Spread the love

শিরোনাম:ছোট গল্প ( ভৌতিক )

🔸#অদ্ভুতুড়ে।

🔸✍️ কে দেব দাস।

ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে নানা মুনির নানা মত। ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ আজ পর্য্যন্ত ও আবিষ্কৃত হয়নি প্রাচ্য কিংবা প্রাশ্চত্যের দেশগুলোতেও। কিন্তু সবাই এক বাক্যে স্বীকার করে “evil’spirit” অপশক্তি বলে একটা অনুকম্পা বা অনুভূতি মানুষের মনের গভীরে প্রতি নিয়ত অনুভূত হয় যার ফলস্বরূপ আমরা ভূতের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করি। কিন্তু তার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা যুক্তি আমাদের জানা নেই। তাই নানা বিধ দোলা চালে আমরা দোদুল্যমান। দিগন্ত ও তার ব্যতিক্রম নয়। সবে মাএ সে কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। এর সত্যতা জানার জন্য ওর যথেষ্ট কৌতুহল। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে তার জানা নেই।
সেদিন ছিল ঘোড় দুশ্চিন্তার রাত। চারিদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার । কোথাও কিছু দেখবার উপায় ছিলনা। সে কালে কোথাও আলোর ব্যবস্থা ছিলনা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তাই রাত বিরাতে লোকে সাধারঃণত ঘর থেকে বের হতো না। শেষে ভূত প্রেত আশ্রয় করে বসে। শুধু মাত্র সন্ধ্যাবেলা লোকের বাড়িতে প্রদীপ কিংবা লন্ঠনের আলো জ্বলতো।

গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ যামিনী বাবুর কাশতে কাশতে মাঝরাতে প্রায়ঃশয় ঘুম ভেংগে পড়তো। ঘুম থেকে উঠে আপন মনে কিছু একটা বিড় বিড় করতো আর সরলা দেবীকে বলতো হুঁকোটা জ্বালিয়ে দিতে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর অজোড়ে ঘুমাতো সরলা দেবী। মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গালে ভীষণ বিরক্তি বোধ করতো। কিন্তু উপায় কি। অগত্যা অনিচ্ছা সত্ত্বে ও হুঁকোটা জ্বালিয়ে দিতে হতো সরলা দেবীকে। তাই সরলা দেবী যামিনী বাবু কে বহুবার বলেছিল ঐ বদ অভ্যাস টা ছেড়ে দিতে। কিন্তু না উপায় নেই ওটা যে যামিনী বাবুর বার্ধক্যের সঙ্গী। হুঁকোতে টান না দিলে যামিনী বাবু যে কিছুই মনে করতে পারতো না বর্তমান কিংবা অতীত।

সে দিন যামিনী বাবু রাতের শেষ প্রহরে বাড়ি ফিরছিলেন। কারণ বিনয়ের সদ্যোজাত মৃত সন্তানের পরলৌকিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন করতে করতে গোটা দিন গড়িয়ে গিয়েছিল। সকালের দিকটা গাঁয়ের প্রাধানের উপস্থিতিতে বিনয়ের মৃত সদ্যজাতকে সমাধিস্থ করেছিল গাঁয়ের অনতি দূরে নদীর ধারে। যামিনী বাবু যখন বিনয়কে বলছিল এবার তোমার ছেলেকে নিয়ে চল আর দেরি করা যাবেনা তখন বিনয়ের স্ত্রী যামিনী বাবু আর প্রধানের পা জড়িয়ে ধরে ঢূঁকড়ে ঢূঁকড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল আমার সন্তানকে নিয়ে যেওনা তোমরা। ওর কিচ্ছুটি হয়নি, ও আমার কাছে থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নিরুপায়, মৃতাকে যে সমাধিস্থ করতেই হবে।
অতঃপর পরলৌকিক ক্রিয়দি সম্পন্ন করে যামিনী বাবু, বিনয় আর গ্রামের প্রধান কে নিয়ে থানায় ডায়েরি করাতে রওনা হলেন। থানা ও তো গ্রাম থেকে প্রায় দশ মাইল দূরের আধা শহরে। অবশেষে থানায় ডায়েরি করে যথারীতি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।

যামিনী বাবু বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাতের প্রায় শেষ প্রহর হয়ে গিয়েছিল। প্রধান আর বিনয় যে যার বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু যামিনী বাবু কে যে আরও অনেকটা পথ একা একা যেতে হবে ঐ নদীর ধার ধরে ধান ক্ষেতের আল দিয়েই। বর্ষার ভরা নদী শাকো ছাড়া নদী পারাপারের আর কোনও বিকল্প ছিলনা। যামিনী বাবু যখন নদী দিয়ে শাঁকো পাড় হচ্ছিলেন তখন নিজের অজান্তেই মনের গভীরে বিনয়ের সদ্যোজাতর কথা মনে পড়ে গেল। ওকে যে এখানেই নদীর ধারে সকালে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। আর তাই ভেবে ভেবে মনের গভীরে একটা ভীতি ও আসছিল। চারিদিকে ঘূঁট ঘূঁটে অন্ধকার, শুন শাণ রাস্তা, নিঃশব্দ রাত্রি, মাঝে মধ্যে পেঁচার ডাক কানে আসছিল।ঊনাকে যে ঐ অন্ধকার রাতে ধানক্ষেতের আল ধরেই এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। তাই নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। দূরু দূরু বুকে গৃহাভিমুখে এগোচ্ছিলেন।

বাড়ির কাছে পৌঁছতেই হঠাৎ লক্ষ্য করলো পুকুর পাড় দিয়ে একটা ইয়া বড় কালো মোষ বড় বড় সিং নিয়ে যেন তাকে তাড়া করতে আসছে। ভয়ে সযোড়ে হাতের লাঠি টা উঁচু করে ঘোরাতেই সেই মোষটা কোথায় যেন বিলিন হয়ে গেল। কিন্তু যামিনী বাবুর মনের ভিতর টা আতঙ্কে ধড়ফড়িয়ে উঠেছিল। মুহুর্তের মধ্যে শরীরের লোমকূপ খাড়া হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় কোন ও মতে বাড়ি ফিরে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।

বাড়িতে ঢুকে সরলা দেবীকে ঢাকলেন দরজা খুলে দেবার জন্য। সরলা দেবী দরজা খুলে এলো চুলে পুকুর পাড়ে গিয়ে মাথায় জল ছিটিয়ে ঈশ্বরের নাম করতে করতে ঘরে ঢুকলেন এবং যামিনী বাবু র সাথে কিছু কথোপকথন হতেই যামিনী বাবু লক্ষ্য করলেন সরলা দেবী যেন কিছুটা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। নানা ধরনের অঙ্গ, ভঙ্গি করছেন। যামিনী বাবু সরলার মধ্যে কিছু একটা ব্যতিক্রম লক্ষ্য করছিলেন। তাই সরলা দেবী কে সংযত থাকতে শাশিয়ে উঠলেন। না, কিন্তু না, সরলা দেবী যে তার কিছুই শুনছেনা। কখন ও হাসছে তো কখনও থুথু ফেলছে। যামিনী বাবু সজোড়ে একটা চর কষালেন বদান্যতা থামাবার জন্য কিংবা অন্যমনস্ক করাবার জন্য। কিন্তু না কোনও হেলদোল নেই সরলা দেবীর। যামিনী বাবু বুঝতে পেরেছিল যে ওকে ভূতে ধরেছে। এক্ষুণি ওঝা ডাকতে হবে।

ওদিকে দিগন্ত সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই সরলা দেবীর ঘরে কোলাহল শুনতে পাচ্ছিল। ও বুঝতে পেরেছিল সরলা দেবীর ঘরে কিছু একটা হয়েছে। ছূটে গিয়ে দেখে সরলা দেবীর ঘরে অনেক লোকজন ভীড় করছে। ২/৩ জন সরলা দেবীকে ধরে রাখতে পারছেনা। ঊনার গায়ে যে যথেষ্ট শক্তি। দিগন্ত ভেবে পায়না হঠাৎ সরলা দেবীর কি এমন হলো যে ঊনার গায়ে এত শক্তি এলো কোথা থেকে। কাল রাতে ও তো একসাথে খাওয়া দাওয়া করেছে। কিছু ব্যতিক্রম তো লক্ষ্য করা যায় নি তখন। তাহলে হঠাৎ এই পরিবর্তন কি করে সম্ভব।

ততক্ষণে ওঝা এসে হাজির। ঊনি, ঊণার মত কাজ করে যাচ্ছিলেন। একটা সময় দেখা গেল ঊনি শলার ঝাঁটা দিয়ে সরলা দেবীকে প্রচন্ড মারছিলেন। কোথাও কোথাও ঊনার গায়ে থেকে রক্ত ঝড়ছিল। তাই দেখে সবাই বলছিল এবার ছেড়ে দিন। কিন্তু না ওঝা তার মারের গতি আরও বাড়িয়ে চলছিল। একটা সময় সরলা দেবীকে বলতে শুনা গেল আমায় ছেড়ে দে, আমায় ছেড়ে দে, আমি আর থাকবোনা, আমাকে যেতে দে, ইত্যাদি ইত্যাদি। ওদিকে ওঝা বলে যাচ্ছিল তুই যে চলে যাবি তার প্রমাণ কি। প্রমান দিয়ে যা।নূতবা বোতলে ভরে দেবো। আমাকে প্রমাণ দিয়ে যা। নূতবা আর ও মেরে শেষ করে ফেলবো । কিছুক্ষনের মধ্যে দেখা গেল সরলা দেবী হঠাৎ দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পালাবার চেষ্টা করলো। বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে ধড়াস করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। সবাই মিলে সরলা দেবীকে তুলে ঘরে নিয়ে এলো আর এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়ানো হলো। ক্লান্তি বশতঃ সরলা দেবী কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর বিকেল হতে সরলা দেবীর ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে ঘর ভর্তি লোকজন। হঠাৎ বলে বসলেন ঘরে এত লোকজন কেন? আমি এত দুর্বল অনুভব করছি কেন? সবাই মুখে কুলুপ এঁটে ছিল। বিকেল পর্য্যন্ত সরলা দেবী সমস্ত ঘটনাবলি জানতে পারলো আর ভীত হলো।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো আমরা যদি ভূত প্রেতে বিশ্বাস না করি তাহলে উপরিউক্ত ঘটনাবলী কে কি বলে আক্ষা দেওয়া যাবে তা দিগন্তের বোধগম্য নয়। যুক্তি তর্ক অনেক হতে পারে। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এটা বাস্তব অভিজ্ঞতা যা কিনা দিগন্ত তার নিজের চোখে দেখেছিল। গ্রামীণ জীবনে এই ধরণের ঘটনাবলী আকছাড় ঘটে থাকে যা কিনা যারা সচক্ষে দেখেনি তাদের বিশ্বাস হবার নয়। তারা শুধু কল্পনার অভিব্যক্তি তাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে। তাই দিগন্ত তার সচক্ষে যা দেখেছিল তার ইতিহাস আজ ও অজানা।

=সমাপ্ত=

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Contact for Advertisers, Readers and Writers : email: info@kabyapot.com Whatsapp: 8240042145