Spread the love

কবিতা : বন বালিকা

“নীরেশ দেবনাথ”
**************
যে লতাটি জন্মেছে বনে,
বাড়িয়াছে সেথা নিশ্চিত মনে
ছোট হতে হয়েছে আজ বড়।
জানেনা সে বনের বাইরের জগৎ কেমনতর।
তাই মাঝে মাঝে
সন্ধ্যাবেলায় বিনা কাজে
সে দোলে দোদুল দুল
যখন সুবাস ছড়ায় বকুল ফুল
তখন কোন পথ-ভোলা পান্থ
যদি তার পাশটি দিয়ে চলে যায় হয়ে ক্লান্ত
তবে সে চকিতে মাথাটি দুলায়ে
লুকোতে চায় মাটির কুলায়ে।

বনের পরপারের পথ-ভোলা পান্থ তখন
ভুলে যায় পথ হারানোর ব্যথা, তখন
তার হৃদয় ভরে ওঠে অপূর্ব আনন্দে;
সে তখন সানন্দে
বসে বনের লতার পাশে
আদর পাওয়ার আশে।
লতাটি তখন মাথাটি করিয়া নিচু
না বলিয়া কিছু
শুধু মৃদু হেসে
পান্থের অজান্তে ভালোবেসে
ছুটে যেতে চায় আপন নীড়ে –
যাবার বেলায় পিছু পানে চায় ফিরে ফিরে।
সে যে জানে নাকো বনের বাহিরের ভাষা
তাই সে কথা কইবার আশা
দিয়েছে যে ছেড়ে।
শুধু পান্থের মনটি কেড়ে
নিয়ে চেয়ে থাকে পান্থের মুখের পানে।
কি যেন কহিতে চায় কানে কানে
করিতে পারেনা, সে যে
জানেনা সে ভাষা, কে যে
শিখিয়ে দেবে তারে
পথিকের সাথে কথা কহিবারে!
মুখোমুখি কথা নাহি হয়
শুধু অন্তরেই রয়
অন্তরের ভালোবাসা;
সে ভাষা
বাহির হইতে বোঝা নাহি যায়।
হায়!
অন্তরের ভাষা বুঝিতে পারে কি কেহ
জানে কি কোথায় তাহার গেহ।
অন্তরের ভাষা অন্তরেই মরে মাথা কুটে
সে কহিতে পারে না মুখটি ফুটে!
অন্তরের ভাষাটি চক্ষের তারায় ফুটে ওঠে;
কী যেন কহিতে চায় অস্ফুটে
কেবলই প্রকৃতি-রাঙা ঠোঁট দুটি তার
কী যেন কহিতে চায় বারে বার।
সে ভাষা থমকে থাকে ওষ্ঠ প্রান্তে এসে;
পান্থ বোঝে সেই ভাষা, তাই বুঝি সে নির্নিমেষে
চেয়ে থাকে বাক্যহারা –
আপনার মাঝে আপনি হয়ে হারা।
**************************

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *