কাজী মাসুম আখতার নিয়ে কবিতা, লিমেরিক, সনেট। – ঋদেনদিক মিত্রো (Ridendick Mitro)
কাজী মাসুম আখতার নিয়ে কবিতা, লিমেরিক, সনেট।
——————————————-
ঋদেনদিক মিত্রো ( কলকাতা, ভারত )
|| 3 poems on Kazi Masum Akhtar, a social reformer, teacher, Padma Shree — 2020, Shikkharotno. About him, a poetry, a limerick and a sonnet written by Ridendick Mitro ||
[ মানুষটির সাথে আমি মুখোমুখি কথা বলিনি। দেখেছি ইউটুবে উনার বক্তব্যে, নানা চ্যানেলে। টিভি তো আছে। তবে ইউটুবে সর্বক্ষন দেখার সুবিধে। দুটো মাধ্যমের দু রকম অনিবার্যতা।
আসলে যাঁরা দেশশ্রী বা বিশ্ব প্রকৃতিশ্রী, তাঁরা তথাকথিত সম্মানীয় উপাধীর মাপকাঠিতে বিবেচিত হন না প্রকৃতির কাছে। তবে, সমাজ সভ্যতার মাপকাঠিতে তাঁরা নির্বাচিত হন নানা নিয়মের ধারায়। তাই, সেই দিকে শ্রদ্ধা রেখেও আমরা তাঁদেরকে দেখব আমাদের খোলা চোখে।
অস্বীকার করিনা, অনেক নিরপেক্ষ বক্তা আছেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ও এসবের বাইরে, তাঁদের সকলের জ্ঞান ও সৎ সাহসে চলছে সমাজের শ্বাস, সুপ্রাচীন কাল থেকে। তাই, এই শ্রদ্ধা তাদের সত্তাকেও। কারণ, সব মহান সত্তার মর্যাদাগত অবস্থান একই।
মহান বিপ্লবী শিক্ষক লেখক বক্তা কাজী মাসুম আখতারের কার্যক্রম নিয়ে দেশ বিশ্ব অবহিত। যদিওবা তাঁর অনেক কথায় আমি ব্যাক্তিগতভাবে সায় নাও দিতে পারি, সেটা ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এটা ঠিক, তিনি জ্ঞানত সৎ ও বহু জ্ঞান সম্পন্ন আদর্শবাদী মানুষ। বিশ্বের নানা দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি তাঁকে ফোন করে খোঁজ খবর রাখেন। না, একজন সৎ সাহসীর পরিচয় এটা নয়, কিন্তু, এগুলিও একটা তথ্য।
বাংলার একজন স্কুল শিক্ষক হয়ে, নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনের একজন নাগরিক হয়ে, এই জায়গায় অবস্থান করা এত সোজা কি? ২০২০ পদ্মশ্রী পেলেন, আগামীতে আরো অনেক কিছু পেতে পারেন, তাই সেটা এখানে বিষয় নয়, এখানে বিষয় হল, তিনি আমাদের সময়ের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিত্ব, যাঁদের দেখে চোখ তৃপ্তি লাভ করে।
আমি জানি, তিনি কখনো হয় তো এমন কথা বলেন, ভাবতে হয়, এ কি তাঁর কথা? কারণ, তাঁর চরিত্র মুক্ত স্বাধীন, পরোপকারী। তাই তাঁর চরিত্র বিরোধী কোনো কথা তিনি বললে বুঝতে হবে যে কোনো চাপ পরিস্থিতি তাঁকে সেটা বলতে বাধ্য করাচ্ছে। আমার বিচারে বলছি।
আসলে বিশ্বে সমাজ জীবন নানা রকম অসহায়তার মধ্য দিয়ে চলেছে। এই রকম মানুষেরা সেইসব প্রতিকুলতা থেকে সমাজকে বের করে আনতে চেষ্টা করেন। বিশ্বের সব রকম কাজের বা পেশার দায়িত্বজ্ঞানী মানুষদেরকে আমি সমানভাবে শ্রদ্ধা জানাই।
তাঁর জীবন একটি মহাকাব্যের মত। সামাজের উন্নতি করতে গিয়ে তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছিলেন। কিভাবে তিনি বেঁচে উঠেছেন নিজেও বিশ্বাস করতে পারেন না। সেসব এখানে খুলে বলার জায়গা নয়।
শিক্ষার আসল অর্থ তিনি ছাত্রছাত্রীদের মাঝে দিতে চান। পদ মানে তাঁর কাছে চাবুক ধরা চরিত্র নয়, দামি গাড়ি করে চারপাশে ঘুরে কিছু দেখানো নয়, দামী যুক্তি ও দামী সাহস নিয়ে ঘুরে বেড়ানোই তাঁর পদের পরিচয়। এটি কোনো শ্রেণীকে ছোট বড় করতে বলিনি। এই সামাজিক অবস্থানে আমরা সকলেই নিরন্তর যে সব প্রশ্নের সম্মুখীন, তার উত্তর পাইনা। এখানেই আমাদের নিজের প্রতি নিজের জিজ্ঞাসা।
বরং পদ মানে সমাজ ও বিশ্বের জন্য সাহস নিয়ে কল্যান সাধনের জন্য সক্রিয়তা, এটাই তাঁর জীবনের দর্শন। অন্যদিকে তিনি ভারতবর্ষে তালাক প্রথা তুলতে সহায়তা করেন বলে জেনেছিলাম।
বক্তা, সমালোচক, লেখক, কোন গুণ নেই তাঁর। জ্ঞানী মানে ছেঁড়া পোশাক পরে অবহেলার পাত্র হওয়াটা গর্বের, এমন আজব বিশ্বাস তাঁর নেই। তিনি আমাদের কাছে কম্পুটার যুগের চকচকে জ্ঞানী বিপ্লবী hero চরিত্র।
এবার কবিতাটি পড়ুন তাঁকে নিয়ে। এই বিচিত্র সভ্যতায় যদি কোনোদিন এমন খবর আসে যে তিনি বা তাঁর মতো মানুষেরা কেউ কোনো খারাপ প্রমাণে জড়িয়ে পড়েছেন, তখন বুঝবেন ব্যাপারটি সাজানো। যদি তিনি কখোনো তাঁর সৎ সাহসী চরিত্রের বাইরে বিন্দুমাত্র ভিন্ন মাত্রায় কথা বলেন বুঝতে হবে কঠিন কোনো অবস্থান সাপেক্ষে তাঁর অনিচ্ছাকৃত ভঙ্গী। কারণ, চরিত্রে মানুষ।
নিজের উপলব্ধির কাছে সৎ থেকেই এই কবিতা কয়টি লিখলাম।
আর একটি কথা, তাঁর সাথে আর যাঁরা পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন, তাঁদেরকেও সম শ্রদ্ধা জানাই। আবার, যাঁরা পাবার যোগ্য হয়েও পাননি, বা পরে পাবেন বা পেয়েছেন ও যাঁরা কোনোদিনই পাবেন না বহু গুণীর ভিড়ে বা ভিন্ন কোনো কারণে বা অকারণে, তাঁদেরকে একইভাবে আমার শ্রদ্ধা জানাই, কারণ, গুণ কাজে লাগে, এটাই আসল। আর পুরষ্কার হল গুণীকে দ্রুত চিনিয়ে দেয় সমাজে তাঁর গুণকে গ্রহন করার জন্য।
তাই, তথ্যের নিয়মে তাঁর এত পুরষ্কার ও সম্মানের কথা বলতে হল, কিন্তু, শুদ্ধ ব্যাক্তিত্ব, মুক্ত জ্ঞান ও ক্রমাগত সৎ সাহসকে প্রকাশ করার আকুল চেষ্টা যাঁদের ভিতর থাকে, তারা নিজ নির্মানে সমাজে আদরনীয় ও প্রয়োজনীয় ও সময় জয়ী পদাতিক। ঃ — ঋদেনদিক মিত্রো ]
কবিতা, কাজী মাসুম আখতার,
[ সমাজ সংস্কারক, শিক্ষক, পদ্মশ্রী -২০২০, শিক্ষারত্ন ]
———————————-
ঋদেনদিক মিত্রো ( ভারত )
সূর্য থেকে এসে যে-শিশু চোখ উন্মেলে
মুক্ত আলোর দালানে সভা গড়ো,
জানলা খুলতে দেখি তুমি যেন এলে,
আলোর হাসিতে তুমি জড়িয়ে ধরো,
কখনো বা হেঁটে চলো চুপচাপ গলি ছায়া পথ,
একবিংশের এক মহাপরিব্রাজক।
কল্পনার অন্ধকার লুন্ঠন হয়ে গেলে স্বতঃ
মানুষ হতে পারেনা তো সহজি নীবিড়,
ঠাকুমা কুলায় খুঁদ পাছড়ানোর মতো
সেই খুঁদ-হাওয়াকে নেয় নাকের শরীর।
এতোটা অশরীরী তোমার সুক্ষ্মতা নিকেতন,
বাঙ্গালী জাতির জামরুল পাতা সম্মোহন,
এ জাতি কি চিনেছে কিছু তোমার সত্তার?
সময়ের বিপ্লবী কাজী মাসুম আখতার।
সুস্থ মানব জীবনের প্রতীকী নিদারুণতা,
ঘাসে লুক্কায়িত জ্যোৎস্নার খিলবিল দারু,
শেখালে ধর্ম মানে প্রাণের উজ্জলতা,
যেভাবে পান্থপাদপ মরু বালিতে তৃষ্ণাসুচারু।
পেয়ে কত পুরষ্কার, উপাধী, তবু পাখির সংসার,
ছাত্র-সত্তা নিয়ে ঝড় বুম কাজী মাসুম আখতার।
প্রকৃত শিক্ষিত মানে গ্রন্থের নীলনদে নিমজ্জন,
এমনি চরিত্র তুমি গাঙ্গেয় গর্ব বিনম্র বিকাশ,
দেখতে পারো অতীত ও ভবিষ্যৎ বিলক্ষণ,
যেভাবে কোনো এক তাড়িত হাওয়া মন্ত্র বিলাস।
নর্তকের নৃত্য মেপে রুদ্র বাক্যে হও সোচ্চার,
বালক উদ্দামতা, চিন্তনে ঋষি, কাজী মাসুম আখতার।
জেনেছি জীবন মানে জ্ঞান স্পর্শে সাহসে বিস্তার।
————————————–
( ৭ সেপ্টেম্বর, গনেশ চতুর্থী ২০২৪)
————————————–
লিমেরিক কাজী মাসুম আখতার
————————————
ঋদেনদিক মিত্রো
কী হতে চাও, মন্ত্রী, না অফিসার না ডাক্তার,
যদি পারো তো, হও এক কাজী মাসুম আখতার,
মুক্ত জ্ঞানই ধর্ম, পদ ও পথ,
সৎ সাহসে যাঁর কর্ম জগৎ,
তেমন মানুষ হলেই তবে আসল উচ্চ মাপ তার।
[ রচনা, ৯ এপ্রিল ২০২৫ ]
সনেট কাজী মাসুম আখতার
———————————
ঋদেনদিক মিত্রো
|| সনেট অন্তমিল ও স্তবক ভাগ : সেক্সপিরিয়, বাংলা রীতিতে দৃশ্য গ্রাহ্য অক্ষরবৃত্ত ১৪ মাত্রা, মিশ্র পর্ব পংক্তি ||
গুণের সর্বোচ্চ তিনি যিনিই সাহসী,
তুমি তো সেই উল্লেখ্য সম্পূর্ণ সত্তার,
মনীষা ও যুদ্ধক্ষেত্রে তোমার বিস্তার
অনন্য নির্বিবাদে, বাঁধে না লোভ রশি।
কত ইতিহাস ও কান্না সমুদ্রতায়
হয়েছ নীলকন্ঠ তুমি, হে সনাতন,
ধর্মকে জেনেছ তুমি সত্যের যাপন,
মানুষের পরিচয়ে ধর্ম লুপ্তপ্রায়।
তুমি যে শিক্ষক, ঠিক শিক্ষকের মতো,
তুমি যুক্তিবাদী যেন প্লাবন সমান,
ভোরের রোদের মতো হও যে জাগ্রত,
পরিব্রাজকের সত্যে রেখেছ প্রমাণ,
মনীষীর দৃশ্য কি সত্য, ছিল সন্দেহ,
তোমায় দেখে বুঝি, সত্য মনীষী দেহ।
[ রচনা, ৯ এপ্রিল ২০২৫ ]
—————————————-
About the poet :–
ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro ) , পেশায় ইংরেজি, বাংলা ও স্প্যানিস ভাষায় কবি-উপন্যাসিক-গীতিকার-কলামিষ্ট। কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।