানুষ, 
তাঁর কাহিনি মনকে নাড়ায়।
  
দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেনী ঊঠে  —
  পড়তে থাকি “সহজ পাঠ”, 
  প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ,
হাতে পেলাম রবি ঠাকুর,  
  মাস্টামশায় দিতেন হাঁক,  
ওরে ইনিই রবি ঠাকুর, 
  কাব্যে নোবেল পান, 
বিশ্ব-সেরা পুরস্কার, 
  সেটাই নোবেল নাম, 
সুদূর  সুইডেন দেশেতে–  
  এটা দেওয়া হয়, 
বড় হয়ে পড়বি অনেক,
  রবি ঠাকুর মানে হোলো 
   কেবলি বিস্ময়।

এসব কথা আজও শুনি 
   আজও দেখি সে-দৃশ্য, 
তাই তো আজো ছাত্র আছি, 
   যাইনি হয়ে নিঃশ্ব। 

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আজও
   কল্পনাতে যাই, 
কত সংগী  নিয়ে আজো
   এটা সেটা খাই, 

কত রকম গল্প করি,  
  কত কিছু দেখি, 
নয়তো এসব মিথ্যা কথা, 
  নয় তো এসব মেকি,  

হোস্টেলেতে থাকার সময় —
  পড়লে খাবার ঘন্টা,  
অমনি তখন চলে যেত
   খাবার দিকে মনটা।

কুকুরগুলো আনন্দেতে 
  ডাক ছাড়তো জোরে,
এঁটোকাঁটা তাদের দিতাম 
  সবাই খাবার পরে, 
অসহায় সেই কুকুরগুলো 
  পড়তো ফেটে ক্ষোভে, 
মানুষ শুধু পেট ভরে খায় — 
   ইচ্ছা মত লোভে, 
আর বাকি সব জীব প্রানিদের 
  বোঝে না কী কষ্ট, 
মানব-জাতির পড়াশুনা  
   স্বার্থ-রোগে নষ্ট!

কুকুরগুলোর মনের ভাষা 
  বুঝে আমি কাঁদতাম, 
বুকের মাঝে বিদ্রোহকে 
   লুকিয়ে চুপ থাকতাম,  

কিংবা বেড়ালগুলো এসে 
   বসতো কোথাও যদি,  
সবাই তাদের করত তাড়া, 
   প্রতিদিনের ছবি। 

পীড়িত মানুষদিগের হয়ে 
  কত বিদ্রোহ,  বিপ্লব, 
অন্য পীড়িত প্রানিদের হয়ে 
  মানুষ কেন বা নীরব?

তাই এ বিশ্বে সব বিপ্লব 
  সার্থপরের চাহিদা, 
তাই তো সমাজ ছিল যেমনটি,
  আজও রয়েছে তা,

যে আজ শোষিত,  সে কালকে
  শোষকের লুট করে — 
নিজে হয়ে যায় তখন শোষক, 
  রূপের চাকাটা ঘোরে। 

যে আজ শোষক সে কালকেই
  শোষিত-দ্বারা অশান্ত, 
এই যে পারস্পরিক হিংসা, 
  এটা বিপ্লব ভ্রান্ত।
  
এই পৃথিবীতে যতদিন না 
  সকল জীবের হয়ে — 
বিপ্লব হয় নিরপেক্ষ
  জীব, প্রকৃতির জয়ে,  

ততদিন সব বিপ্লবগুলি 
  রেষারেষি খুনোখুনি, 
ভুয়ো চিন্তাকে শান্তির পথ 
  বলে কল্পনা বুনি।  

ভুয়া চিন্তাকে মুক্তির পথ বলে 
   কত লোক হয় গুণী,  

ইস্কুলেতে কর্মশিক্ষা মানে হোলো
  কোদালে মাটি কাটো, 
  গাছগাছালি ছাঁটো,
  শ্রমিক হয়ে খাটো, 
  স্বাস্থ্য-শিক্ষা মানে হোলো  
  নিজে হও গোলগাল, 
  বাকি প্রানিরা থাক কংকাল।  

নির্বদ্ধির শিক্ষা নিয়ে 
  দেশ,  সমাজ,  প্রতিবেশিদের
  করো তালবেতাল।
  
হায় আমাদের শিক্ষা, দীক্ষা, 
  বিরাট ডিগ্রিগুলি, 
ভুলকে বহন করার জন্য 
  সাজানো হচ্ছে কুলি, 

বিরাট ডিগ্রিগুলি।

এত সকল নামী ইস্কুল,  
  কলেজ কিংবা 
   বিশ্ববিদ্যালয়, 
এইগুলি কি কেবল শুধু 
কাগুজে ডিগ্রি কেনা বেচা ছাড়া
  আর কি কিছুই নয়? 

এই পৃথিবী  নিয়ে তো কোনো 
  চিন্তা,  দায়িত্ব,  
এইসব নিয়ে পাঠ্যসূচিতে
  নেই কোনো অস্তিত্ব, 

যদি থাকে তবে দায়সারা ওই
  অকেজো দুইটা ভাষা,   
অসহায় জীব, প্রানিদের দিও
   সকলেই ভালবাসা। 

কিন্তু এসব নিয়ে তো কোনো 
  নেই কোনো শিক্ষণ, 
শিক্ষা মানে ভদ্র বেশেই 
   লুটেরা হওয়ার  জীবন, 

এসব কথাও ভাবতাম খুব, 
   জীবনের সব ফাঁকি, 
এত শিক্ষা,  এত যে ডিগ্রি,  
    সবই, সবই চালাকি।   

এসব চিন্তা আজো কাছে এসে 
  কাঁদে শুধু চুপিচুপি, 
কত রকমের প্রতিবাদে আমি
  আজও তো জেগে উঠি, 
সেটাই জীবন,  নিরীক্ষনে
  এবং প্রতিবাদে —  
  দিতে চায় না তো ছুটি, 
কত রকমের বিদ্রোহে, প্রতিবাদে, 
  আজও তো জেগে উঠি।

সেইদিনগুলি  সবই তো রয়েছে —
  তোমার আমার মাঝে, 
হারিয়ে যাওয়া সুখ দুঃখরা —
   আসবে নতুন সাজে, 

কল্পনাকে লাগাও যদি কাজে। 

——————————————– 
(  ২৩, ২৪ মে ২০২২) 
——————————————-
ঋদেনদিক মিত্রো,  পেশায় ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় কবি,  উপন্যাসিক,  গীতিকার, বহু গ্রন্থের লেখক,  কলকাতা,  ভারত। 
Ridendick Mitro,  is professionally a poet, novelist,  lyricist,  columnist in English and Bengali languages seperately. Kolkata. India. Huge books published  and yet to be published many more.
                    — Editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *