শিরোনাম–আমি সুন্দর বনের মেয়ে
কলমে–নীতা কবি
আমি সুন্দর বনের মেয়ে!
সারাদিন ধরে ঘুরে বেড়াই নদীচরে গান গেয়ে
কখনো আবার শামুক কুড়াই কোমরে গামছা বেঁধে।
সূয্যিমামা পাটে গেলে একলা পাড়ে বসে জলের ঢেউ গুনি আপন মনে।
ধীরে ধীরে এলো বয়ঃসন্ধিক্ষণ!
ঢেউ গুনতে গুনতে মনে ভাবতাম, হঠাৎ একদিন রাজপুত্র আসবে,
আসবে সুন্দর এক বজরার মতো সাজানো নৌকা বেয়ে,
আমায় ভালোবাসবে আর বলবে, চলো দূরে কোথাও ঘর বাঁধি তুমি আর আমি!
আর ঠিক তখনই আমার পাড়ার মদনা এসে বসতো আমার গা-ঘেঁসে,
কখনো আমার হাতটা টেনে ধরতো
কখনো চুল টানতো।
একদিন অচেতন ঘুমে ভোরের স্বপ্নে দেখলাম
ঐ মদনাই আমার রাজপুত্র!
মদনা একদিন আমায় বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললো
“এ্যই পুঁটি, আমায় বিয়ে করবি?”
আমি লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেলাম।
বিয়ের দিন হলো আমাদের!
কত স্বপ্ন! কত আদর! সবকিছু দেখতে দেখতে এগিয়ে আসতে লাগলো আমাদের বিয়ের দিন।
হঠাৎ সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল!
বিয়ের দিন এলো না!
এলো রাক্ষসী, সর্বনাশী আমফান!
সব স্বপ্ন গ্ৰাস করলো ঐ সর্বগ্ৰাসী!
ছোট ছোট ভাইবোন, বাবা-মাকে নিয়ে মদনা চাল উড়ে যাওয়া ঘরে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে!
আমি পাশের বাবুদের বাড়ীতে দিনরাত কাজ করে দুটো ভাত আর দু-খানা রুটি নিয়ে আসি,
আমার বুড়ো, অথর্ব বাপটার জন্যে!
আমাদের দুজনের ভালোবাসা অকালেই ঝরে যায় পড়ন্ত বিকেলের বাসি ফুলের মতো।
======================================