Spread the love

বঞ্চিত,শোষিত শ্রেণীর কাছে আজও জীবিত চে গুয়েভারা

বটু কৃষ্ণ হালদার

যখনই সমাজের বুকে নিরীহ শ্রেণীর উপর অত্যাচারের খড়্গ কৃপান নেমে এসেছে তখন কেউ না কেউ প্রতিবাদী বিদ্রোহের মশাল জ্বালিয়ে অত্যাচারিত বঞ্চিত শ্রেণীর স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে এসেছে।অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ করার সাহস যুগিয়েছেন ।বঞ্চিত অবহেলিত অত্যাচারিত শ্রেণীর অধিকার পাইয়ে দেওয়ার লড়াই করতে গিয়ে নৃশংসভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন।তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন চে গুয়েভারা। কালের নিয়মে খাতা-কলমে তিনি মৃত তবে মৃত্যুর এত বছর পরে আজও বিপ্লবীদের বেঁচে থাকার মহামন্ত্র তিনি। তার আদর্শকে বুকে আঁকড়ে ধরে বিপ্লবীরা বারবার এর বিরুদ্ধে  প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন।

গুয়েভারা তুমি দীর্ঘজীবি হও/তোমার মৃত্যু আমায় অপরাধী করে দেয়”। এভাবেই চে গুয়েভারা যুগ যুগ ধরে বিপ্লবী মন্ত্রের মূল আদর্শ হয়ে উঠেছে যুব সমাজের চোখে।তাঁর বৈপ্লবিক আদর্শকে বুকে আঁকড়ে ধরে বিপ্লবীরা অক্সিজেন খুঁজে পায়।চে গুয়েভারা একজন আর্জেন্টিনীয় মার্কসবাদী, বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব। তার প্রকৃত নাম ছিল এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না ।তবে তিনি সারা বিশ্ব লা চে বা কেবলমাত্র চে নামেই পরিচিত। মৃত্যুর পর তার শৈল্পিক মুখচিত্রটি একটি সর্বজনীন প্রতিসাংস্কৃতিক প্রতীক এবং এক জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিশ্বপ্রতীকে পরিণত হয়।১৯২৮ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার সান্তা ফে শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পুরো নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সের্না।

চে গুয়েভারা ছিলেন কিউবা বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর ৫০ বছর পরেও টাইম পত্রিকার বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে তাঁর নাম।

পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোটবেলা থেকেই তার চরিত্রে অস্থির চপলতা দেখে তার বাবা বুঝতে পেরেছিলেন যে আইরিশ বিদ্রোহের রক্ত তার এই ছেলের ধমনীতে বইছে। খুব শৈশব থেকেই সমাজের বঞ্চিত, অসহায়, দরিদ্রদের প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ তার ভেতর তৈরি হতে থাকে। একটি সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে খুব অল্প বয়সেই তিনি রাজনীতি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করেন। তার বাবা ছিলেন স্পেনের গৃহযুদ্ধে প্রজাতন্ত্রবাদীদের একজন গোড়া সমর্থক, সেই সংঘর্ষের সৈনিকদের তিনি প্রায়ই বাড়িতে থাকতে দিতেন।

হাপানিতে সারা জীবন ভোগা সত্ত্বেও তিনি দারুন মল্যবিদ ছিলেন।তাঁর খেলধুলার পছন্দ তালিকায় ছিল সাঁতার, ফুটবল,গলফ, শুটিং। চে গুয়েভারা সাইক্লিংয়ের একজন অক্লান্ত খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি রাগবি ইউনিয়নের একজন অতি আগ্রহী সদস্য ছিলেন এবং বুয়েনস এয়ারস বিশ্ববিদ্যালয় রাগবি দলের হয়ে খেলেছেনও। রাগবি খেলার ক্ষিপ্রতার জন্য তাকে “ফিউজার” নামে ডাকা হত। তার বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা তাকে ডাকত চানচো বলে, কারণ তিনি অনিয়মিত স্নান করতেন এবং সপ্তাহে একবার মাত্র পোশাক পাল্টাতেন।

১২ বছর বয়সে দাবা খেলা শেখেন তার বাবার কাছে এবং স্থানীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন।বয়সন্ধি থেকে শুরু করে সারাটা জীবন তিনি কবিতার প্রতি আসক্ত ছিলেন বিশেষ করে পাবলো নেরুদা, জন কিটস, এন্টনিও মারকাদো, ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা, গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল এবং ওয়াল্ট হুইটম্যান, তিনি ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারতেন। তিঁনি স্মৃতি থেকে আবৃতি করতে পারতেন রুডিয়ার্ড কিপলিং-এর “ইফ” কবিতা এবং জোসে হার্নান্দেজ-এর “Martin Fierro” কবিতা। গুয়েভারা পরিবারে ছিল ৩০০০০এরও বেশি বই যা গুয়েভারাকে করে তোলে একজন জ্ঞানপিপাসু ও অক্লান্ত পাঠক।যার মধ্যে কার্ল মার্ক্স, উইলিয়াম ফক্‌নার, এমিলিও সলগারির বই। পাশাপাশি জওহরলাল নেহেরু, আলবেয়ার কামু, লেনিন, রবার্ট ফ্রস্ট-এর বইও তিনি পড়তেন।

যুবক বয়সে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছায় ভর্তি হন মেডিসিন বিষয়ে। ভালোই চলছিল তার ডাক্তারি পড়াশোনা, ব্যক্তিগত জীবন আর প্রেম।বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎ মোটরসাইকেলে বের হলেন নিজ ভূখণ্ড ভ্রমণে। এ ভ্রমণ আর্নেস্তোকে বঞ্চিত মানুষদের ‘চে’ বা ‘বন্ধু’তে পরিণত করে।

দীর্ঘ মোটরসাইকেল ভ্রমণে আর্নেস্তো একদিকে যেমন দেখেন নিম্নশ্রেণীর মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, বঞ্চনা, নিপীড়ন; আর অন্যদিকে দেখেন শাসকের দুর্বৃত্তায়ন, শোষণ, অত্যাচার। এ বোধ থেকেই শুরু করেন মানব মুক্তির লড়াই। ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি, আনন্দ, সচ্ছলতা, নাম-যশের মোহকে অবজ্ঞায় দূরে ঠেলে রাস্তায় নামেন সামগ্রিক ও যৌথ সমাজে শান্তিতে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। এ শুধু রক্তের নয়, ভালোবাসারও লড়াই; না হলে বিশ্বের কোটি মানুষকে ভালোবেসে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে নামার সাহস সবার হয় না।

এক সময় তিনি রাষ্ট্রপতি জাকোবো আরবেনজ গুজমানের নেতৃত্বাধীন গুয়াতেমালার সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৪ সালে সিআইএ-এর ষড়যন্ত্রে গুজমানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে চে’র বৈপ্লবিক আদর্শ ও চেতনা আরো বদ্ধমূল হয়। পরবর্তীকালে মেক্সিকো সিটিতে বসবাসের সময় তার সঙ্গে রাউল ও ফিদেল কাস্ত্রোর আলাপ হয়। চে তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন। মার্কিন-মদদপুষ্ট কিউবান একনায়ক ফুলজেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করার জন্য সমুদ্রপথে কিউবায় প্রবেশ করেন। খুব অল্পদিনেই চে ফিদেলের বিপ্লবী সংঘের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড পদে তার পদোন্নতি হয় এবং বাতিস্তা সরকারকে উত্খাত করার লক্ষ্যে দুই বছর ধরে চলা গেরিলা সংগ্রামের সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কিউবার বিপ্লবের পর চে নতুন সরকারে একাধিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিপ্লবী আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্তদের আপিল পুনর্বিবেচনা ও তোপচিদল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রদান, শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রী হিসেবে খামার সংস্কার আইন প্রবর্তন, কিউবার জাতীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনীর ইনস্ট্রাকশনাল ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন, এবং কিউবান সমাজতন্ত্রের প্রচারে বিশ্বপর্যটন। এই পদাধিকারের কল্যাণে তিনি মিলিশিয়া বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের সুযোগ পান।ফলত এই বাহিনী পিগস উপসাগর আক্রমণ করে তা পুনর্দখলে সক্ষম হয়। কিউবায় সোভিয়েত পরমাণু ব্যালিস্টিক মিসাইল আনার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।চে ছিলেন এক বিশিষ্ট লেখক ও ডায়েরি-লেখক। গেরিলা যুদ্ধের উপর তিনি একটি প্রভাবশালী ম্যানুয়েল রচনা করেন। তরুণ বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোটরসাইকেলে ভ্রমণের স্মৃতিকথাটিও তার অত্যন্ত জনপ্রিয় রচনা। বৃহত্তর বিপ্লবে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৬৫ সালে কিউবা ত্যাগ করেন। প্রথমে কঙ্গো-কিনসহাসায় তার বিপ্লব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি বলিভিয়ায় বিপ্লবে অংশ নেন।এখানেই সিআইএ-মদতপুষ্ট বলিভীয় সেনাদের হাতে বন্দী ও নিহত হন চে গুয়েভারা।

৮ অক্টোবর, ১৯৬৭ ।ভোরবেলা ।বলিভিয়ার দুর্গম ও সংকীর্ণ ইউরো গিরিখাতের চারিদিকে বারুদের গন্ধ । হ্যান্ড মেশিনগান থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসছে গুলি। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে মানুষের আর্তনাদের আওয়াজ।বলিভিয় রেঞ্জারদের এক ইনফর্মার দুর্গম ও সংকীর্ণ ইউরো গিরিখাতের মধ্যে সেই মানুষটির গোপন গেরিলা ক্যাম্পের হদিশ পেয়েছিল।আর্জেন্টিনার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কিউবাকে স্বাধীন করতে রক্ত ঝরিয়েছেন ।এবার তাঁর লক্ষ্য বলিভিয়ার স্বাধীনতা। ইউরো গিরিখাতের মধ্যে মাসের পর মাস পড়ে রয়েছেন। আমেরিকা ক্ষিপ্ত হায়নার মতন তাঁকে বছরের পর বছর খুঁজে বেড়াচ্ছে।সূর্যোদয়ের আগেই জঙ্গল ঘিরে ফেলেছিল আমেরিকার থেকে প্রশিক্ষিত দুই ব্যাটেলিয়ান বলিভিয় সেনা। সংখ্যায় তারা ১৮০০। যাদের নেতৃত্বে CIA ও মার্কিন এলিট ফোর্স গ্রীন ব্যারেট ।বৃত্ত ছোট করতে করতে ক্রমশ এগিয়ে আসছে তারা । 

বিপ্লবীর মাথার চুলে জট ধরেছে ।সারা গায়ে ধুলো । পোশাক শতচ্ছিন্ন ।লেগে রয়েছে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত। গুলিতে এফোঁড় ওফোঁড় হয়েছে তাঁর দুটি পা।সঙ্গী রাইফেলটিও ছিটকে ঝোপের মধ্যে হারিয়ে গেছে। একটা গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে পকেট থেকে হাভানা চুরুট বের করতে যাবেন ।এমন সময় তাঁকে ঘিরে ধরে ফেলল জনা কয়েক বলিভিয়ান সেনা।তিনি বুঝতে পারলেন পালানো অসম্ভব ।শান্তভাবে বললেন, “গুলি কোরো না।আমি চে গেভারা। মৃত চে গুয়েভারার চেয়ে জীবিত চে গুয়েভারার দাম অনেক বেশি।”

মুহূর্তের মধ্যে হাত বেঁধে ফেলা হল চে-র ।বলিভিয় সেনারা তাঁকে প্রায় চার মাইল হাঁটিয়ে নিয়ে এল লা হিগুয়েরা শহরের বাইরে এক স্কুল বাড়িতে ।শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ ।সরাসরি প্রশ্নকর্তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে একের পর এক প্রশ্ন শুনে চলেছেন। কিন্তু উত্তর দিচ্ছেন না ।মুখ খোলাতে শুরু হল অকথ্য অত্যাচার। বুটের লাথি, ছুরির খোঁচা, সিগারেটের ছ্যাঁকা কিছুই বাকি রইল না ।না মুখ খোলেননি চে।

হাত বাঁধা অবস্থাতেই বলিভিয়ান আর্মি অফিসার এসপিনোসাকে জোড়া পায়ে লাথি মেরে দূরের দেওয়ালে ফেলে দেন চে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে বলিভিয়ার রিয়ার অ্যাডমিরাল, উগার্তেচের মুখে থুতু দেন চে তাঁর সঙ্গে নোংরা ভাষায় কথা বলার জন্য।

৯ অক্টোবর ১৯৬৭।বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট রেনে ব্যরেন্টোস, সকাল দশটা নাগাদ , চে-কে হত্যা করার আদেশ দিলেন ।কিন্তু মানুষটির এমনই ক্যারিসমা কেউ রাজি হয় না এই কাজ করতে ।শেষমেষ ২৭ বছর বয়সি মারিও টেরান নামে এক বলিভিয়ান সার্জেন্টকে প্রচুর মদ খাইয়ে রাজি করানো হয় এই কাজের জন্যে । কম্যান্ডার ফেলিক্স রড্রিগেজ চে কে জানান এই কথা। একজন সেনা অফিসার চে-কে জিজ্ঞেস করেন, চে তাঁর অমরত্বের কথা চিন্তা করছেন কিনা। চোখে চোখ রেখে চে বলেছিলেন, “ না, আমি চিন্তা করছি বিপ্লবের অমরত্বের কথা”।

বেলা তখন বারোটা হয়তো। আবার ঘরে ঢুকলেন রড্রিগেজ। চে হাঁটু মুড়ে বসেছিলেন। দরজা খোলার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে মুখ তুলে তাকালেন। রড্রিগেজ, চে গেভারাকে বললেন, মৃত্যু আসন্ন। চে-র দিক থেকে সাড়া আসে না। তারপর রড্রিগেজ ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন।চে-কে হত্যার দায়িত্ব নেওয়া অফিসার সার্জেন্ট টেরান ঘরে ঢুকলেন। ঘাতকের দিকে চোখ তুলে তাকালেন চে , নিস্পৃহ দৃষ্টিতে।

“আমি জানি তুমি আমাকে মারতে এসেছো” বলে মৃদু হাসলেন।

” নাও, গুলি করো, তুমি কেবল একজন মানুষকে মারতে পারবে। তার মতাদর্শকে নয়।”

চে গেভারার ঘাতক সার্জেন্ট মারিও টেরান আর একটিও কথা না বলে M2 কারবাইনের পুরো ম্যাগাজিনটাই শেষ করে দিল।মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন চে গেভারা। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে।

দুপুর ১ টা ১০ মিনিটে বলিভিয়া সরকার চে গেভারাকে মৃত বলে ঘোষণা করল। চে গেভারার শব, এরপর লুকিয়ে রাখা হয় একটি হসপিটালের লন্ড্রির চৌবাচ্চায় মধ্যে। তার ছবি এক ফটোগ্রাফার লুকিয়ে তুলে ভাইরাল করে দেন বিশ্বে। মৃত্যুর পরও নিস্তার মেলেনি চে-র । সরকারের আদেশে, বলিভিয়ান কমান্ডাররা মৃত চে-র হাত দুটো কব্জি থেকে কেটে নিয়েছিলেন। যাতে তাঁর ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায়। এবং যাতে তাঁর বন্ধু ফিদেল কাস্ত্রোকে বোঝানো যায় চে মৃত।

তবে চে-র মৃত্যু হয়নি।আজও কিউবার সান্টাক্লারাতে চে-র সমাধিতে সারা বিশ্ব থেকে ফুল দিতে আসেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ। আজও চে গেভারার বধ্যভূমি, বলিভিয়ার স্কুল বাড়িটিকে মানুষ দেখতে যান। আজও সেই হসপিটালের লন্ড্রিটিকে বলিভিয়ার মানুষ সংরক্ষণ করে রেখেছেন। আজও লা হিগুয়েরা শহরকে পাহারা দিচ্ছে চে গেভারার সুবিশাল ব্রোঞ্জের মুর্তি। যার নিচে লেখা ” তুমিই এনেছ নতুন প্রভাত”। আমৃত্যু দিয়েগো মারাদোনার হাতে আঁকা থাকত চে-র উল্কি।

বিপ্লব কখনও বিপ্লবীর মৃত্যুর সাথে শেষ হয়ে যায় না, চে’ও তাই বেঁচে থাকবেন আজকের ও আগামীর বিপ্লবীদের মাঝে…তাই তার ব্যক্তিত্ব যেন অস্পষ্ট না হয়ে।

বর্তমান সময়ে পাড়ার মোড়ের মাথা থেকে শুরু করে চায়ের দোকান যেখানে সেখানে হাজার হাজার নেতা তৈরি হয়। কারণ এখন যোগ্য নেতা তৈরি হতে গেলে কোন নীতি-আদর্শ পুঁথিগত বিদ্যার দরকার হয় না। চোর ছিনতাই বাজ ডাকাত মিথ্যুক চিটিংবাজ বন্দুক ধারীরা এখন নেতা তৈরি হয়। কিন্তু তারা চে গুয়েভারা হয়ে উঠতে পারেনি। যে কারণে বর্তমান সময়ের অনেক নেতারা এক মুডসন থেকে আরেক মৌসুম পার হলে হওয়ার সঙ্গে মিশে যায়। কিন্তু যে গুয়েভারা যুগ যুগ ধরে আদর্শ হয়েছিল আছেন এবং থাকবেন।

 বটু কৃষ্ণ হালদার,কবর ডাঙ্গা,কলকাতা_১০৪,ফোন_ ৯৮৩০৪২০৯০৪,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *