উপহার
তীর্থ মণ্ডল
কিরে মোহন এত সুন্দর একটা আনন্দের দিনে তুই এমন মনমরা হয়ে “থ”মেরে বসে আছিস ?
আনন্দের কথা শুনে মোহনের দু চোখ দিয়ে জ্বল নেমে এল। মোহনের চোখের দিকে তাকিয়ে আনন্দের ভীষন কষ্ট হল। আর সে মনে মনে ভাবল যে,সে হয়ত তার প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধুকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে, তাই সে তার বন্ধু মোহনকে আঁকড়ে ধরে বলল আমি কি কিছু ভুল করলাম ? মোহন সেও তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আনন্দকে উওর দিল নারে আমি আমার দুর্ভাগ্যের জন্য এমন উদাসীন ভাবে বসে আছি।
আনন্দ ঠিক বুঝতে পেরেছে তার বন্ধুর দুক্ষের কথা, আর এই দুই বন্ধুর ঘনিষ্টতা যে এক বন্ধুর কষ্ট অপর বন্ধু ঠিক বুঝে নিতে পারে বয়সে তারা ছোট হলেও বুদ্ধি তাদের প্রখর । ক্লাস নাইনে সবুজপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে তারা ।তাদের গ্রামের থেকে পনের মিণিটের মেঠো পথ ।
এই দুই বন্ধু বড়ই প্রকৃতি প্রেমী তাদের বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের চারিদিকে প্রায় ১০০ টি সোনাঝুড়ি গাছ তাদের যত্নে বেশ বেড়ে উঠেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাশয় তাদের এই জড়িকে কৃষ্ণ ও সুধামার জড়ি রুপে আক্ষা দেন। বিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষক মশাই তাদের ভালোবাসেন কারন তারা দুইজনেই প্রথম ও দ্বিতীয় হয়। তাদের শ্রেণীতে তাদের মধ্যে কোন হিংসা বা বিদ্বেষ এটা কেউ কোনদিন লক্ষ্য করেনি।
বিদ্যালয়ের চত্বরে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো যত্ন করা সবটাই এরাই করে । বিদ্যালয় কামাই বা পড়াশুনার প্রতি অবহেলা এদের ডিকশেনারিতে উল্লেখই নেই।
দূর্গাপুজোর ছুটিতে যে যার মত করে আনন্দ করছে গ্রামের আরো ছেলে মেয়েরা নতূন জামা প্যাণ্ট পড়ে মন্দিরে বাজি পোড়াচ্ছে । আজ সপ্তমীর দিন , সকাল সকাল সবাই স্নানসেরে নদীতে কলাবৌ স্নান দেখতে যাচ্ছে, চারিদিক কাঁসর ঢাকের শব্দে , মানুষের আওয়াজে কলরব ছুটছে কিন্তু, আনন্দ তার প্রিয় বন্ধুকে না দেখতে পেয়ে তার বাড়ির দিকে ছুটে গিয়ে দেখে মোহন “থ” মেরে তাদের উঠানে বসে আছে।
আর থাকবেই না বা কেন,কারন এ বছর যে তার একটাও নতূন জামা প্যাণ্ট হয়নি ।তার বাবা পেশায় রিস্কাচালক নিতান্ত গরীব তাছাড়া তার মায়ের শরীরটাও ভালো নেই সেও অসুস্থ তার ঔষধ, তার একটা বোন আছে বয়স মাত্র ছয় ।অভাবের সংসারের জন্য ছেলেমেয়ে গূলোকে রতন এই বছর একটাও নতূন কিছু কিনে দিতে পারেনি ।
তাই মোহন তার মনের দুক্ষে এমন ভাবে বসে আছে । তার বন্ধু সবটাই বুঝতে পেরে সে তার বারতি কিনে আনা জামাটা তার প্রিয় বন্ধুর হাতে ধরে বলল চল দেখি এইবার জামাটা পড়ে নিয়ে মণ্ডপে যাই। আনন্দের কাছ থেকে জামাটা নিয়ে মোহন জানাল নারে এই জামা আমি নিতে পারব না। কারন আমি এই জামা পড়লে আমার হয়ত নতূন জামা হবে কিন্তু আমার ছোট্ট বোন সে কি দোষ করল বল, তাই আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস বন্ধু ।
মোহনের এই কথা শুনে আনন্দ তার বন্ধুর হাত খানি ধরে তাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল এবং তার মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করল । আনন্দের মা অন্নদা সবটা শুনে তাদের একটু অপেক্ষা করতে বলে, সে বাড়ির ভেতর চলে গেলেন এবং কিছু সময় পর বাইরে এসে মোহনের হাতে একটা পাঁচশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল যাও তোমরা তোমাদের বোনকে তোমাদের পছন্দ মত কোন ভালো ফ্রক কিনে নিয়ে এসো ,আর ফিরে এসে আমাদের বাড়িতে খাবার খেয়ে তোমার বাড়ি ফিরবে।
আজ মহা সপ্তমী ভোর থেকেই চারিদিক ঢাকের শব্দে ভোড়ে উঠেছরে।অনেক দিন পর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মোহন বাড়ি ফিরেছে, সে বর্তমানে কলকাতায় সরকারী দপ্তরে বড় পোস্টে কাজ করে। তার ইচ্ছা ছিল যে, সে যখন বড় হবে তখন সে প্রত্যেক বছর পূজোতে তার মায়ের মত তার প্রিয় বন্ধু আনন্দের মা অন্নদা কাকীকে বাজারে সবচেয়ে দামী শাড়িটা “উপহার” দেবে ।কিন্তু ……… সে ভাগ্য তার হয়নি ।আকাশের দিকে চেয়ে,চেয়ে তারসেই পুরোনো স্মৃতি গুলো শুধু স্মরণ করছে।