Spread the love

গণতন্ত্রের কঙ্কাল 
              ✍️তন্ময় সিংহ রায়✍️         
একটি রাষ্ট্র যে যে মৌলিক শর্তের উপরে ভিত্তি করে প্রশাসিত হবে সেই সমস্ত শর্তের সংকলনকে বলা হয় সংবিধান।
দেশের সাধারণ জনগণের হয়ে যাঁরা সংবিধান রচনা করেন, সম্মিলিতভাবে তাদের বলা হয় গণপরিষদ।
অবশেষে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৫০ সালে ২৬ শে জানুয়ারি অর্থাৎ সুষ্ঠ, স্বাভাবিক, আদর্শমিশ্রিত ও ন্যায়নিষ্ঠ গণতন্ত্রের  শুভ জন্মদিন ও পথচলা শুরু।                                                                ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে,
“আমরা ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম,  সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ,  গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র হিসাবে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সহিত শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিকের জন্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম ও উপাসনার স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সুযোগসুবিধা সমতা সৃষ্টি এবং তাদের সকলের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের ভাব গড়ে তুলে ব্যক্তির মর্যাদা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করার জন্য আমাদের গণপরিষদে আজ ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর এই সংবিধান গ্রহণ ও বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।” 
হায়রে গণতন্ত্র!
চরম অনাহার ও অপুষ্টিতে সোনার ভারত আজ অস্থিচর্মসার!
রক্ষক আজ ভক্ষকের ভূমিকায় শান্ত করছে তার পাকস্থলী!
‘মাৎসন্যায়’-এর যুগের পুনরাবৃত্তি তবুও ‘ফরাসি বিপ্লব’-শূণ্য নিশ্চুপ জনগণ প্রার্থী বাছাইয়ে গভীর মনোযোগে সু-দিনের স্বপ্নে বিভোর!!
সমাজসংষ্কারকের পাহাড়প্রমাণ ঢেউ, তবুও
অরাজকতা,খুন, ধর্ষন, চুরি ও জালিয়াতি’র  আধিপত্য লঙ্ঘন করেছে ও করছে তার সীমা।
বঙ্গমায়ের প্রকৃত বীর সন্তান আজ আর জন্মায়না!
সিংহভাগ নিমজ্জিত আত্মকেন্দ্রিকতা’র মহাসমুদ্রে!
লিখতে লিখতে কালি বরণ করে নিঃশব্দ মৃত্যু তবুও ধর্ষকটার লালাগ্রন্থি সাহারা হয়না!
এখানে অপরাধীদের অক্সিজেন বেশি।
বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিটা ইঁট আজও যন্ত্রণাবিদ্ধ! বুকফাটা নিঃশব্দ আর্তনাদে সেগুলো করে হাহাকার!
‘মোরা একই বৃন্তে দুইটি কুসুম’ আজও চরম অপমানিত ও বঞ্চিত!
একলাফে এভারেস্টের চুড়ায় ওঠা যাবে কিন্তু, যাবেনা এখানে একটা দুর্নীতিমুক্ত দিন দেখা!
কারণ, কার্বনডাই-অক্সাইড না থাকলে অক্সিজেনের অস্তিত্ব বিপন্ন!’
বিশেষত আদর্শ দেশপ্রেমীরা বোধ করি মনে প্রাণে কেউই চান না যে এভাবে পরিবেশ হারিয়ে ফেলুক তার ভারসাম্য।
বড় বিচিত্র এই সমাজটা!
এখানের সর্বজ্ঞানী বিশেষত শিক্ষিতগুলো গাছ লাগায় কম, আদেশ করে বেশি।
এখানে খবরের কাগজের প্রথম পাতার শিরনামে থাকে বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা/অভিনেত্রী’র সর্দি হওয়া ও বিভিন্ন বিশিষ্ট সমাজসেবীদের জেলা, রাজ্য ও দেশ উদ্ধার সম্পর্কিত পদক্ষেপের গপ্পো।
গরীব কৃষকের আত্মহত্যা ও সাধারণ মানুষের খবর থাকে নিচের ছোট্ট খোপটায়!
এফ.আর.সি.এস তো মহাকাশ, ছেড়েই দেওয়া যাক, এম.বি.বি.এস-রা এখানের গ্রামগুলোয় তাদের স্ট্যাটাস নিচে নামান না।
আদর্শ বেচে গরীব থাকাটা নিতান্তই মুর্খামি তাদের কাছে।
খান চারেক আলিশান বাংলো, স্বাস্থ্যবান অ্যাকাউন্ট আর দু-তিনটে হন্ডা সিটি বা ফোর্ড এর অতিচৌম্বকীয় আকর্ষণে ভিটামিন A এর অভাবে তারা আজও গ্রাম-কানা!
এখানে বিশেষত বর্তমানে আচার্য জগদীশ চন্দ্র ও ক্ষুদিরাম বসু’রা ফেসবুকে লাইক পান কম, উলঙ্গ নায়িকা’য় ওঠে পছন্দের কালবৈশাখী, সাথে মৌসুমী’র স্নিগ্ধ শীতল কোমল স্পর্শ!
এখানে বিশেষত গরীবদের প্রতিবাদে লাল কাটা চিহ্ন! এরা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সংবিধানের জরায়ু’তে আশ্রিত গণতন্ত্র সিস্টেমের শুধু ভোটদাতা মাত্র!
বিশেষত সামাজিক অশিক্ষিতরাও এ সমাজে প্রকৃত জ্ঞানী আর প্রকৃত প্রকৃতগুলো বুদ্ধিজীবী উপাধি ধারণ করে উপার্জন করে রাশিরাশি টাকা তাদের জ্ঞান বিক্রি করে।
এ সমাজে আদর্শবান ও সৎগুলোর খাদ্যনালীতে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর আর দুর্নীতিবাজগুলো’র পাকস্থলী পরিপূর্ণতা পায় সোনার মার্টন বিরিয়ানিতে!
এখানে দুর্ঘটনা হলে তবেই ঘুম ভাঙে সচেতনতার।
এ রাজ্যের সরকারী স্কুলের জাতির স্পাইনাল কর্ডদের ছেলেমেয়েদের মানুষ হওয়ার আদর্শ জায়গা বিভিন্ন প্রাইভেট নামী-দামি ইস্কুল।
অযোগ্য ও প্রকৃত ফাঁকিবাজেরা এখানে সরকারের রাশি রাশি টাকা, পাকস্থলীর কোনো যান্ত্রিক গোলোযোগ ছাড়াই বীরবিক্রমে বেমালুম নির্দ্বিধায় করে নেয় হজম।
ক্রমবর্ধমান হিংসা, ঈর্ষ্বা ও লোভ-লালসায় এ সমাজ আজ ভিসুভিয়াস!
এখানে হলিউড, বলিউড ও টলিউড উন্মাদনা এবং মলে কেনাকাটা করে কিছু শ্রেণীর আত্মকেন্দ্রিক বুদ্ধিমানেরা হাজার হাজার টাকা নিজেদের ভোগে নির্দ্বিধায় সারাজীবন ব্যয় করবে আর কাকভোরে আদর্শ জড়ানো দু’চোখের পাতা নিয়ে বিনয়ী বদনে হারমনিয়ামে সুর ভাঁজবে,
‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে।
একটু সহানুভূতি কি, মানুষ পেতে পারে না?
ও বন্ধু….
মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে।’
আজও আধপাগলী’টা এই অসহনীয় শীতে কুঁকড়ে অভুক্ত পড়ে থাকে ওই ফুটপাতটায়!
আজও ওই অনাথ অসহায় ফুলসম শিশুটা’র শ্রমের মধু’কে চুষে ওকে দেওয়া হয় শুধু দুটো ভাত আর অশ্রাব্য গালিগালাজ!
বর্তমান প্রজন্মের কাছে ছানি সিং -এর জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী আর আর্যভট্ট নামটা তাদের মস্তিষ্কের কোষে শুকিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে মর্মান্তিকভাবে!
প্রশ্ন করেছিলাম একটা পরমাণুকে, আপনাকে বছর দুয়েক এলাকায় দেখতে পাইনি কেন?
উত্তর পেলাম দুটো খুন, একটা ধর্ষণ ও সারদা’র কিছু টাকা মেরে জেলে ছিলাম, জামিনে ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে এসেছি তাই।
ভাবলাম দুর্নীতি বেশ ভালোই আধিপত্য বিস্তার করেছে অণু-পরমাণুর মধ্যেও ও এখানে অপরাধীদের জীবন নিশ্চিন্তের।
এখানে মূর্খরা পেলেন-এ(প্লেন) ও এম.এ’রা ঘোরে রাস্তায়!
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এ সমাজে’র বিত্তবান অশিক্ষিতদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
মাঝে মধ্যে মনে হয় কোনো অলৌকিক ক্ষমতা বলে যদি মুহুর্তেই হতে পারতাম একটা গরু কিংবা ছাগল/চুড়ান্ত আত্মকেন্দ্রিক, অনেক শান্তি পেতাম! ভাবনাগুলো এভাবে দিতনা যন্ত্রণা!
নিশ্চিন্তে এই জটিলতা থেকে মুক্তি লাভ করে সবুজ ঘাসে দিতে পারতাম মন অথবা আমাতে’ই হত আমার পৃথিবী।
সামাজিক ডায়লগে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট অথচ চুড়ান্ত আত্মকেন্দ্রিক জীবন যাদের, তাদের দু-চারটে নোবেল মুখে ছুঁড়ে মারার অনুরোধ রইলো সরকারের কাছে।।
সব মিলিয়ে আমদের নির্লজ্জ ও নিশ্চুপ অবস্থান একমাত্র গণতন্ত্রের কঙ্কালে!!
(ব্যতিক্রম অবশ্যই স্বীকার্য ও ভুল-ত্রুটি’র জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী!)
শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *