Spread the love

অনুগল্প : স্মৃতিচারণ 
🌱🌱🌱🌱


* চিন্ময় মহান্তী *
🌱🌱🌱🌱🌱🌱
ঝিরি ঝিরি দখিনা বাতাস এসে কচিকলাপাতা রঙের আঁচলে লুটোপুটি খাচ্ছে । ঘরের ভেতরে হোম থিয়েটারে মৃদু  আওয়াজে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে । কেয়া , দখিনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছে , প্রেমিক যুগল পাকা রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁসে হেঁটে চলেছে । তারা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে , তাদের ঠোঁটগুলি মৃদু মৃদু নড়ছে । দেখলেই বোঝা যাচ্ছে তারা ভবিষ্যতের নকশী আঁকছে । কিন্তু তাদের ভাষা শুনতে পাচ্ছেনা কেয়া ।
            এই দৃশ্য দেখে কেয়ার মনে পড়ে যায় অতীতের দিনগুলির কথা । সে যখন কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেল , তখনই প্রেমে পড়েছিল অতনুর । প্রথম যেদিন অতনু একটি লাল গোলাপ তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিল , ” ঠিক কি ভাবে বলবো বুঝতে পারছি না  , ” সেদিন মনের অজান্তেই সে তার হাত বাড়িয়ে গোলাপটি নিয়েছিল । অতনুর চাউনির মধ্যে কেমন যেন একটা বিশ্বাসের  আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল সে । তারপর রোজ তারা দেখা করতো , গল্প করতো , স্বপ্ন দেখতো । কলেজে প্রপোজের ভাঁটা পড়েনি বরং জোয়ারই এসেছিল ,  কিন্তু সে সুদক্ষ নাবিকের মতো তার দৃঢ় সংকল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছিল জোয়ারের বুক চিরে । ভেবেছিল বাবা মা যাকে ঠিক করে দেবেন তার সঙ্গেই জীবন খেয়া ভাসিয়ে দেবে । কিন্তু এই সংকল্প ভেঙ্গে একদিন মায়ের কাছে বলতে হয়েছিল , ‘ মা বাবাকে সম্বন্ধ দেখতে বারণ করো । ‘ তারপর দৌড়ে গিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে লজ্জাবতী লতার মতো দু হাতের তালু দিয়ে  মুখটিকে ঢেকেছিল । পরবর্তীতে তার বাবা অতনুর বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ে ঠিক করার পর , ওরা দুজনে বাইকে চড়ে সুর ধরেছিল , ”  এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো ? ”
          এই সব ভাবতে ভাবতে কেয়া হরিয়ে গেছিল অতীত স্মৃতিচারনে । হঠাৎ কলিংবেল এর আওয়াজ । ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই সে দেখল অফিস ফেরৎ অতনু ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । কেয়ার আজ আরো আরো বেশি করে ভালবাসতে ইচ্ছা করছে অতনুকে । অতনু কিছু বোঝার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরল কেয়া । হোম থিয়েটারে তখনো মৃদু আওয়াজে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে  ———
                   ” তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা ,
                   এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা ॥ ……”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *