“আমি চাঁদমণি হাঁসদা”
অরবিন্দ সরকার
**********
লাজ লুকানোর কুথাও জায়গা নেই মোর,
সারারাত দেহ ছিঁড়ে খুঁইরে অপারেশন চালিয়ে ফেলে গেছে বাড়ীর পেছনে,তখন সূয্যিমামা উঁকি মারা ভোর।
কানে আসে আরে এযে চাঁদ মণি মুদের,কারা করলো এ আকাম।
পাড়ার মেয়েরা ধরাধরি ক’রে ঘরে পুরে আমার লজ্জ্বা স্থলে ছেঁড়া ন্যাকড়া দিয়ে মুছিয়ে,জল দিয়ে বারবার ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলো,বিধি মোর বাম।
আমার সারা শরীরটা অপবিত্র। ওটুকু ধূয়ে কি ময়লা সাফ হবে! নোংরা আবর্জনা ভেতরে প্রবেশ করেছে,বাড়ীর মরদটারে হাত পা মুখ বেঁধে আমাকে নিয়ে গেলো।
মরদ কতো চেষ্টা করলো আমাকে বাঁচাতে!
পারলো না, শুধু বললো উপায় হীন আমি,মরদ হয়েও পারলাম না লড়তে,কি করবো বলো। চেষ্টা বিফল হলো।
দেখি মরদের চোখে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল,
তার হাত পা ভেঙে গেছে,বেঁধে রেখেছে গরুর খুঁটিতে,হয়েছে দূর্বল।
কে কার চোখের জল মুছে দেবে!
বাইক বাহিনী রাস্তায় চলাফেরা করছে, উঁকি মেরে দেখে গেলো ঘর।
ক্ষত শুকালে আবার শকুনেরা উড়ে এসে নিয়ে যাবে ওদের ডেরায়, আবার চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে। ওরা পরজীবী নির্ভর।
টিপছাপে নিয়েছে কেড়ে বাড়ির কাছের ক্ষেত।
সবজী চাষে সংসার চলতো, এখন হয়েছে মাছের ভেড়ি, ওরা আছে সুখে বেশ।
ভেড়ির জল স্পর্শ করার হারিয়েছি অধিকার।
থানায় পুলিশের দল – ওরাও হায়েনা। বিচার করবে যারা, তারা ভক্ষক।
রক্ষক হীন সন্দেশখালিতে মেয়েরা ওদের খেলার পুতুল। খেলা হয়ে গেলেই সাঙ্গ, আবার নতুন পুতুলের খোঁজ, আকাশ বাতাস জুড়ে ওদের লালসার হাহাকার, সবাই এক একটি তক্ষক।
দিনের বেলায় দেখে,রাতের বেলায় মেয়েদের তুলে নিয়ে চলে বলাৎকার,
ছাদে চলে দাদনে অনুদানে দ্রোপদীর বস্ত্রহরন।
কে শোনে কার চিৎকার!
আঁধার কেটে আলোর সন্ধান,
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই দেওয়াল ভাঙার প্ল্যান।
আইনের ঘরে কে নিয়ে যাবে?
ছিদ্র একটু একটু করে হয়েছে বড়ো,
বাপেরও বাপ্ আছে, সবাই প্রতিজ্ঞায় হয়েছে জড়ো।
হারাবার ভয় নেই আর। সব হারিয়ে এখন হাতে ঝাঁটা আর রামদা,
আমি যে আজ নিঃস্ব আদিবাসী মহিলা চাঁদ মণি হাঁসদা।
অরবিন্দ সরকার মহাশয় এর লেখা সত্যই অনবদ্য। তার লেখনীর মধ্যে চমক আছে।