KABYAPOT.COMরম্যরচনা

“ভোম্বলের সংলাপ” (রম্যরচনা)-অরবিন্দ সরকার

Spread the love

“ভোম্বলের সংলাপ”
রম্যরচনা
অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ।

ভোম্বল দাস চিন্তাশীল ব্যক্তি। আকাশ কুসুম ভাবনা তার। ভাবতে ভাবতেই মাথার চুল সব পেকে ঝরতে লেগেছে। তার কয়েকটি ভাবনা এখানে প্রকাশ করা হয়েছে।
ধান থেকে চাল উৎপন্ন হয়। ধান সেদ্ধ করে আবার তাকে বড়ো মাটির হাঁড়ায় ভিজিয়ে, আবার সেদ্ধ করে তাকে শুকিয়ে ধান কলমিলে ছেঁটে চাল বের হয়। এতে ধানের তুষ থাকে। সেগুলো ঝেড়ে কুলোয় পরিষ্কার করে চাল পাই। ভাঙা চাল ক্ষুদ হিসেবে গো খাদ্য বা চোলাই মদ তৈরির উপাদান।
ভোম্বলের মনে প্রশ্ন চালের গায়ে কারা উৎপাদন করেছে ধান থেকে চাল তাদের নাম থাকে না কেন? কোন চাষী লাঙ্গল বেয়ে, কারা কারা বীজ রোপণ থেকে ধান কাটলো,ধান মাড়াই ঝাড়াই কারা করলো,ধান সেদ্ধ থেকে চাল উৎপাদনের কাদের কাদের ভূমিকা, চাল থেকে মুড়ি, খই, চিঁড়ে, চাল গুঁড়া থেকে পিঠে এসবের সঙ্গে কারা জড়িত এসব না জেনে, হাঁড়ির ভাতে কেন জাত আসে? জাত পাত সম্প্রদায় থেকে সাম্প্রতিক দাঙ্গা। ফসলের জাত নেই কিন্তু মানুষের জাত আছে। ধান সব জাতের কাছেই ধান কিন্তু মানুষ মানুষ নয়! তাদের পার্থক্য আছে, ছোট জাত, উঁচু জাত, বড়ো লোক, গরীব লোক, আবার হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, জাতপাতে বিভক্ত। সৃষ্টির এতো বৈষম্য তার মনে জ্বালা ধরেছে। বাগানের ফুল ফলমূল মানুষের জন্য আবার দেবতাদের জন্য, কিন্তু ওই ফলফুলের গায়ে জাত লিপিবদ্ধ না থেকে,কেনার পর তাকে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিবেদন করা হয়। তাহলে জাতপাত পরিষ্কার করে প্রকৃত মানুষ বাছাই হয়না কেন? ফসল ফল মূল খেয়ে মানুষের রক্ত হয়। সেই রক্ত মানুষ দান করে মানুষের সেবায়। সেখানে রক্তের গ্রুপ লেখা থাকে কিন্তু জাতের নাম থাকে না! পৃথিবীর সকল দ্রব্য সবার অধিকার। বনজঙ্গলে পশুপাখি থাকে, তাদের নাম থাকে শেয়াল কুকুর বাঘ ভাল্লুক সিংহ হাতি গণ্ডার, ময়না কাকাতুয়া বুলবুলি টিয়া ইত্যাদি। ওদের তো ছোটলোক ভদ্রলোক ইতর নীচু উঁচু থাকে না। অসভ্যদের মনে হয় জাতপাত নেই, জাতপাত শুধুমাত্র সভ্য সমাজের বিষয়। বৃষ্টির জলে চাষাবাদ হয়, তার ভাগ হয়না কিন্তু টিউবওয়েলের জলে কুয়োর জলে জাতের সৃষ্টি হয়। নিষেধাজ্ঞা জারি হয় কোথাও কোথাও আবার কোথাও টিউবওয়েল ধৌত করে জল নেওয়া হয়। তবে পাতালের জল ধৌত করা হয়না? মানুষ স্নান করলেই শুদ্ধ বা পরিষ্কার, তাহলে আবার কি প্রয়োগ করলে দূষণ মুক্ত করা যায় মানুষকে। হাতে হাতে করমর্দন হয়, আবার হাতে হাতে হাতাহাতি লড়াই লেগে যায়। কানাকানিতে ছোট জিনিস বড়ো আকার ধারণ করে। মহাকাশে আট দিনের যাত্রায় নয়মাস অতিক্রান্তে জুটি ফিরে এলো। হিন্দু রমনী কি খেলো, কিভাবে তারা ঘুমালো, পরস্ত্রীর জাততো গেলো না। বরং তারা পূজিতা হলো। তাহলে আকাশে শূন্যে জাত নেই,জাত আছে মর্ত্যের নিঃশ্বাসে। বিশ্বাসের ব্যাপারে আবার কিন্তু জাত আছে? সবাইকে এখানে বিশ্বাস করা যায় না? প্রভুভক্ত কুকুরের জাত নেই,সে কিন্তু বিশ্বাসী!
অভিনয়ে নাটক যাত্রাপালায় সিনেমায় রামের ভূমিকায় রহিম অভিনয় করে প্রণাম পায় শ্রীচরণে। রাবণ সেজে পাড়ার হারাধন অভিনয় করলে পাড়ার সীতারা তার গায়ে থুঃ থুঃ ছেটায়। হায়রে হায়, হারাধনের বৌ ছেলে মেয়ে তারা কি করে জানতে ইচ্ছে করে?
ঘরে আগুন লাগলে সবার বালতির জলে আগুন নেভে। হারানো পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত জিনিস খুঁজে পেতে সবাই সাহায্য করে। টাকা পয়সার বাক্স গহনা অলঙ্কার পেতে ছুটোছুটি। টাকা পয়সা গহনা ছুঁলে জাত যায় না! আগুন নেভালেও না। আগুন জ্বালাতে জাতপাতের সৃষ্টি। ভগবানের সবসময় বিরূপ দৃষ্টি। কুমোর হাঁড়ি বানায়, কিন্তু হাঁড়ির ভাতে যতো সব বদমাইশি, হাঁড়ি ভাগের ষড়যন্ত্রের শিকারী।
মানুষের প্রজাতি- হাতির চারগুণ বড়ো ম্যামথ নামক জন্তু দলবদ্ধ ভাবে শিকার করতো পেটের জন্য। অতো বড়ো শিকার গুহায় নিয়ে গিয়ে খেতো। গুহায় অতো বড়ো ম্যামথ কিভাবে ঢুকতো। মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী, দলবদ্ধ ভাবে মেরে খণ্ড খণ্ড করে কেটে গুহার মধ্যে খেতো। ওদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে খাদ্য বস্তু শিকারে উদর পূর্তি না হলে আজ মানুষের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিতো। তখন তারা দলবদ্ধ শিকারে যা সামনে পেয়েছে গুহার মধ্যে নিয়ে গিয়ে খেয়েছে। ছোট গুহায় অতো বড়ো বড়ো প্রাণীর হাড়গোড় পাওয়া গেছে। ভোম্বল চিন্তা করেছিলো কিভাবে ওদের প্রবেশ হলো গুহায়? পরে বুঝতে পেরেছে যে খণ্ড খণ্ড ভাবে ছোট করা যায়। ওই বনমানুষেরা যদি আহার জোগাড় করতে না পারতো তাহলে আমরা পৃথিবীতে কেমন ভাবে থাকতাম ও বাঁচতাম। আমরা অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমানে মাতব্বর হয়ে জাতপাতে ঘাঁটাঘাটি করছি। কোন জাতের কোন খাবার প্রযোজ্য তার অঙ্ক কষছি। বিভাজন সৃষ্টি করছি মানুষ জাতের। দিনের পরে রাত্রি আসে, রাত্রির পরে দিন, তেমনি অতীত হারিয়ে বর্তমান, বর্তমান টিকে থাকলে ভবিষ্যতের কথা আসে। ভবিষ্যৎ স্বপ্নের না দুঃস্বপ্নের সেটা জমা থাক মনের কুঠুরীতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *