Spread the love প্রয়াত লেখক তাজউদ্দীন বিশ্বাসের প্রতি সনেট [জন্ম: ডোমকল, ফতেপুর, মুর্শিদাবাদ 13মে 1946— ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু 3রা এপ্রিল 2021, সকালে মৃত্যু আন্দাজ 9:10 মিনিটে] ————————– ঋদেনদিক মিত্রোচুপিচুপি নিঃস্ব হয়ে বোধ দিয়ে ছিলে,গভীর গবেষণার গ্রন্থ ছিল সব,সেই গ্রন্থ, খাতা এবং কলম মিলে–তোমারি চির নিদ্রার সাথেই নীরব!দেশ বিশ্বে কারা পান খ্যাতি ও পদক,কারা পান সুপ্রচুর অর্থ ও মাতন,তোমার মতন যারাই নিঃস্বার্থ স্তব —মানুষের মনে পায় গোপন আসন!তোমাদের দেখেছি বলে বুঝেছি আমি –এরিস্টটল, সক্রেটিস ছিলেন বিশ্বে,জ্ঞানের চর্চা কতটা অপূর্ব সন্ধানী —যারা বোঝে এর স্বাদ চেতন-অদৃশ্যে,তারা নিঃস্ব হয়ে যায় গৌরবের সাথে,বিশ্ব প্রকৃতির জন্য গুপ্তধন রাখে!----- আমাদের প্রিয় ইতিহাস -গবেষক-লেখক তাজউদ্দিন বিশ্বাস আর নেই, মুর্শিদাবাদ থেকে কবি হান্নান বিশ্বাস এর থেকে সংবাদ পেয়ে যেন নির্বাক হয়ে গেলাম! শনিবার 3রা এপ্রিল 2021 ইন্তেকাল, রবিবার কোনো-কোনো সংবাদপত্রে তাঁর মৃত্যুর খবর ছবি সহ প্রকাশিত হয়েছে! বিখ্যাত গবেষক-লেখক তাজউদ্দিন সাহেবের ইন্তেকাল হয়েছে! সম্ভবত 2019 সালে, কোচবিহারে একই রুমে গেস্ট হাউসে ছিলাম, ওখানেই পরিচয়, আরো দুইজন সহ 4/5 জন ছিলাম আমরা ওই রুমে, যতদূর মনে হচ্ছে — তাই, এবং তাঁরা সকলেই গুণী অবশ্যই! বিশিষ্ট টিভি সাংবাদিক বিধান ঘোষের ব্যবস্থাপনায় দিন তিনেক মত কাটিয়েছি কয়েকটি অনুষ্ঠানে! অনেকেই দল বেঁধে গিয়েছিলাম সেখানে, মানে কোচবিহারে! আমার লেখা Anthem-poem on all the International Days ইংরেজি গীতিধর্মী কবিতার বই নিয়ে কত আলোচনা হলো তাজউদ্দিন সাহেব সহ কয়জন, সেই গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা, কত আলোচনা, সবাই মিলে! বইটা ছিল রাষ্ট্রসংঘ কতৃক ঘোষিত পৃথিবীর সব আন্তর্জাতিক দিবস, মোট প্রায় 150 ( দেড়শো ) টি দিবসের ওপর লেখা অন্তমিল গীতিকবিতার সংকলন! না, অনুবাদ নয়, সরাসরি ইংরেজিতে লেখা! উনি বইটা হাতে নিয়ে বললেন, ” কী করেছিস তুই রে! ” আমি বললাম সারা পৃথিবীর ওপর কত বিষয়ের ওপর আমার কাজ আছে, সব জানলে আপনি আমার শুভার্থী হিসেবে আনন্দ ধরে রাখতে পারবেন না!” উনি বললেন, ” শুধু এই বইটাতেই ইতিহাস হয়ে যাবি, বাকিগুলো দেখার দরকার নেই! তবে এটা নিয়ে ভালো মন্দ পরে আলোচনা করবো, এখন গল্প কর, পরে পড়বো, ভাববো!” প্রসঙ্গত জানাই, উনি সদ্য পরিচয়ে আমাকে “তুমি” ও “তুই” মিশিয়ে সম্বোধন করছিলেন, যতটা মনে পড়ে! এতো গভীর এক শুভার্থীর মৃত্যু আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে, মনে ভাসছে তাঁর কথাগুলি ও উপদেশ! এইভাবে নানা কথায় আমরা কাটাতে থাকলাম! কত গল্প, কত স্মৃতি-চারণা, তাঁর সাথে আর হবে না! আবার কখনো আমাকে বলেছিলেন, কথাটা যেন এমনি ছিল মনে হয়, উনি বলছিলেন, ” জানো, আমি একটা বই লিখতে চৌত্রিশ বছর নিয়েছিলাম, সেটা নিয়ে আবার বিদেশে চর্চা চলছে! এখন পচাঁত্তর-আশিতে এসে ভাবছি, শেষ একটা বই লিখবো, ঠিক পারবো, হার্টের সমস্যার কারণে শরীরের অবস্থা খারাপ, তাতে কী, জীবনের এই সময়ে শেষ বইটা লিখতে চাই! আমার বইগুলো সুদীর্ঘ গবেষণার তো, তাই আমার গ্রন্থ সংখ্যা খুব কম! ” এই বলে উনি সম্ভবত তিন বা চার নম্বর বইটা কমপ্লিট করে যেতে চেয়েছিলেন, জানিনা সেটা উনি করে গেছেন কিনা! সবই গভীর গবেষণার বই ! আমার প্রশ্ন হলো, এই দেশে কারা পুরষ্কার পান, কারা সেলিব্রিটি হন, কারা সাহিত্য শিল্প করে ধনী হন, জানিনা, কিন্তু সবাইকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ও তাঁদের যোগ্যতাকে মেনে নিয়েই বলি যে, তাজউদ্দিন সাহেবের মত এইসব উদার মনের সাধকেরা ক্রমশ নিঃশ্ব হয়ে-হয়ে শেষ হয়ে যান, কেন? প্রসঙ্গ ক্রমে মনে পড়ছে আরো দুজনের কথা, একজন বালিগঞ্জ, কলকাতার কবি নির্মল বসাক, আর একজন সোনারপুর, কলকাতার মৃনাল গুহ ঠাকুরতা, মৃনাল বাবু তো সারাজীবন একটা কম পয়সার অস্বাস্থকর ভাড়া ঘরে কাটিয়ে দুর্দশায় মারা গেলেন, কবি নির্মল বসাক স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করলেও স্বাস্থ্যকর কবিতা লেখার জন্য উপযুক্ত প্রচার ও সম্মান বা পুরষ্কার পাননি — এই জাতীয় মানুষ যাঁরা, দেশের যেখানেই থাক, এঁদের মহা কাজগুলোকে সরকার যত্ন করে না ঠিক মত — এমনটাই আমার মনে হয়েছে বারবার, জনগণও গভীর দৃষ্টি দেয় না এঁদের প্রতি! খুব কষ্ট হয়, এইসব মানুষদের জন্য! কিন্তু, এঁরাই একাডেমি, জ্ঞানপিঠের উপযুক্ত নিরেট সোনা! এখানে একটা কথা বলি আমার কাছে পুরষ্কার মানে যদি সম্মান হয়, তাহলে কোনো পুরষ্কার কোনো পুরস্কারের চেয়ে বড় ছোট বলে গণ্য হতে পারে না! কিন্তু, একশ্রেণীর পাঠকের কাছে, ও সরকার নামক একটা সিস্টেমের কাছে যদি তাঁদের বিশ্বাস অনুযায়ী কিছু-কিছু নামের পুরষ্কার বা সম্মান বিশেষ শ্রেষ্ঠতা পায়, তাহলে সেই পুরষ্কার ও সম্মানগুলি দেবার জন্য বিচার পদ্ধতি কেন উপযুক্ত হবে না! এটাই আমার বিনীত দাবী! ভাবতেই পারছি না, সাংবাদিক বিধান ঘোষের কলকাতার অনেক অনুষ্ঠানে উনি একজন চেয়ার Person হিসেবে মঞ্চে আসতেন, আর তাঁকে ওই আসনে দেখা যাবে না! এইরকম মানুষদের মৃত্যু আমাদের অস্থির করে তোলে! এঁরা আমাদের শেখান — কী ভাবে জ্ঞানের সমুদ্র পেরুতে হয়! আমাদের রুমে ছিলেন “মুর্শিদাবাদ আরশি ” পত্রিকার সম্পাদক জানা দা (পুরো নামটা এখন মনে আসছে না), আর বাকিদের নামটা মনে পড়ছে না বলে লজ্জিত বোধ করছি, তবে মুখগুলো মনে পড়ছে, তবে তাঁরাও লেখক! সবার ফোন নম্বর নিয়েছিলাম, কিন্তু এই মুহূর্তে খুঁজে নিয়ে বের করা খুব কঠিন, সেটা করলে এই লেখাটা পূর্ণতা পেতো, বোধ হয় সবাই লেখক ছিলেন না, একজন ছিলেন একটি NGO-এর কর্নধার! আসলে এইভাবে যাওয়া আসা, এখানে সেখানে থাকা, কত মুখ, কত আড্ডা, চিন্তার বিনিময় করা, সব স্মৃতি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়! যাইহোক, আমি কলকাতা থেকে কোচবিহারে গিয়েছিলাম Art Mother Earth Foundation এর founder Director নিউজিল্যান্ড বাসী মাইকেল তরুনের স্পনসর এর টাকায়! সব খরচ ছিল ওনার কোম্পানির! ওনার “স্থায়ী বিশ্ব শান্তির সূত্র” ( Theory for Permanent World Peace) ও ওনার তৈরী প্রতি বছর 15 জানুয়ারী Earth and Art Revolution Day বা পৃথিবী ও কলা বিপ্লব দিবসের ওপর বক্তৃতা দেবার জন্য! মাইকেল তরুণও ( Michael Tarun, OCI from New Zealand, Founder-Director, Art Mother Earth Foundation, First designed ” Theory for Permanent World Peace, and started ” Earth & Art Revolution Day. For this idea, dedication and work he received the blessings from the United Nations, some Hon’ble PMs/ Presidents including His Holiness Dalai Lama, the Nobel Laureate on Peace.) গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে, বলা ভালো ওনার সাথে আমি গিয়েছিলাম! মাইকেল তরুন তাঁর এইসব কাজের জন্য রাষ্ট্রসংঘ সহ বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে লিখিত-ভাবে উৎসাহ ও আশীর্বাদ পেয়েছেন, এমনকি শান্তিতে নোবেল জয়ী মহান দলাই লামার তরফ থেকেও ! সেই সঙ্গে আছে ভারতের নানা ব্যক্তি, সংস্থা ও সরকারি দপ্তরের থেকে সমর্থন! মূল কথায় ফিরে আসি! যদিও আমি ঘটনা ক্রমে জায়গা পাই তাজউদ্দিন সাহেবের রুমে! সময়টা খুব ভালো কাটিয়েছি, দুপুরে ও রাত্রে হোটেলে খেতে যাওয়া, তাও আবার কোচবিহারে, যে-জেলা ভারত স্বাধীন হবার সময় ছিল আলাদা স্বাধীন দেশ, এবং যেখানকার অধিবাসীরা শরীরের সৌন্দর্যে অনেকটা আলাদা, ভাষা বলার পদ্ধতিও আলাদা, সেখানে সময় কাটানোর অনুভূতিই আলাদা! পরে নানা পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে স্বাধীন কোচবিহার ব্রিটিশ-মুক্ত ভারতের অন্তর্গত একটি রাজ্য হয় এবং পরে একটি জেলা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়! অর্থাৎ কোচবিহার কোনোদিন ব্রিটিশের অধীনে ছিলোনা! সেই কোচবিহারে গিয়ে রাত কাটানোর অনুভূতি আলাদা! যাইহোক, একটু স্মৃতিচারণা করলাম, না করে থাকা গেলো না, তাই! লেখক তাজউদ্দিন ছিলেন মুর্শিদাবাদের বাগড়ির নীল বিদ্রোহের অন্যতম সংগঠক পন্ডিত রইসউদ্দিনের দ্বিতীয় উত্তরসূরী! এই বিষয়গুলি আবার আমাদের অন্য হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়, বিশেষ অনুভব সম্পন্ন মানুষেরা সেটা উপলব্ধি করবেন! ডোমকল পুরানো বিডিও অফিস মোড়ের কাছে এক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে! সেই মিষ্টি সরল বুদ্ধিমত্তাময় হাসি মুখ, আমাকে কোনো সভায় দেখলে মুখোমুখি টুকরো কোনো কথা বলতেন! ব্যাস এই টুকুই! আমার বিশ্বাস আমাদের কাছে এই মানুষগুলো আমাদের সময়ের গ্রিক দার্শনিক বা ভারতীয় ঋষি! —————————- [ A Bengali sonnet to research writer late Tajuddin Biswas by Ridendick Mitro. Tajuddin lived at Domkol, Fatepur, Murshidabad, West Bengal, India. His life 13 May 1946 -3 April, Saturday, 1921, Murshidabad Medical College. He was an International category researcher in historical trend exposed in literature with a fine style in Bengali language.] ( 3 April 2021, Ridendick Mitro, kolkata, India.)বিঃদ্রঃ– ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro ), পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষায় ( দুটি ভাষায় আলাদা ভাবে ) কবি-ঔপন্যাসিক-গীতিকার-গ বেষক-নিবন্ধকার, একটি বিশ্বজাতীয় সংগীত ” World anthem — we are the citizen of the Earth”, ও ” Corona anthem 2020 official bengali song” (আগ্রাসনের নেশার সাথে হিংসা সীমাছাড়া) প্রভৃতি বিশেষ ধরণের সংগীতের রচয়িতা, এবং 2020 পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় 20 (কুড়ি) টি! ————————— Editor: kabyapot.com Post navigation চাইলে না কিচ্ছুটি – শিবেশ মুখোপাধ্যায় কবিতা : খেলা হবে, রচনা – অভীক রায়, কন্ঠে : বাচিক শিল্পী – ডালিয়া হালদার