🌱আমার অভিজ্ঞতা🌱
✍️অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)✍️
ছোটবেলায় একবার সবাই মিলে মাইথনে যাওয়া হয়েছিল । পশ্চিমবঙ্গ- বিহার সীমান্তে ( তখনো ঝাড়খণ্ড হয়নি) , কলকাতা থেকে তিন ঘন্টার রাস্তা, সুন্দর জায়গা । ওখানে গিয়ে একটি নয়নাভিরাম লজে থাকা হল । চারদিকে জল, একটি ব্রীজ ডাঙার সাথে সংযোগ স্থাপন করে চলেছে । ইতিউতি ভেসে বেড়াচ্ছে নৌকা ।..প্রকৃতি আপন খেয়ালে সৃষ্টিরতা !
লজের সামনে ঘাসে ছাওয়া উঠোনে একদিন বসে আছি, এমন সময়ে দুটি ছোট্ট কুকুরছানা ছুটে এলো। ছোট ল্যাজদুটি নাড়াতে নাড়াতে ঘুরে বেড়াতে লাগলো ।…
আমি আর বোন তখন ফ্রীজবি খেলবার তোড়জোড় করছিলাম বোধহয় । একটুক্ষণ ছানাদুটো আমাদের সাথে খেলল; মানে আমরা ফ্রীজবি ছুঁড়ে দিই, ওরা মুখে করে ফেরত নিয়ে আসে। তারপর ওরা ডাকতে শুরু করল । …
অনুমান করলাম, ওদের খিদে পেয়েছে । ..লজের একজন কেয়ারটেকার ছিল সেখানে , সে বললো যে ওদের মা নাকি দিনসাতেক আগে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছে । ..
শুনে দুঃখ হলো । পশুসমাজে বাবার সন্তানদের প্রতি কোনো দায় নেই । আর ওদেরও তো মায়ের অভাব বোঝার মতো বয়স হয়নি ! ভাবলাম, কী খেতে দেব ওদের ! বিস্কুট বা মুড়ি দিলে কি ওরা খেতে পারবে ?..!
লজের ঘরে গিয়েছিলাম একটু। ফিরে এসে দেখি এক ব্যাপার ।… উপরে গাছের ডালে বসে ছিল একটি হনুমান । বিরাট চেহারা, কালো মুখ । তার গায়ে ঝুলছে একটি শিশু হনুমান । মা- হনুমানই হবে বোধহয় ।… যা হোক, সে নীচে নেমে এসেছে ও নিজের ছানা ও কুকুরছানা দুটির সঙ্গে খেলছে ! …একদম যেন মায়ের মূর্তি !
তারপর দেখি, নিজের ক্ষুধার্ত শিশুকে স্তন্যপান করিয়ে সে ঐ কুকুরের ছানা দুটোকেও নিজের দুধ খাওয়াচ্ছে ।..ছানা দুটোও মহানন্দে লেজ নাড়াতে নাড়াতে হনু- মায়ের দুধ পান করছে । মা- হনুমান পরম স্নেহে ছানাদুটোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।
কেয়ারটেকার বলল, এরকম নাকি কালও হয়েছে । অনেকেই দেখি ভীড় করে এই অদ্ভুত ঘটনা দেখছে ।
তার পরে এরকম ঘটনা আমি আরো অনেক জায়গায় দেখেছি, তবে সবই পশুদের মধ্যে । মানুষ অন্য মানব- শিশুর প্রতি এত সদয় কিনা আমার তাতে সন্দেহ আছে ।..
এত সরলতা, স্নেহ, কোমল অনুভূতি যদি মানুষের মধ্যে থাকতো, তবে দুনিয়াটা আজ এরকম হতো না বোধহয় ..!!!
¤□¤□¤□¤□¤□¤□