মৃত্যু
———————
— ঋদেনদিক মিত্রো
চ’লে যাওয়া, হ’লে হাওয়া, মৃত্যু যে তাই,
কেউ বা কবরে গেলে, কেউ পুড়ে ছাই,
মৃত্যু যে তাই !
এই এতো কথা, কাজ, হাসি, কান্না,
গল্প, আড্ডা, পড়াশোনা, রান্না,
অজানাকে জানবার জন্য তৃষা,
ভোর হতে পরপর নেমে আসে নিশা,
হঠাৎ কখনো বলো — হ্যালো, গুড বাই,
মৃত্যু যে তাই !
কেউ বা রাতের আগে চলে যায় বেশ,
ভালোলাগে না তো তার চোখে দেখা দেশ,
যে-দেশকে দেখে নি — সেই দিকে ধায়—
হঠাৎ কখনো বা দুপুর বেলায়,
কত কিছু ফেলে যাওয়া– হিসাব যে নাই,
মৃত্যু যে তাই !
অসীমের থেকে নামে জীবন অসীম,
ঘুমকেও নিয়ে আসে সঙ্গে গহীন,
তারপর জাগা আর ঘুমানোর খেলা,
এই ভাবে কেটে যায় কত গুলি বেলা,
গাঢ় অমাবস্যায় ঝিঁঝি পোকা-ডাক,
অমাবস্যার পরে চাঁদ-তারা রাত,
কত জিজ্ঞাসা নিয়ে একা চলাফেরা,
কত স্মৃতি তকতকে, আর কিছু ছেঁড়া,
সবার ওপরে যার নাম টা খোদাই,
মৃত্যু যে তাই !
কার সাথে কার রশি বাঁধা থাকে চুপ,
বাহিরে যায় না দেখা তার কোনো রূপ,
সেই শুধু কেঁদে যায়,
কত কিছু ভেবে যায় —
নিজের নীরবে সে হয় যে ভাবুক!
সকলেই সেই দিকে এক দিন যাই?
মৃত্যু যে তাই !
কেন এই আসা আর কেন এই যাওয়া!
চার দেওয়ালের মাঝে কত চাওয়া পাওয়া,
প্রাণ মানে কিছু নয় — বুকের হাওয়া!
সে-হাওয়ায় এতো কি আছে ক্ষমতাই!
মৃত্যু যে তাই !
মৃত্যু মানেই নাকি সকল আঁধার,
চোখেতে লাগে না আলো কোনো ভাবে আর,
আলো আর আঁধারের অদলবদল,
এটাই কি জীবন ও মৃত্যুর ফল?
আবার কি জীবনের উৎসে হারাই?
মৃত্যু যে তাই !
কে বা কেন দিলে প্রাণ, দিলে মৃত্যু,
হে মহা আবিষ্কারক, শুনছো কি কিছু,
তোমার উপস্থিতি হ’লো কোত্থেকে?
তুমি পেলে অমরতা কোন পথে যে,
আস্তিক বলে তুমি ঈশ্বর, আর —
নাস্তিক বলে তুমি মহাবিস্তার,
আস্তিক নাস্তিক মিলেছে যেথাই,
মৃত্যু যে তাই !
সব কিছু তুচ্ছ —- এ প্রাণ-বায়ু শ্বাস,
ইচ্ছা অনিচ্ছা আর অভিলাষ,
তুচ্ছ শুধুই নয় — একটুকু হাসি,
একটুকু কান্না ব’সে পাশাপাশি,
মাকড়সা-জাল দেখে কিছু ভেবে ফেলা,
পাখপাখি পশুদের সাথে নিয়ে খেলা,
কত কী রকম সব তৃপ্তির বোধ,
শেষ শ্বাস পারে না তো
এসবের সাথে কেটে দিতে সংযোগ,
এই সব অনুভব অদেখা- রহস্যয়
মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে চোখ মিটিমিটি করে
রইবে একাই,
মৃত্যু যে তাই !
সব কিছু “শূন্য” দেখা অদেখা,
এতো কিছু পড়াশোনা, অনুভূতি, লেখা,
কত কিছু মনোরম বিষয় শেখা,
“শূন্য” কেবল নয় — প্রাণের স্পন্দনে
এদের পাওয়াই,
“মৃত্যু ” মৃত্যু নয়,
তবু, মৃত্যু যে তাই !
শুয়ে থাকা নির্বাক লোকটিকে নিয়ে —
সারি হয়ে কারা যায় স্মশানে এগিয়ে—
রেখে আসতে,
তাই দেখি অশ্রুতে সকলের চোখ ভাসছে,
শত্রু ও মিত্র সকলের অশ্রু
ঝরাতে যে পারে,
রাত্রির মাঝে যেন রোশনাই,
মৃত্যু যে তাই !
(রচনা:- 12:33 দুপুর, 15 জুন 2020, এই লেখার কারণ টা বললে পাঠক-পাঠিকা অনেক কিছু অনুভব করবেন ! মাত্র চৌত্রিশ বছরে বলিউডের তারকা সুশান্ত সিং রাজপূত 14 জুন 2020, , গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেন, শোনা যায় এর মানসিকচাপ এএর জন্য দায়ী ! বই পড়তে খুব ভালো বাসতেন ! পুরো ঘরে ছিলো বই ভর্তি ! দুরন্ত ছাত্র, শিক্ষায় কোনো নোট বা ফাঁকি ফিয়ে পড়াশুনা পছন্দ করতেন না ! যাইহোক, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে-পড়তে ঘটনা ক্রমে সিনেমাতে সুযোগ পেয়ে সিনেমার প্রতিষ্ঠা পেলেন ! কিন্তু নানা রকম বইয়ের প্রতি প্রচুর আকর্ষণ থেকে গেলো ! অবসর পেলেই দিন রাত পড়তেন বই ! লেখক গন একজন বিরাট পাঠককে হারালেন ! এতো গভীর জ্ঞানী কোন একাকিত্বে এমন আত্মঘাতি হতে পারেন, আমরা বুঝিনা ! হয়তো কোনো দার্শনিক বন্ধু বা বান্ধবীর অভাব ছিলো তাঁর! খুব প্রাণখোলা ছিলেন তিনি ! যাইহোক, তাঁর মৃত্যু নিয়ে যখন খুব তোলপাড় চলছে সারা দেশে, কবিরা লিখছেন কবিতা, তখন এক খুব পাঠক- পরিচিত, বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত এক কবির লেখা মৃত্যু নিয়ে একটি কবিতা একজন
পোস্ট করেন একটি হোয়াটস্যাপ গ্রুপ ম্যাগাজিনে! ওই কবির ওই কবিতাটি ছন্দ ও ভাবনায় ছিলো খুব পরিপাটি, কিন্তু আমার মনে হলো, মৃত্যুর বাষ্প-খেলা উনি লেখাতে ধরতে পারেন নি, না শৈলীতে, না ভাবনায় ! তখন আমি এই কবিতাটা সাথে-সাথে লিখতে বসি ! মৃত্যুর ভিতরে যে-রহস্য এবং ভিন্ন মুখি চমৎকার জগৎ, সেটাকে তুলে ধরতে চেয়েছি ! এখানে কতটা পেরেছি সেটা হিসেব করার দায়িত্ব পাঠকের ! মৃত্যু নিয়ে এর আগেও কবিতা লিখেছি, কিন্তু এইটাই মনে হয় সে-গুলির চেয়ে সেরা!
🚩
আর একটি কথা, সুশান্ত সিং রাজপূতকে আন্তর্জাতিক মানের পাঠক হিসেবে বিবেচিত করে দেশের লেখক কুল নানা স্থানে শ্রদ্ধা সভা করলে পুস্তকের প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা জানানো হতো, কারণ তিনি ছিলেন পুস্তকপ্রেমী ! )
https://www.patrika.kabyapot.com