১) জ্বালা
🌾🌾🌾🌾
মারবি আমায় তোরা ?
মরেই আছি আগে,
মারতে আবার কেন
ইচ্ছে তোদের জাগে !
মুখ তো আছেই বটে
কথা কিছুই নাই,
চোখ দুটোতেই ছানি
দেখতে কি আর পাই ?
শুনতে না পাই কিছু
কান দুটোই কালা,
ধুক্ ধুক্ জীবনটা
তাকে নিয়েই জ্বালা !
_
২) শহরবাবু
🌱🌱🌱🌱
তোরা যে সব শহরবাবু
অনেক জ্ঞানী গুনী,
আমরা কি তোদের মতন
পদ্য লিখতে জানি !
তোদের আছে পাতাল রেল
দু’তলা বাস ট্রাম,
আমাদের যে গরুর গাড়ি
নাইকো যার দাম ।
আড্ডা তোদের কফি হাউস
কিংবা রেঁস্তোরায়,
আমাদের যে সব্জি ক্ষেতেই
দিনটা চলে যায় ।
রয়েছে তোদের পার্ক লেক
ঝাকাস আলো বেশ,
আমাদের যে বন বাদার
অন্ধকারেই শেষ ।
থাকিস তোরা ব্যস্ত যে খুব
ই-মেল ফেসবুকে,
কষ্ট করে আমরা তোদের
অন্ন জোগাই মুখে ।
__
৩) চাষীর কথা
🌾🌾🌾🌾🌾
ব্যবসাদারে লুটছে টাকা
ঝরছে মোদের ঘাম,
কষ্ট করে ফলাই ফসল
পাইনা যে তার দাম ।
প্রখর তাপে মাঠে যে হায়
পুড়ে পিঠের চামড়া,
খাদ্য ফলাই অনেক তবু
উপোস থাকি আমরা ।
সোনার ফসল কিনে পরে
মহাজনদের টাকা,
হয় যে দ্বিগুন অনায়াসে
আমাদের সব ফাঁকা ।
মোদের কথা হৃদয় দিয়ে
কে আর ভাবে আজ,
আগামীতে করবে না কেউ
এমন চাষের কাজ !
_
৪) পুতুল নাচ
🌱🌱🌱🌱🌱🌱
আসলে শীত আসত আগে
পুতুলনাচ এইখানে,
বসত এসে গ্রামের শেষে
মোড়লদের ময়দানে ।
সন্ধ্যা হলে সবাই গাঁয়ের
ছুটত যে ওইখানে,
দাদুর সাথে আমি যেতাম
হাত ধরে সাবধানে ।
রাবণ বধ, সীতা হরণ
আর চাঁদ সদাগর,
এমন কত পালা যে ভাই
হয়ে যেত পর পর ।
দিন পনের থাকত তারা
খুশির পরশ দিয়ে,
উঠত মেতে গ্রামে সবাই
পুতুল নাচটা নিয়ে ।
আজকে ওসব সংস্কৃতি
লুপ্তপ্রায় একদম,
দেখছি শুধু মোবাইলটা
ফেসবুক হরদম ।
_
৫) গাছ
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
গাছকে বলি তোমায় নিয়ে
লিখব ছড়া পদ্য ?
গাছটি বলে জানাও তবে
ব্যথা আমার অদ্য ।
মুখটি বুজেই থাকি আমি
না করি প্রতিবাদ
কুঠার নিয়ে আমায় সবে
কেন করে আঘাত ?
ইচ্ছে মত কাটছে আমায়
যখন যার খুশি,
কেন বুঝনা সবারে আমি
কতই ভালবাসি ।
বলতে কথা পারিনা আমি
কি করে যে বুঝাই,
কুঠার ঘায়ে আমি যে হায়
কতই কষ্ট পাই ।
সকল প্রাণী বাঁচাই আমি
অক্সিজেনটা দিয়ে ,
তোমরা দেখি ব্যবসা কর
শুধু আমায় নিয়ে ।
__
৬) ঘোষ বুড়ি
🌾🌾🌾🌾
এপাড়ার ঘোষ বুড়ি
ভোরে চান করে,
শীতকালে পিঠে করে
সারাদিন ধরে ।
বয়সটা কম করে
হল বুঝি আশি,
এখনও খায় পিঠে
টাটকা ও বাসি ।
আসকেটা করে ভাল
ঠিক যেন ইটলি,
করে দুধ পুলি আর
করে মুগ সামলি ।
সন্ধ্যায় পাড়াটার
সব ছেলেদের,
ডেকে দেয় পিঠে আর
গুড় খেজুরের ।
হই হই করে সব
ওঠে দেখি মেতে,
বলে বুড়ি বেচে থাক
পাব পিঠে খেতে ।
_
৭) শীতকাল
🌱🌱🌱🌱🌱
ভাল লাগে নিতে গায়
শীতে রোদ মিঠে,
ভাল লাগে ঠাকুমার
হাতে গড়া পিঠে ।
খেজুরের রস খেতে
ভাল লাগে তাই,
ভোরবেলা উঠে রোজ
গাছতলা যাই ।
নলেন গুড়ের মোয়া
রকমারি মিষ্টি,
ভাল লাগে হই চই
নদী পাড়ে ফিস্টি ।
ভাল লাগে খিচুড়িটা
রোদে বসে খেতে,
বাঁধা কপি ডিমকারি
বেগুনিটা সাথে ।
ভাল লাগে মেলা খেলা
আর কবি গান,
ভাল লাগে শীতকাল
ভরে যায় প্রাণ ।
__
৮) চড়ুইভাতি
সকাল থেকে ব্যস্ত ভীষণ
দিনটা আজ বড়ো,
মাঠের মাঝে চড়ুইভাতি
সবাই হল জড়ো ।
পাড়ায় যত মানুষ ছিল
কেউ নাই যে ঘরে,
কাটছে কেউ বাঁধাকপিটা
কেউবা খুন্তি ধরে ।
গল্প করেই সময় কাটান
অতীনখুড়ো মাঠে,
বলেন সেই দিনের কথা
যা নাই আজ মোটে ।
বিনি পিসি পানটি চিবোয়
মুখটি করে লাল,
বুদি মাসির কাঠটি হাতে
চুলাতে দেয় জ্বাল ।
কেউবা নাচে কেউবা গায়
কেউবা করে মস্তি,
সবার দেখি সবার সাথে
আজকে ভারি দস্তি ।
মাঠটি জুড়ে বইবে আজ
খিচুড়িটার গন্ধ
সবাই খাবে এখানে ভাই
রান্না সবার বন্ধ ।
__
৯) এই শীতে
***********
এই শীতে ভোরবেলা
লেপ ছেড়ে উঠতে,
মনে হয় কষ্ট আর
নেই তার চাইতে ।
গিন্নি যে বলে হেঁকে
শুনতে কি পাওনা ?
উঠে আগে চা খেয়ে
বাজারটা যাওনা ।
না শোনার ভান করে
আমি থাকি চুপ যে,
শেষ কালে ওঠায় সে
ঠেলা দিয়ে গায় যে ।
ধরফর করে উঠি
বলি দাও ব্যাগটা,
যেতে হবে অফিস যে
বেজে গেল আটটা ।
কাল থেকে ছয়টায়
তুমি দেবে ডাকটা,
লেট হয় প্রতিদিন
ধমকায় বশটা ।
__
১০) চাষী
🌾🌾🌾🌾🌾
কঠোর শ্রমে জোগায় যারা
সবার মুখে পুষ্টি,
অপুষ্টিতেই ভুগছে আজ
তাদের সব গুষ্টি ।
জীবন দিয়ে ওরাই দেশ
করে জাতির সেবা,
ওদের কথা ভাবার মত
মানুষ আছে কেবা ?
যুগে যুগেই এমনি ভাবে
ওরাই কেবল মরে,
আলোর মাঝে অন্ধ গলির
হদিস কে আর করে !
১১) কামনা
🌱🌱🌱🌱
নতুন বছর হোক
ভাইরাস মুক্ত,
মুখ ঢেকে থাকা দিন
হোক অবলুপ্ত ।
ফিরে পাই যেন সব
প্রেম প্রীতি ছন্দ,
ঘুচে যাক ভেদাভেদ
মানুষের দ্বন্দ্ব ।
__
১২) অনুভব
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
তেমন করে হাসতে আর
আমরা পারি কই ?
যেটুক হাসি কাউকে দেখে
সে নয় মেকী বই !
বলি সবাই ভালই আছি
সত্যি কি আর তাই ?
মুখের কথা এখন ওটা
সবাই জানে ভাই !
ছুটছি সব যাচ্ছি কোথায়
কেউ জানিনা তা তো !
মিথ্যে এখন মিষ্টি ভীষণ
সত্যি যে সব তেতো ।
ভুলেই গেছি লোভের বশে
আসল কথা কি যে,
কেউ জানিনা বেগার খেটে
পেলাম যে কি নিজে !
__