*অখন্ড অবসর*
✍️শ্রীতমা ভট্টাচার্য্য✍️
অনেক সময় অনেক কিছু করা হয়ে ওঠে না। খানিকটা অবহেলায় আবার খানিকটা পরিস্থিতির চাপে। সেগুলো জমে থাকে মনের কোণে, নির্জনে। সেই কথাগুলো রাখার জায়গা খুঁজলে এক পৃথিবীও ছোট পরবে। কিছু কথা এমনিও থাকে তা কথা হয়ে ওঠার আগেই হারিয়ে যায় খরস্রোতে। তবুও সেই ফেলে আসা দিনের স্মৃতি, না বলতে পারা কথা ও ব্যাথার পাহাড় গুলো সুযোগ পেলেই ফিরে আসতে চায়। প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দিতে চায় তাদের অস্তিত্ব…..
সাধারণত: অবসর আমাদের জীবন থেকে মুছে গেছে। পরে আছে শুধু দায়িত্ব, কাজ আর চোখ বুজে ছুটে চলা। কিন্তু এই ব্যাস্ত জীবনে হঠাৎ করেই যদি দেখা মেলে আকস্মিক অবসরের তাহলে তো কথাই নেই, মনটা নেচে ওঠে এক আকারন আনন্দে। এই আনন্দ যে কীসের তা বলা মুশকিল, হয়ত ছুটির নেশা অথবা অবসরের হদিশ।
কর্মব্যস্ত জীবনে দীর্ঘ অবসর যেমন বেদনাদায়ক তেমনি সুখেরও। বর্তমান পরিস্থিতির কথাই যদি বলি, তাহলে এই বন্দিদশায় অনেকেরই দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়, তেমনি কেউ উপভোগ করছে সময়টা। ফিরে পাচ্ছে পুরোনো দিনগুলো। সামাজিক ব্যবধান বজায় রেখে মিটিয়ে নিচ্ছে মনের ব্যবধান। যেমন ধরুন যে মেয়েটি তার হাতে আঁকা প্রথম ছবি বাবাকে দেখানোর অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পরে, অথবা সেই ছেলেটা যে কবিতা লেখে মা কে নিয়ে কিন্তু রোজের ব্যস্ততায় পড়ে ওঠা হয় না, তারাই হয়ত আজ ছবি আঁকছে এক সাথে অথবা কবিতা লিখছে মান অভিমানের। আবার যে মেয়েটা গিটার বাজাত বা যে ছেলেটা ছবি আঁকত কিন্তু প্রাত্যহিক ধকলে ছুঁয়ে দেখা হয়নি অনেকদিন, তারাই এখন ধূলো ঝেড়ে গিটার নিয়ে গান বাঁধছে নতুন সুরে, ছবি আঁকছে কোন এক স্নিগ্ধ ভোরের। কাজের চাপে যে দম্পতির দিনে প্রায় দেখাই হয় না তারা এখন হয়ত হাতে হাত রেখে রোজ সকালের চা উপভোগ করে। আর যারা আমার আপনার মত অতি সাধারণ তাদের জীবনে ফিরে আসছে ছোটবেলা। ফিরে আসছে লুডো, ব্যবসায়ী, তাশ ও দাবার মতো খেলা যা ছিল ছেলেবেলার নিত্য সঙ্গী। আরও কত কী হচ্ছে আমাদের আশেপাশে তার কতটুকুই বা আমরা জানি। এসব কিছুই তো আমাদের প্রাপ্তি। এই নির্ভেজাল আনন্দ ভালোবাসার মুহূর্ত গুলো সাক্ষী থাক দুঃসময়ের। ব্যস্ত জীবনে নিজের জন্য কোন সময়ই নেই আমাদের হাতে, ফলে সহজেই আমরা হারিয়ে ফেলি নিজ সত্তাকে। এই বন্দিদশায় না হয় আমরা সবাই খুঁজে নিলাম ফেলে আসা নিজেকে…
মহামারীর প্রকোপ, প্রিয়জন হারানোর শোক, লকডাউন তারওপর অর্থনৈতিক দুরবস্থা এসব মিলিয়ে বছরটা মোটের ওপর ভালো যাচ্ছেনা কারোরই। তবুও উন্নত জীব হওয়ার দৌলতে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি সুস্থ পৃথিবীর। ততদিন খারাপ সময়টাকে আমরাই পারি ভালো করে তুলতে। ঘন আঁধারের মাঝে সূক্ষ আলোর রেখা আকড়ে ধরলে ক্ষতি কিসের? সব খারাপেরই তো কিছু ভালো আছে তেমনি না হয় এই খারাপের ভালো দিকগুলো আমাদের কাছে উজ্জ্বল হয়ে থাকুক।
শ্রীতমা ভট্টাচার্য্য