টার্নার সিনড্রোম- ক্রোমোজোমীয় মিউটেশন ঘটিত রোগ
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});মিউটেশন
পরিব্যক্তি বা মিউটেশন হল কোষ জিনোমের ডিএনএ গঠনের স্থায়ী পরিবর্তন। ডিএনএ রেপ্লিকেশনের(প্রতিলিপিকরন) সময়, বিশেষ করে মিয়োসিস কোষ বিভাজনে ভ্রান্তি ফলাফল পরিব্যাপ্তি বা মিউটেশন। এছাড়াও কোন কারণে ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে (যেমনঃ বিকিরণ বা রেডিয়েশন বা কারসিনোজেনের প্রভাবে ডিএনএ রিপেয়ার ভুল সিকোয়েন্সে (অনুক্রম)হওয়ার সুযোগ থাকে।ডিএনএ রেপ্লিকেশনের সময় বা ট্রান্সলেসন বা প্রোটিন সিন্থেসিস এর সময় ভুলের কারণেও মিউটেশন দেখা দেয়। এছাড়াও ডিএনএতে বাইরের কোন উপাদানের মাধ্যমে সিকুয়েন্সে নতুন উপাদান যুক্ত অথবা মুছে ফেলার দরুনও মিউটেশন সংঘটিত হতে পারে। পরিব্যক্তি সংঘটিত হলে তা জিনের উপাদানে পরিবর্তন ঘটায়, অথবা জিনের কার্যক্রমে বাধাদান করে, অথবা কোন প্রতিক্রিয়াই ঘটে না। ড্রসোফিলা মাছিতে করা গবেষণার উপর প্রস্তাব করা হয়েছে যে, মিউটেশনে যদি জিন কর্তৃক সৃষ্ট প্রোটিনে পরিবর্তন আসে, তবে তা ক্ষতিকারক হতে পারে, যেখানে উক্ত মিউটেশনের ৭০ শতাংশেই ক্ষতিকারক প্রভাব থাকে, এবং বাকি অংশ নিরপেক্ষ বা সামান্য উপকারী হতে পারে। মিউটেশন দুই প্রকারের হয়, ১) জিন ঘটিত মিউটেশন (Gene mutation) ও ২) ক্রোমোজোম ঘটিত মিউটেশন (Chromosomal mutation)।
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});ক্রোমোজোম ঘটিত মিউটেশন
ক্রোমোজোমের গঠন বা ক্রোমোজোমের সংখ্যা পরিবর্তনের ফলে যখন কোনো জীবে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে তখন তাকে ক্রোমোজোম ঘটিত মিউটেশন বলে।
ক্রোমোজোমের সংখ্যাভিত্তিক পরিবর্তন
ক্রোমোজোমের স্বাভাবিক সংখ্যার দুই ধরনের পরিবর্তন ঘটে ১) ইউপ্লয়েডি এবং ২) অ্যানিউপ্লয়েডি।
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});১) ইউপ্লয়েডি (Euploidy)
ক্রোমোজোমের হ্যাপ্লয়েড অথবা ডিপ্লয়েড সেট যখন গুণিতকে বৃদ্ধি অথবা হ্রাস পায় তখন তাকে ইউপ্লয়েডি বলে। ইউপলয়েডি বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন — মনোপ্লয়েডি (Monoploidy), ট্রিপ্লয়েডি (Triploidy), টেট্রাপ্লয়েডি (Tetraploidy), অটোপলিপ্লয়েডি (Autopolyploidy), অ্যালোপলিপ্লয়েডি (Allopolyploidy)।
২) অ্যানিউপ্লয়েডি (Aneuploidy)
ক্রোমোজোম সেট সংখ্যার অর্থাৎ মোট ক্রোমোজোম গুণিতকে বৃদ্ধি বা হ্রাস না হয়ে যদি এক বা একাধিক ক্রোমোজোম সংখ্যার বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে তখন তাকে অ্যানিউপ্লয়েডি বলে। অ্যানিউপ্লয়েডি দুই প্রকারের হয় হাইপোপ্লয়েডি এবং হাইপারপ্লয়েডি। হাইপোপ্লয়েডি কয়েক রকমের হয়, যেমন — ১) মনোজমি (Monosomy), ২) ডাবল মনোজমি (Double monosomy) এবং ৩) নালিজোমি (Nullisomy)। হাইপারপ্লয়েডি বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন — ১) ট্রাইজোমি (Trisomy), ২) ডাবল ট্রাইজোমি (Double trisomy), ৩) টেট্রাজোমি (Tetrasomy), ৪) পেন্টাজোমি (Pentasomy) প্রভৃতি।
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});টার্নার সিনড্রোম
টার্নার সিনড্রোম (TS) বা 45+X, বা 44+XO, হল একটি বংশগত রোগ যাতে একজন স্ত্রীলোক-এর কোষে একটি এক্স ক্রোমোজোম অনুপস্থিত থাকে। উপসর্গ সকলের ক্ষেত্রে সমান নাও হতে পারে। সাধারণত কোঁচকানো ঘাড়, বামনত্ব, ফোলা হাত-পা, চুলের কম ঘনত্ব, জন্মের সময় ছোট হাত-পা দেখা যায়। এছাড়াও অ্যামেনোরিয়া, অগঠিত স্তন, বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়। দৃষ্টিজনিত ও শ্রবণজনিত সমস্যাও দেখা যায়। এই রোগ মূলত গ্যামেট তৈরীতে অসঙ্গতি হলে সৃষ্টি হয়ে থাকে। মায়ের বয়সের প্রভাব এতে কোনোভাবেই পড়ে না। রোগীর দেহে ৪৫টি ক্রোমোজোম থাকে, যেখানে সাধারণ মানুষের দেহে ৪৬টি থাকে। জেনেটিক পরীক্ষার দ্বারা রোগ নির্ণয় সম্ভব। মার্কিন বিজ্ঞানী হেনরি টার্নার এই রোগ আবিষ্কার করেন (১৯৩৮)। তিনি ছিলেন একজন হরমোন বিশেষজ্ঞ। ১৯৬৪ সালে এটি যে ক্রোমোজোম জনিত রোগ তা আবিষ্কৃত হয়। রুশ বিজ্ঞানী নিকোলাই শেরেশেভস্কি ১৯২৫-এ এই রোগ সম্পর্কে তার মতামত জানান ও বলেন যে এই রোগ হল জননাঙ্গের বৃদ্ধি ব্যহত হওয়া ও পিট্যুইটারি গ্রন্থি নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও এটি জন্মগত দেহ তৈরীর সময় সৃষ্ট রোগ, যার জন্য বিভিন্ন অঙ্গ সঠিক কাজ অক্ষম হয়। প্রথম বহিঃপ্রকাশিত আক্রান্ত নারীর খবর পাওয়া যায় লন্ডন শহরে। ডাঃ চার্লস ফোর্ড ও তাঁর সহকর্মীদের সাহায্যে এটি সামনে আসে। রোগটি পাওয়া গেছিল ১৪ বছরের একটি মেয়ের দেহে। টার্নার সিনড্রোম সাধারণত ২০০০ জনের মধ্যে ১ জনের দেখা যায়। ২০০০ সংখ্যাটা কখনও ৫০০০ ও ধরা হয়।
কারণ
একটি এক্স ক্রোমোজোম বিহীনতা।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
মহিলারা টার্নার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হলে নীচে দেওয়া উপসর্গগুলো উপস্থিত হয়:
- ছোট গলা।
- জন্মের সময় হাত ও পা ফুলে থাকা।
- নরম নখ, যেগুলো উপরের দিকে ঘুরে যায়।
- কানের গঠনে অস্বাভাবিকতা।
- উচ্চ রক্তচাপ।
- দূর্বল হাড়ের গঠন।
- দৈহিক উচ্চতা কম হওয়া।
- হাইপোথাইরয়েডিজম।
- অনুন্নত ডিম্বাশয়ের কারণে বন্ধ্যাত্ব।
- মাসিক না হওয়া।
- আনুষঙ্গিক লিঙ্গগত বৈশিষ্টের কম বৃদ্ধি হওয়া।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
জন্মের আগে বা জন্মের সময় শিশুর মধ্যে কিছু শারীরিক গঠনের অস্বাভাবিকতাকে দেখে এই সিন্ড্রোমের নির্ণয় করা হতে পারে।
টার্নার সিন্ড্রোমের নির্ণয়ের জন্য অনেকপ্রকার সনাক্তকরণ পরীক্ষা আছে। সেগুলো হল:
- অ্যামনিওসেন্টেসিস (আল্ট্রাসোনোগ্রাফির দ্বারা গর্ভের ভিতরে সুঁচের সাহায্যে নমুনা নিয়ে অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইডের পরীক্ষা)।
- শারীরিক পরীক্ষা।
- মনস্তত্ত্বিক সমন্বয়।
- রক্তপরীক্ষা।
- ক্রোমোজোমের পরীক্ষা।
- জিনগত পরীক্ষা।
বর্তমানে, টার্নার সিন্ড্রোমের জন্য কোনো পরিচিত প্রতিকার নেই। এই চিকিৎসার লক্ষ্য হল উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তার মধ্যে রয়েছে:
- হরমোনগত চিকিৎসা (ব্যাহত বৃদ্ধিকে পরাস্ত করতে সাধারণত শৈশবেই এটা করা হয়)।
- ইস্ট্রোজেন প্রতিস্থাপন থেরাপি (হাড়ের ক্ষতি আটকায় এবং যৌবনারম্ভের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে)।
- কাউন্সেলিং (উত্তম মনস্তত্ত্বিক সমন্বয় করে)।
লিখেছেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});