সব কবি ও পাঠকদের প্রতি অনুরোধ🚩 ভুল শিশুসাহিত্য আর কতদিন
——————————-
ঋদেনদিক মিত্রো
সম্প্রতি শুধু নয়, ছোটবেলা থেকেই দেখছি শিশু সাহিত্যে দাদু দিদা ও খুড়ো, এই শব্দগুলিকে বিদ্রুপের বিষয় হিসেবে ব্যবহার করা হয় ! সেই ভাবেই যেন আমাদের মনস্তত্ব গড়ে উঠেছে !
সব কবি, ছড়াকার, লেখক নাট্যকারদের একটি জিনিস ভাবতে অনুরোধ করি, আপনারা নিজেরাই ভাবুন, দাদু দিদা শব্দটি বা খুড়ো খুড়ি এইসব শব্দ কি বিদ্রুপের জন্য তৈরী বা পদ মর্যাদা নষ্ট করতে কী ভাবে আমরা ব্যবহার করি !
আসলে শিশু সাহিত্য লেখার সময় অনেকে দাদু দিদাকে কৌতুকের জিনিস করে লেখেন, যেন দাদু দিদা মানে কৌতুকের জিনিস !বড়দের সাহিত্যেও এই অমানবিক প্রবণতা আছে !
মূলত বাঙালি মননে, সকলের ভিতর একটা জিনিস আছে — দাদু দিদা মানে কৌতুক !
এটা অতি প্রেম বা শ্রদ্ধা নয়, এটা হলো মানুষের হারানো যৌবনের প্রতি, ও চলা ফেরায় দৈহিক অক্ষমতার প্রতি বিদ্রুপ করার ইচ্ছে !
এই ভাবে আমরা আলগা বুদ্ধির পরিবেশে ভুল অনুভূতি নিয়ে নড়াচড়া করতে শিখেছি, ও কাউকে অকারণ বিদ্রুপ করার প্রবণতাটা রপ্ত করেছি সকলেই !
প্রতিটি জীবই প্রাকৃতিক নিয়মে পরপর নানা দিকে অক্ষম হয়, বা ক্রমশঃ ক্ষমতা হারায়, এটা বিদ্রুপের কারণ হতে পারে না, ঠাট্টা মস্করার কারণ হতে পারে না ! এটা দেহের সত্য !
আমাদের দুর্বল চিন্তার শিক্ষা ব্যবস্থা এইসব ভাবে না, ফলে, আমরা গতানুগতিক মূর্খতায় চলাফেরা করি ও সেই মত নিজেদের মেধাকে স্থূল অবস্থানে রাখি !
শুধু তাই নয়, দাদু দিদা কেউ হলে — তাঁদের যেন প্রেম করার অধিকার নেই ! কেন??? প্রেম করার অধিকারটা তাঁরা কাদের কাছে ভিক্ষে করবেন ?
অর্থাৎ, এইভাবে যাঁরা সতেজ যৌবন থেকে সরে যান তাঁরা আমাদের পরিবারে ও সমাজের কৌতুকের নিদর্শন হয়ে বেঁচে থাকেন !
একটু ভাবুন, কী pathetic !
তাঁরা ফোকলা দাঁতে কথা বললে বিদ্রুপের কারণ হন ! প্রেম করলে বিদ্রুপের কারণ হন ! কোনো খাবার খাওয়ার ইচ্ছে করলে বিদ্রুপের কারণ হন ! ভালো পোশাক পরে সতেজ হয়ে সাজতে চাইলে বিদ্রুপের কারণ হন ! কারোর সাথে গল্প করতে চাইলে অবহেলার কারণ হন ! যাত্রা সিনেমা দেখতে চাইলে বিদ্রুপের কারণ হন ! নতুন স্বপ্ন দেখতে চাইলে বিদ্রুপের কারণ হন ! কারোর সাথে বেরুতে চাইলে বিদ্রুপের কারণ হন !
কেন এই নিষ্ঠুরতা !
এইযে কোটি কোটি শিক্ষিত লোকের পরিবার সারা দেশে, এসবই চিন্তায় মূর্খদের বাড়ি, স্বভাবে ইতরদের বাড়ি !
আমার বাড়িও তার বাইরে নয়, এখানেই আমাকে ছোটবেলা তেমনি শেখানো হয়েছে এই সব ভুল শিক্ষা!
কিন্তু, আমরা কি ভেবে দেখি না যে, আজ যারা দাদু দিদাদের নিয়ে আদুরে ঠাট্রা করার নামে মস্করা করি, তারাও একদিন দাদু দিদা হবো ! বা গোপন দাদু দিদার রূপ আমাদের ভিতরে উঁকি দিচ্ছে, এক সময় বেরিয়ে আসবে সেই পরিচয় — সময়ের লেয়ারগুলি ভেদ করে !
আসলে যে-প্রক্রিয়ায় আমরা সবাই জীবনকে গড়েছি — কতকগুলো মূর্খ আবেগী লেখক কবিদের গল্প কবিতা পড়ে বড় হয়েছি ! যাঁরা মানুষের “দাদু দিদা” ও খুড়ো জ্যেঠার রূপকে মস্করার প্যাটার্নে প্রকাশ করেছেন ! তাঁরা আসলে এমন করে বিষয়টা ভাবেন নি, কারণ, গতানুগতিক আবেগে তাঁরা আবদ্ধ ছিলেন অনেকের মত !
এতো অজ্ঞতা নিয়ে চলছে আমাদের সাহিত্য জগৎ ! যার শরীরে যতটুকু যৌবন আছে সেটাকে বিদ্রুপ করে নষ্ট করে দেবার ছক করে আমাদের সাহিত্য ও সমাজ !তাই চারপাশে হাজার হাজার বইপত্তর প্রায় সব আবর্জনা, এটা আমি সাহস নিয়েই বলছি ! অংক করে দেখিয়ে দিতে পারি ! অনেক সাহিত্য লেখনী এইসব কারণে অপদার্থ চিন্তার প্রতীক হয়ে যায় ! তাই আমরা এতো ভুল শিখেছিলাম ! এতো সব পুরস্কৃত বড় বড় কবি লেখক এই দেশে বিশ্বে, কেউ এই বিকট ভুলগুলো খেয়াল করেন নি? আমরা তবে কী ভাবতে শিখেছি? কোন অধিকারে আমরা চিন্তন জগতের নাগরিক বলে দাবী করি?
আচ্ছা, যদি দাদু দিদাকে নিয়ে এমন একটি ছড়া লেখা যায় ! কেমন হয় !
দাদু দিদার ঠিক ছড়া
—————————-
ঋদেনদিক মিত্রো
দাদু কেন ভাববো,
দিদা কেন ভাববো,
দাদা আর দিদি বলে
তাঁদেরকে ডাকবো !
কে বা দাদু, কে বা দিদা,
আমরা তো সকলেই,
শিশু, যুব সকলের
দেহটার ভিতরেই —
দাদু দিদা হয়ে আছি,
সময় আসবে যবে,
পাকা চুল, নড়া দাঁত,
রূপটাই বেরুবে !
কে বা কাকে দাদু দিদা
ডেকে করি বিদ্রুপ,
নিজেদের কথা ভাবো,
সকলেই হবে চুপ !
“খুড়ো” বলে কাকে করো
মৃদু -মৃদু মস্করা,
তুমিও কারো না কারো
খুড়ো হয়ে গেছো কবে,
শুনে চোখ ছানাবড়া!
কেবা দাদু, কে বা দিদা,
কেবা খুড়ো, কেবা খুড়ি,
বই-কে যে দূরে রাখে
সেই হলো বুড়োবুড়ি,
প্রতিবাদে যে ভীত,
সেই হলো বুড়োবুড়ি,
স্বপ্ন যে দেখেনা —
সেই হলো বুড়োবুড়ি !
সাজতে যে ভয় পায়—
সেই হলো বুড়ো বুড়ি !
মানুষকে জাগিয়ে —
যে যায় এগিয়ে —
সেই তো উনিশ কুড়ি !
কোনটা চাইছো হতে —
ইয়ং না বুড়োবুড়ি !
কথাটায় পেলে ঘা,
প্রতিবাদে পিছ পা,
সত্যটা করেছি
যেই আমি খোঁড়াখুঁড়ি,
মুখটা শুকিয়ে গেলো,
পঁচিশ বছর হয়েও
তুমি আজ পরিচয়ে
বুড়ো বুড়ি !
ছিঃ ! ছি, ছিঃ !
তোমার বয়স কতো
ক্যালেন্ডারে !
হিসেবটা মিথ্যা —
বলি বারেবারে !
যদি হও জোয়ান অব আর্ক,
ঝাঁসিরানী কিংবা কোপার্নিকাস,
হতে পারো নিউটন,
জ্ঞানের বিকাশ,
হতে পারো বিপ্লবী—
নও ইতরের দাস,
তুমি তবে যৌবন,
আঠেরোর জুড়ি,
আশি বছর হয়েও যে
নও বুড়ো বুড়ি !
সমাজ তো ভুলে ভরা,
তুমি ভুল মানলে,
নিজেকে তো মূর্খের
দলে টেনে আনলে,
সেটা যদি হবে না,
বলো জোর হাঁক দিয়ে —
আমি আজো আছি ঘুড়ি,
স্বপ্নকে নিয়ে আমি উড়ি,
চিরকাল আমি তাই
উনিশ কুড়ি !
নেতাজিকে দাদু বলে
ডাকবে কে আছো,
যাঁর নাম শুনলেই
অন্তরে নাচো,
আজো যদি বের হন–
তিনি কোনো ভাবে,
ভারত, বিশ্বটা
যেন প্রাণ পাবে,
তাঁর নামে সকলেই
বের হবে পথে,
বলবে উল্লাসে —
হে বীর যুবক,
তোমার জন্য তো —
ছিলাম অপেক্ষায়,
তুমি আজ ফিরে এলে —
দেহে মনে ঝড় জেগে ওঠে,
আমরা নেমেছি আজ পথে !
আজ তাই সারা দেশ
সকলেই আঠেরো বা আশি,
আজ যৌবনে ভাসি–
তোমায় নিয়ে,
তুমি চির যৌবন,
কোটি কোটি মানুষকে
রেখেছ জাগিয়ে !
এ ভারতে নেই আজ কেউ বুড়োবুড়ি,
আমরা সকলে আজ উনিশ কুড়ি !
—————————————
( 15 ফেব্রুয়ারী 2021, Ridendick Mitro, India )