কবিতা: নেতাজি ফিরে এলেন
[ A Bengali poem on Netaji Subhas Chandra Bose, by Ridendick Mitro. Netaji was an World wonder figure as well as the National Hero of India, Bharat. Poem like “Netaji Firey Elen ” i.e. “Netaji has come back”.)
——————————-
— ঋদেনদিক মিত্রো ( ভারত)
[ মুক্ত ঘূর্ণন ছন্দে মিশ্র পংক্তির অন্তমিলে লেখা! ভিতরে একজায়গায় “রূপ-মান” আছে, ওটা পড়তে হবে উচ্চারণে “রূপ-অ মান” ]
🌹🫒🥀
নায়ক মানেই তুমি,
তুমি মানেই
যার নামে দেশ জাগি,
যার নামে এই বিশ্ব মাতে–
যায় মিশে সব ধর্ম, জাতে,
সে তো নেতাজি!
তুমি মানেই আলো,
জানলা দিয়ে যে ঢুকে যায়,
চমকে উঠে ঘুম ছুটে যায়,
কে সেই আলো, ভাবি,
সে তো নেতাজি!
তুমি মানেই ঝড়,
দাও উড়িয়ে মৃত্যুর ভয়,
বিশ্ব জুড়ে তোমারি জয়,
মুগ্ধ হয়ে আমরা দেখি,
কোন সে পুরুষ বীর্য, এ কি,
সে তো নেতাজি!
কেমন করে বুদ্ধিটাকে
বাড়াতে হয় জানি,
কেমন করে সাহসটাকে
খাড়াতে হয় জানি,
তোমায় নিয়ে গল্প শুনে
আমরা শিখি তাই,
বাপ মা, দাদু দিদা, শিশু–
মুগ্ধ হয় সবাই—
তোমার কাহিনীতে,
রূপকথারই মতন সেসব
ছড়ায় দিকে-দিকে,
ভেঙেছ সাম্রাজ্যবাদীর
অজস্র কারসাজি,
তুমিই নেতাজি!
একটি নামেই ভারত জাগে,
এমন কী সেই নাম!
সবাই বলে,
আমরা সবাই ভারতীয়,
তোমার জন্য এই প্রস্তুত —
দেবো সবাই প্রাণ,
তুমি, নেতাজি সেই নাম!
দাদু দিদা জ্বলতে থাকে–
নেতাজি এলে বেরিয়ে যাবো
ঘর ছেড়ে সব অস্ত্র হাতে,
তাঁর পায়েতে ফেলে দেবো
সঞ্চিত সম্পদ,
নেতাজিকে দেখার যে সুখ,
তার চেয়ে বড় আর কী আছে,
সুখ ভোগ, গৌরব!
স্কুলের শিশু মাকে বলে–
নেতাজি এলে চলে যাবো
যুদ্ধ করতে মা,
আশ্চর্য লাগে তখন,
ওই শিশুটি নেতাজি কে, যুদ্ধ কী,
সেটাই জানে না!
তুমি কেমন জ্বলতে পারো,
শিশুর মাঝেও কল্পনাতে—
একা একাই হয়ে ওঠো প্ৰিয়,
কোথায় তুমি কেমন আছো,
কেমন করে আজো বাঁচো,
তুমি প্রণাম নিও,
যখন ধুতি পাঞ্জাবিতে
বাঙালিরই সাজে–
মুগ্ধ রূপ মান,
তোমায় করি প্রণাম,
যখন তুমি সৈনিকেরই বেশে–
অপূর্ব অদ্ভুত,
তোমায় করি স্যালুট,
তুলনাহীন শ্রেষ্ঠ মানব,
তুলনাহীন বীর,
তাকিয়ে দিলেই সারা শরীর
শ্রদ্ধাতে হয় স্থির,
ঠিক তারপর মনটা জুড়ে ঝড়,
হঠাৎ যেন হাওয়ায় ভাসে–
হাজার কণ্ঠ কানে আসে–
নেতাজি ফিরে এসেছে রে
সবাই বেরিয়ে পড়!
এমনি তখন চোখ ভেসে যায়,
তুমি এসেছ, — তবে কোথায়?
আকাশ উঁচু মাথা নিয়ে
বলছো তুমি ঝড় লাগিয়ে–
আমি ফিরে এসেছিরে
কত বছর পর,
আমায় জড়িয়ে ধর!
কোটি-কোটি মানুষ ঘিরে
তোমায় শুধু ছোঁবে,
খন্ড ভারত অখন্ড হয়–
বিরাট সে উৎসবে,
কেউ বা কোথাও বলছে হেঁকে, —
ঘর ছেড়ে সব চল,
আজ নেতাজি ফিরে এলেন–
দেখরে কেমন নেচে ওঠে
পশু পাখি পাখপাখালি
প্রজাপতি, ফড়িং, বোলতা,
আকাশ, বাতাস, পাহাড়, মরু , জল,
নেতাজি ফিরে এলেন ওরে,
ঘর ছেড়ে সব চল!
প্রতিবেশী দেশের সীমা
হঠাৎ আলগা হলো কিনা–
সীমায় থাকা সৈনিকেরা
অস্ত্র ফেলে দৌড়ে এলো
কী এক অনুভবে,
অপূর্ব গৌরবে।
সকল দেশের সৈনিকেরা এসে —
তোমার নামে জয়োধ্বনি দিতে থাকে–
কান্না চোখে ভেসে,
তারা পরস্পরে করে আলিঙ্গন,
কাঁটাতারের যত বেড়া —
ভেঙে চুরে ঠেসে
এপার ওপার সব্বাইকে
আজ দিলো বন্ধন,
এপার ওপার সকল মানুষ–
মিলে একাকার,
কে কোন দেশের ভুলেই গেছে–
কোথায় কাঁটাতার!
জেলের ভিতর কয়েদিরা —
হঠাৎ-ই খেয়াল করে—
বাইরে থেকে হল্লা কিছু —
উঁচু প্রাচীর ঘেরা জেলে —
ঢুকলো হাওয়ায় রেশে,
অমনি তাদেরই একজন
একা একাই বলতে থাকে,
নেতাজি কি ফিরে এলেন?
নাহলে কি এমন হল্লা
হয় কখনো দেশে?
হঠাৎ তারা হাঁকতে থাকে–
সকলে নির্ভয়:–
জয় নেতাজির জয়,
জয়, নেতাজির জয়!
জেলের সাহেব ছুটে এসে—
সব্বাইকে জানিয়ে দিলেন–
নেতাজি তো ফিরে এলেন–
সারা দেশের সব আসামী
আজকে থেকে মুক্ত,
যাও তোমরা আজ বেরিয়ে—
আমরা জানি —
নেতাজি ফিরে এলেন বলে
সেই খুশিতে
আর কখনো কেউ কোথাও
খারাপ কাজে হবেনা অভিযুক্ত,
যাও তোমরা সব বেরিয়ে,
আজকে থেকে মুক্ত!
কয়েদিরা বেরিয়ে এসে
জেলের স্যারকে ধরে
কাঁধে তুলে নিয়ে আসে
জেল থেকে বের করে,
সবাই দিচ্ছে জয়ধ্বনি,
সকল জেলের একই ছবি,
একই সাথে কাজ ফেলে যে
কৃষক, শ্রমিক দৌড় লাগলো :-
নেতাজি এলো ওরে!
অশিক্ষিত মূর্খ শ্রমিকও
জানে তোমার নাম,
কেমন ছিল — তোমার অবদান!
সারা দেশে যত দোকান,
দোকানিরা হাঁক দিয়ে যা বলছে ওরা-
ভাবাই যায় না তাই,
বলছে ওরা,
“নেতাজি ফিরে আসার দিনে–
মূল্য ছাড়াই যে যা চাও
নিয়ে যেও সবাই!
জানি, আজকে দিনে বলবে না কেউ–
আমার বেশি চাই!”
এমন দৃশ্য ভারতবর্ষে–
ভাবাই যায় না আর!
তোমার নামে কত কী হয়, হতে পারে,
কল্পনার বাইরে তার আকার।
দেশের নানা মাঠে যত
হচ্ছিলো সব খেলা,
দর্শকদের উল্লাস উৎপাত,
আম্পাযার ও রেফারিরা
খেলা বন্ধ করে হঠাৎ–
ঘোষণা করলেন:–
“আজ আমাদের জয় পরাজয়–
সবই মিলে এক হয়ে যায়,
নেতাজি ফিরলেন!”
অমনি তখন খেলোয়াড় আর দর্শকদের
মাঝে কী উল্লাস,
স্টেডিয়াম যেন ভেঙে পড়ে—
“জয় নেতাজি “বলে সবাই
তুলছে ঝড়ো বাতাস!
মদের ঠেকে মাতালেরা
হঠাৎ পেলো হুঁশ,
নেতাজি আসার খবর শুনে–
মনে সে কী খুশ!
টলতে-টলতে তারা বলে পরস্পরে,
“নেতাজি ফিরে এলেন ওরে,
আর খাবোনা মদ,
নেতাজির চেয়ে বড় নেশা–
আর কী হতে পারে!
সবাই মিলে একটুখানি
করতো অনুভব!”
জুয়ার বোর্ডে যারা ছিল–
জুয়ার বোর্ডকে উল্টে–
লাথি দিয়ে বেরিয়ে পড়ে
নেতাজিকে দেখতে!
বলছে ওরা চারিদিকে—
সবচে’ বড় জুয়া জিতে
গেলাম আজ সবাই,
ওরে, নেতাজি তো ফিরে এলেন–
এর চে’ বড় জুয়াতে জিৎ
আর কী আছে তাই!
রেডিও, টিভির কর্মী সবাই–
কাজ ফেলে সব বেরিয়ে আসে,
নেতাজি এলেন দেশে ফিরে,
এটা নিয়ে প্রয়োজন নেই
কোনো খবর পড়া,
বিশ্বে শুধু একটিই নাম–
রেডিও, টিভি দিয়ে লাগেনা
কোনো প্রচার করা,
নেতাজি ফিরে এলেন দেশে,
তাই, প্রয়োজন নেই এটা নিয়ে
কোনো খবর পড়া!
কে যেন একজন বললো
শত কোটির ভিড়ে,
নেতাজির আজ বয়স কত,
বলতে পারিস কি রে?
পাশে থাকা কে একজন
চড় লাগালো তাকে তখন,
ভিড়ের মাঝামাঝি:–
জানিস না তুই — মূর্খ পাগল,
বয়স যাঁকে ছুঁইতে পারেনা
তিনিই নেতাজি!
সবার মুখে একটি কথা–
নেতাজি তো ফিরে এলেন,
আর কী চিন্তা ভাই,
কিসের মামলা মোকদ্দমা,
সবাই সকল দ্বন্দ্ব ফেলে
এবার মিলে যাই,
এবার — সকল ধর্ম, সকল জাতি,
ধনী গরীব, বামুন, কায়েত, মুচি, তাঁতি,
শুধু ভারতবাসী বলে
এক পরিচয় পাবে!
বাড়ির মা বউরা বলে–
নেতাজি এলো, ভাত রেঁধে দে,
কত বছর খায় নি বাছা,
আজ, পেট ভরে ভাত খাবে!
———————————-
🌷
( রচনা: 2021, 01:43 AM, গভীর রাত, 14 মার্চ, ও পরে ঘুমের পর সকালে উঠিয়া মাঝে কিছু জুড়িলাম ও পুরোটা কয়েকবার দেখিয়া লইলাম, ও পরে আরো দেখিলাম বারবার! কয়েক বছর নেতাজিকে নিয়ে লেখার চেষ্টা মাঝে-মাঝে হয়েছে, কিন্তু ঘটনাক্রমে এখন এইভাবে চলে এলো লেখাটা, দেখলাম প্রকাশ করার যোগ্য হতে পারে, তাই প্রকাশ করলাম, পাঠক-পাঠিকার মন জয় করলে শ্রম সার্থক! কবিতাটিতে কোনো চিত্রকল্প বা বিশেষ ধরণের আধুনিক অন্তর্মুখী প্রকরণ দেওয়া হয়নি, খুব সরল নিয়মে ছন্দ ও অন্তমিলের বিশেষ ধারায় কবিতাটিকে লেখা হয়েছে সকলের জন্য! Ridendick Mitro )
——
——
বিঃদ্রঃ:- ঋদেনদিক মিত্রো (Ridendick Mitro), পেশায় ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় কবি-ঔপন্যাসিক-গীতিকার-কলামিষ্ট (পৃথকভাবে দুটি ভাষায়, অনুবাদ নয়), ভারত!
— সম্পাদক