Spread the love

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

প্রবন্ধ
বিজ্ঞান-মনস্ক সুভাষচন্দ্র
কলমে- ডঃ রমলা মুখার্জী

বৈচী, জেলা হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

সুভাষচন্দ্র বসু ভারতীয়দের কাছে খুব শ্রদ্ধার এক মানুষ। তাঁর পড়াশোনা, রাজনীতি এসব নিয়ে আমরা অনেক কথাই জানি। কিন্তু তিনি যে ভীষণভাবে বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন এবং বিজ্ঞানের পত্রিকা ও বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভীষণভাবে যুক্ত ছিলেন সেকথা আমরা অনেকেই জানিনা। আজ তাঁর বিজ্ঞান পত্রিকার প্রথম লেখা নিয়েও আলোচনা করব। বিজ্ঞানের অগ্রসরে তিনি প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ডঃ মেঘনাদ সাহাকে পাশে পেয়েছিলেন।
নেতাজী যখন ভারতে ফিরে এসে দেশপ্রেম মন্ত্রে দীক্ষিত হবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলেন সেই সময় তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে চিঠিতে লেখেন যে কংগ্রেসের একটি আলাদা বাড়ি থাকা চাই এবং একদল ছাত্র থাকা চাই যারা সেখানে দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গবেষণা করবে।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


সুভাষচন্দ্র তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে ১৯২২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর তারিখে নিখিল বঙ্গ যুবক সমিতির প্রথম অধিবেশনে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি হিসাবে ডঃ মেঘনাদ সাহাকে সম্বর্ধনা জানিয়েছিলেন। সেই সভায় মূল সভাপতি ছিলেন ২৯ বছরের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ও অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন দেশবন্ধু বাহিনীর ২৫ বছরের সুভাষচন্দ্র বসু। এই সভায় মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা প্রবর্তনের ওপর বিশেষ জোর দেবার কথা বলেছিলেন।
ডঃ মেঘনাদ সাহার গভীর উদ্যোগ ও প্রচন্ড নিষ্ঠায় স্থাপিত হয় “ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউস অ্যাসোসিয়েশন”। সেখানে যুক্ত হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। ভারতবর্ষের প্রথিতযশা বিজ্ঞানীরা মিলে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। ১৯৩৫ থেকে এই প্রতিষ্ঠানটির পথচলা শুরু হয়েছিল এবং প্রথম সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন মেঘনাদ সাহা ও বিধুভূষণ রায়। ১৯৩৫ সালেই ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে একটি বিজ্ঞান পত্রিকা “সায়েন্স এন্ড কালচার” প্রকাশনার কাজ শুরু হয়। ঐ পত্রিকাটির সাথেও সুভাষচন্দ্র বসু ভীষণভাবে যুক্ত ছিলেন। অধ্যাপক মেঘনাদ সাহার মতে দেশ ও জাতিকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে গেলে যদি কোন বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দিতে হয় তাও স্থান পাবে এই পত্রিকাটিতে। তাই বিজ্ঞানীরাই শুধু নয় রাজনৈতিক নেতাদেরও আহ্বান করা হয়েছিল। ডঃ সাহার সেই ডাকে সুভাষচন্দ্র বসু সাড়া দিয়েছিলেন এবং রাজনৈতিক নেতা হিসাবে সুভাষচন্দ্রকে ঐ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। ঐ “সায়েন্স এন্ড কালচার” পত্রিকার ১৯৩৫ সালে, ভলুম ওয়ানে সুভাষচন্দ্র বসু “The Problem of Nation Buildings” নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধের প্রথমে তিনি লিখেছিলেন যে নতুন নতুন তথ্য দিয়ে পত্রিকাটি ভারতের বিজ্ঞানীদের অনেক সাহায্য করবে। দেশের সামাজিক সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানের যে ভীষণ প্রয়োজন তা তিনি উল্লেখ করেছিলেন। যারা নতুন ভারতবর্ষ গড়ার স্বপ্ন দেখছে তাঁদেরও বৈজ্ঞানিক পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি তাঁর প্রবন্ধে।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


ডঃ মেঘনাদ সাহার সাদর আহ্বানে ১৯৩৮ সালে ২১শে অগস্ট ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউস অ্যাসোসিয়েশনের যে তৃতীয় বার্ষিক সভাটি হয়েছিল তার সভাপতি হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। সেই সভায় মেঘনাদ সাহা ও সুভাষচন্দ্রের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ আলোচনা হয় এবং সেই আলোচনার পরিশেষে সুভাষচন্দ্র বলেন যে, ভারতের মূল লক্ষ্য হল আধুনিক বৈজ্ঞানিক শিল্পায়ন এবং এই পরিকল্পনাটি কারুর ভালোলাগা বা মন্দলাগা দ্বারা কখনই নিয়ন্ত্রিত হবে না। সুভাষচন্দ্রের এই বিজ্ঞানমনস্কতায় মেঘনাদ সাহা এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে ঐ সায়েন্স এন্ড কালচার পত্রিকার Sep, 1938 সংখ্যার সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল The Congress President and National Reconstruction এবং তাতে মেঘনাদ সাহা সুভাষচন্দ্রকে অভিনন্দিত করেন।
টর্পেডো ও সাবমেরিনের সম্বন্ধেও নেতাজীর প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। তিনি জার্মানিতে সাবমেরিনে করে যাত্রার সময় সাবমেরিন সম্বন্ধে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় চালকদের কাছ থেকে জেনেছিলেন এবং ভারতবর্ষে এসে এই সমস্ত সাবমেরিন তৈরির চিন্তাভাবনাও করেছিলেন।
বিদেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি পরিলক্ষিত করে তিনি দেশে বিজ্ঞানের প্রসার করতে চেয়েছিলেন। জার্মানিতে থাকাকালীন তিনি কয়লা শিল্প থেকে অন্যান্য জিনিস তৈরি দেখে ভারতবর্ষের মজুদ যথেষ্ট কয়লা থেকে ঐভাবে নানান দ্রব্য উদ্ভাবনের কথা ভেবে রেখেছিলেন। বৈজ্ঞানিক প্রথায় কৃষিশিল্পের উন্নতির কথাও তাঁর চিন্তাতে ছিল।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


বিজ্ঞানমনস্ক নেতাজীর মন যে কত আধুনিক ছিল তা আমরা জানলাম। তিনি বুঝেছিলেন যে ইংরেজরা শুধু তাদের নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য কলকারখানা গড়ছে তাতে ভারতের বিশেষ লাভ হবে না। তাই তিনি ভারতের জন্য বৈজ্ঞানিক অস্ত্র নির্মাণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি উৎপাদনের মধ্যে দিয়ে বিপ্লব আনতে সচেষ্ট ছিলেন। সব দিক দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে বিজ্ঞানকে যে সঙ্গী করতে হবে তা তিনি তাঁর সমগ্র হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন। এই বিজ্ঞানমনস্ক নেতাজীকে জানাই শ্রদ্ধা ও সেলাম। এমন মানবদরদী, বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক দেশনেতার আজ বড় প্রয়োজন।

ডঃ ররমলা মুখার্জী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *