Spread the love

শেষ পৌষের বেলা
সৈয়দ খুকুরানী
শেষ পৌষের ঝিকিমিকি বেলার রোদ্দুর টা ,বডড নরম আর মিষ্টি।কার না প্রিয়।এ সময়টা তেমন ই প্রিয় আমার গাঁয়ের মানুষ দের।
যারা নালায় খালায় পড়ে থাকে শীতে তাদের কি কষ্ট আমি নিজে দেখেছি।
কিছু মানুষ লেপের তলায় আরামে ঘুম যায় ,আর পাঁচটা মানুষ একটা ছেঁড়া কাঁথা নিয়ে টানাটানি করে। তাদের বুক দুরদুর করে, শীতে কুকড়ি হয়ে শুয়ে থাকে ।
পুকুর পাড়ের ওপারে এখনো যে চালা ঘর গুলি আছে , শীতের রাত্তিরে যখন শনশন করে হাওয়া বয় ,তীরপলে দু এক ফোঁটা বৃষ্টি রং ছাট এসে পড়ে , ছোটো বাচ্চা রা মায়ের গা লেপ্টে শোয়। আমি যেন দেখতে পায় ,আমি অনুভব করি ওদের সরু সরু হাতের লোম খাড়া হয়ে ওঠে। ওদের গায়ে কাঁটা দেয়।
তবুও আমার গাঁয়ের লোকেরা ভালো বাসে পৌষ কে।
গাঁয়ের মানুষেরা পৌষ মাসে কুড়িয়ে আনে মাঠ থেকে মুঠি মুঠি সোনা।আজ ওদের চোখ দুটো কি উজ্জ্বল।
আমার ভালো লাগে। হৃদয় জুড়িয়ে যায় এই ভালো লাগাটা।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


যে ছেলেটি পুকুরে হাঁসের গুগলি তুলতো ,সে এখনো ন্যাঙগটা । কিন্তু তার হাতে এসময় গুড় বাদামের পাটালী।সরবতী আলু । মুখে অকারণে হাসি।দেখে বুক ভরে যায় আমার।
শমভূ বায়েন সমিতি থেকে বৌয়ের জন্য কিনে আনে করার মাজের মতো লাল পেড়ে শাড়ি। শীতে ওদের পা ফেটে রক্ত বের হয়। সেখানে ওরা ছিটিয়ে দেয় ধূলো। ওরা জানে না টিটেনাস কি?
সেদিন ভূতনাথ বাগদীর বৌ এনেছিল চাল লবানের বাটি আমার জন্য।কলা ,নারকোল মেশানো।বললো , আমার ছেমুতে একটু মুখে দিন।
আমি মুখে দিতেই ওর কি আনন্দ।
মানুষ আমার কাছে দেবতা।তায় কোনো বিভেদ আমাকে ভাবিয়ে তোলে না।
খুব ভালো লাগে এ সময় খেজুর গুড় এর সুবাস। খেজুর গুড় দিয়ে ওরা পায়েস তৈরি করে। ছোটো বেলায় এসময় হর রাতে লোটো নয়তো আলকাপের গান।ইস এতে মে কি সূখ ছিল।
এসময় আমায় টানতো ফুলবাগানের বুনো মেয়েরা।ওরা উরুলীর গাদা থেকে ধান ঝাড়তো। চল্লিশ শের এ এক শের ধান।ঐ অল্পতেই ওরা সূখী ছিল।সুশানী সন্ধ্যা আমায় বলতো ,এ মাস টা চলে গেলেই মে কার সেই।এই মাসটা ওরা যেতে দিতে চায়না।এ সব আমার ছোটো বেলা কার ছবি।
দিনান্তে রং শেষে যখন সূর্য ডুবে যেত , ওরা ফিরে যেত বাড়ি।ধূপ ধূনো দিতো ঘরে ,শাখ বাজাতো, আমি এখান থেকে শুনতে পেতাম সে মিষ্টি আওয়াজ ।বড়ো মিষ্টি।আজ ও যেন শুনতে পাই সে আওয়াজ।
আমি দেখতে পাইনা ,মানুষে মানুষে কোনো ফারাক ,আমি শুধু অনুভব করি ,কটা সবুজ প্রানের রঙ্গীন ভালো বাসা।
আর শেষ পৌষের বেলা শেষের রোদের মতো নরম , মিষ্টি, অল্প একটু সূখ ,একটু হাসি,আর একটু ভালোলাগা।।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *