Spread the love

সান্দাকফুর মা
গৌতম বাড়ই
(ওরা চারজন এই প্রজন্মের।তিনজন পুরুষ একজন নারী।তাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে সিঙ্গেল মাদারের এই কাহিনী মাদার ডেইজের দিনে)


সান্দাকফু থেকে ওরা চারজন রওয়ানা দিয়েছে রাতুল সায়ন্তন ব্রতীন আর মেঘমা।সেই পাহাড় দেশে রয়েছে মেঘমা।মেঘমার এই পাহাড় এই প্রকৃতি প্রেম তার রক্তের মধ্যে নেশার মতন ধরিয়েছে তার বাবা।বাবার দেওয়া নাম মেঘমা।সিকিম অরুণাচল প্রদেশ গাড়োয়াল কুমায়ুন হিমালয়ের পথে পথে অনেক ঘুরেছে সে।মানেভঞ্জন গৈরীবাস সান্দাকফুর সঙ্গে এই পাহাড় মেঘমার  নামও  তার জানা।এতবার দার্জিলিং এসেও  বাদ পড়ে ছিল।সেই মেঘমাকে সে নিজের চোখে দেখল এই মেঘমা এবারে।আজ ভোরে উঠে গৈরীবাস থেকে সান্দাকফুর রাস্তায় ওরা চারজন।
এক একটা ছোটো ছোটো পদক্ষেপ বাড়তে বাড়তে তাদের উঁচিয়ে নিয়ে কয়েকশো ফুট ওপরে,চড়াই ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে চলা।এই চড়াই উৎরাই এই পাহাড় মানুষের জীবনের অনেক কথা বলে দেয়।অনেক শিক্ষা আর অজস্র উদাহরণের ডালি।ওরা চারজন ওরা এই জেন এক্স।ওরা মানসিক প্রেমের থেকেও দেহের সুখের মর্যাদা দেয় বেশি।দৈহিক চাহিদা ওদের কাছে গুরুত্ব পায় বেশি।ব্রতীন আর মেঘমার ভেতর এক গভীর অন্তরঙ্গতা আর বন্ধুত্ব আছে।গৈরীবাসের তাঁবুর আচ্ছাদনের নিচে ওরা একরাত্রি ছিলো।রাতুল,সায়ন্তন এক টেন্টে আর ব্রতীন, মেঘমার রাত্রিযাপন আর এক টেন্টে ।গৈরীবাস অপরূপ এক প্রাকৃতিক কোল।ঈশ্বরের আপন হাতে একটুকু ফাঁক বা ফাঁকি রাখে নি।বিকেলে পৌঁছে সূর্য ঢলে পড়বার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত মেঘমা অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছিলো পাহাড়ের কোলে গৈরীবাস।মানেভঞ্জন থেকে যখন মেঘমা এসে পৌঁছায় তখন মেঘমা ছিলো মেঘে মেঘে ঢাকা।মেঘের সর এখানে বাতাসে উড়ে বেড়ায়।মেঘ আর কুয়াশায় বড় রহস্যময় মেঘমা তখন।মেঘমারা সত্যি বড় রহস্যময়।কাছে থাকো অনেক পাবে।যদি গভীরে ঢুকতে চাও কিছুই পাবে না।মেঘমারা বড় রহস্যময়! মেঘমা ভাবতে থাকে এই গৈরীবাসের ৮৫৯৯ ফিট ওপরে।গৈরীবাস স্বচ্ছ গৈরীবাস প্রশান্ত সৃষ্টির অদম্য ইচ্ছে ঘিরে।টেন্টের ভেতর ওয়াইনে গলা ভিজিয়ে নিতে ওরা চার বন্ধু,চারজন সহকর্মী এক রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার উচ্চপদে কর্মরত।ওরা জীবনকে জীবনের মতন ভালোবাসে কোন পুরাতন বোধ আদর্শ 
নয়।যে ছেলেটি গীটার বাজিয়ে গান করছে তার নাম সায়ন্তন।যে ছেলেটির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে মেঘমা সে ছেলেটি রাতুল।পাশেই বসা ব্রতীন কিছুটা উদাসীন।সে আবৃত্তি করছিলো এর আগে তসলিমা নাসরিন।প্রেমের কবিতা।

যখন নেই, তখন থাকো

যখন আমার সঙ্গে নেই তুমি।
আমার সঙ্গে তুমি তখন সবচেয়ে বেশি থাকো।
আমি হাঁটি, পাশাপাশি মনে হয় তুমিও হাঁটছো,
তোমাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যাই,
যা যা খেতে পছন্দ করো, কিনি, তুমি নেই 
                                                   জেনেও কিনি।
রাঁধি যখন, দরজায় যেন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে 
                                                                 আছো,
মনে মনে কথা বলি।
খেতে বসি, ভাবি তুমিও বসেছো।
যা কিছুই দেখি, পাশে দাঁড়িয়ে তুমিও দেখছো,
শুনি, শুনছো।
তত্ত্বে তর্কে, গানে গপ্পে পাশে রাখি তোমাকে।
তুমি সারাদিন সঙ্গে থাকো,
যতক্ষণ জেগে থাকি, থাকো,
ঘুমোলে স্বপ্নের মধ্যে থাকো।
তুমি নেই, অথচ কি ভীষণভাবে তুমি আছো।

তুমি যখন সত্যিকার সঙ্গে থাকো, তখন কিন্তু 
                                    এত বেশি সঙ্গে থাকো না।


সায়ন্তন এরপর তার এ্যকোয়াস্টিক গীটারে সুর ভাঁজতে থাকে।তারা বিহ্বল হয়ে ওঠে নেশায়।তারা তাল  বেতালের সন্ধ্যায়।ওরা ফিরে চলে রঙীন হয়ে ওদের শিবিরে।রাতের গভীরে মেঘমা ব্রতীনকে জড়িয়ে ধরে বলে,তুই মেতে ওঠ সৃষ্টির নেশায়।ব্রতীন মেঘমাকে গভীর আর ঘন আদর দিতেই থাকে অবিরত।মেঘমা শিহরিত হতে থাকে শরীরের উন্মাদনায়।সৃষ্টির কামনায়।আজ সাড়ে আট হাজার ফিটের ওপরে সৃষ্টির কামনায় বীজ গ্রথিত হলো বোধহয়।
পরদিন ভোর হলো অনেক প্রত্যাশা নিয়ে।এবারের ট্রেকিং খুব খাড়াই গৈরীবাস থেকে সান্দাকফু।
তারপর একদিন ওরা নিজেদের যে যার জায়গায় ফিরে এলো।আরো কয়েকমাস পর মেঘমার তিনবন্ধু জেনে গেলো মেঘমার কনসিভ করার খবর এবং এ্যডভান্সড স্টেজে আছে।মেঘমা অবশ্য এখন আর তার আগের সংস্থায় নেই।চাকরী পাল্টে এক বহুজাতিক কোম্পানীতে
নর্থ ইস্টে আছে।ব্রতীন চেয়েছিল মেঘমাকে বিয়ে করবে কিন্তু মেঘমা চায়নি।বলেছিল—তুই ফের এরকম ন্যাকামী মাড়ালে তোকে চিরদিনের মতন বর্জন করবো।আমি সিঙ্গেল মাদার হিসেবে স্বেচ্ছায় এই দুনিয়ায় ওপেনলি পরিচিতি চাই,কারণ আফটার অল পয়দা করব  আমি আর বাচ্চা পয়দা করবার আগে আমার এই পেটেই থাকবে সে।কে বাপ ওটা কোন ম্যাটার না।
_______________________
________________

আজ মেঘমার সিঙ্গেল মাদার ডেইজের এবং ঘুমের টেন ইয়ার্স পালিত হবে।ঘুমের একটা ভালো নাম আছে– হিমালয়।লকডাউন।কোন আড়ম্বর নয়।আজ সেই বহুজাতিক কোম্পানির ডিরেক্টরস বোর্ডে মেঘমা।চেয়েছিল এবার বড় করে ওয়ান ডিকেড উদযাপন হবে।হলো না।তবে জানে এই একটা দিনে হিমালয়ের ব্রতীন আঙ্কেল হাজারটা মুখ শুনলেও ঠিক বছরে একটিবার আসবেই।দেশের যেখানেই তারা থাকনা কেন।তবে ঐ একটা দিন ব্যাস।কাউকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া তো যায়না!



কেউ যদি খুব বেশি করে মেঘমাকে জিগ্গেস করে তখন মেঘমা বলে আমি সান্দাকফুর মা।এর বেশি জানতে চাইলে তুমি তফাত যেতেই পারো।আমার এই একমাত্র পরিচয় আমি সান্দাকফুর মা।আমি হিমালয়ের মা।আমি ঘুমের মা।
@গৌতম বাড়ই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *