১) মানুষ
একটু ভালোভাবে মানুষের মত থাকতে পারো না?
” সেটা কেমন বৌদি?”
কেন যেমন তোমার দাদা থাকে।দাড়ি কেটে; টাই পরে ফিটফাট থাকবে তবেই তো সুন্দরী মেয়েরা তোমায় পছন্দ করবে।তোমার এবার বিয়ে দিতে হবে তো?
বউদির কথা শুনে মুচকি হাসলো সজল।
কি হোলো?
হাসলে হবে না ক্যাবলা’র মত।
— বউদি একটা কথা বলবো?
একটা কেন, হাজারটা বলো ….
তুমি কি জানো দাদার চাকরিটা আমি করে দিয়েছি।
চাকরি ও তোমার মত সুন্দরী বৌ পেয়ে দাদা সবাইকে ভুলতে বসেছে।তোমার ইশারায় দাদা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল।
আমি জানতে পেরে সোজা জামনগর থেকে ছুটে বাড়ি এসেছি।
বউদি জেনে রাখো শুধু ফিটফাট থাকলে হয় না।মানুষ হতে হয়।সত্যিকারের মানুষ।
বউদির মুখটি বিবর্ণ হয়ে গেল।
**************************************
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
২) মায়ার বন্ধন
গতকাল রাত্রে মায়ের স্বপ্ন দেখলাম কি যেন বলতে চাইছে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে; কাছে এল না।
আজ একটু জ্বর জ্বর লাগছে ….মা কি আমায় নিতে এল…?
মল্লিকা রায়- এর কথাগুলি শুনে রাজ জানালো- মা আপনাকে দেখতে এসেছিলেন।কোনো চিন্তা করবেন না।ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন জ্বর থাকলে।ঘাবড়াবেন না দিদি; সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাজের কথাটি প্রণতিদিও সমর্থন করলেন।
রাজ মল্লিকাদি’কে জানালো- দিদি, আরেকটি কথা জানাচ্ছি আপনাকে; আমাদের প্রিয় মানুষ যখন মারা যান তখন খুব কষ্ট করেই মারা যান। তাঁরা এই সংসারের মায়া ত্যাগ করতে পারেন না।মারা যাওয়ার পর আমরা মৃতদেহকে দাহ সংস্কার করি।শ্রাদ্ধ করি।সব কিছু করে থাকি।তারপর ভাবি সব শেষ।
আমাদের ভুল ধারনা। আত্মা অবিনশ্বর। আত্মা ঘুরে আসে আমরা কেমন আছি দেখতে।
হয়তো আপনি আমাকে পাগল ভাবছেন; তাই না দিদি?
আমার বাড়ি সদর দরজায় ঠিক রাত এগারোটার সময় একটি আওয়াজ হয়।আমি পর পর বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করেছিলাম। আমি ভাবলাম কেউ হয়তো ভয় খাওয়াচ্ছ আমাকে …..
আমি সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই।আমি যখনই আওয়াজ পেয়েছি তখনই একটি লাঠি হাতে নিয়ে সদরদরজায় হাজির হয়েছি। খুলেছি এবং কাউকে দেখতে পাইনি।
পরে জানতে পেরেছি মানুষ মারা গেলেও তাঁরা আমাদের দেখতে আসেন আমরা কেমন আছি।
পরলোক ও প্রেততত্ব পড়ে জেনেছি আত্মারা এখনও আসে মায়ার বন্ধনে…..
***************************************
৩) বুধন সিং
বুধন সিং এলাকার ত্রাস। এক নামে সবাই চেনে।যখন রাস্তা দিয়ে চেলা চামুণ্ডা নিয়ে বের হয় তখন এলাকাবাসী জড়সড় হয়ে থাকে।কেউ মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পায় না।সমানে চলছে গুণ্ডারাজ যশপুরে।বাড়ির বাচ্চারা রাত্রে না ঘুমোলে মায়েরা বলে ঘুমিয়ে পড়; বুধন আসছে।বাচ্চারা ভয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।
এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো মাসখানেক আগে।রাস্তা দিয়ে দলবল নিয়ে মিছিল করে যাচ্ছিল বুধন সিং।মাঝপথে গাড়ি খারাপ।থমকে যায় ব্যস্ত নগরী,জনবহুল পথ।গাড়ি চলাচল বন্ধ।কার সাধ্য এই পথ দিয়ে পেরোবার?
তাপসবাবু সাংবাদিক।’বাঙালিবাবু’ বলে পরিচিত। জলে-জঙ্গলে, ঝোপে -ঝাড়ে যেখানে সেখানে তাঁর অবাধ বিচরণ।গুনগুন করে একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গাইতে চলেছেন বাইক নিয়ে। যেতে যেতে দেখলেন, বুধন সিং রাস্তা জ্যাম করে দাঁড়িয়ে।বাইক থেকে নেমে তাপসবাবু একটু মাথা ঝুঁকিয়ে
বললেন, বড়ে ভাই নমস্কার।ক্যায়া হুয়া?
বাঙালিবাবুর একটি নমস্কারেই ঘায়েল এলাকার ত্রাস।পিঠ থাপড়ে বললো, কাঁহা যা রহে হো বাঙালিদাদা?
—- “প্রেস”
ঠিক হ্যায় দাদা।যাইয়ে।কুছ জরুরত পড়নে পর এগো কল কর দিজিয়েগা।
**************************************
৪) ভবানীপ্রসাদের নিয়ম
ভবানীপ্রসাদ বাড়ির মাথা। বড় ভাই।যদিও আর চারটি ভাই রয়েছে তবুও তাঁর কথাই শেষ কথা।তাঁর হুকুমেই যৌথ পরিবারটি চলে।
মুকুন্দপুরের এই পরিবারটিকে সবাই চেনে।
সম্ভ্রান্ত পরিবার।বাপ-দাদুর আমলে থেকেই ধনী।গ্রামে তাঁদের কদরভ্যালু খুব।
যুগের পরিবর্তন হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই পরিবারটির নতুন প্রজন্মের মধ্যেও একটু একটু পরিবর্তন নজরে আসছে।
ছোট ভাইটির তিন ছেলে– রতন, পলাশ ও সোহম।
সোহম ছেলেটি ছোট, একটু বখাটে গোছের …..
সোহম কোনো নিয়ম না মেনেই চলতে চায়।ভবানীপ্রসাদও বুঝে গেছেন এই ছেলেটিই বংশের কুলাঙ্গার।
প্রতিদিন নিয়ম করছেন ভবানীপ্রসাদ, আজ এই করতে হবে, কাল এই করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
শনিবার বাড়িতে খিচুড়ি হবে।তাই করলেন বাড়ির মহিলারা।আজ কালীঠাকুর বিসর্জনে কেউ বাড়ি থেকে বের হবে না।ঘর থেকেই প্রণাম সারবে।
বৃহস্পতিবার নিরামিষ।সোমবার চাল দেবে না কোনো ভিখারীকে।
ভবানীবাবুর কথা কেউ কাটে না।কারও সাহস নেই।
একদিন সোহম বললো — ইনি প্রতিদিন একটি করে নতুন নতুন নিয়ম বের করেই চলেছেন।সবাই তোমরা নিয়ম পালন করতেই থাকো।এবারে ইনি নতুন নিয়ম করবেন দেখবে,তোমাদের বলে রাখলাম।এইবার ঈশান কোনে পোঁদ ঘুরিয়ে হাগতে হবে ……বলেই ……দাঁত খিঁচিয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেল।
***************************************
৫) লড়াই
ভবতোষের স্বভাবটি একদম লড়াকু গোছের। একটু ঝগড়াঝাঁটি না করলে তাঁর ফাঁকা ফাঁকা লাগে।মনে হয় দিনটিই বেকার হয়ে গেল। লড়াই মানে মুখে মুখে বাকযুদ্ধ তা নয়; একেবারেই হাতাহাতি, পাটসাপাটসি। যাকে বলে জবড়াজবড়ি; না হলে লড়াই এর মজা কোথায় ?
সেদিন হঠাৎই রেগে ইঁড়কে এসেছিল মহীপালকে মারার জন্য …..
মহিপাল উপস্থিত বুদ্ধি এপ্লাই করেছে সঙ্গে সঙ্গেই।
সে ভবতোষকে বলে — আই ব্যাটা চলে আই …..
আই আই ….
আমি তো এখন করোনা পজিটিভ।
নিমেষেই ভবতোষের গরমী ফুস্
**************************************
৬) স্যালুট
এবারে শারদ সংখ্যায় লেখা;আপনারা সম্পাদকীয় দপ্তরে, শুধুমাত্র ডাকযোগেই পাঠাবেন। ‘পুটুস’ পত্রিকার সম্পাদক ভজহরি মাইতি’র ফেসবুক পোস্ট দেখে কবি লেখকরা মহাসমস্যায় পড়ে গেলেন। অনেকেই বলতে লাগলেন– ডাকযোগের যা অবস্থা তারপর লকডাউন, করোনা….হচপচ অবস্থা…..
মেল বা হোয়াটস্আপ এ হলে সুবিধা হোত; কবি মনোজ হালদার অভিমত প্রকাশ করলেন।সম্পাদক বললেন — ডাকযোগের অবস্থা খারাপ নয়; ডাকঘর তো খোলা রয়েছে?
রেজিস্ট্রি, স্পীড পোস্ট, আর. পি., করে লেখা পাঠানো যেতেই পারে ….
রসিদ থাকবে আপনার কাছে; অতএব অসুবিধা নেই।নিরুপায় হয়ে কবি মনোজ বললেন — তাই হবে।
সম্পাদক ভাবলেন এ তো অন্যায় হচ্ছে।
কবিতা, গল্প ইত্যাদি পাঠাতে কবি– লেখকদের অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।সম্পাদক একটা বুদ্ধি আঁটলেন। আচ্ছা ঠিক আছে মনোজ বাবু, হোয়াটস্আপ এ লেখা পাঠান।
মনোজবাবু চমকে গেলেন।
হঠাৎ সম্পাদক সিদ্ধান্ত কেন বদলে করলেন?
—- দু’পক্ষের সুবিধার কথা ভাবতে হচ্ছে সম্পাদককে।রেজিস্ট্রি বা স্পীড পোস্ট করলে তো চল্লিশ টাকা খরচ করতেন; তাই তো?
চল্লিশ টাকাটা আমাকেই পাঠিয়ে দিন।দশ টাকায় আমি প্রিন্ট বের করে নেবো সাইবারে গিয়ে আর বাঁচবে ত্রিশ টাকা সেটা পত্রিকা ফান্ডে থাকবে; কাজে আসবে।পত্রিকা ছাপতেও তো খরচ আছে?
চল্লিশ জন কবি লেখক পাশে থাকলেই পত্রিকা হয়ে যাবে।
—– আপনি কি আমাকে ব্ল্যাকমেল করছেন?
হাসতে হাসতে বললেন কবি মনোজ।
সম্পাদক বললেন — ব্ল্যাকমেল কেন করবো?
পত্রিকাটি তো শুধু আমার নয়; আপনাদেরও।
আপনারা লেখা সহযোগিতা না করলে আমার কোনো মূল্য নেই তাছাড়া বাংলা ভাষা তো শুধু আমার নয়; আপনাদেরও…..
সম্পাদকের কথা শুনে কবির মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো একটিই কথা — স্যালুট।
***************************************
৭) ভুল ঠিকানা
মোবাইলটা সকাল থেকে বেজেই চলেছে।শীতের সকাল হতেই চায় না।লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে সবাই । এই ঠান্ডায় উঠতেই মন করে না।
মোবাইলের রিং পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় প্রতীমের।
—-হ্যালো কে ?
অপর প্রান্ত থেকে একটি মেয়ের সুরেলা কন্ঠস্বর —– প্রতীমবাবু বলছেন ?
—হ্যাঁ, বলছি।আপনি কে ?
আপনাকে আমি চিনি।আপনি আমাকে চিনবেন না; আমি হরিদাসপুর,পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে বলছি ।
—– কে বলছেন; নামটা তো বলবেন ?
—— সুচন্দা পাইক।
আচ্ছা,যদিও এ প্রশ্ন করা আমার ঠিক হবে না তবুও জানতে ইচ্ছে করছে আপনি কি করেন?
—— কি উত্তর দেবো আপনাকে?
রেলে কাজ করি,ব্যাঙ্কে কাজ করি,স্কুল টিচার …..
কোনটা আপনার দরকার?
হতচকিত হয়ে পড়েন মেয়েটি।উনি বুঝতে পারছিলেন না প্রতীমবাবুর কথা।
—– আপনি রাগ করলেন প্রতীমবাবু ?
—- রাগ কেন করবো;আমি জানতে চাইছিলাম যে কোনটাতে আপনি খুশি হবেন ?
প্রশ্নটি করেই সমস্যায় পড়ে গেছেন সুচন্দা ।প্রতীমবাবু বললেন —- শুনুন সুচন্দা ম্যাডাম; আমি বিবাহিত তাছাড়া ছোট থেকেই কোনো নারীর প্রতি আমার নজর নেই।বেশি দুর্বলতা নেই আর কি ……
আপনি ভুল জায়গায় তির মেরেছেন,কথাটি বলেই প্রতীমবাবু মোবাইলটা কেটে দিলেন।
****************************************
৮) পিকনিক
স্পঞ্জ আচরন ফ্যাক্টরিতে কাজ করে তপন বাদ্যকর।ম্যানেজমেন্টের সাথে বেতনবৃদ্ধি নিয়ে ঝামেলা চলছে। কারখানার গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।ভেতরে ফেঁসে রয়েছেন অনেক কর্মচারী।তপন তারমধ্যে একজন।তপনের বৌ কারখানা যাওয়ার সময় সাতসকালেই বলেছে — বাড়ি চলে আসবে কিন্তু কোনোমতেই থেকো না। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি ফাস্ট জানুয়ারি আমাকে পিকনিকে যেতেই হবে।আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না।শেষ কথা শুনে নাও —- তুমি আজ আসবেই।কারখানায় কি হবে না হবে আমার জানার দরকার নেই।সেটা তোমার মামলা।
তপন বৌ এর ভয়ে সকলের অলক্ষ্যে পাঁচিল টপকে কারখানা থেকে পালানোর চেষ্টা করে।ঠিকমত ঝাঁপ দিতে পারেনি; পড়ে যায় নালিতে। বেকায়দায়।উঠতে পারে না। অনেকক্ষণ পর কারখানার একজন কর্মচারী দেখতে পেয়ে খবর দেয় কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতালে তপনকে নিয়ে যাওয়া হয়। ই এস আই ফেসিলিটি রয়েছে কর্মচারীদের।নানা রকমের কাগজপত্র ইত্যাদি জমা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।চিকিৎসা শুরু হয়।হাসপাতালে ছুটে যান তপনের বাড়ির লোকেরা। একসপ্তাহ পরে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয় তপনকে।ডাক্তার জানায় — দুই মাস বেড রেস্টে থাকতে হবে।
এখন ফ্যাকাসে মুখে তপনের বৌ প্রতিদিন বাড়িতেই পিকনিক করছে।
************************************
৮) হিং
মিনি রীতিমত সুন্দরী।তবু বিয়ে হচ্ছে না কেন এ নিয়ে
চর্চা পাড়ার মহিলা মহলে।বড়লোক বাবা।টাকার অভাব নেই।যৌথ পরিবার মিনিদের। শুধু মিনিট একটাই দোষ, কথাটা নাকে বলে।খনা।ভাবনায় বাড়ির লোকজনেরাও ….
মিনির দূর সম্পর্কের এক দাদা সাত সকালেই ফোন করে জানিয়ে দেয়, কিছু কুটুম্বকে নিয়ে আসছে।তারা মিনিকে দেখতে চায়।বাকি খবরটা পাঁচ কান হতেই সাজো সাজো রবীন্দ্র পড়ে গেল।মিনিকে বাড়ির বড়রা আগে থেকেই শিখিয়ে পড়িয়ে দিল।কুটুম্বের সামনে যেন কোন কথা না বলে।শুধু সেজেগুজে বসে থাকবে, যা বলার বড়রা বলবে। যথারীতি কুটুম্বগণ সদলবলে ঢুকল।জলযোগ হোল।মেয়ে দেখাও হোল।কুটুম্বগণ সরাসরি মিনিকে কোন প্রশ্ন না করায় মিনিও কোন কথা বলেনি।মেয়ে দেখা হবে গেলে খাওয়া দাওয়ার পালা।।খাওয়া শেষ হওয়ার পর পাত্র বলেন উঠলো — মিক্সড তরকারীটা বেশ ভাল হয়েছে।
মিনি হঠাৎ খনা খনা গলায় বলে উঠলো — তাঁও তোঁ হিং – টা দেঁওয়া হোঁলো না।
****************************************
৯) যুগটা বেইমানদের
ছেলেটার মা – বাবা ছোটতেই মারা গেছিল।মানুষ করেছিল কমলাখুড়ি।
কমলাখুড়ির এখন অনেক বয়স।নিরানব্বই। অদ্ভুত। এখনও যষ্টি হাতে চলা ফেরা করে।
যে ছেলেটিকে কোলে পিঠে মানুষ করেছিল সে ছেলেটি মস্ত বড় হয়েছে।বিরাটনগর ব্লকের ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার।
কমলাখুড়ির জীর্ণ বাড়ি।খড়ের।জল পড়ে বর্ষায় …..
গ্রামের সকলের পাকা বাড়ি হয়েছে সরকারী স্কীমে।
নজরে পড়েনি অফিসারের….
কমলাখুড়িকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি নাকি একটি ছেলেকে কোলে পিঠে মানুষ করেছিলে সে ছেলেটিকে বলো, একটা তোমার ঘর করে দিতে ….
কমলাখুড়ির কাঁপা কাঁপা গলায় বলে — মানুষ করেছি ও বড় হয়েছে।আমি মানুষ না করলে ছেলেটা যে মারা যেত।তা তো আর চোখে দেখা যায় না তাই মানুষ করেছি মানুষ হয়ে।সে তো আমাকে ভুলে যাবেই।জানতাম। আসলে যুগটা যে বেইমানদের …….
*********************************
১০) উত্তম – মধ্যম
আসানসোল থেকে বাসটা মাতাল কাঁড়ার মত ছুটে এলো ভগবান সিং মোড়ে।সোহম ছুটে এসে বাসটা ধরলো।খুব ভীড় নেই তবে বসতে জায়গা পেল না সোহম।সোহমের অবশ্য সব অভ্যেস আছে।
দাঁড়িয়েই থাকলো ব্যাগ কাঁধে নিয়েই।সিট আছে, ফাঁকা গাড়ি বলেই কন্টাক্টর হাঁক দিয়েছিল ।
সোহম লক্ষ্য করলো চারটি ছেলে পাশাপাশি দুটি সিট দখল করেই আসছিল আসানসোলের দিকে থেকেই।তাদের লক্ষ্য অন্য একটি সিটে বসে থাকা দুটি মেয়ের দিকেই।রূপবতী যুবতী …।
তারা কেমন যেন অন্য ভাষায় কি যেন কথা বলছিল আর হাসছিল।সোহম ওদের ভাষার মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছিল না!
একটি ছেলে মাকুড়ি পরে ছিল কানে! বেশভূষাও বিচিত্র ধরনের! বাস ছুটে চলেছে আপনবেগে …..।
বার-বার ঐ চারটি ছেলে যুবতী দুটিকে দেখছিল আর হাসছিল। আর কি যেন বলছিল ওদের ভাষায় …..।
সোহম তাদের গতিবিধি ভালো বুঝছিল না।ক্রমশ: রক্ত গরম হয়ে আসছিল সোহমের। এসব ঘটনা ও বরদাস্ত করতে পারে না।ও কুলটি নিউ রোডে নামার সময় মাকুড়ি পরা ছেলেটিকে এক চড় কষিয়ে দিল।ছেলেটি এবার হিন্দিতে বুলি জানতে লাগলো — ক্যায়া কসুর জনাব; আপনে হামকো …..
সোহম বলে উঠলো —– তোর উত্তম মধ্যমের প্রয়োজন ছিল তাই দিলাম। ‘উত্তম’ দিয়ে আমি নামছি এবার তোরা ‘মধ্যম’ সামলা…..
এই বলাতেই সকল যাত্রী ঝাঁপিয়ে পড়লো চারটি ছেলের উপর।সকল যাত্রীই ওদের ক্রিয়াকলাপ দেখেই আসছিল।সোহমের চড় মারাতে তারাও এবার সাহস পেয়ে গেল ও বেধড়ক মারতে শুরু করলো ওদের …….
সোহম নিউ রোডে নেমে প্রভাতদা’র বাড়ির দিকে পা মাড়ালো।
১১) জবাব
সাতসকালেই ফোন ….
কার হতে পারে ভাবছিলেন রজতবাবু; সেই সময়ই বৌ এর ধমক।
ফোনটি ধরো, তারপর ভাববে।হড়বড় করতে গিয়ে রজতবাবুর লুঙ্গি খুলে যায়। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি না হলে সম্পাদকের প্রেস্টিজ চলে যেত।
অবশেষে ফোন ধরলেন রজতবাবু।হ্যালো।কে বলেছেন?
আমি ‘ডমরু’ পত্রিকার সম্পাদক বলছি।
— হ্যাঁ বলুন।
বলছি স্যার,বেশ কয়েকটি ভালো লেখা আপনাদের সম্পাদকীয় দপ্তরে পাঠিয়েছিলাম মাসখানেক আগে।লেখাগুলো বের হয়নি, ব্যাপারখানা কি?
রজতবাবুর উত্তর— আমাদের দপ্তরে প্রতিদিন ভারতবর্ষজুড়ে অসংখ্য কবি- লেখকদের লেখা আসে।সব লেখাই তো ছাপা চলে না?
—- কেন?
আপনার লেখা পছন্দ হয়নি।
**************************************
১২) উত্তর
বিমলেন্দুবাবু লেখক মানুষ।কাগজ কলম নিয়েই বেশির ভাগ সময় পড়ার ঘরটিতে মুখটি গুঁজেই থাকেন।নানারকম হিজিবিজি কিছু না কিছু লিখতেই থাকেন।
তবুও যেন মন ভরে না।লেখেন আবার কাটেন। এভাবেই তাঁর চলতে থাকে লেখা জীবন।কিছু একটা লিখেই লেখকবন্ধুদের হোয়াটস্আপ- এ পাঠাতে শুরু করেন। আত্মীয়- স্বজনদেরও পাঠান। লিখে তার মনটি খচখচ করে।কেমন হলো লেখাটি?
নিজে লিখলে তো আর হবে না,কি বলছে সবাই।লেখাটি ভালো হল না মন্দ।চলবে? না চলবে না?
ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবতে থাকেন।
প্রায় সবাই ভালো, মন্দ বলেন।ভালো লাগে তাঁর।
বিমলেন্দুবাবু লক্ষ্য করছেন একজন লেখকবন্ধু শুধু সুপ্রভাত বলেই উত্তর দিয়েই চলেন প্রতিদিন।তাহলে কি উনি তাঁর লেখাগুলো পড়ছেন না?
একটাও তো পড়া দরকার।প্রতিদিন গল্প পাঠাচ্ছেন সকালবেলায়, আর উত্তর আসছে — সুপ্রভাত।
বিমলেন্দুবাবু একটু রেগে যান।গতকালও একটি সুন্দর গল্প লিখে পাঠালেন বন্ধুটিকে।সেটাতেও উত্তর পেলেন – সুপ্রভাত।
বিমলেন্দুবাবু ভাবতে থাকেন তাঁর পরিশ্রম করে লেখার এই উত্তর তো হওয়া উচিত নয়। এটাতো ভালো একটি লেখা।
তারপর ভাবলেন,মতামত তো মানুষ বিভিন্ন ভাবে দিতেই পারেন।তাঁর সব থেকে সেরা অণুগল্পটি পাঠালেন শেষবারের মত। তখনও উত্তর এলো — সুপ্রভাত।
বিমলেন্দুবাবু আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না।তিনি সুপ্রভাত এর উত্তরে; উত্তর দিলেন — শুভরাত্রি।
**************************************
১৩) চেনা- স্বর
সবে মাত্র বাথরুমে ঢুকেছে সমীর তার ফাঁকেই ‘এই শুনছো’ কথাটি কানে এলো সমীরের। চেনা- স্বর।পিলে চমকে যায়। প্রমীলা রান্নাঘর থেকে হাঁক দেয়। এগিয়ে যাওয়ার সাহস নেই; বৌ – এর ডাক। এ জগতে এমন কোনো স্বামী আছে যে কি বৌ – এর কথা অবহেলা করে …?
সমীরও ব্যতিক্রম নয়। অর্ধেক পায়খানা করেই বেরিয়ে পড়ে সমীর।
কি বলছো?
— তোমাকে এতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না?
শুনেছি।
তাহলে উত্তর দিচ্ছো না যে ….?
বাথরুমে ….
বলার আগেই প্রমীলা বলে ওঠে — চোদ্দবার করে যা খুশি গিলছো বুড়ো হলে যে কি হবে তোমার ভগবানই জানেন।
সমীরের একটিই অপরাধ বুধা’র দোকানে সে দু’টি গরম গরম চপ খেয়েছে লোভে লোভে, সেটিই তার কাল হোলো।
লোভ সামলাতে পারে না সমীর; তাই পেটের একটু কমপ্লেন হয়েছে।
মাঝে-মাঝে যেতেই হচ্ছে, এই আর কি…..
বল কি বলছিলে?
সমীর স্ত্রী প্রমিলার উদ্দেশ্যে বলে…..
জল যে পড়েই যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছো না?
—- মানে…?
ওভারফ্লো হয়েছে দেখতে পাচ্ছো না?
সমীরের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে — ওহ!
***********************************,,,
১৪) কোলাকুলি
আজ পত্রিকাটির সুবর্ণ জয়ন্তী। সবাই এসে উপস্থিত হয়েছেন।সম্পাদকের সাথে সবাই দেখা করছেন।হাত মেলাচ্ছেন।নমস্কার করছেন।
সম্পাদকের একজন খুব আপন বাদলবাবু, কোলাকুলি করতে গিয়েই বিফল হলেন।এত বড় ভুঁড়ি হয়েছে যে মাঝপথেই আঁটকে গেল।
তিনি উপলব্ধি করলেন; ভুঁড়িটা বেশ ভালোই বাড়িয়ে ফেলেছেন।লজ্জা লাগলো তাঁর।কর্মজীবনে সব কাজেই সফল হয়েছেন অথচ সামান্য কোলাকুলি করতে পারলেন না।বাড়ি এসে লজ্জার কথাটি বললেন মিসেসকে।মিসেস হেসে ফেললো।
বাদল মিসেসের হাসি দেখে বললেন — তোমারও তো গতবছর ভুঁড়ি হয়েছিল, তুমি আবার হাসছো কিসের?
—- তখন আমার পেটে বাবু ছিল, আমার ভুঁড়ি কখনও ছিল না; আর হবেও না।
দেখেছো তো আমি খুব সিস্টেমে থাকি।পরিমিত খাই।রেগুলার শরীরচর্চা করি আর তুমি কি না অসুরের মত খেতেই থাকো।আগে পেছনে ভাবনা নেই।তোমার ভুঁড়ি হবে না তো কার হবে?
একটু শরীরের যত্ন নাও তবেই তো শরীরটা ঠিক থাকবে।লজ্জায় পড়বে না সকলের কাছে।মাছ তো মাছই … মাংস তো মাংসই খেতেই থাক আগে পেছনে না ভেবেই ……
বাদল বললেন — শোন, আমি আগে পেছনে ঠিকই ভেবে খাই।আমার খেতে অসুবিধা লাগে না।দেখেছো তো সকালের কাজটি কত সুন্দরই না হয়ে যায় …….
কেমন কথা বলছো তুমি??
— তাহলে কেন ভুঁড়িটা তোমার কমছে না?
মরুক গে। আর পারি না।
তুমি শুধু মুচকি হাসবে না।কোলাকুলি করতে যাবে না।হাত মেলাবে এবার থেকে।
—- হাত তো কখনোই মেলাবো না।লোকের হাতে নোংরা থাকে।রোগ বেড়ে যাবে।মুচকি হাসিও হবে না।টেনশন।
তাহলে তুমি এক কাজ করো — রাজকুমার সরকারের দুই চারটি হাসির গল্পের বই কিনে নেবে ঠিক হাসি পাবে— যেমন হালকা হাসির টোটকা, স্বপ্ননীড়, হাসি মালা, পলাশ লধড়া, অণুরম্য,স্বপ্নের ঘর, টুকরো টুকরো গল্পকথা,অল্প স্বল্প গল্প কথা, দমকা হাসি মুচকি হাসি।ঠিক তোমার হাসি পাবে।মাঝে মাঝেই গল্পের বইগুলো পড়বে তোমার ঠিক হাসি পেয়ে যাবে এবং হাসির অভ্যেসও হয়ে যাবে।একদম সত্যি কথা বলছি তোমায় …….
বাদলবাবু উত্তর দিলেন, বললেন — ঠিক বলেছো।তোমাকে থ্যাঙ্কস।
মুচকি হাসি হাসলেই হবে এবার থেকে।কোলাকুলির আর প্রয়োজন নেই।