Spread the love

গল্প

আলোর যাত্রী

যুবকটি দল থেকে সব সংস্রব পরিত্যাগ করল।যেখানে নীতি ও আদর্শের সাথে সংঘাত সেখানে আপোষ করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। তার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েও তাকে পরাজিত করা যায় নি।কিন্তু যেখানে দেশমাতৃকার স্বাধীনতাই তার একমাত্র লক্ষ্য সেখানে রাজনীতি কে অস্ত্র করে ক্ষমতা দখলের লড়াই চালানো কিছু মানুষের সাথে সাথে তার একসাথে চলা সম্ভব নয়।প্রাণপ্রিয় দল ছেড়ে সে বেরিয়ে এল। বাপুর আশীর্বাদে সে শির নত করতে শেখে নি।
১৯৪০ সাল।কলকাতার কারাগারে শুরু হল অনশন ধর্মঘট। অত্যাচারী শাসক তাকে বাধ্য করতে পারল না খাদ্যগ্রহণে।পিছু হটে তারা যুবককে আপন গৃহে বন্দী করতে বাধ্য হল।এলগিন রোডের বাড়িতে এসে যুবকটি তার ভাইপো ভাইঝিদের কাছে পেল অনেকদিন বাদে।সে বুঝেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতেই দেশের কাজ তুলে দিতে হবে।তাই তার এবারের যাত্রার সহায়ক হবে এরাাই।চিঠি পেয়ে একদিন আকবর শাহ দেখা করতে এল।কথা হল যুবক পেশোয়ার থেকে কাবুল হয়ে যাবে রাশিয়া। সেখানে রাশিয়ার সাহায্যে সৈন্যদল গঠন করবে।
ভাইপো শিশির আকবর শাহ র সাথে ঘুরে তার কাকার আফগান পাঠান পোশাক, ভিসিটিং কার্ড জোগাড় করল।
১৬ই জানুয়ারি। কোলকাতায় হাড় কাঁপানো শীত সেদিন। রাতে সবাই ঘুমে অচৈতন্য প্রায়।যুবকের সাথে জেগে আছে ভাইঝি ইলা আর কাজিন ভাই দ্বিজেন।বাঙালি পোশাক ছেড়ে যুবক হয়ে উঠল মহম্মদ জিয়াউদ্দিন, ইনস্যুরেন্স এজেন্ট।রাত ১.৩৫। ইলা আর দ্বিজেন ইশারায় দেখে নিল রাস্তা ক্লিয়ার।আস্তে আস্তে ছোটকাকে নিয়ে গাড়িতে উঠল শিশির।নিশুতি রাতে নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে কাকা ভাইপো গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলল।বাড়ির কেউ কিছু বিন্দুবিসর্গ ও জানল না।
শিশির গাড়ি নিয়ে গেল সোজা গোমো।রাত কাটল আর এক ভাইপো অশোকের বাড়িতে ছদ্মবেশে।পরের দিন গোমো স্টেশনে শিশির আর অশোক ছোটকাকে তুলে দিল ট্রেনে।
জিয়াউদ্দিন পৌঁছল পেশোয়ারে।সেখানে তার জন্য অপেক্ষায় ছিল আকবর শাহ, আবাদ খান,মিঁয়া মহম্মদ শাহ ও রাম গুপ্তা।পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে জিয়াউদ্দিন উঠল তাজমহল হোটেলে।সেখান থেকে তার আলাদাভাবে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করল আবাদ খান।আবাদ খানের ওপর দায়িত্ব আছে জিয়াউদ্দিন কে যাবার ব্যবস্থা করার।আবাদ খান নিয়ে এল ভগৎ রাম তলোয়ার কে।তলোয়ার এর সাথে জিয়াউদ্দিন এর আদর্শগত মিল আছে।
পেশোয়ার ছেড়ে মহম্মদ জিয়াউদ্দিন এগিয়ে চলল তলোয়ার এর সাথে। এখন তার নাম জিয়াউদ্দিন খান।সীমানা পেরিয়ে পায়ে হেঁটে অত্যন্ত দুর্গম খাইবার গিরিপথ অতিক্রম করে তারা কাবুলে পৌঁছল।ততদিনে সব স্থানে সংবাদ পৌঁছে গেছে যুবক গৃহবন্দী থেকে পলাতক।তখন সে ‘ মোস্ট ওয়ান্টেড ‘ তালিকাভুক্ত। আফগান পুলিশের নজর এড়াতে যুবক বোবা সাজার অভিনয় করল।তলোয়ার বহু চেষ্টায় এক ভারতীয় পরিবারে জিয়াউদ্দিন কে লুকিয়ে রাখতে সমর্থ হল।রুশ দূতাবাসের কাছে সাহায্য না পেয়ে তারা গেল ইতালীয় দূতাবাসে।অবশেষে ইতালি ব্যবস্থা করে দিল। যাত্রাপথ রাশিয়া হয়ে বিমানে জার্মানি। জিয়াউদ্দিন খান হল অরল্যান্ডো মানসুডা।
ভগৎ কে বিদায় দিয়ে অরল্যান্ডো এবার এগিয়ে চলল জার্মানির উদ্দেশ্যে।চোখে নিয়ে ভারতের স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের স্বপ্ন।দৌড় দৌড় দৌড়। একা এগিয়ে চলল নির্ভীক যুবক আলোর সন্ধানে সূর্যের দিকে।পিছনে পড়ে রইলো তার স্বদেশভূমি,নিকটজন ও অগুনিত গুণমুগ্ধ জনগণ।
যাকে কোনও দেশের কোনও কারাগারে বন্দী করার ক্ষমতা ছিল না সেই অগ্নিগোলক মৃত্যুঞ্জয়ী র আসল নাম সুভাষ চন্দ্র বসু।আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় দেশনায়ক নেতাজি।।

কলমে – মনালি বসু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *