Spread the love

স্বাধীনতা(পর্ব-১)

নীরেশ দেবনাথ

স্বাধীন শব্দটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। এই স্বাধীন শব্দটি একটি দেশের জন্য, একটি জাতির জন্য, একটি সমাজের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষের ক্ষেত্রে তো আরো বেশী।

স্বাধীন শব্দটির বিপরীতার্থক শব্দ পরাধীন। আমাদের পূর্বপুরুষগণ পরাধীনতার মর্মবেদনা যে কী, তা খুব ভালো করেই বুঝে গেছেন। প্রায় দু শ’ বছর আমাদের মহান দেশ এই ভারতবর্ষ ইংরেজদের হাতে পরাধীন ছিল। সে কথা আমরা সবাই জানি। অনেক সংগ্রাম, অনেক রক্তক্ষয়, অনেক মূল্যবান জীবনের বলিদানের মূল্যে আমাদের এই মহান দেশ স্বাধীন হয়। রাষ্ট্রনীতির প্রেক্ষিতে আমাদের দেশ এখন স্বাধীন। মানে দেশের জনগন এখন স্বাধীন।

স্বাধীন শব্দটি খুবই মূল্যবান ঠিকই। কিন্তু স্বাধীন শব্দটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ততটা সহজ নয়, যতটা সাধারণতঃ মনে হয়। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে স্বাধীন শব্দটির অর্থ, সন্ধি বিচ্ছেদ, বাক্য রচনা যদি আসে তবে সঙ্গে সঙ্গে সকলেই তার সঠিক উত্তর দিয়ে ফুল মার্কস পেয়ে যাবে। কিন্তু স্বাধীন শব্দটি দিয়ে কুড়ি লাইনের প্যারাগ্রাফ লিখতে বললে অনেকেই এই প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে এর বিকল্প প্রশ্ন কি আছে দেখার চেষ্টা করবে।

মানুষের জীবনে এই স্বাধীন শব্দটির প্রয়োগ দেখা যাক কেমন হয়। ভারতের সংবিধান অনুসারে স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার। সেই অনুসারে আমরা প্রত্যেকেই স্বাধীন। আমরা স্বাধীনভাবে অর্থাৎ নিজের ইচ্ছে মত কাজ করা, কথা বলা, চলাফেরা ইত্যাদি করতে পারি। কিন্তু নিজের ইচ্ছে মত সব কাজ কি করা যেতে পারে, না করা উচিত?

একটা উদাহরণ হিসেবে বলি – একজন ভাবলো একটা ব্যস্ত রাস্তার মাঝখানে বসে বা শুয়ে থাকবে, যেহেতু সে স্বাধীন তাই তার নিজত্ব বজায় রাখতে চায়। কেউ এসে তাকে বললো, ভাই তুমি রাস্তার মাঝখানে বসে বা শুয়ে থাকতে পারো না। সে জবাব দিলো, কেনো, আমি তো স্বাধীন, আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমি আমার ইচ্ছে মত যা খুশি করতে পারি।

এখন আমার প্রশ্ন হলো, সবাই স্বাধীন বলেই কি তার নিজের ইচ্ছে মত যা খুশি তাই করার অধিকার আছে?

নিশ্চয় না। যে কাজে অন্য কোন মানুষের অসুবিধা হয় সে কাজ সে করতে পরে না। অর্থাৎ, কেউ নিজে স্বাধীন হলেও অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

তুমি একটা ক্লাবের মেম্বার। কোন একটা ফুটবল টুর্নামেন্টে তোমাদের ক্লাব নাম লিখিয়েছে। তুমি একজন নাদুস নুদুস চেহারার। মোটেই খেলতে পারো না। কিন্তু তোমার মনে হল যে তুমিও তো ক্লাবের মেম্বার, তো তুমি কেন খেলবে না! তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতা বা তোমার নিজত্ব তোমাকে ভাবালো, আমিও খেলব এবং সেন্টার ফরওয়ার্ড পজিশনে খেলব। সে কথা তুমি তোমার ক্লাবের ক্যাপ্টেন কে বললে। ক্যাপ্টেন কিছুতেই রাজি নয়। সে বলল, না, তুমি সেন্টারে কেনো তুমি খেলবেই না। তখন তুমি বললে, না, আমি মেম্বার, আমি সেন্টার ফরওয়ার্ডেই খেলব। ক্লাবের সেক্রেটারি কোচ ক্যাপ্টেন সকলে মিলে তোমাকে বলল, তোমার খেলার এবং সেন্টার ফরওয়ার্ডে খেলার যোগ্যতা নেই, তুমি খেলতে পারবেনা।

তুমি স্বাধীন। তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতা বা নিজত্ব আছে। কিন্তু তোমার যোগ্যতাও তো থাকতে হবে বা সকলে তোমাকে যোগ্য মনে করে কিনা সেটাও দেখতে হবে। তোমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা নিজত্বর জন্য তোমার ইচ্ছামতোই যে তুমি কাজ করতে পারবে তা তো নয়। সকলের ইচ্ছেমতো, সকলের ভালোর জন্য, ক্লাবের ভালোর জন্য যেটা করনীয় সেটাই তোমাকে করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা মানে এই নয় যে তোমার ইচ্ছে মতো তুমি সব করবে। তোমার নিজের, তোমার ক্লাবের এবং সকলের ভালোর জন্য তোমাকে কাজ করতে হবে। সেটাই নিজত্ব। সেটাই প্রকৃত স্বাধীনতা।

রচনাকাল –
১৭ অক্টোবর, ২০২২
পুনে, মহারাষ্ট্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *