Spread the love

   

 ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব‍্য:

* কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন *

—— কৃষ্ণপদ ঘোষ।
উপস্থাপন–১২
( পূর্ব প্রকাশিতের পর )

★দ্রোণ পর্ব★
১| ভীষ্ম সকাশে কর্ণ।

অরণ্যে পালক হীন মেষ দল যথা,
ভীষ্মাভাবে কৌরবকুল উদ্বিগ্ন তথা।।
উদভ্রান্ত করুপতি হন উচাটন।
নির্ধারিতে সেনাপতি করেন আলোচন।।
হইল সময় কর্ণের করিবারে রণ।
কর্ণে তাই ডাক দেন কুরুভাই গণ।।
আহূত কর্ণ সবারে দিলেন আশ্বাস।
যথা শক্তি রণিব রণ রাখ বিশ্বাস।।
করিবারে রক্ষা কৌরবে ভীষ্ম যথা,
কর্তব্য সাধিব আমার আমিও তথা।।
পাণ্ডব দলে সমূলে করিব হনন।
নতুবা মরিয়া ভূমে করিব শয়ন।।

রণসাজে কর্ণ চলেন ভীষ্ম সকাশে,
গুরুজন হিতবাক‍্য লভিবার আশে।।
করিলেন স্পর্শ তিনি ভীষ্ম পদমূল।
কহেন ভীষ্মে তিনি নয়ন বাষ্পাকুল।।
হে মহাত্মা, আপনার লইনু শরণ।
হিতবাক‍্য আপনার করিব শ্রবণ।।
কৌরবে ফেলিয়া আজি বিপৎসাগরে,
আপনি ত‍্যজেন দেহ ইচ্ছা অনুসারে।।
ক্রুদ্ধ ব‍্যাঘ্র যেমতি বিনাশে মৃগদল,
পাণ্ডব সেমতি নাশিবে কুরুসেনাদল।।
আমি হয়েছি আজিকে অসহিষ্ণু অতি।
বধিব অর্জুনে আপনি দিলে অনুমতি।।
ভীষ্ম কহেন, “কর্ণ তুমি করহ শ্রবণ,
সমুদ্রে আশ্রিত জেনো সব নদীগণ।।
বীজের আশ্রয় জানিবে উর্বরা ভূমি।
বান্ধব গণের আশ্রয় সেইরূপ তুমি।।
কহিতেছি আজিকে আমি প্রসন্ন মনে,
করিও ক্ষত্রোচিত যুদ্ধ তুমি শত্রু সনে।।
হিতোপদেশ দেহ তুমি কৌরবগণে।
নিবেশিত হও দুর্যোধন জয় বিধানে।।
জন্মের সম্বন্ধ শ্রেষ্ঠ কন জ্ঞানী জনে।
শ্রেষ্ঠতর হয় তাহা সজ্জন সজ্জনে।।
কৌরব সেনাদল জানিও তোমার।
এইরূপ জ্ঞানে মন দিও দল রক্ষার”।।
করিয়া প্রণাম কর্ণ ভীষ্মের চরণে,
উদ‍্যোগী হইলেন রণস্থল গমনে।।
★★

২৷ দ্রোণের অভিষেক ও দুর্যোধনকে
বরদান।

নির্ধারিতে সেনাপতি কহেন দুর্যোধন,
“আইস আজ সকলে করি আলোচন।।
সর্বগুণ বিচারি ভীষ্ম প্রথম সেনাপতি।
কহ কর্ণ, দ্বিতীয় কেবা কুরু সেনাপতি”।।
কহেন কর্ণ, “যোগ‍্য পুরুষ দেখি যত জন,
আচার্য দ্রোণ তারিমাঝে শ্রেষ্ঠতম জন।।
আচার্য দ্রোণ শিক্ষক মাননীয় অতি।
তিনিই এখন শ্রেষ্ঠ যোগ্য সেনাপতি”।।


অনুরোধ করিলেন দ্রোণে দুর্যোধন।
হে আচার্য ! সেনাপতিত্ব করুন গ্রহণ।।
অনুরোধ শুনি দ্রোণ কহেন তখন।
জরুরী বক্তব্য মোর করহ শ্রবণ।।
আমি বিজ্ঞ ষড়ঙ্গ বেদ ও নীতি শাস্ত্রে।
চালনায় দক্ষ বাণ পাশুপত অস্ত্রে ।।
তব বিজয় কামনা করি সদা মনে।
করিব যুদ্ধ যথা শক্তি পাণ্ডব সনে।।
কিন্তু বিনাশিব নাহি কভু ধৃষ্টদ‍্যুম্নে।
সৃষ্ট সে আমারে বধিতে সেই কারণে।।
বিনষ্ট করিব পাণ্ডব সেনা সকল।
নারিবে করিতে রণ পাণ্ডব সেনাদল।।
অভিষিক্ত দ্রোণাচার্য পদ সেনাপতি।
দুর্যোধন সেনাদল পুলকিত অতি।।
দ্রোণ কন, “আজি আমি কত সম্মানিত।
আশীর্বাদ করি আমি হোক তব হিত।।
অভীষ্ট থাকিলে তব চাহ তুমি মোরে।
তুষ্ট করিব তোমায় মোর দেয়া বরে”।।
“যুধিষ্ঠিরে চাহি আমি রাখিয়া জীবন।
অভীষ্ট করুন সিদ্ধ ” কন দুর্যোধন।।
দ্রোণ কন,”একী কথা শুনি তব মুখে।
জীবিত তাহারে তুমি চাহ কোন দুখে।।


ধন‍্য যুধিষ্ঠির তার জনম সফল।
অজাতশত্রু নাম তো হয়নি বিফল”।।
দুর্যোধন হেন শুনি দ্রোণে তিনি কন।
কি কারণ কহি তাহা করুন শ্রবণ।।
“বধিয়া তাঁহারে জয় নহেক সম্ভব।
বধিলে বধিবে মোরে সকল পাণ্ডব।।
যদি থাকে জীবিত তাদের একজন,
সেও মোরে অচিরে করিবে নিধন।।
তার চেয়ে শ্রেয় হবে মোর এই ফন্দি।
যুধিষ্ঠিরে যদি হেথা আনি করি বন্দী।।
বসাব তারে আমি পুন পাশা খেলাতে।
পরাজয় হবে তার মোর কূট চালেতে।।
তারপর যাইবেন তাঁরা বনবাসে।
বনবাস শেষে আবার অজ্ঞাতবাসে।।


দীর্ঘকাল স্থায়ী জয় এ হেন ধরণে।
ধর্মরাজে হত্যা নয় কভু সে কারণে।।
কূট অভিপ্রায় তাঁর করিয়া শ্রবণ,
বাক্ ছলে বর তাঁরে দিলেন তখন।।
পার্থ যদি নাহি থাকে যুধিষ্ঠির পাশে,
আনিব ধরিয়া তাঁরে আমি অনায়াসে।।
অর্জুন সুরাসুরের অজেয় জানিবে।
পার্থ হতে কেহ তাঁরে হরিতে নারিবে।।
বুদ্ধিবলে অর্জুনের হইলে সরণ,
যুধিষ্ঠিরে সহজেই করিব হরণ।।
দ্রোণ মুখে হেন কথা করিয়া শ্রবণ,
যুধিষ্ঠির ধৃত আজি ভাবেন দুর্যোধন।।
এই ভেবে পুলকিত হন তিনি মনে।
দ্রোণ বার্তা রটি দেন তাঁর সেনাগণে।।

★★★

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *