Spread the love

কবিতা : আমি মীরজাফরের বংশধর বলছি
[  ৩৬৩ লাইন, মুক্ত ঘুর্নন ছন্দে অসম পংক্তির অন্তিমলে লেখা, চলনের সিড়ি বুঝে পড়তে হবে]
———————————————-
  ঋদেনদিক মিত্রো 

রোদ এলে মানুষের গল্প শুরু হয়,
থাকতে চায় না সে বন্দিত্বের দাস,
  এর নাম ইতিহাস।

শোনো বাংলা, শোনো ভারতবর্ষ,
আজ এক নতুন ইতিহাস,
আমি মিরজাফরের বংশধর বলছি,
তোমাদের মনে যাঁর নাম নিয়ে আছে —
ঘৃনা, বিরক্তি, ভয় ও দীর্ঘশ্বাস,
কারন, কোনো মানুষ বেইমানি করলে
তাকে “মীরজাফর” বলে গালি পাড়ো,  
এইভাবেই চলে এসেছে বিশ্বাস, অনুভুতি,
এই ভাবনাকে বের করে দেবে —
সাধ্য নেই কারো,
আসলে আমরা হয় তো হয়ে আছি –
ভুল শিক্ষা, ভুল শাশন ব্যাবস্থার দাস,
তাই ব্যাখ্যা করতে শিখিনি —
কোনটা ঠিক বা ভুল ইতিহাস,
তার ফলে আমরা ডুকরে-ডুকরে কাঁদি,
তোমাদের দুর্ব্যাবহারে আমরা  জ্বলছি,
আমি মীরজাফরের বংশধর বলছি। 

কল্পনার আর এক নাম নিরিহ,
   তাই তার হয়ে পতাকা তোলো,
  কিন্তু, মনের দরজাটাকে খোলো,
আমাদেরকে তোমরা দেখলেই বলো–
বিশ্বাসঘাতকের বংশধর,
কারন, আমাদের দূর পূর্বপুরুষ
  বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার 
শেষ স্বাধীন নবাব–
সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি
            মীর জাফর।

ইতিহাস কোনো পাঠ্যের বিষয় নয়, 
তার চেয়ে বড় আরো এর বিষ্ময়,
নয় কোনো গরিমা প্রকাশের ফন্দি,
ইতিহাস হোলো শান্তির জবানবন্দি।

এইবার তোমাদেরকে প্রশ্ন করি–
কার পূর্ব পুরুষ শুরু কোন্ বিন্দু থেকে?
সেই পরিচয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চাই,
জানি, হকচকিয়ে গেছো তোমরা, 
তোমরা ইতস্ততো আমার যুক্তি দেখে,
  আসলে তোমাদের বিশ্বাসগুলো —
সবই তো পারিবারিক ভুল ভাবনার ধারা, 
তাই তো সারা দেশ-বিশ্বে 
খুব দূর্লভ — সুক্ষ্ম প্রখর বুদ্ধি ও
     সোজা শিরদাঁড়া,  
তারই পরিনতিতে এই সমাজ, প্রকৃতি,
হয়ে চলছে পরপর বিকৃত ও শেষ,
এর নাম নাকি — এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। 

জীবন মানেই তো হেঁটে চলা —
মৃত্যুর দিকে নয়,
   বিষ্ময়ের দিকে,
তাই নিয়ে পৃথিবীর সব গ্রন্থ —
   জ্ঞানীগন গিয়েছেন লিখে।

আচ্ছা, মিরজাফর শুধু বেইমান,
বাদবাকিরা সব নির্লোভ,  মহান।
তাহলে মিরজাফরের জন্মের আগে —
দেশে বিশ্বে ছিলনা কেউ লোভি,
এবং ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন
পলাসির যুদ্ধের পরে —
মিরজাফর ও তাঁর সমর্থকরা ছাড়া
বাকি সব ত্যাগী, সত্যবাদি, যোগী,
তাই তো দেশের এই নমুনা বাহার,
কে শুনবে আমাদের যুক্তি, কান্না,
    প্রতিবাদ আর চিৎকার? 
কিন্তু, আমরা, চুপচুপি এগিয়েই চলছি,
আমি মিরজাফরের বংশধর বলছি।

সময় যতই এগিয়ে যাক,
মানুষ তাকিয়ে থাকে ইতিহাসের দিকে, 
তাই তো সভ্যতায় এতো আয়োজন,
  বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, সংগীতে।


ধাপে-ধাপে আসি এক-এক করে,
বুঝিয়ে দিচ্ছি এখন ধরে-ধরে,
আমরা মিরজাফরের বংশধরেরা কিন্তু
  মানুষ হিসেবে খাঁটি, স্বাভাবিক হয়ে বাঁচি,
আমরাও সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছি,
আমরা শিক্ষায় উন্নত, সমাজসেবি, 
পেশায় শিক্ষক, গবেষক, লেখক-কবি,
আমরা সৎ সাহসি আর প্রতিবাদি,
এতো কিছুর পরেও —
  আমাদেরকে বিশ্বাসঘাতকের বংশধর বলো,
অবাক হয়ে শুধু ভাবি,
আমি মিরজাফরের বংশধর বলছি। 

এ জীবনে বেড়াবার জায়গা কোথায়,
  যদি থাকে, সেটা কাহিনি —
  অন্ধকারি জ্যোৎস্নায়!

এইবার ফিরে আসি আগের জিজ্ঞাসায়,
কোন্ পরিচয়ের বিন্দু থেকে —
কার বংশপরিচয় হেঁটে যায়, 
এর সহজ উত্তর হোলো — 
সকলেই এসেছি একই মানব-সূত্র থেকে,
এবং তারপর সকলের সাথে সকলে মিশ্রিত,
প্রকাশ্য ও গোপন মেলামেশায়,
এত জাত, ধর্ম নিয়ে বিভাজন,
নানা ভৌগলিক, ঐতিহাসিক ও
    রাজনৈতিক কারন,
এগুলি পরিবর্তনশীল প্রতি নিয়ত,
কিন্তু,  আমাদের পূর্বপুরুষ একই,
তাই মীরজাফর তোমাদেরও পূর্বপুরুষ, 
  যতটা তিনি আমাদের, যুক্তি মত।

মানুষে -মানুষে অনেক সংঘাত,
শুধু ইতিহাসের স্থানে এলে তারা
  সকলের সাথে সকলে মেলায় হাত।

এরপর আসি আরেক যুক্তিতে,
মিরজাফর সত্যিই যদি লোভী, 
এই বিশ্বাস ঢুকে আছে তোমাদের মনে,
তাহলে তেইশ বছরের যুবক 
সিরাজুদ্দৌলাকে তিনি —
হাতে ধরে বসালেন কেন সিংহাসনে? 

জিজ্ঞাসা অনেক রকম,
সেটাই হোলো সেরা জিজ্ঞাসা,
   যেটা, শরীরে জাগায় শিহরন।

যদি ধরা হয় এটা তাঁর অগ্রিম চালাকি,
তাহলে তাঁকে হাতে আনতে
ক্লাইভ, ওয়াটসন, রাজবল্লভ,
ঘসেটি বেগম, জগত শেঠ,
এরা এত পরিশ্রম করবে কেন, বলো দেখি!
কারন, মিরজাফর ওদের দিতে চাননি
  কোনো সহজ সুযোগ,

এটাও যদি তাঁর দূরুহ চালাকি ধরে নিই–
তাহলে তিনি শেষঅব্দি বেইমান,
এখানেই এই বিষয়ে থামলাম, 
আসলে, ওই সময়ের কী কী
   কার্য-কারন ছিলো নবাবের সাথে
            ভুল বুঝাবুঝি,
সেগুলির উর্ধে এসো আরো কারন খুঁজি, 
তাই বলে নবাব সিরাজ মানে খারাপ,
আমাদের মিরজাফর মানে মহৎ,
এটাও বলিনা আমরা,  
আমরা বলি, চুলোয় যাক —
   ভুল ইতিহাসের উৎপাত।  

সবাই তোমায় ভেংগে দেবে, 
   নিরাশায় যেন মরো না।
ইতিহাস তোমার মাথায়
     হাত রেখে বলবে, —
  আমি আছি, চিন্তা কোরোনা।  

মিরজাফরের মা কে ছিলেন,
         জানবে এখন।
সম্রাট আওরংজেবের দাদা 
দারাশুকোর কন্যা নাজিম্মুনেশা বেগম,  
নবাব আলিবর্দী খাঁ নবাব হবার পর —
প্রধান সেনাপতির পদ পান
নিজের ভগ্নিপতি দক্ষ, সাহসি ও
          বুদ্ধিমান মীরজাফর,
বর্গীদের দমন ও দূর্ধ্যস্য মারাঠা আক্রমনকে
    বারবার করেন প্রতিরোধ,
মিরজাফরের সাথে আছে
    এইসব গৌরবের যোগ।

নবাব সিরাজেরও ছিল অনেক গুণ, 
তিনি ছিলেন মুক্ত মন,
        শিল্প চেতনা প্রবণ,
ভাববার চেষ্টা করতেন নানা বিষয়ে,
কিন্তু পারিপার্শিক চাপ থাকতো
    তাঁর বিরূপ হয়ে,  
এদেশের সমাজের প্রবনতা ছিলো
    ভোগ বিলাস কেন্দ্রিক,
সেই ছকে তিনিও বড় হন,
  সেইসাথে যুক্ত হয়েছিলো 
  আরো বড় ভোগ বিলাস,
নবাবি ধারার অভ্যেস ও আজব বাতিক।
তাঁর দোষ-গুণ বিচার করতে হলে–
  তাই ভাবতে হবে এইসব দিক।

হ্যাঁ,  নবাব সিরাজের ছিলো অনেক গুণ,
পুরুষানুক্রমিক কিছু ভুল বা বদ অভ্যেসকে
তিনি পরপর বিদেয় করছিলেন,
বয়স তো খুব কম ছিল তাঁর,
ছিলেন নানা মানসিক চাপে,
রাত্রেও হোতো না ভালো ঘুম, 
মাত্র চৌদ্দ মাসের শাশনে কতটুকু সম্ভব,
বিচারের মধ্যে আসে এইসব,
আসলে ওই সময়ের ঘটনাগুলি
  ওই সময়েরই মত,
যেভাবেই বিচার করা হোক,
ইতিহাসের প্রতি প্রেম থেকে
      হবো না বিরত,
ওই সময়ের ঘটনাগুলি তো
      ওই সময়েরই মত।

একটা কথাতেই সব জিজ্ঞাসার নিরসন,
নবাব সিরাজের গোপন মানসিক স্তর
খুব উন্নত না হলে কি —
নবাবের কবরে অনেক বছর কেঁদে-কেঁদে
স্বেচ্ছায় মৃত্যু নিতেন লুৎফুন্নিশা বেগম?
এবং কেন তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন,
যখন তাঁকে বিবাহ করতে চান
পরের নবাব মিরজাফর ও
           তাঁর পুত্র মিরন!

এখানেই প্রমানিত,  অনেক গুণের জন্য
নবাব সিরাজের প্রতি  মুগ্ধ ছিলেন
         লুৎফুন্নিসা বেগম। 
সহজ ভোগবিলাসের চেয়ে —
বেশি সুখ দিতো সেই স্মৃতিতে বিচরন।
নবাব সিরাজের বড় মহত্ব না-থাকলে কি
তাঁর আত্মার শান্তিতে লুৎফা  
নিজের খরচের টাকা থেকে নিঃস্ব হয়ে
প্রতিদিন করাতেন কাঙালী ভোজন।

সকলেই চলে যায় পরলোকে, 
  যা জন্মায় তার হবেই বিনাস,
   মরেনা শুধু ইতিহাস।

এইবার নতুন পথে হাঁটি,
আমাদের আরো আগের পূর্বপুরুষ 
তাঁদের থেকে পরিচয়টাই আরো খাঁটি, 
আমরা আরবের সৈয়দ বংশ —
        লাগছে কি বিষ্ময়?
নবী হজরত মহম্মদ-এর মেয়ে ফতেমা,
তিনি আমাদের আরো আগের পরিচয়, 

এখন আমাদের কিছু আত্মিয় —
  ইরাকে রয়েছেন বড়-বড় পদে, 
শুধু ইরাক কেন, সারা পৃথিবীতে 
নানা উন্নত কাজে তাঁরা আছেন,
   কাজ করে যাঁন নীরবে।  

সুন্দর মানে হোলো গোপনের চলাফেরা,
   যারা দেখতে জানে, তারাই সেরা।

ফতেমার স্বামী ছিলেন —
   চতুর্থ খালিফা হজরত আলী,  
তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ রক্ষা করি আমরাই —
  ইরাকে যারা আছি, 
তাই, কাদেরকে বিশ্বাস ঘাতকের রক্ত বলে
তোমরা দিচ্ছ চুনকালি? 
আমাদেরই পূর্বপুরুষ সেই হজরত আলী।   

কে জানে কোথায় বা শুরু আর শেষ,
ইতিহাস মানে নিরুদ্দেশ।

আর বাংলায় তথা ভারতে 
আমরা যারা  মিরজাফরের বংশধর,
তাদের ইতিহাস দেখো,
ভারত স্বাধীন হবার পর
মুর্শিদাবাদ চলে যায় পূর্ব পাকিস্তানে,
তারপর কী হয়েছিলো খেয়াল রেখো,
মিরজাফরের এক বংশধর —
নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জা 
মুর্শিদাবাদকে ফিরিয়ে আনেন ভারতে,  
এক অদ্ভুত ছকে,
এবং হিন্দু-মুসলমান মারামারির সময়ে
হিন্দুদের ঠাঁই দেন পার্ক স্ট্রিটের প্রাসাদে,
এবং ঘোষনা করেন সাহস দেখিয়ে —
একটি হিন্দুকে মারতে হলে —
তার আগে আমাকে মেরে যাবে।
  
খাবারের ব্যাবস্থাও করেন সেই প্রাসাদে।

তখন তিনি সাথে রিভলভার নিয়ে ঘুরতেন,
কারন,  তিনি তখন শান্তির সৈনিক,
এটাও কিন্তু মিরজাফরের বংশধরের কাজ,
সেই সব ইতিহাস কোথায় গিয়েছে,
  যারা আমাদের বিশ্বাস ঘাতকের বংশ বলো,
  এখোনো ফেরেনি তাদের সম্বিত?   

মানুষের বেশিগুনগুলি 
     ঢুকে থাকে আড়ালে,
     রাত্রে কলাগাছের বনের মাঝে
  ভূতের ছায়ার মত অচেতন,
অস্তিত্ব চিনিয়ে দিতে পারে স্বভাবে।

আমাদের এক বংশধর —
এই বাংলা থেকে বেরিয়ে গিয়ে 
হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি,
ইস্কান্দার আলি মির্জা তাঁর নাম,
জন্ম মুর্শিদাবাদ ১৩ নভেম্বর ১৮৯৯ সাল,
মৃত্যু লন্ডন, ১৩ নভেম্বর ১৯৬৯ সাল,
তাঁর সততায় ও ভদ্রতায়
শ্রদ্ধা করতো সারা পাকিস্তান, 
ইস্কান্দার আলি মির্জা তাঁর নাম।

তিনি ছিলেন আই-সি-এস, ও পরে
পাকিস্তানের জেনারেল প্রধান, 
তারপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিতে যান,
মেয়াদকাল ২৩ মার্চ ১৯৫৬ থেকে
   ২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত,  
দেখো, মিরজাফরের বংশধর 
কতদুর গৌরব নিয়ে বিস্তৃত! 

সেই হোলো বড় বুদ্ধিমত্তা,
ক্ষিপ্র বর্শার মত বিচার শক্তির সাথে
  যার আছে শীতল জল কলসির মত 
        নিস্তব্দ সহিষ্ণুতা।

এর মধ্যে একটু জুড়ে দেওয়া যাক,  
১৮৮১ খৃষ্টাব্দে নবাব নাজিম ফেরাদুনজা,
ব্রিটিশদের দ্বারা তাঁর 
  বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার
   নবাব হিসেবে ক্ষমতা লোপ হয়,
তাই এই তিন রাজ্যের শেষ নবাব তিনি,
তারপর এলো নতুন আরেক কাহিনি,
কিন্তু এই পরিবারকে দেওয়া হোলো
শুধু মুর্শিদাবাদের নবাবির পরিচয়।
নবাব বাহাদূর অব মুর্শিদাবাদ,
এই পদে প্রথম বসেন পরপর —
হাসান আলি মির্জা, 
   ওয়াসেফ আলি মির্জা,  
         ওয়ারেশ আলি মির্জা,    
এরপর হঠাৎ  নীরবতা,
উনিশ শ’ উনসত্তোর সালে —
ওয়ারেশ আলির হঠাৎ মৃত্যুর পর, 
কে হবেন পরের নবাব,
খালি থাকে নবাব বাহাদুর অব মুর্শিদাবাদ! 

এইভাবেই এগিয়ে চলে ইতিহাস,
  কাহিনির ভৌতিক স্বাস-প্রশ্বাস।

অনেক বছর আইনি লড়াইয়ের পর
ভারত সরকার ২০১৪ সালে
আব্বাস আলি মির্জাকে দিলো –
এই পদ নেওয়ার প্রস্তাব,
তিনি হয়ে গেলেন —
নবাব বাহাদুর অব মুর্শিদাবাদ, 

তাঁর ছোট ভাই রেজা আলি মির্জা 
“ছোটে নবাব” বলে পরিচিত,
এঁদের নিয়েই আছে বাংলায় সেই সময়, 
নবাবী সময়ের অনুভুতি —
         আড়ালে সুস্থিত,

হ্যাঁ,  আমরা হলাম এঁরাই,
কেউ নমস্কার করার আগে নমস্কার জানাই, 
আমাদের মানুষ বলে ভদ্র, সৎ,
রেজা আলি মির্জা একজন কবি,
   মনোহারি গজল গায়ক,

তিনি কন্ঠে বইয়ে দেন জ্যোৎস্না–হাওয়া
নিস্তব্দ বেগম মহলে,
আমরাই বাড়িতে টাঙিয়ে রাখি
নবাব সিরাজের গৌরব, 
ইতিহাস নিয়ে কোনো রেশারেশি নয়,
এটাই আমরা করি অনুভব।  

দাংগা মানে বিপ্লব নয়,
বিপ্লব হোলো ফল বৃক্ষে —
হঠাৎ খুঁজে পাওয়া 
একটি পাকা ফলের মত, 
  কোনো এক পাখির জয়।

কোনো জাত, ধর্মের খেলায় আমরা নেই,
সকলের উৎসবে আমরা করি উৎসব,
সব অহমিকা তো একটি ঘুমেই নীরব।

আরো কত বংশধর আসবে পরপর, 
কিন্তু, বুদ্ধিমত্তার সাথে —
উন্নত আচরন ছাড়া সেই মর্যাদা —
  সোনার রঙ করা স্বর্ন মোহর। 
এই আদর্শে আমরা জীবনকে গড়ছি,
আমি মিরজাফরের বংশধর বলছি।

ইতিহাস হোলো বৃক্ষের মত,
বীজ থেকে মহিরুহ, নিজের মত।

এই মুর্শিদাবাদে হাজার দুয়ারি, ইমাম বাড়া,
এই রকম দুর্লভ কত কিছু
আমরাই করেছি নির্মান,
নানা সামাজিক কাজে আমরা করি দান,
চাইনা বিজ্ঞাপন,
চাই একটু ভালোবাসা, 
এসো,  বদলে আনি চিন্তার নতুন প্রকরন, 
জ্ঞান মুক্ত না হলে,  আমরা — 
  অকারন রেশারেশিতে জ্বলছি,
আমি মিরজাফরের বংশধর বলছি। 

নয় কোনো তর্ক-বিতর্ক বা রাগ, 
আমরাই বিশ্বাস করি —
নবাব সিরাজ মানে —
       চির সবুজ সংবাদ।

তাই তো কলকাতা থেকে আসা
বিদুষি নারী সমর্পিতার–
  নবাব সিরাজকে মর্যাদা দেবার বিপ্লবে 
আমরা মিলিয়েছি হাত,  
   ইতিহাস মানে পদচারনার সম্ভ্রম,
২৩ শে জানুয়ারি ২০২২ হীরাঝিলে হোলো
  শহীদ মিনারের উদ্বোধন,
বাংলাদেশ থেকে আসা নবাব সিরাজের
দশম বংশধর সৈয়দা মাহমুদার সাথে মিলে
ছোটে নবাব রেজা আলি মির্জা —
   করেছি পতাকা উন্মোচন,
শহীদ মিনারের উদ্বোধন। 
আমাদের সাথে ছিলেন কত গুণীজন!

ইতিহাস কারো সংগী নয়,
তবে মানুষকে দেয় নীরব থাকার প্রশ্রয়।

আমরা স্যালুট করেছি —
নবাব সিরাজকে নিয়ে জেগে ওঠা —
সকল সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের, 
আর এই বিষয়ে বিপ্লবি নাগরিকদের,

পৃথিবীতে মিরজাফরের সব বংশধরদের
পাঠিয়ে দিয়েছি এই গৌরব-কথা।  

ইতিহাসে বুঝা যায় যার নাম ধুসরতা,
   তার নাম বিস্তির্নতা।

সব তর্ক-বিতর্কর উর্ধে —
এই  জাগরন হোলো অপূর্ব জেগে ওঠা।

———————————————   
               🌷🌷🌷
———————————————
১-৩রা জুলাই ২০২২, 
A Bengali poem ” Ami Mir Zafar er bongshodhor bolchi ” ( I am the descendent of Mir Zafar),  by Ridendick Mitro

বিঃদ্রঃ — দুরুহ তথ্যগুলি Manas Bangla -Youtube এর কর্ণধার গবেষক-সাংবাদিক মানস সিংহ এর থেকে প্রাপ্ত।  এবং কবিতাটিকে ব্যাপ্ত করে সুন্দর করে তুলতে মানস বাবুর উপদেশ সহায়তা করেছে।
———————————————

ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro),

কলকাতা, ভারত, পেশায় ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় কবি-উপন্যাসিক-কলামনিস্ট-গীতিকার। বিবিধ প্রকাশনী থেকে বহু গ্রন্থ প্রকাশিত। নবাব সিরাজ কেন্দ্রিক ইতিহাস নিয়ে ইংরেজি
ও বাংলায় প্রায় হাজার পৃষ্ঠার রচনা আছে, কিছু প্রকাশিত ও বাকগুলি প্রকাশের পথে।   নবাব সিরাজুদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ / আমাদের তুমি গর্ব বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব…” বিখ্যাত সমর্পিতার সুরে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রার্থনা সংগীতটি ঋদেনদিকের লেখা। যেটিতে ২৩ জুন ২০২২ সালে হীরাঝিলে শহীদ বেদি উদ্বোধনে অনুষ্ঠানে সমর্পিতার সহ বহু মানুষের সাথে কন্ঠ মেলান বাংলাদেশ থেকে আসা নবাব সিরাজের দশম বংশধর সৈয়দা মাহমুদা, ও মিরজাফরের বংশধর মুর্শিদাবাদের ছোটে নবাব রেজা আলি মির্জা।  আমরা অনেকেই জানিনা যে, মুর্শিদাবাদে আজো নবাব পরিচয়ে স্বীকৃত আছেন নবাব মিরজাফরের বংশধরগন ধারাবাহিক নিয়মে, এবং এটা ভারত সরকার স্বীকৃত। হাতে পাওয়া তথ্য থেকে জানানো হোলো। দুই নবাবের পরিবার থেকেই সমর্পিতার গ্রহন করা ও সুর করা — ঋদেনদিকের লেখা এই সংগীতটি গাওয়া হোল। এটি নবাব সিরাজ নামিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ,  তাঁর কবরে প্রার্থনায়, নবাব কেন্দ্রিক নানা বিপ্লবে ও অনুষ্ঠানে ব্যাবহার করার জন্য গ্রহন করা হয়েছে, ও সেই ভাবেই গীত হচ্ছে। ও বহু মিডিয়া দ্বারা  বিশ্বে প্রচারিত। আমাদের কাছে পুরো বিষয়টি খুব রোমাঞ্চকর ঘটনা। তবে প্রথম লাইন ” নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ ” স্কুলে, বা কবরে ছাড়া অন্য জায়গায় গাইবার সময় প্রাসংগিক কারনেই প্রথম লাইন বা প্রথমের একাধিক লাইন বাদ দিয়ে গাওয়া শোনা যায়।  কারন, পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে গানের অংশ গাওয়া হয়, যেটা উচিত। আবার ইউটুবারগন অনেক সময় নিজেরা প্রাসংগিক অংশ ভিডিও-তে edit করে নেন। তাতে বিষয়ের গুরুত্বের সাথে খাপ খায়।

        — সম্পাদক – kabyapot.com

নীচের লিংকে ক্লিক করে দেখুন সরাসরি ছোটে নবাবের বক্তব্য

https://fb.watch/e4D5exV7sb/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Contact for Advertisers, Readers and Writers : email: info@kabyapot.com Whatsapp: 8240042145