Spread the love

ইগো

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

ফাইনাল চেক-আপ করিয়ে ভাগ্নেকে নিয়ে আজ লীনাঞ্জনা চ্যারিটেবিল আই ক্লিনিক থেকে ফিরে যাবেন মিয়ারাজ। বোন তহমিনাও চোখের ডাক্তার, ভগ্নিপতি সবুর শেখ অর্থোপেডিক্স-এর। আগরতলা মেডিকেল কলেজে দুজনেই যুক্ত ছিলেন; এখন রিটায়ড। কিন্তু ছেলে সবুজের চোখের চিকিৎসার ব্যাপারে গোটা দেশ ঘুরেও কিছুই ওঁরা করতে পারেননি। আশা প্রায় সবই ছেড়েই দিয়েছিলেন সবুজের দৃষ্টিশক্তি ফেরার। শেষে মামা মিয়ারাজের জোরাজুরিতে জঙ্গলমহলে, ঝাড়গ্রামের এক প্রত্যন্ত একালায়, ঐ আই ক্লিনিকের খোঁজ মেলে।

মিয়ারাজ সব কিছু জেনে শুনে বুঝলেন যে ঐ ক্লিনিকের দুই ডাক্তার খাইরুল হাসান ও তাঁর স্ত্রী ডাঃ রিজিয়া পারভিন তাঁর পূর্ব পরিচিত–খাইরুল সাহেবের সঙ্গে তাঁর দাদাভাই-এর সম্পর্ক পঞ্চাশ বছর আগের। তার ছোট বুও তাঁকে ভালোভাবে চেনে। তবুও, এই ডাক্তার দম্পতির নাম ও ক্লিনিকের নাম কিছুই তিনি বু-দোলাভাইকে জানালেন না। কারণ দোলাভাই জমিদার বংশের লোক, স্বামী-স্ত্রীর পেনশান, তার উপর নিজেদের দুইটি নাসিং হোম আগরতলা শহরের বুকে। টাকার পাহাড় ওঁরা। সুতরাং চ্যারিটেবিল ক্লিনিকের কথা শুনলেই জামাইবাবু তো বটেই, দিদিও ভ্রুকোচকাবে। তাছাড়া, ব্যক্তিগত কারণে তারা খাইরুল সাহেবের নাম শুনলে তো রাজিই হবে না। 

তাই কাউকে কিছু বিস্তারিত না বলে মিয়ারাজ ও তাঁর স্ত্রী মালা খানম একরকম জোর করে ভাগ্নেকে তাঁদের কাছে নিয়ে এলেন। তারপর যথারীতি ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকার ওই ক্লিনিকে ভাগ্নেকে নিয়ে গেলেন। তিনমাস চিকিৎসার পর সবুজের চোখের বিশাল অগ্রগতি হোল। আজ ফাইন্যাল চেক-আপ হয়ে গেল। ডাক্তার সাহেব বলে দিলেন কিছু ওষুধের কথা, কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা; আর একবছর বাদে দেখাতে আসার কথা। আরও বলে দিলেন–

এই ওষুধগুলো পেতে যদি অসুবিধা হয়, তাহলে আমায় জানাবেন। চেষ্টা করবো যোগাড় করে দিতে। আর, এই মাস তিনেকের মত ওষুধ দিয়ে দিলাম। এগুলো নিয়া যান। ঠিক মতো খাওয়াবেন। আমার কাছে আর নেই। থাকলে আরও কিছু দিয়ে দিতাম। আসলে, সরকার তো কোন সাহায্য দেয় না। বড় লোকরা সচারচার এখানে আসে না–কারণ, দাতব্য কেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে তাদের ইগোতে বাধে। সুতরাং কোন বিত্তবান মানুষদের কাছ থেকে কোনরকম সাহায্য পাওয়ার অবকাশই নেই। এখানে গরীব মানুষরা আর আপনার মতো কিছু উদার মধ্যবিত্তরা আসেন চিকিৎসা করাতে। তাঁরা খুশী হয়ে কেউ কিছু দিলে কিছু টাকা আসে। আর, আমার ছেলে মেয়ে বৌমা প্রতিষ্ঠিত: তারা সবাই আছে শিক্ষাজগতে। আমার ও আমার স্ত্রীর পেনশনের টাকাই মূলতঃ এই প্রতিষ্ঠানের funding-এর Source। তবে আমার কিছু দরদীবন্ধু ও দু’জনের কিছু Medical & Paramedical -এর ছাত্রছাত্রী আছে, তারা যন্ত্রপাতি, ওষুধপত্র, এমনকী নগদটাকা দিয়েও সাহায্য করেন। সবার উপর আল্লাতালার রহম। এ সব মিলিয়ে এই সেবা কেন্দ্র ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে বলতে পারেন।

–একটা কথা ডাক্তারবাবু!

–বলুন।

–ম্যাডামকে তো আজ দেখছি না।

–ওনার আজ আসতে একটু দেরী হবে, একটা জরুরী কাজে উনি জেলা সদর হাসপাতালে CMOH -এর সাথে দেখা করতে গেছেন।

–বেশ বেশ। 

— ভালো কথা ডাক্তারবাবু, আমরা আজ চলে যাচ্ছি। যাবার আগে আমার ও এই রোগীর আসল পরিচয়টা দিয়ে যাই।

–তার মানে? বিস্ময়ের সুর খায়রুল সাহেবের কণ্ঠে। 

–হ্যাঁ ডাক্তারবাবু। আমি মিয়ারাজ, ৫০ বছর আগে আপনি আমার ছোট আপা তহলিমাকে joint entrance -এ বিনা পয়সায় কোচ করাতেন আমাদের বাড়ীতে এসে। তখন আমার বয়স ৮/৯ বছর হবে।

–কি বোলছো তুমি ভাই মিয়া?

৭৫ ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ ডাক্তার ছানাবড়া চোখে জিজ্ঞেস করলেন।

–বড়ভাইয়া! আমি কিছুই ভুলিনি। আপনি তখন কোলকাতা Medical Collage-এ Second year-এ পড়তেন: ছোট আপা আপনার গাইডেন্সে joint পেল: আপনি তাকে ENT-তে ভর্তি করালেন। বিনা পয়সায় তাকে কোচ করাতেন। আপনার আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। কিন্তু আমরা ছিলাম খুবই স্বচ্ছল। তবু, প্রতিবেশী হবার সুবাদে কোন পয়সা নিতেন না। 

একটু থেমে মিয়ারাজ বললেন–

ছোট আপাকে আপনি সকল সত্তা দিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। এই দেখে আমাদের বাড়ীর লোকরা আপনার সঙ্গে ছোট আপার বিয়ের কথা পাকা করে। ঠিক হয়, ছোট আপা MBBS পাশ করলেই আপনাদের বিয়ে হবে। ছোট আপাও মত ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে বাংলার বাইরে আগরতলার জমিদার শেখ পরিবারের ছেলে আমার এই বর্তমান দোলাভাই-এর সঙ্গে ছোট আপার বিয়ে হয়। কারণটা ছিল দুটো–ওরা খুব বড় ধনী পরিবার, আর তখন ওনার বছর পাঁচেক চাকরি হয়ে গেছে Tripura Medical Service-এ; আর আপনার তখনও কোর্স শেষ হয়নি। তাছাড়া অতি নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল আপনার। কি আপা, কি আমার বাড়ীর বড়রা, চায়ের ভাঁড়ের মতো আপনার সব কথা, সব অবদান দু’পায়ে গুঁড়িয়ে গেলো।

–ও কথা আজ থাক মিয়া।

–হ্যাঁ, ভাইয়া! কথাগুলো বললাম শুধু ভাগ্নে সবুজের পরিচয় দিতে।

–সে কি? তোমার আপা নিজেই তো একজন Eye specialist; তোমার জামাইবাবুও খুব বড়লোক এবং নামকরা Medical Collage-এর Practitioner ছিলেন।

–সেই কারণেই তো আপনাকে আগে গোটা পরিচয়টা দিইনি।

–কেন? কেন?

–না, মানে, আপনি যদি . . .

— যদি আমি তহমিনার কথা শুনে ভগ্নের চিকিৎসা না করি? তাই তো?

–না মানে . . .

–ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি বুঝেছি ভাই। দেখ ভাই মিয়া। সব মানুষ এক রকম হয় না। কিছু কিছু মানুষ খুবই সাধারণ: কিন্তু তারা মনুষ্যত্বে সাধারণ বা অসাধারণ নয়, অনন্য সাধারণ। বিনয়ের সঙ্গে বলি ভাই, আমরা দু’জনে সেই পর্যায়েরই মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ।

–হ্যাঁ ভাইজান। সেটা স্বচক্ষে দেখলাম। ফেরেস্তাদের দেখা যায় না; কিন্তু আমি এখানে এসে জীবন্ত ফেরেস্তা দু’জনকে দেখে গেলাম।

–না না ভাইটি। ওই বলে আমাদের ছোট করো না। হ্যাঁ, একটা কথা! তুমি ও আমার ছোট বোন মালা এসেছ। আমি ভীষণ খুশী। ভাগ্নেকে মামু-হিসাবে নিয়ে এসেছো খুব ভালো কথা–কিন্তু ওর আব্বাজান ও আম্মাজান কোথায়? তাঁরা তো একদিনও কেউ এলেন না।

–বড় ভাইয়া! সত্যি কথা বলি–আপনার কথা ওদেরকে বলিনি।

–কেন?

–প্রথম কারণ, আমার দোলাভাই টাকার পাহাড়ে বসা একটা দানব। আমাদের মতো গরীব দেশে একটা ডাক্তার তৈরি করতে সরকার যে জনগণের কত লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের পিছনে ব্যয় করে আমার দোলাভাই সেটা স্বীকার করেন না; আর গরীব মানুষদের চিকিৎসায় দাতব্য চিকিৎসালয়গুলি যে খুবই মূল্যবান অবদান রাখে, সেটাও তিনি মানেন না। নার্সিং হোমের ব্যবসায় অভ্যস্ত আমার দোলাভাই মনে করেন কেবল টাকা দিয়েই চিকিৎসা হয়, এবং সেটা সম্ভব কেবল নামী দামী নাসিং হোমে, কোন Charitable Centre-এ নয়। কাজেই, শুধু শুধু গোটা উদ্যোগটা ভেস্তে যাবে, ভাগ্নেটার চোখের দৃষ্টি ফেরানোর শেষ চেষ্টাও বানচাল হয়ে যাবে, এইভেবে তাঁকে কিছু বলিনি। আর আমার আপা বিয়ের আগে অন্য রকম মানসিকতার মেয়ে ছিল; যথেষ্ট উদার ও গরীব দরদী মনের মানুষ ছিল। কিন্তু বিয়ের পর দোলাভাই-এর পাল্লায় পড়ে, তারও গায়ে একই হাওয়া লেগেছে। তাছাড়া, আপনার সঙ্গে সে যে বিশ্বাসভঙ্গের কাজটা করেছিল, সে তাতে তার বিবেকের কাছে কুঁকড়ে আছে। তাই আপনার ও ভাবীজানের কথা শুনলে, সে হয়তো ছেলের সুচিকিৎসাকে মুখ্য না করে, আপনার সঙ্গে সে রাতারাতি পাল্টিখাওয়ার যে কাজটি করেছিল, তার জন্য সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আপনার এখানে ছেলেকে পাঠাবে না–

–বুঝেছি! তাছাড়া তোমার ছোট আপার হয়তো Ego-তেও লাগবে। সে নিজে একজন Eye specialist স্বামীও একজন Orthopedic! আমার কাছে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য দারস্থ হতে হবে, এটা তার আত্মসম্মানে লাগবে, –এইসব ভেবেই তুমি তাকে বলনি, বলো মিয়া?

–ঠিক তাই বড়ো ভাইয়া।

–দেখো ভাই মিয়া। জীবনের আকাশটা অনেক অনেক বড়। সেখানে কোথাও থাকে জমাট মেঘ, কোথাও থাকে রামধনু। কোথাও দেখা যায় উড়ন্ত শকুন, আবার কোথাও শঙ্খচিল পাখা মেলে। আমাদের স্বামী স্ত্রীর চারটি চোখ সকল সময়ই ঐ রামধনুর দিকে; তার অবর্তমানে শঙ্খচিল খোঁজে নীলিমার বুকে। তোমার আপা তার বিবেকে যেটা ভালো মনে করেছে, সে তাই করেছে। আমরা আমাদের মানব সেবার কাজ করে চলেছি। 

— তা জানি বড়ো ভাইয়া, আর আপনার এখানে এসে আমি তা আরও বেশি করে বুঝলাম। ছোট আপার নাম শুনলেও, তার বিশ্বাস ভাঙ্গার কারণে তার অন্ধপ্রায় সন্তানের চিকিৎসায় আপনি ও ভাবীজান যে কোন ত্রুটি করতেন না, তা প্রথম দিনই এসে বুঝেছিলাম। তবু, নিজেদের মনের মধ্যে অজস্র দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে এতদিন বলিনি। আজ চলে যাবার আগে আপনাকে সত্যিটা না বলে গেলে যে গোনা হোত–আল্লাপাক আমাদের ক্ষমা করবেন না। সালাম। আদাব। আসি ভাইজান।

–প্রণাম করে স্বামী স্ত্রী বেরিয়ে আসার আগে মালা ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বলল–ভাইজান, আমার একটা ছোট্ট অনুরোধ আছে আপনার কাছে। 

–বলো বোন।

–আপনার ও ডাক্তার আপার সেবাব্রতে আমরা মুগ্ধ। যদি এই মহান কাজে আমরা দু’জনে একটু অংশীদার হই?

–তার মানে বোন?

–আমরা কিছু নিয়মিত সাহায্য নিজেরা ও আত্মীয়-স্বজন থেকে তুলে আপনাদের এই সেবা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চাই। 

–হ্যাঁ বোন, নিশ্চয়ই নেবো। রসদের তো বড়ো প্রয়োজন। তোমাদের সাহায্য অবশ্যই নেবো। কিন্তু, যারা গরীবদেরকে ঘৃণা করে, দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রকে ঘৃণা করে, গরীব মেরে পয়সা রোজগার করে, তাদের থেকে একটি পয়সাও নিয়ে পাঠিয়ো না; আর তোমার ছোট আপা ও তার স্বামী ডাক্তার শেখের কাছ থেকে কোন সাহায্য নিয়ে পাঠিয়ো না। পারলে, আমার ও ডাক্তার ভাবীজানের নামও তাদেরকে করো না, এই পবিত্র প্রতিষ্ঠানের নামটিও তাদেরকে বোলো না। এটা আমাদের কাবা: একে অসম্মান করলে আল্লার গজব যে তাদের উপর নেমে আসবে। সেটা আসুক, আমরা চাই না। বরং দূর থেকে আমার দোয়া রইল তোমার আপা ও বোনাইজানের উপর। 

–আপনার এই কথা মাথায় থাকবে ভাইজান। একটু থেমে মালা বললেন– আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া–আপনার এই সেবাকেন্দ্র পবিত্র কাবাস্থান। কাবায় গেলে তো আল্লার উদ্দেশ্যে কিছু দিয়ে আসতে হয় ভাইজান। সবুজ আমার পেটের সন্তান অর্চনের মতোই আর একটি ছেলে। ওদের মঙ্গল কামনায় আমার এই দুই হাতের দুটি বালা আজ এই কাবাতে দিয়ে গেলাম–পরে নিয়তো সাধ্য মতো পাঠাবো। ডাক্তার হাসান আর না করতে পারলেন না। বালা দুটো হাত পেতে নিলেন–

আল্লা তোমার মঙ্গল করুন। যাকে নিয়ে এত উক্তি কই সেই সবুজ কই? আমার ছোট্ট Uncle টা? 

–ওকে Visitors রুমে বসিয়ে রেখে দিয়েছি। 

–আনো, আনো, সোনাটাকে একটা আশীর্বাদ করে দিই, ওর মা যা করার করেছে; কিন্তু ওতো কিছু করেনি; ওতো এমন মহান মামা-মামীমার ভাগ্নে, তাই না বলো?

–মিয়ারাজ-মালার চোখগুলি ছল ছল করে। ওরা বাক্য হারা হয়ে যায়।

–কই, যাও, ওকে নিয়ে এসো। আর একবার ওকে ভালো করে দেখি। 

–মালা গিয়ে ওকে নিয়ে এলো। 

Welcome! Junior Sabuj Sekh Welcome!

বুকের কাছে টেনে নিয়ে আদর করে দিলেন ডাক্তার খাইরুল সাহেব। মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে দিলেন–

May God bless you!

–পায়ে পায়ে মিয়ারাজ মালারা গাড়ীতে উঠলো ফেরার উদ্দেশ্যে। স্টার্ট দিয়ে ড্রাইভার দেবু ক্যাসেট ছেড়ে দিল পরীক্ষিত বালার–

মানুষ হইয়া জনম লভিয়া

মানুষের করিলাম কি . . .

মামীমা–মামা-ভাগ্নে ত্রয়ী ভেসে যেতে লাগলো সেই সুরের সাগরে। 

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *