আমি ও আমার চটি-চপ্পল
সুব্রত মিত্র
জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই জানে এই ছেঁড়া চটি
এই চটি দেখেছে রুষ্ট মাটি
এই চটি দেখেছে দুশমনের ঘাঁটি,
এই চটি করেছে অতিক্রম
নানা ঘাত-প্রতিঘাত, সয়েছে সংঘাত–
রেখেছে ধরে মোর ডুবে যাওয়া সম্ভব।
এই চটির গায়ে লেগে আছে আবছা কালো দাগ যত
হই মর্মাহত ছেঁড়া চপ্পলের কথা ভাবি যত
তবে চটি কেন এখনো ছেড়া?
জবাবে বলেছে চটি,”মোর শান্তিরা ছন্নছাড়া।”
কত লোক কত মহাজ্ঞানী মহাজন এই চটির জন্য করেছে আমায় অবজ্ঞা
দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে তবু এই চটির প্রতি করি স্বীকার কৃতজ্ঞতা
আমি সংকটের মুখেও দাঁড়িয়ে থাকি,সাথে থাকে অভিজ্ঞতা।
ছেঁড়া চপ্পল; ছেড়া জামা; ছেড়া গা-মাথা
অবশেষে বিলুপ্ত আমিকে নিয়ে ছেড়া মুন্ডুটার সাথে বলি কথা,
চটি তুমি আছো কোন ভূমিকায়?
উত্তর ভেসে আসে,”যাঁরা লড়ে তারা মরে
চালাক সাধুরা বসে বসে মধু খায়।
আমিতো লড়াইয়ের দলে তাই ক্ষয়ে ক্ষয়ে মরে যাই
বাবু আমার কোন ভূমিকা নাই।”
আমি ছেঁড়া চপ্পলের মতো হব সংযত
আসে আসুক রুক্ষ;বিষ্ট; পথ ও পথিকের অত্যাচারের ক্ষত,
আমি লেপ্টে আছি এমনই রবো
হই হব এই চলন্ত পদতলে আরও অমার্জিত আরও ধর্ষিত।
বিধ্বংসী অগ্নি ডিঙাবো সারা পথ-ঘাট; মাঠ; জলে-
যত দুঃখ সুখের ঘনঘটায় আমি থাকিব পথিকের সম্বলে,
চটি তুমি ছেঁড়া কেন?
এ আমার ধর্ম যেন
স্ব-যোগ্যতায় প্রাপ্ত নাম করি গ্রহণ সমাদরে
বলেনি কেউ মরে পাদুকালয়;
সকলে বলেছে মোরে চটি আর চপ্পল,
মহামানবের পায়ে ঘুরে ঘুরে সয়েছি কত ধকল।
কর্মের আকুতি আমি সঁপেছি মালিকের তরে
যাব চলে তাঁর কথা ভেবে এই গৃহ ছেড়ে
পদ-স্থলে মাথা রেখে স্বরচিত নাম হবে ভবঘুরে।
যথেষ্ট ম্ভবনাময়।