উৎসবের জঞ্জাল যেন পরিবেশ দূষণের কারণ না হয়
বটু কৃষ্ণ হালদার
উৎসব সম্পর্কে বিশ্ব কবি রবি ঠাকুরের ভাষায় “মানুষ উৎসব করে, মানুষ যেদিন আপনার মনুষ্যত্ব শক্তি বিশেষ ভাবে স্মরণ করে, বিশেষ ভাবে উপলব্ধি করে সেইদিন. প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দিন একাকী, কিন্তু উৎসব এর দিনে বৃহৎ মানুষ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একাত্ম হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তির অনুভব করিয়া মহৎ “
উৎসব বলতে মূলত আনন্দময় অনুষ্ঠান কে বোঝায়।এর মধ্যে দিয়ে ব্যাক্তি বিশেষ কারো একার নয় সবার আনন্দ প্রকাশ পায়।ঋতু বৈচিত্র্য ময়,আত্ম প্রকাশের রঙ্গ মঞ্চে ভারত বর্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, ও সংস্কৃতিক উৎসব পালিত হয়।এই উৎসব জীবনের ছন্দ পতন,প্রতিদিনের একাকীত্বতা,যবনিকা,আত্মার দিগন্ত প্রসারের চলমান যান।উৎসবের মধ্যে দিয়ে সামাজিক সমন্বয় এর বিকাশ ঘটে।মানুষ মানুষের সম্প্রীতির মেল বন্ধন ঘটে।প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল উৎসব।
বিশ্বের কাছে ভারতবর্ষের সর্ব ধর্ম সমন্বয়ক দেশ হিসাবে পরিচিত।তাই বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উৎসব লেগে থাকে ভারতে।কখনও কখনও এই উৎসব এর সীমানা ছাড়িয়ে প্রভাব ফেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।জাত,ধর্ম নির্বিশেষে মেতে ওঠে তেমনি এক বড় উৎসব হল দুর্গাপূজা। এই পূজাকে ঘিরে সমগ্র বাঙালি হিন্দু জাতির সংস্কৃতিমনস্ক মনোভাব,আবেগ সম্পূর্ন রূপে প্রকাশ পায়। বছরের এই কটা দিন উৎসবের রেশ কে ঘিরে উন্মাদনার তীব্র মাত্রা ছড়িয়ে যায়।আর সেই আনন্দ অন্য কারো দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক ক্ষেত্রে।তবে মাথায় রাখতে হবে,আপনার আনন্দ উচ্ছ্বাস আবেগ যেন অন্যের দুঃখের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।
এই বিশাল আয়তন দেশে উৎসব পালন করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে। একটি উৎসব পালন করতে যেমন বহু অর্থ ব্যয় হয় তেমন শ্রম। রঙিন আলোর রোশনাই তে ডালা সাজানো নৈবেদ্য ছুঁতে পারেনা দারিদ্রতা।কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করে উৎসবের আয়োজন করা হয় তেমনই পূজার শেষে উচ্ছিষ্ট, আবর্জনা জেনে শুনে নিক্ষেপ করা হয়,লোকালয়ে,নয় তো গঙ্গার জলে।আবার ধর্মীয়,আচার,অনুষ্ঠান, সৃজনশীলতা, সংযমের বেড়াজাল ভেঙে দিয়ে নেশাতে আসক্ত হয়ে নানাবিধ অসামাজিক,নিয়ম বিরোধী,কার্য কলাপ দিনে দিনে বেড়ে চলছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়,ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে ঘিরে এমন অসামাজিকতা,অশালীনতা সমাজের পক্ষে কিন্তু অত্যান্ত ভয়াবহ ও ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে।যুব সমাজের লাগাম ছাড়া উদ্দীপনা তে প্রাণ হানী ঘটছে নিজেদের এবং সমাজের অনেকের।উৎসব একই সঙ্গে জল দূষণ,সামাজিক দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।উৎসব বহু মায়েদের কোল খালি করছে, বহু পরিবারের চোখের জলের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সামাজিক জীব হিসেবে পরিবেশকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের।সর্বক্ষেত্রে পরিবেশ যদি দূষিত হয়, তাতে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীব কুল,আমাদের ভবিষ্যত। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে হুংকার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।সরকার কড়া হতে পদক্ষেপ নিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ বর্জন থেকে ব্যহত করতে পারে নি যা কিনা দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। শুধু সরকার নয় সামাজিকভাবে প্লাস্টিককে বর্জন করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের।প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান চালিয়েও বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে বড় বড় উৎসবে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি মাত্রায় হচ্ছে।এসব ক্ষেত্রে বিশেষ নজর-দেওয়া দরকার।শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, যুব সমাজকেও সমাজ বা পরিবেশ বাঁচানোর দায়িত্ব কাধে নিতে হবে।আবার
যেখানে সেখানে পান,গুটখার পিক ফেলে বদলে দেয় সৌন্দর্য এর মানচিত্র।
মানব শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল লিভার।লিভারকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব আমাদের। লিভার পরিচর্যার অভাবে সৃষ্ট হয় নানান মারণ ব্যাধি। লিভারের কোন সমস্যা হলেই তৎক্ষণাৎ আমরা ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে থাকি। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশের লিভার নষ্ট হলে, তাকে কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে?এই মহান দায়িত্ব তো আমাদের কাঁধের উপরে থাকে।
মনে রাখতে হবে উৎসব হল অনাবিল সুখের আনন্দ।এতে সামাজিক দূষণ কিংবা কারো চোখে জল কাম্য নয়।তবুও উৎসবের আনন্দে
আমরা সবাই সামাজিক কিংবা পরিবেশ দূষণ দূষণ খেলায় মেতে উঠি।উৎসবের জঞ্জাল কে যত্র,তত্র নিক্ষেপ না করে,কোথায় ফেললে পরিবেশ দূষণ হবে না তার পরিকল্পনা আগে থেকেই গ্রহণ করা উচিত সরকার এবং জনগণের।
একটু ভেবে দেখার অনুরোধ জানাই,অচিরেই বয়ে আনছি মৃত্যুর পরোয়ানা কিংবা নিজেদের কফিনের গর্ত আমরা নিজেরাই খনন করে চলেছি।জানিনা এর শেষ কোথায়।আমরা নিজেরাই যদি সচেতন না হই তবে এ পৃথিবী যে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ পরিবেশের চোখের জল জিবকুল ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ,এটা যেন আমরা কোন মতে ভুলে না যাই।
বটু কৃষ্ণ হালদার,