Spread the love
       


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({}); রাবাহিক পৌরাণিক কাব‍্য:–

* কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন *

—— কৃষ্ণপদ ঘোষ।

উপস্থাপন–৫
( পূর্ব প্রকাশিতের পর )

* তৃতীয় দিনের যুদ্ধ *
( কৃষ্ণের ক্রোধ)

গারুড় ব‍্যূহ রচেন ভীষ্ম সেনাপতি।
কেহ নাহি ভেদিবারে সে দুর্ভেদ্য অতি।।
অর্ধচন্দ্র ব‍্যূহ রচেন পাণ্ডবগণ।
অসাধ‍্য ভেদিতে সে অভেদ‍্য গঠন।।
দ্রোণ ভীমার্জুন রক্ষিত তাঁদের ব‍্যূহ।
চলিল যুদ্ধ ভীষণ অতি ভয়াবহ।।
সেনা হস্তী অশ্ব মরে কত শত শত।
অগম্য রণভূমি মাংস কর্দম রক্ত।।
উত্থিত অসংখ্য জগৎ বিনাশকারী।
কবন্ধ চতুর্দিকে ভয়াল সারি সারি।।
ভীষ্ম দ্রোণ বিকর্ণ শকুনি জয়দ্রথ,
বিপক্ষ সেনা কত করিল বিদ্রাবিত।।
ভীম ঘটোৎকচ সাত‍্যকি চেকিতান,
বধিল কত সেনা করিল খানখান।।
রুদ্র ভীমের তীব্র শরেতে দুর্যোধন,
পড়িলেন রথোপরি হারিয়ে চেতন।।
রথ ল’য়ে সারথি ত‍্যজিল রণস্থল।
ছত্রভঙ্গ হইল সকল সেনাদল।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সংজ্ঞা লভি দুর্যোধন ক্ষণকাল পরে,
কহিলেন ভীষ্মে তিনি অতি রুক্ষস্বরে।।
আপনি দ্রোণ ও কৃপ জীবিত অদ‍্যাপি।
পলাইত মোদের সেনা দেখি তথাপি।।
ঘটিছে কেন এরূপ বিরূপ ঘটনা।
এ অতি অসংগত মনেতে ধারণা।।
পাণ্ডবগণ মোদের নহেক সমান।
আপনারা রেখেছেন বহুত প্রমাণ।।
আপনি প্রসাদ করেন পাণ্ডবগণে,
যুদ্ধ প্রকৃতি হেরি ধারণা মনে মনে।।
সেনা কত হইল হত জ্ঞাত নিশ্চয়।
উপেক্ষা অবহেলায় এই সেনা ক্ষয়।।
নাহি যদি যুদ্ধে মন পাণ্ডবের সনে,
কৌরব দলে কেন আপনি অকারণে।।
যদি থাকে আপনার কৌরবে মন,
প্রাণ পণ করুন রণ করিয়া যতন।।
ক্রোধান্বিত ভীষ্ম কহেন, “হে দুর্যোধন,
ভগবান সাথে অজেয় পাণ্ডবগণ।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বৃদ্ধ তথাপি সর্বশক্তি প্রযুক্ত রণে,
করিব যুদ্ধ একা আমি পাণ্ডব সনে।।
ভীষ্ম মুখে শুনি পণ রাজা দুর্যোধন,
বাজাইলেন শঙ্খ ভেরী পুলকিত মন।।
সেই দিন পূর্বাহ্ণ ক্রমে হইল অতীত।
ভীষ্ম চলেন যুদ্ধে দুর্যোধন রক্ষিত।।
শর বরষণে তাঁর হইয়া পীড়িত,
পাণ্ডব সেনাগণ সবে ভয়ে কম্পিত।।
রথ রথী মহারথ ছাড়ি রণাঙ্গন,
পলায়ন রত সবে বাঁচাতে জীবন।।
অর্জুন ব‍্যস্ত তাহা করিতে নিবারণ।
ব‍্যর্থ প্রচেষ্টা তাঁর রোধিতে পলায়ন।।
ভগ্ন পাণ্ডব সেনা উত্থিত হাহাকার।
আকুল সেনাকুল আতঙ্ক সবাকার।।
কেশব কহেন অর্জুনে, হে পার্থ শোন,
নাহি রাখ সংশয় তব মনে কোন।।
এক্ষণে উপস্থিত সেই কাঙ্খিত কাল,
ভীষ্ম প্রতি ত‍্যজ তুমি তব শরজাল।।
ভীষ্ম অর্জুনে চলে এক যুদ্ধ ভীষণ।
দোঁহাকার শরজালে আঁধার গগন।।
যুদ্ধে কিন্তু অর্জুনের নাহি প্রাণ মন।
প্রতিপক্ষ পিতমহ অতি গুরুজন।।
তাঁহারে আঘাত তিনি করেন কেমনে।
যুদ্ধ মাঝে অর্জুন ভাবেন তাই মনে।।
শিথিল হস্তে তাঁর ধীরে চলে বাণ।
বুঝিলেন ভীষ্ম সব তিনি প্রজ্ঞাবান।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
হেরি হেন লাঘব যুদ্ধ কৃষ্ণ সেই কালে,
চালিত করেন রথ অতি কৌশলে।।
ধাবিল রথ চক্রাকারে দ্রুত ঘূর্ণমান।
শরভ্রষ্ট ভীষ্ম তাই ব‍্যর্থ সকল বাণ।।
ভাবিলেন সেই ক্ষণে কৃষ্ণ ভগবান,
এই যুদ্ধে অর্জুনের নাহি মন প্রাণ।।
যুধিষ্ঠির বল হীন হয়েছেন কত।
ভগ্ন মহাসৈন‍্য আজি পলায়ন রত।।
ধেয়ে আসে কুরুসেনা অতি দ্রুত গতি।
আহত পার্থের যুদ্ধে নাহি কোন মতি।।
মম হস্তে ভীষ্ম করিবে মৃত্যু বরণ।
আমিই করিব এই গুরুভার হরণ।।
কৌরব সেনায় পার্থ হইলেন বেষ্টিত।
পীড়িত পাণ্ডব সেনা পলায়ন রত।।
এতেক হেরি মনোক্লিষ্ট সাত‍্যকি কন,
ক্ষত্রিয় ধর্ম জেনো নয়তো পলায়ন।।
এস সবে কর যুদ্ধ যোগ দাও রণে।
ব্রতী হও তোমাদের প্রতিজ্ঞা পালনে।।
শ্রবণ করিয়া এই সাত‍্যকি আহ্বান,
সাত‍্যকিরে কহিলেন কৃষ্ণ ভগবান,
যায় যারা যাক সবে হোক পলায়িত।
একা আমি কৌরবে করিব নিপাতিত।।
নিধন করিয়া আমি সকল কৌরবে,
ধর্মরাজে রাজপদে বসাব গৌরবে।।
সুদর্শন চক্রে কৃষ্ণ করেন স্মরণ,
নিমেষে চক্র হস্তাগ্রে করে আরোহণ।।
রথাবতরেন তিনি করি লম্ফদান।
হস্তাগ্রে স্বর্ণসূর্যপ্রভ চক্র ঘূর্ণমান।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ধাবিত ক্রুদ্ধ কৃষ্ণ ভীষ্মে করিতে হত্যা।
মদমত্ত হস্তীরে বধিতে ক্রুদ্ধ সিংহ যথা।।
কৃষ্ণ অঙ্গে পীত বর্ণ উত্তরীয় লম্বিত।
ঝলকে শম্পা যেন শ‍্যামঘনে কম্পিত।।
সগর্জনে বেষ্টিত শম্পা ঘন যেমতি,
ধায়িলেন ঘনশ‍্যাম দুর্বার গতি ।।
ব‍্যাকুল কৌরবগণ বিনাশে শঙ্কিত।
হেরিয়া কৃষ্ণে জ‍্যাকর্ষণে ভীষ্ম বিরত।।
শ্রীমাধবে কহিলেন অতি শান্ত ধীরে,
এস এস জগন্নিবাস প্রণমি তোমারে।।
সর্বশরণ‍্য লোকনাথ তুমি অচ‍্যুত।
রথ হতে আজি মোরে কর তুমি চ‍্যুত।।
হে চক্রপাণি, তব হস্তে হইলেক হত,
ইহলোকে পরলোকে হইবেক হিত।।
দেবেশ তুমি মম প্রতি হইলে ধাবিত,
তাহে আমি হইলেম বহুত সম্মানিত।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

রথাবতরেন পার্থ করি লম্ফদান।
কৃষ্ণ প্রতি তিনি অতি দ্রুত ধাবমান।।
ধরিলেন মাধব বাহু অতি সবলে।
হইলেন ব‍্যর্থ তিনি কেশবের বলে।।
ছিন্নমূল বৃক্ষ যথা বায়ু বলে চলে,
হইয়া উড্ডীন পার্থ পতিত পদতলে।।
কহেন অর্জুন ধরি চরণ যুগল,
পাণ্ডব গতি তুমি, হে পাণ্ডব মঙ্গল।।
প্রণমি তোমায় কর ক্রোধ সংবরণ।
তব নির্দেশ আমি সদা করিব পালন।।
পুত্র ভ্রাতাদের নামে লইনু শপথ।
পালিব প্রতিজ্ঞা মম না গমি বিপথ।।
তুষ্ট কৃষ্ণ করেন রথে পুন আরোহণ।
নিনাদিত পাঞ্চজন‍্য বিদীর্ণ গগন।।
ত‍্যজিলেন পার্থ মহেন্দ্র নামেতে বাণ।
হত অশ্ব রথ গজ সেনা খান খান।।
দশ সহস্র রথী তায় হইলেন হত।
নিপাতিত হইল হস্তীও সাত শত।।
বহিল শোণিত নদী সিক্ত রণাঙ্গন।
হেন কালে সূর্যাস্ত, স্তব্ধ মহারণ।।
(ক্রমশঃ)



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *